রং দে বাসন্তী — নদী, নারী এবং এক নিরন্তর সংগ্রাম

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

কৌশানি গেছেন কেউ? উত্তরাখণ্ড? কাছেই আলমোরা, রানিখেত। সেই কৌশানি। কৌশানি মানেই কিন্তু পাহাড় না। কৌশানি মানে নদী। কোশী নদী। নদী মানে মানুষের সহবাস। সাহচর্য। এবং আধুনিকতাজনিত আরও যেসব এসে যায় …। কোশীকে বাঁচাতে হবে। ১৯৯২। গরমে কোশীতে জল যেত ৮০০ লিটার। এক সেকেন্ডে। ২০০২। ৮০ লিটার। এতটা কম? নদী তো বাঁচবে না। নদী মরে যাবে। বাসন্তী। বাসন্তী বেহেন। এলাকায় ওই নামেই পরিচিত। ২০০টি দল তৈরি করলেন, প্রতি দলে মহিলা কুড়ি তিরিশজন। বাসন্তী সামন্ত কী কী করলেন? তাঁর নারী ব্রিগেড কী কী করলেন? পরিশ্রম? বুদ্ধি? সে তো আছেই। তার সঙ্গে ঠিক আসল জায়গায় কুঠারাঘাট। রোগ ধরতে পারা। জ্বালানির জন্য গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। বাঞ্জ ওক। উত্তরাখণ্ডের এন্ডেমিক। দীর্ঘ পাতার এই গাছ এখানেও লাগাতে বললেন বাকিদের। জল নষ্ট না, জল, যেটুকু আছে বাঁচাও। অরণ্যে আগুন লাগলে, যতই ছোটখাটো হোক, যুদ্ধকালীন ব্যবস্থা। সেই বাসন্তী। ১২ বছর থেকেই শ্রম শব্দটাকে মেয়ের মতো মানুষ করেছেন। ক্লাস ফাইভের বাসন্তীর বিয়ে হয় বারো বছরেই। পিথোরাগড়ের থারকোটে। তিনটে বছর দিয়েছিলেন স্বামী। আর পারেননি। বৈধব্য। স্বামীখেকো। গঞ্জনা। জ্বলে উঠলেন কিশোরী। ফিরে এলেন নিজের দিগারার গ্রামে। বাবা পাশে ছিলেন। আবার স্কুলে পড়ানোর তোড়জোড়। মা, নিজের মায়ের সাহায্য পেলেন না বাসন্তী। অবিশ্বাস। কষ্ট। পরেরটুকু অবশ্য নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই। কৌশানির লক্ষ্মী আশ্রম। মহাত্মার নাম। গন্ধ। বাসন্তী ওখানেই বালোয়ারি অঙ্গনওয়াড়িতে শিক্ষক হলেন। নিজের পড়াশুনো। ডিসট্যান্ট কোর্স। মাধ্যমিক। অজস্র সেলফ হেল্প গ্রুপ। মহিলাদের হস্তশিল্প, প্রায়োগিক শিল্প, আরও অনেক বাসন্তী তৈরির সংগ্রাম। ২০০২। নদীর মতো বাসন্তীর গতিপথেরও বদল। যথেচ্ছ গাছ কাটা। জল শুকনো একলা কোশী। মহিলাদের এককাট্টা করলেন। কিন্তু পরিবার? ভোর থেকে কাঠের জন্য না বেরিয়ে পরিবেশকর্মী, সমাজকর্মী স্ত্রী? সহ্য করবে পৌরুষ? বা সমগ্র পরিবার? কৌশানি বাসস্ট্যান্ডের কাছে মেয়েদের দল দেখে দেখে বোঝালেন। স্থানীয় সংবাদপত্রের কাটিং পড়ালেন। কোশীকে বাঁচাতে গেলে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। ব্রিটিশদের দর্শনীয় পরিবেশ পরিপন্থী পাইন না, দীর্ঘ পাতার বাঞ্জ ওক লাগানোই একমাত্র উপায়। চিপকোর কথা বললেন। কথায় ভালোবাসা থাকলে বিশ্বাস থাকলে তা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ২০০৩। মহিলাদের কমিটি। বাসন্তী টিম লিডার। সভাপতি। পুরুষদের ক্রমশ সমর্থন। নতুন গাছ না, শুকনো কাঠ সংগ্রহ করতে মেয়েরা বেরিয়ে পড়লেন ভোর থেকে। জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্টে গ্রামের গাছের অধিকার কাঠের অধিকার গ্রামবাসীর, যদিও গাছ কাটা চলবে না একজনেরও। এই মর্মে সরকারি চুক্তি। সমস্যা আসতে থাকল। স্থানীয় হোটেল মালিক, বন বিভাগের বিশ্বাসঘাতক কর্মী— বাসন্তীর নেতৃত্বে মহিলাদের লড়াইয়ে পার পেলেন না কেউই। নিজের প্রয়োজনে জলকে কাজে লাগানো, গাছ কাটার খেসারত দিয়ে পিছু হটলেন কুচক্রীরা।

বাসন্তী সামন্তর গল্পটা চলছে। স্থানীয় ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের দিকে চোখ আছে এই নারীর। পরবর্তী কাজ সেদিকেই। বাসন্তী। তেল দিয়ে পরিচ্ছন্ন পরিপাটি চুল। মুখে রেখার দাগ। হাওয়াই চটি। খাদির শাড়ি। বাসন্তীর ভেতর মহাত্মা আছেন। বাসন্তী, বাসন্তীদের না জিতলে চলে?

ঋণ স্বীকার :

https://ruralindiaonline.org/

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4661 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...