তানিয়া চক্রবর্তীর কবিতা

আলো

 

 

ঘুরে ঘুরে যে আলোর কাছে এলাম
তারা সব নিয়ন্ত্রিত
তাদের ছুঁয়ে দেখি তেলতেলে সব শরীর
ভয় হল, এরা আমায় দেখতে পায় তো!
আলো কী তবে আলোরই কাছে যায় কেবল!
আমাদের ছোট ছোট রোমের দেহ
জল খেয়ে ঘাম হয়ে পালিয়ে যায় দূরে
–ধরে রাখা দায়!
এখানে নেশার মধ্যেখানে কান পেতেছি
মুঠো খুললেই হাত যে হবে খালি
খালি পায়ে লাফিয়েছি খুব
শক্তির অনতিদূরে যে পাথরের হাসি ছিল
আলো কুচি কুচি হয়ে
গাছের বুকে জোনাকির নাম নিয়ে বসে আছে ,
আলোর অভিসারে এসে ফেঁসে গেছি খুব

 

গুপ্ত

 

না লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়
তবুও রাখি লুকিয়ে!
যারা এলেন কিম্বা এলেন না
যাদের এলেম আছে কিম্বা নেই
তাদের সঙ্গে শত্রুতা ও বন্ধুতা
দুটো চালেই হার মেনেছি,
ঘরের ভেতর দোল দিলে
দোল ভীষণ মর্মে লাগে
ঘোরের ভেতর দুলতে গেলে
হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ি
পার্থিবরা ডালে বসে হাততালি দেয়
আমার পঞ্চভূতে লাভের লোভ
এমন সঙ্গ কোথাই পায়?
ভাল ধরে ভাল বলো
ভালোর মধ্যে লুকিয়ে থেকো
লুকিয়ে রাখার অস্ত্র কিম্বা বিদ্যে
ভাল বলে আড়াল করো,
যে এসব আগুন থেকে ছাই খুঁজল
ছাই দিয়ে চমকে দিল বাসনকোসন
তাকেই এখন লুকিয়ে রাখি ভয়ে —

 

খই-দই জীবন

 

এই চার আনা খই-দই জীবন
যার গতকালের মূল্য আজ আর নেই
তাতেও মাংসযুদ্ধ করি
ছয়লাপ করে দিই ধর্মে ও আচারে
এক দানা হজম হওয়ার আগে
খাদ্যমূল্য নিয়ে চু-কিত কিত খেললাম
এসব অবোধের প্লাস্টিক ইকির-মিকির খেলা
গলে চটচটে হওয়া অবধি
বোঝে না ক্ষতির ধর্ম

 

হেয়ারব্যান্ড আর সেফটিপিন
আর গ্লজি ব্লাউজ পরে
মেয়েটি শাড়ি-শায়া তুলে নদী পার হচ্ছে
শাড়ির একমাত্র মায়া, শায়া জলে ভেজা
তাই সে অন্ধকারের বাহানায়
নর্দমার বদলে নদী পার হচ্ছে
দেখি, তার পায়ের ফাঁকে নৌকো, স্টিমার
আর অগণতি মানুষের পার হওয়ার তাড়া
অনেকেই সাঁতার জানে না
অথচ সকলেই মেয়েটির পায়ের মধ্যে থেকে পার হচ্ছে
সকলেই সন্তান, সকলেই সংসারী পুরুষ
অথচ একটি মেয়ে,
যার হেয়ারব্যান্ড, সেফটিপিন আর গ্লজি ব্লাউজ
ফুটে কিনতে পাওয়া যায়–
মাঝখানে জনগণ গঙ্গা গঙ্গা করতে করতে
দু’পায়ের ফাঁকে আটকে গেল

 

মধুমেহ রোগ হলে
মূত্রে এরকম হয়—
এসময় তাদের হাঁটতে বলা হয়
মিষ্টি কমানোর পিন ফোটাতে হয়
আর অনেক ভান শিখতে হয়
এসব আসলে গোটা এক খই-দই খিল্লি জীবন
এই যে ঘেঁটি নেড়ে আপনাকে বোকা বানানো হল
এখানেই ক্লাইম্যাক্স শেষ
তবু আপনি ফাঁক পেলেই থুতু ফেলছেন
হিসু করে দিচ্ছেন
বাড়িতে বাথরুম কিম্বা বেসিন আপনার ভাল লাগার, তবু…
দর্শন বেশী হলে — কবিতার গায়ে চুলকানি হয়
তা হোক,
একটা চার-আনা জীবনের এক আনা মুহূর্তে
জল আর মূত্রের মাঝখানে বর্জ্য ছাড়া আর কী থাকে!

 

শসা-কলা, লায়লা-মজনু
আর দেশপ্রেম কিম্বা ধর্মডিম্ব
এসব নিয়ে ক্ষেতে যাওয়ার আগে
আমাদের শরীরকে বোঝাতে হবে রহস্যটা কী?
রহস্য কেউ কোনোদিন বুঝবে না
ফলে একদল ভালবেসে নিরুদ্দেশ
আর একদল হাম্মা হাম্মা ডেকে জ্বালানি-গ্যাস;
আমাদের বুকের মধ্যে দম জমা হয়
যার যত দম আসলে সে তত নিঃস্ব
এত বেশী ক্ষয়ে তার ক্ষয়াটে মাস্তুল—
আসুন, এই পল-অনুপল রুমালে রাখি
মুখ মুছে বসি চুপচাপ,
গর্ভ থেকেই এত খাদক হয়েছি,
যে আঁশটে, মাংসে খেয়ে খেয়ে রাক্ষস জন্মাই
আর বাইরে বেরিয়ে আচারের-বিচারের বলি দিই—
তাই অজস্রবার মুখ মুছে মুছে ঘোরা দরকার

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4651 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...