বচন নকরেকের কবিতা

বচন নকরেক

 

এখনো তোমাকে মনে পড়লে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি

একসময় সারাদিন এপারা-ওপারা ঘুরে , মদ-মাতাল
জ্যোৎস্না ঢালা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তোমাকে পেতে চাইতাম!
পাশের বাড়ি থেকে সু-স্বাধু রান্নার গন্ধ নিয়ে ধোঁয়া আসত বারান্দায়
যেখানে বেঞ্চে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে থাকতাম একাকী-
আমার মনে পড়ত তোমাকে, আর কাছে পেতে ইচ্ছে করত!
খিদে কী কেবল পেটে ধ’রে…?
দ্যাকতাম জৈবিক তারণায় উন্মত্ত কুকুর দৌড়ুচ্ছে প্রেমিকার পিছু পিছু
মনের চুল্লীর আগুনে গোলক
এখনো উড়ে ঘোরে তোমাকে ঘিরে

এখনও ইচ্ছে ক’রে তোমার জন্য লিখিএক আকাশ চিঠি…

এখনো তোমাকে মনে পড়লে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি

২৬/১০/১৯

নিঃসঙ্গ বাঁশরি

ল্যাজ নাড়াতে নাড়াতে ছুটে যাচ্ছে কোন্‌ প্রভুর কুকুর
চুপ! অন্ধ তুমি …কিছু বলো না, যে যেমন পারে নাড়াচ্ছে ল্যাজ
এত ক্যান প্রয়োজন জানার…কে, ক্যান মারে প্যাঁচ
কাচের জানালায় দাঁড়ালে দ্যাখা যায় পুকুর!

খড়ের গাঁদায় দাঁড়িয়ে রোদ পোহায় গরু
দু’একটি পাখি উড়ে পিঙ্গল আকাশে
তীর্থে এসে জোটে শত্রু
সুদর্শন ভোর লাগে বিবর্ণ-ফ্যাকাশে!

ম্রিয়মান
ভোরের মাধুরী;
ডোবে যায় শিশির জলের নৌকো, মহাকালে প্রাণ
সবাই ছেড়ে গেলেও একা একা…কাঁদে নিঃসঙ্গ বাঁশরি !

২৬/১০/১৯

 

সেই কাঁটাজঙ্গলের আদিবাসী গাঁয়

গভীর কুয়াশায় নিখোঁজ হওয়া পাখিরা এই হেমন্তে
ফিরে আসে, বাতাসের ধাক্কায় ধানের ছড়ায় ছড়ায়
সৃষ্টি হওয়া সুর মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে বিহ্বলতায়__
তৃষ্ণার্ত শালিকের দল চাপকল চেপে জল খায় __চৈত্র-দুপুরে !
ঘাম মুছতে মুছতে গর্ত থেকে বের হ’য়ে আসে বিলুপ্তপ্রায় সজারু

পাতাটনে তোলে রাখা ঢেঁকি আমাকে নিয়ে যায় ছোট বেলায়

সেই কাঁটাজঙ্গলের আদিবাসী গাঁয়_

২৩/১০/১৯

 

খোঁজ নিয়ে দ্যাখো তো কার, কে চ’লে গেল?

মাঝরাতে কার ঝকঝকা ঘুড়ি উড়ে
নাকি কারো প্রাণ উড়ে গেল ?
ধুলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ছেঁড়া পাতা গলে এক ফোঁটা জ্যোৎস্নালো
খোঁজ নিয়ে দ্যাখো তো কার, কে চ’লে গেল ?
বাতাসে উড়চ্ছে লজেঞ্চুসের খোসা… হঠাত দ্যাখে মনে হ’বে
কাগজের ফুল__
স্বপন দ্যাখছি ? দূর…
রাতে দৌড়ে ঘুরে কার পা খোঁড়া কুকুর ?
কে , কারা কাঁদছে ? কেউ কি বিদেয় নিল ?

খোঁজ নিয়ে দ্যাখো তো কার, কে চ’লে গেল ?

২২/১০/১৯

 

পরিত্যক্ত চাকা

ধানখোলায় পরিত্যক্ত গরু গাড়ির নষ্ট চাকা
কাঁটাজঙ্গলের ধারে বাড়ি কার, ফাঁকা !

রাত বাড়লে ইঁদুর- বিড়ালের কান্না
বাড়িতে কেউ থাকে না ?

সরষে ফুলের গন্ধ আসে
কেউ না কেউ তোকেও ভালোবাসে…

অহ! এটাতো কবর
মরে গেছো তুমি … ! এই হলো নতুন খবর!

কত পাখি পাতার ঘরে ঘুমায়
তুমি আজ থাকবে কোথায় ?

গাছের ডালে চড়ে ঘুমায় ডানাকাটা ঘোড়া
বেঁচে থাকতে কেউ তোমাকে দেয়নি ভালোবেসে ফুলের থোরা…

২২/১০/১৯

 

অদৃশ্য সরণী

চোখ খোলো, তোলো, দ্যাখো
সামনে অনন্ত অদৃশ্য সরণী
যা উপরের দিকে উঠে গ্যাছে__ দেদীপ্যামান
এই সড়ক ধরেই নেমে আসে
মর্তে দিব্যলোকের শিশুরা…
বাঘডাসের দেশে খরা, বন্যায় খেয়ে না খেয়ে কাটিয়ে যায়
হ্রস্বীকৃত আয়ুর জীবন
তারপর , আবার অদৃশ্য সরণী ধরেই
ফিরে যায় অনন্তালোকের ঠিকানায়…
ঝরা কাশফুলের মতো নির্ভার উড়ে যায়
আলোর শরীর বয়ে_

১৬/১০/১৯

Be the first to comment

আপনার মতামত...