আত্মহত্যা প্রসঙ্গে যা যা জানি

অলোকপর্ণা

 

সোমবার, রাত দশটা

সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর মনে হল সবার আগে জিতেনকে তা জানানো প্রয়োজন। জিতেন আমার বাড়িওয়ালা। মাসের প্রথম রাতে দশটা বেজে দশ মিনিটে আমার বাসার ডোরবেল বেজে উঠতে, আইহোলে চোখ রাখলে জিতেনকে দেখা যায়। পাঁচটা হাজার টাকার নোট তার হাতে ধরিয়ে দিলে, ঘেমো কপালে আঙুল ভিজিয়ে সে টাকাগুলো গুণে নেয়। তারপর নির্বিকারে ফিরে যায়।

গত তিন বছরে এর অন্যথা হয়নি।

মাসের শেষ দিনে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম। জিতেনের ফ্ল্যাটের সামনে এসে হাতঘড়ির দিকে তাকালাম — দশটা আট। আমার সামনের চকচকে পালিশ করা দরজায় ধাতব গনেশ ঝুলে আছেন, তাঁর দুটো দাঁতই ভাঙা। আরেকটু নিচের দিকে জেগে আছে ব্রাসের বলিষ্ঠ হাতল, যাকে মুঠোয় ধরলে যেকোনও দক্ষিণ পূর্ব এশীয় পুরুষের হীনম্মন্যতা জাগতে পারে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, দশটা বেজে নয় মিনিট আট সেকেন্ড। জিতেনের ফ্ল্যাটের দরজার পাশে বড় আকারের মাটির টবে কি এক গাছ, পাতাগুলো অবিকল গাঁজার মতো। নাক নিয়ে গিয়ে শুঁকলাম খানিক। কিছুই বোধ হল না। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে কি এসব বোধ কমে আসতে থাকে? ঘড়ির দিকে তাকালাম। দশটা নয় মিনিট ঊনপঞ্চাশ সেকেন্ড। ডোরবেলের উপর হাত নিয়ে গেলাম। ঘড়ির কাঁটা পঞ্চান্ন, ছাপান্ন, সাতান্ন, আটান্ন, ঊনষাট ছুঁলে… বেল টিপলাম। ভিতর থেকে ওম জয় জগদীশ হরে শোনা গেল কিছুক্ষণ। কোনও সাড়া না পেয়ে আরেকবার বেল টিপতে যেতে দরজা খুলে গেল। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জিতেনের নতুন বউ। আগের বউকে ওরা মেরে ফেলেছিল, সম্ভবত পিটিয়ে… বা পুড়িয়েও হতে পারে, এখন ঠিক খেয়াল হচ্ছে না। জিতেনের বড় জেঠু এম এল এ।

“উনি তো বেরিয়েছেন…”

“ওহ, এলে বলবেন জরুরি দরকার।”

“আপনি আমায় বলতে পারেন…”

আঠারো উনিশের মেয়েটাকে এসব বলা উচিত হবে কি না ভাবলাম, তারপর হঠাৎ করে কী মনে করে, এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করলাম, “পাঁচ বছর পূর্বে আমার সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কটা ভেঙে যায়। সে আমায় জানায়, তার জীবনে অন্য কেউ এসেছে। আর সাথে সাথে আমার ইমোশনাল ব্রেকডাউন হয়। সাময়িক আঘাত সামলে উঠে আমি টের পাই কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়ে গেছে আমার মধ্যে। সমস্ত কিছু অর্থহীন হয়ে গেছে যেন। গত পাঁচ বছরে আমি বেঁচে থাকার মানে খুঁজে গেছি অনবরত। পাইনি। তাই আগামী শনিবার দুপুর দুটো বেজে আঠাশ মিনিটে আমি স্যুইসাইড করতে চলেছি। জিতেনকে বলবেন, এগ্রিমেন্টে এক মাস আগে নোটিস দিয়ে ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু অনিবার্য কারণে তা করতে না পারায় আমি অসম্ভব ব্যথিত।”

“আচ্ছা উনি এলে আমি বলে দেব”, মেয়েটি ধীরে ধীরে দরজা বন্ধ করে দেয়।

কী এক কারণে যেন আমি চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি জিতেনদের দরজার সামনে। কী মনে হতে আবার বেল টিপি। সেকেন্ড ছয় পরে দরজা খুলে যায়। জিতেনের নতুন বউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমায় দেখছে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পাশে রাখা টবের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলি, “এটা কী গাছ?”

 

মঙ্গলবার, বিকেল চারটে

“আপনি এটা ঠিক করছেন না ভাই!”

জিতেনের আরক্ত ঠোঁট দেখছি আমি। আমার সামনের চেয়ারে একটা পা আরেকটা পায়ের ওপর ভাঁজ করে তুলে বসে আছে জিতেন। তার মুখ থেকে পানের পিক বেয়ে পড়তে পড়তেও পড়ছে না, কী অদ্ভুত উপায়ে কথা বলতে বলতে জিতেন পানের পিক সামলে নিচ্ছে। সত্যি মানুষের কত রকমের প্রতিভা! এসব আমাকে অবাক করে।

“এগ্রিমেন্ট সাইন করার সময়েই তো বাত পাকা ছিল…”

আমি মাথা নাড়ি। জিতেনের যুক্তি সঠিক।

“আমি বুঝতে পারছি তোমার সমস্যাটা। কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা জিতেন। মন থেকে বলছি আমি দুঃখিত।”

জিতেন চুপ করে পান চেবাতে থাকে আমার দিকে তাকিয়ে। তারপর বলে, “ঠিক আছে, আপনি ঘর ছাড়বেন ছাড়ুন, আমায় সামনের মাসের টাকাটা অ্যাডভান্স দিয়ে দিন। হিসাব বরাবর।”

যদিও আমি জানতাম জিতেন এটাই বলবে, তবু ভান করলাম যেন এই প্রস্তাব অপ্রত্যাশিত। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম। জিতেনের নতুন বউয়ের চেহারা ফুটে উঠল চোখের সামনে। তার শাদা শাদা হাত ভাবলাম। ঘামতে থাকা গলায় এলিয়ে পড়া সোনার চেন ভাবলাম। কপালে ঘামে লেপ্টে থাকা সিঁদুরের লাল টিপ ভাবলাম। তারপর চিন্তিত মুখে জিতেনকে বললাম, “একটু সময় দাও আমায়। ভেবে জানাচ্ছি।”

জিতেনে চলে যেতেই ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলতে তন্ময়ের গলা পেলাম, “বস, শুনলাম তুমি চলে যাচ্ছ?”

“হ্যাঁ রে…”

“কবে যাচ্ছ?”

“সামনের শনিবার, দুপুরে।”

“আচ্ছা। সব ভেবেচিন্তে করছ তো?”

“হ্যাঁ রে!”

“কাকু কাকিমা জানে?”

“কাল জানাব।”

“আচ্ছা, তরী?”

“না ওকে জানানো যাবে না।”

“আচ্ছা। বস একটা কথা ছিল…”

“বল…”

“তুমি চলে গেলে… মানে, ইয়ে… তুমি তো জানোই সব, বুঝতেই তো পারো…”

তরী তোকে পছন্দ করে না তন্ময়… বলতে গিয়েও চুপ করে গেলাম, তারপর বললাম, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, তরীর একটা কাঁধ প্রয়োজন হবে আমি চলে যাওয়ার পর। তুই থাকিস।”

“ধন্যবাদ বস, অনেক অনেক ধন্যবাদ!”

“না না, তোকে ধন্যবাদ, তরীর জন্য আমার আর চিন্তা থাকল না।” ফোনের তারটা আঙুলে জড়িয়ে নিয়ে বললাম।

“বস, শুক্রবার রাতে কী করছ? আসব ভাবছিলাম, ফেয়ারওয়েল নিয়ে যাও একটু…”

“আসিস। তবে বেশি খাব না বুঝলি, আজকাল বিশ্রী হ্যাংওভার হয়।”

“ঠিক আছে বস, শুক্রবার দেখা হচ্ছে।” তন্ময় ফোন রেখে দেয়।

ফোন রেখে টি শার্ট গলিয়ে আমি বেরোলাম। চারপাশে আজ সুন্দর হাওয়া। সুন্দর বড় বড় গাছ মাথার উপরে। তারও ওপরে একটা বিরাট আকাশ। নীল। সামনে রাস্তায় ছোট ছেলেমেয়েরা খেলে বেড়াচ্ছে। সাইকেল চালাচ্ছে। একটু দূরে একটা পুকুর আর তার সামনে সবুজ ঘাস। সব মিলিয়ে চারপাশটা খুব সুন্দর। একঘেয়ে। শ্বাসরোধকারী। গুমোট। অস্থির। হাঁসফাঁস করানো… ছটফট করানো… দম আটকানো।

আর আমি এসবের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে থাকি।

পার্কে এসে দেখি জুঁইফুল নিজের বেঞ্চে বসে আছে।

ধপ করে তার পাশে বসে পড়লাম।

জুঁইফুলের সামনে লালু আর ভুলু বসা। জুঁইফুল তাদের বিস্কুট দিচ্ছে। লালু ভুলু ভাই বোন এবং বর্তমানে ইনসেস্ট। ওদের এরকম স্বাভাবিক। ভুলুর মুখে বিস্কুট গুঁজে দিয়ে জুঁইফুল জিজ্ঞেস করল, “কবে যাচ্ছিস?”

“শনিবার দুপুরে।”

“আচ্ছা।”

ভুলু বিস্কুট খাচ্ছে। লালু নিজের পেট জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করছে।

জুঁইফুল বলল, “তোর একটা ঈশ্বর প্রয়োজন ছিল, জানিস?”

“হু, টের পাই মাঝে মাঝে…”

“কীরকম ঈশ্বর দরকার ছিল তোর জানিস?”

“হিন্দু ঈশ্বর নয়, খ্রিস্ট তো নয়ই, ইসলামিক হলেও হতে পারে। জৈন নয়। সম্ভবত আমার বৌদ্ধ ঈশ্বর প্রয়োজন ছিল।”

“অথচ বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর না মোক্ষই সব,” জুঁইফুল সামনের পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, “যাওয়ার আগে, কাকে স্মরণ করবি, কিছু ভেবেছিস?”

“হুঁ, সিদ্ধার্থকে, জ্যোৎস্না রাতে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে আসা সিদ্ধার্থকে।”

“শনিবার কি পূর্ণিমা?”

“হুঁ…”

“শুভ দিন। তোর যাত্রা শুভ হোক।” উঠে দাঁড়িয়ে জুঁইফুল আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ধরে।

আমরা সময় নিয়ে করমর্দন করি। জুঁইফুল পার্ক থেকে বেরিয়ে যেতে লালু ভুলুও তার পিছন পিছন বেরিয়ে যায়। বেঞ্চে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে আমি তাদের চলে যাওয়া দেখি।

সামনের পুকুরের দিকে তাকাই। ফাঁকা বেঞ্চে বসে থেকে মনে হয় কার যেন আসার কথা ছিল, মনে পড়ে না। বা ভুলে গেছি বহুদিন হল। এবং ইচ্ছে হয় কেউ আসুক। পুকুরের জলে ঢেউ খেলে যায়। অর্থাৎ মাছ আছে। ইচ্ছে হয় জলে নেমে যাই। অথচ বেঞ্চ থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। এসব বহুবিধ ইচ্ছে সমেত বাড়ি ফিরে আসি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখি জিতেনদের দরজায় জিতেনের নতুন বউ দাঁড়িয়ে আছে, দাঁত ভাঙা গণেশকে সন্ধে দিচ্ছে।

তাকে পাশ কাটিয়ে উঠতে যাব, শুনতে পাই, “আপনার শেষ ইচ্ছে কী, কিছু ঠিক করলেন?”

থেমে গেলাম, “আমায় বলছেন?”

অর্থপূর্ণ চোখে মেয়েটি তাকায় আমার দিকে।

আমি কথা খুঁজে পাই না। তাই বলি, “ওটা কী গাছ, বলেননি এখনও…,” আঙুল তুলে দরজার পাশে রাখা গাঁজা গাছটি নির্দেশ করি।

জিতেনের নতুন বউ কিছু না বলে পুজো সেরে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

 

মঙ্গলবার, রাত নটা

মায়ের কান্না শুনতে পেলাম ফোনের ওপার থেকে। সেই কান্নার স্বরে কী যে বলল তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। বুঝলাম বাবা ফোন তুলে নিচ্ছে এবার,

“তোমার মা কাঁদছে কেন?”

“আমার কথা শুনে।”

“কী বলেছ তুমি নতুন করে?”

“তেমন কিছু না। এই শনিবার দুপুরে আমি আত্মহত্যা করব এটাই জানালাম।”

“মাকে এমন কথা বলার কী মানে! তুমি তো জানোই মা কেমন কান্নাকাটি করে তোমার ব্যাপারে…”

“মনে হল তোমাদের জানানো উচিত, আমাকে পৃথিবীতে আনার কাজটা তোমরাই করেছ…”

“আক্ষেপ আছে…”

“না নেই।”

“তোমার কথা বলছি না, আমার আছে…”

“ও… হুম!”

“মাকে সামলাও, নতুন করে আমি ঝামেলা নিতে পারছি না!”

বাবা মায়ের হাতে ফোন তুলে দেয়, প্রচণ্ড ফোঁপানির মধ্যে যা যা শুনি, — “তোকে কত কষ্ট করে স্কুলে দেওয়া নেওয়া করতাম… উঁ… সেসব ভুলে গেলি… উঁ… ক্রিকেট প্র্যাক্টিস… উঁ… তোর বাবা তো কোনওদিন কোনও দায়িত্ব… উঁ… বাড়ি, অফিস সব সামলে আমি তোকে… উঁ… উঁ…”

বাকিটুকু বোধগম্য হল না। তবু চুপ করে ফোন ধরে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম মা কিছুটা সামলে উঠেছে, “কী খেয়েছিস দুপুরে?”

“রুটি ঘুগনি।”

“মটরের না ছোলার?”

“ছোলার।”

“আচ্ছা, আমি আজকে কচুর লতি বানিয়েছিলাম, যাওয়ার আগে একবার আয়, কচি পাঁঠা আর সাদা বাসমতী চালের ভাত বানাব, খেয়ে যাস।”

“একটু গন্ধ লেবু রেখো…”

“রাখব।”

মা ফোন রেখে দেয়।

 

বুধবার, দুপুর তিনটে আটচল্লিশ

তরী স্ট্র দিয়ে স্ট্রবেরি মিল্ক শেক খাচ্ছে।

আমি টেবিলের উল্টো দিকে বসা। তরীকে আজ অফিস ভাগিয়ে নিয়ে এসেছি নিতান্ত একটা মলে। তাই ভ্রূ কুঁচকে তরী মিল্কশেক খাচ্ছে।

“তরী যদি আমরা আজকের পর আর দেখা না করি?”

“দেখা না করি মানে, কবে অবধি?”

“মানে আর কখনওই যদি দেখা না করি…”

“কেন?”

“এমনিই, যদি এরকম হয় যে আমি মরে গেলাম…”

তরী খিলখিল করে হেসে উঠল, মুখের মিল্কশেক বেরিয়ে এল খানিক। আমি টিশ্যু পেপার এগিয়ে ধরলাম ওর দিকে।

হাসি থামিয়ে সিরিয়াস চোখে তরী আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, “অন্য কাউকে ভালো লাগছে তোমার?”

একটু ভাবলাম, বললাম, “ব্যাপারটা তেমন নয়…”

“কাকে, বলো…”

“তেমন কিছু না…”

“উঁহু, বলো, আমি শুনতে চাই।” তরীর চোখের সামনে নিজেকে খুব ছোট লাগছে, টের পেলাম। ধীরে ধীরে বললাম, “জিতেনের নতুন বউয়ের ঘাড়টা খুব ইয়ে…”

তরী কিছু না বলে চুপচাপ মিল্কশেকে মন দিল।

একটানে মিল্কশেক শেষ করে, ধীরে ধীরে নিজের খোলা চুল দুটো হাত দিয়ে জড়ো করে খোঁপা বেঁধে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই যে, এখানে একটা আঁচিল আছে, চেনো ওকে?”

তরীর ঘাড়ের চিরপরিচিত আঁচিলটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কোনও নাম দিতে পারিনি আমি আজ অবধি। তরীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম। আর কিছু বলতে পারলাম না। ভাবলাম তন্ময় যেন এই আঁচিলের একটা যুতসই নাম দিতে পারে।

মল থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে তরী বলে উঠল, “বলতে ভুলে গেছিলাম, আজকাল তন্ময়টা যেন একটু বেশিই গায়ে পড়ছে। কী বিশ্রী পারফিউম মেখে আসে বলে বোঝানো যাবে না।” বলেই তরী অন্ধকার পার্কিং লটে আমায় কাছে টেনে নিয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিল। বুঝলাম ও আমার গন্ধ নিচ্ছে। দুই হাতে ওর মাথাটা আমার গলায় চেপে ধরলাম। যাতে ওর দম আটকে আসে আমার গন্ধে। কিন্তু প্রতিবারের মতোই ও ব্যাপারটা উপভোগ করে আমার গলায় কামড়ে দিল। বেশ জোরে।

“উফ…”

তরী আমায় ছেড়ে স্কুটিতে উঠে পড়ল, স্টার্ট দিয়ে ডাকল, “এসো…”

তরীর স্কুটিতে উঠে বসলাম।

 

বৃহস্পতিবার, দুপুর বারোটা বারো

আমার ঘুম ভাঙল।

আর দুদিন আমার ঘুম ভাঙবে। এটা ভেবে একটু সময় বিছানায় পড়ে থাকলাম।

গতকাল রাতে জুঁইফুল ফোনে জানতে চেয়েছিল, আমি কীভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে চাই, জবাব দিতে পারিনি। জুঁইফুল জানে, উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়াটাকে আমি ফ্যান্টাসাইজ করি। কাজেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়াটা একটা রোম্যান্টিক উপায় হতে পারে। কিন্তু জিতেনের বাড়িটা দোতলা। সফল উড়ান এখান থেকে সম্ভব নয়।

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মতো গায়ে আগুন জ্বেলে ধ্যানস্থ হওয়ার মতো স্থিতধী আমি নই। কাজেই আগুন বা আলো কোনও উপায় নয়।

বাকি আছে গলায় দড়ি, ঘুমের ওষুধ, গাড়ি বা ট্রেন চাপা পড়া।

এর মধ্যে গলায় দড়ি ও গাড়ি বা ট্রেন চাপা পড়া ডিফরমিটি আনে মানুষের শরীরে। আমি চাই না মৃত্যুর পর আমায় বিকৃত দেখাক। জীবন নিজেই অবিলম্বে অনেক বিকৃত। অতএব, — ঘুমের ওষুধ।

বিছানা ছেড়ে উঠলাম। জিতেনদের ঘরে যাওয়া প্রয়োজন। জিতেনের মা ঘুমের ওষুধের নেশা করে থাকেন।

মিনিট দেড় ওম জয় জগদীশ বেজে যাওয়ার পর দরজা খুলে যায়, জিতেনের নতুন বউ আমায় বলে, “ভিতরে আসুন…”

“আমি একটু ওষুধ নিয়েই চলে যাব…”

“কী হয়েছে আপনার?”

“কিছু হয়নি, শনিবার দরকার হবে তাই…”

“কী ওষুধ চাই?”

“আপনার শাশুড়ি যেটা সেবন করেন…”

“আচ্ছা, মা এখনও জেগে, ঘুমিয়ে পড়লে আমি এনে দিচ্ছি। আপনি ভিতরে আসুন।”

জিতেনদের বসার ঘরে ধূপকাঠির গন্ধ। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। দেওয়ালের দিকে চোখ পড়তে দেখতে পেলাম জিতেনের আগের বউয়ের একটা বিরাট ছবি সোনালি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা। টাটকা রজনীগন্ধার মালা ঝুলছে তাতে।

জিতেনের নতুন বউ এক গ্লাস জল আমার সামনে রেখে বলে, “আজ ওনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।”

“আচ্ছা,” জল পুরোটা খেয়ে নিই আমি।

“আপনি ওনাকে চিনতেন?”

“খুব বেশি দেখিনি, বাইরে আসতেন না তেমন।”

“ও।” জিতেনের বউ চুপ করে আমার পাশে এসে বসে।

আড়চোখে তার ঘাড়ের দিকে তাকাই আমি। কোনও আঁচিল নেই।

“আপনার শেষ ইচ্ছে কী, কিছু ভাবলেন?”

“তেমন কিছু ভাবিনি। একটু চাঁদের আলো দেখতে চাইব হয়তো।”

“শনিবার তো পূর্ণিমা…”

“হ্যাঁ, তাই ওইদিন বাছলাম…”

“আচ্ছা, মা ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয়, বসুন। আমি এনে দিচ্ছি।”

জিতেনের বউ উঠে যায়। কিছুক্ষণ পরে একটা কালো কাঁচের শিশি এনে দেয় আমায়।

“অনেক ধন্যবাদ।”

বাইরে এসে জুতো পরতে থাকি। জিতেনের নতুন বউ দরজায় দাঁড়িয়ে আমার জুতো পরা দেখছে।

উঠে দাঁড়িয়ে বলি, “আসি তাহলে?”

“একটু দাঁড়ান,” বলে জিতেনের বউ খপ করে আমার বাঁ হাতটা ধরে ফেলে। আমি অবশ হয়ে যাই। ধীরে ধীরে আমার বাঁ হাতটা সে পাশে রাখা টবের কাছে নিয়ে গিয়ে গাছটার পাতায় রাখে। আস্তে আস্তে আমার বাঁ হাতটা ধরে গাঁজা গাছের পাতায় বোলাতে থাকে জিতেনের নতুন বউ। আমি টের পাই সে আমার খুব কাছে চলে এসেছে। আমাদের শ্বাস ভারি হয়ে আসে। আমার কানের লতির কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে জিতেনের নতুন বউ ফিসফিস করে বলে, “এটা প্লাস্টিকের।”

 

শুক্রবার, বিকেল পাঁচটা

নিতান্ত শপিং মলে এলাম। একাই। এলোমেলোভাবে ঘুরতে ঘুরতে কিছু উইন্ডো শপিং করলাম। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখলে গা ছমছম করে আমার, তাই ম্যানিকুইন দেখলে আমি বরাবর চমকে যাই। আর জামাকাপড়ের দোকান এড়িয়ে চলি। ফলত আমার জামার সংখ্যা হাতে গোনা। তরী নিজে হাতে করে কিনে না দিলে বছরে কোনও জামা কেনা হয় না আমার। চার পাঁচ বছর ধরে একই জামা পরতে থাকি। সমস্ত ছবিতে বছরের পর বছর কার্টুন চরিত্রদের মতো একই জামা পরতে দেখা যায় আমাকে। সেসব ছবি দেখলে জামার রঙের বিবর্তন স্পষ্ট হয়। জামার বিবর্তন বোঝার জন্য আমি মাঝে মাঝে ছবিগুলো নিয়ে বসি।

মলের মধ্যে দূর থেকে দেখে ম্যানিকুইন বলে মনে হলেও হঠাৎ বুঝতে পারি জুঁইফুল বউ বাচ্চা সমেত দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখছে ওরা তিনজনে। ওদের দিকে এগিয়ে যাই।

“কেমন আছ?” জুঁইফুলের বউ বলে।

“ভালো, আপনি?”

“ওই চলছে…”

তিনজনে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জুঁইফুলের ছেলের হাতে একটা ললিপপ। সেটা চুষতে চুষতে ওর ঠোঁট কমলা হয়ে গেছে। ঠোঁটের পাশ থেকে কমলা রস গড়িয়ে পড়ছে। গড়িয়ে পড়া রস সমেত বাচ্চাটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম, জুঁইফুলের বউ ও ছেলে দুজনেই অবিকল জুঁইফুলের মতো দেখতে। তাদের তাকিয়ে থাকাটা তাই দূর থেকে ম্যানিকুইনের চাহনির মতো শাশ্বত একটা ব্যাপার হয়ে উঠছিল।

জুঁইফুল বলে, “চলো চা খাই…”

আমরা চারজনে চায়ের দোকানে এসে বসলাম।

ওয়েটার কাছে এসে দাঁড়াতে তাকে আঙুল দেখিয়ে তিনটে চা ঈশারা করলাম। জুঁইফুলের কোল থেকে জুঁইফুলের ছেলে আঙুল তুলে আরও একটা চা বলল।

“ওর নাম কী?” জুঁইফুলকে ছেলের নাম জিজ্ঞেস করলাম।

স্পষ্ট উচ্চারণে জুঁইফুলের ছেলে জবাব দিল, “আলোময় সরকার।”

“বয়স কত?”

আবার সে নিজেই উত্তর দিল স্পষ্ট স্বরে, “এক বছর তিন মাস।”

“আচ্ছা।”

চা এসে যেতে আমরা খাওয়া শুরু করলাম। জুঁইফুল কোল থেকে ছেলেকে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল। আলোময় নিজের হাতে কাপ তুলে চা খাচ্ছে।

“এসব শিখলে কবে?”

সে জবাব দিল, “ইন্সটিঙ্কট!”

আমরা চুপ করে চা পান করতে থাকলাম।

চায়ের কাপ খালি হতে, জুঁইফুলের বউ ব্যাগ থেকে একটা পারফিউমের বোতল নামিয়ে রাখল আমার সামনে, বলল, “এটা তোমার।”

“কী হবে এটা দিয়ে?”

“মনে হল চলে যাওয়া মানুষের জন্য সেরা উপহার শুধুমাত্র সুগন্ধী হতে পারে।”

কিন্তু আমার নিজস্ব গন্ধ আছে, বলতে গিয়েও বললাম না। এসব কথা সকলকে জানাতে নেই। তার উপর ওরা তিনজনে আবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চুপচাপ বোতলটা পকেটে ভরলাম। তারপর চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে আমরা চুপচাপ মলের বাইরে এসে দুদিকে হেঁটে চলে গেলাম। কিছু দূর গিয়ে ফিরে দেখি জুঁইফুলের কোল থেকে পিছু ফিরে আলোময় সরকার আমাকে বুড়ো আঙুল তুলে ‘অল দা বেস্ট’ দেখাচ্ছে।

 

শুক্রবার, সন্ধে সাতটা আটচল্লিশ

সুগন্ধী হাতে নিয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কাছেপিঠের বাতাস পারফিউমের গন্ধ মেখে আছে। আমায় ধাতস্থ করে তুলছে সুগন্ধের সাথে। গন্ধটা খারাপ নয়। জুঁইফুলের বউয়ের পছন্দ আছে।

ডোরবেল বেজে উঠল। তন্ময় এসেছে।

বসার ঘরে গ্লাস বরফ আর মাংস সাজিয়ে বসেছে তন্ময়। আমার জন্য বাছাই করা মদ আনা হয়েছে আজ। মধুর মতো নরম পানীয় আমার গলা বেয়ে ভিতরে নেমে আসছে। চোখ বুজে শেষবারের মতো পান করছি।

তন্ময় বলল, “বস, কেন যাচ্ছ?”

“থাকার কোনও কারণ পাচ্ছি না তাই।”

“তরী, বস?”

“ও ছিল, আছে, থাকবে।”

“তুমি চলে গেলে ও খুব কষ্ট পাবে বস…”

চার নম্বর গ্লাস শেষ করে ওকে বললাম, “একটু বস।”

ফ্রিজের উপর থেকে জুঁইফুলের বউয়ের দেওয়া পারফিউমের বোতলটা নিয়ে এসে ওকে ধরিয়ে দিলাম, “এটা রাখ।”

“বস, গিফট দিচ্ছ!”

“গিফট নয়, টোটকা।”

“মানে? বুঝলাম না।”

“বুঝবি, সময়ে কাজে দেবে।”

ডোরবেল বেজে ওঠে। মন্থর পায়ে এসে দেখি আই হোলের ওপারে জিতেন দাঁড়িয়ে ঘামছে। দরজা খুললাম।

“ভাই, কথা আছে আপনার সাথে।”

“এসো ভিতরে…”

ঘরে ঢুকে জিতেন তন্ময়কে দেখে নমস্কার জানাল। হাতে গ্লাস সমেত জিতেনকে নমস্কার জানাতে গিয়ে তন্ময় প্যান্টের ওখানটা একটু ভিজিয়ে ফেলল। জিতেনকে চেয়ারে বসিয়ে, ওকে একটা গ্লাস বানিয়ে দিতে বললাম তন্ময়কে। না না করতে করতেও জিতেন গ্লাসটা হাতে নিয়ে একবার কপালে ঠেকিয়ে গলায় ঢেলে দিল পুরোটা।

“বলো জিতেন…”

“ভাই, আমি আপনার ডিসিশন রেস্পেক্ট করি। বুঝেন তো সেটা?”

“হ্যাঁ জিতেন…”

“ভাই, আপনি যাচ্ছেন আমি একবারও মানা করেছি?”

“না তো, কেন করবে?”

“সেটাই তো। কিন্তু ভাই এই বাড়িতে কিছু হলে আমি আর টেন্যান্ট পাবো না!”

চুপ করে কিছুক্ষণ জিতেনের যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করলাম। পাঁচ নম্বর গ্লাস শেষ করে ফেলায় মাথা তেমন চলছে না। জিতেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় পারফিউমের বোতলটা গালে ঠেকিয়ে বসা।

“ঠিক আছে জিতেন। আমায় ভাবতে দাও। তন্ময় গ্লাস বানা।”

 

শুক্রবার, রাত এগারোটা ঊনষাট

কোথা থেকে যেন জুঁইফুলের গন্ধ পাচ্ছি। এটা কি বর্ষাকাল?

কেউ নেই।

তন্ময় চলে গেছে।

জিতেনের হাতে পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দিয়েছি। নিতে চাইছিল না। শেষে কেঁদে দিয়েছে।

কেউ নেই আর।

বিছানায় বসে আছি।

ঘর অন্ধকার।

কোনও গন্ধ পাচ্ছি না।

আচ্ছন্ন হয়ে আছি নেশায়।

কেউ নেই।

নেশা আছে।

 

শনিবার, জিরো আওয়ার এক মিনিট

বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

হাত পা অবশ।

আজ গরম না ঠান্ডা টের পাওয়া যাচ্ছে না নেশায়।

হয়তো আমি ঘামছি।

হয়তো আমি কাঁপছি।

আয়না জানবে।

আয়না কোথায়?

আন্দাজে আয়নায় এসে দাঁড়ালাম।

আয়নার ওপাশেও যেন কেউ এসে দাঁড়াল।

এই মানুষটার কাজই ওই, মুখোমুখি দাঁড়ানো।

হাসলাম আমরা একে অপরকে দেখে।

তারপর চুপ করে তাকিয়ে থাকলাম।

 

শনিবার, সন্ধে ছটা দশ

ঘুম থেকে উঠে বুঝলাম গত আঠারো ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকায় আত্মহত্যা করা হয়নি এখনও। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বুঝলাম পায়ে তেমন জোর নেই। অথচ আজ পূর্ণিমা।

কোনওরকমে হামাগুড়ি দিয়ে জানালার কাছে এলাম। অভূতপূর্ব জ্যোৎস্নায় ভিজে গেছে চরাচর। টের পেলাম জ্যোৎস্নায় আবার নেশা লাগছে আমার। কোনওরকমে পর্দা আঁকড়ে উঠে দাঁড়ালাম। দেখলাম পাশে বিছানায় জিতেনের নতুন বউয়ের দেওয়া কালো ঘুমের ওষুধের শিশিটা পড়ে আছে। হাতড়ে নিলাম ওটা। তারপর দেওয়াল ধরে ধরে ধরে ধরে দরজার কাছে এসে পৌঁছলাম। দরজা খুলতে দেখি জিতেনের নতুন বউ দাঁড়িয়ে।

“আমি ভাবলাম…”

“ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, এখন যাচ্ছি…”

“কোথায়?”

“পার্কে, জিতেন এখানে কিছু না করতে অনুরোধ করেছে।”

“আচ্ছা, আপনার যাত্রা শুভ হোক।”

সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকলাম। দেখলাম জিতেনদের দরজার সামনে হুইল চেয়ারে বসে আছে লোলচর্ম জিতেনের মা। নমস্কার জানালাম ওনাকে। উনি চুপ করে আমার দিকে চেয়ে থাকলেন, আমার সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া দেখলেন।

রাস্তায় নেমে আসতে শুনতে পেলাম কে যেন কাঁদছে, বেশ জোরেই। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম লালু। মাঝপথে বসে কাঁদছে চিৎকার করে। ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। তবু ওর কান্না থামল না। আমার পকেটে কাঁচের শিশি দুলে উঠল।

আরও খানিক যাওয়ার পর দেখলাম পথের মাঝে পড়ে আছে ভুলু। গাড়ি চলে গেছে ওর ওপর দিয়ে একটু আগে। টাটকা রক্ত ছড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম লালু কেন কাঁদছিল। আহা। মন ভারাক্রান্ত হল আমার।

আরও খানিক যেতে দেখি পার্ক থেকে বেরিয়ে আসছে জুঁইফুল।

“কোথায় চললে?”

“লালু ভুলুকে খুঁজে পাচ্ছি না, তুই?”

“আমি যাচ্ছি…”

“যাচ্ছি বলতে নেই, বল আসছি।”

“আচ্ছা, আসলাম।”

জুঁইফুল চলে যেতে পার্কে ঢুকে আসি। অপরূপ জ্যোৎস্নায় ঘাসগুলো রূপোলি দেখাচ্ছে। চটি খুলে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ি। আমার মাথার উপর জ্বলছে নির্লজ্জ চাঁদ।

মাথার নিচে হাত রেখে শুই। পকেট থেকে কালো কাঁচের শিশি ডেকে ওঠে। উঠে বসে পকেট থেকে বের করে এনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি ওকে। চাঁদের একগাদা আলোয় ওর গায়ের লেখাগুলো পড়া যাবে। কিন্তু পড়ে কী লাভ, বুঝলাম না। তাই শিশিটা খুলে যা ছিল তার মধ্যে, সব গলায় ঢেলে দিলাম। তারপর ধীরে ধীরে গা থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে পাশে মেলে দিলাম। পাজামা খুলে কাছেপিঠে ভাঁজ করে রাখলাম। আন্ডারওয়্যার পরে রূপোলি ঘাসে শুয়ে পড়লাম আমি। আমার সারাগায়ে জ্যোৎস্না। লোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে আমার সেই আলো লেগে। নিজের সারাগায়ের সমস্ত খাঁড়া লোম দেখতে দেখতে ঘুম পেয়ে যায়। মাথার নিচে হাত রেখে শুই। চোখ বুজে চাঁদের ছোঁয়া টের পাই সারা শরীরে। শিহরণ হয়।

পার্কে আর কেউ নেই, যেমন জীবনেও।

দূর থেকে লালুর কান্না শোনা যাচ্ছে। জানি জুঁইফুল ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

চোখ বুজে ঘাসের মধ্যে পড়ে আছি। কী একটা পোকা আমার ডান পায়ের পাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কী একটা পোকা মনের মধ্যে…

 

আমার মাথার উপর চাঁদ। শাশ্বত জোছনা চারদিকে।

 
About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4873 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

আপনার মতামত...