তুষ্টি ভট্টাচার্য
#২৮
প্যাঁচাটিকে রমণ করতে দেখেছে কাঠপ্যাঁচা
স্থবির হরমোনগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়েছে কাষ্ঠনির্যাস
অগ্রন্থিত রয়েছে তার রামী-চণ্ডীদাস…
রামীর দেহবল্লরী সে দেখেছিল সর্পভ্রমে
শিকারিচঞ্চু শান দিয়ে উঠেছিল তৎক্ষণাৎ।
স্মৃতি, আহ! স্মৃতির কাছে বশীভূত হয়েছে সে বারবার।
তবু আজও সঙ্গমিচ্ছু শরীর তার ডাক দিয়ে ওঠে—
কাঠের কণ্ঠে তার বেজে ওঠে গান
অধিকার কার? কার অধিকারে রয়েছে এই আকাশ, বাতাস, জল?
মহামারি, ব্যাধি আর মৃত্যু থেকেছে কার অধিকারে?
আকাশের গায়ে ওই নীল ঢেউয়ে আঁকিবুঁকি লেখা কার—
‘অনধিকারে অধিকার দিয়েছি আমরা’— ফুলের হরফ ফুটে ওঠে
সহসা মিলিয়ে গিয়েছে শূন্য আকাশে।
কাঠের প্যাঁচাটি পুনর্বার স্থির
কাঠের প্যাঁচাটি পুনর্বার দণ্ডিত হল বুঝি!
#২৯
-ঘ্রাণ পাও?
-চারিদিকে মৃত্যুর ঘ্রাণ কেন এত?
-এ কোন দেশে চলে এসেছে কাঠপ্যাঁচা?
তার জড় বোধ নড়েচড়ে বসে।
কাঠের ভ্রূ তুলে সন্দিগ্ধ নজর পরিমাপ করে
নিছক শিকারি নয় সে এখন
শিকারির তৎপরতা খেলে যাচ্ছে তারই ডানায়।
এদেশ তারই ছিল প্রত্নযুগে
আদিম মানবসভ্যতা ঘুরে দেখেছে সে
বিলুপ্ত প্রজাতির হাতে জমা করেছিল অঙ্গীকার।
আজ যেন সেই লুপ্ত স্মৃতির হাত তাকে ঈশারা করেছে
কাঠের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে পরিবর্তিত বাস।
নিছকই কাঠপ্যাঁচা সে এক!
মৃত্যুশিকারি হতে চেয়েছে তবুও
কাঠের ধারালো ঠোঁটে ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছে
মরণবাণ!
#৩০
অসময়ে বৃষ্টি এসেছে
কোটরের ভেতরে প্যাঁচাটির চোখ
বাইরে স্থির চোখের কাঠপ্যাঁচাটি নিঃসাড়ে ভিজেছে
রাত গভীর হয়ে এল
ঝড়ের তাণ্ডবে কার চালা উড়ে গেল…
কার ভিজে খোলস থেকে গড়িয়ে এল
দুফোঁটা উষ্ণ জল
বৃষ্টি এত কিছুর মানে বোঝেনি
মেঘের থেকে সরে এসে স্পর্ধিত দর্পে
ঝরে পড়েছে সময়ের বুকে।
আজন্ম অবিচল থেকেছে শুধু ওই কাঠপ্যাঁচা
#৩১
বন্দি অর্থ কী?
কারাগার কাকে বলে প্রিয় পক্ষী আমার?
শেকলের ফাঁদে তুমি কতবার পড়েছ?
অন্তরীণ হলে বায়ু শুদ্ধ হয়— একথা জেনেছে সে
বিকার ও বিভ্রম ছেড়ে নিরেট হয়েছে তার মতি
শুধু বাতাসের কানে নয়, আলো ও ছায়ারও কাছে
সবিস্তারে লিখেছে সে—
‘অতল গহীন হলে অবয়ব হ্রাস পায়,
শীর্ষবিন্দু থেকে নেমে আসে স্বাধীন শকট
যতদূর চলে যেতে হয়, ততদূর যেতে প্রয়োজন শুধু
একটি মাত্র সার— অভীপ্সা বলে তাকে’।
#৩২
আজ এই নিরক্তবিন্দুর কাছে একবার এসো
অন্তত একবার ডেকে ওঠো ওই কাঠের গলায়
বাজুক কুমারী হাসি, আরক্তভূমি ওই প্রস্তুত আজ
সোনার কাস্তের ধারে লোহার শৃঙ্খল ভেঙে যাবে—
এই তো আকাঙ্ক্ষা সার!
এই তো অভীপ্সা আমাদের।
মহামতি ভ্রম দেখ সেজেছে আজও হীরের পোশাকে
উজ্জ্বলতার কেন্দ্র থেকে ঠিকরে উঠেছে আলো—
মূঢ় সে এখনও জানে না, উড়ানের মানে!
কবিতাগুলিতে প্যাঁচা তার লৌকিক অনুষঙ্গকে বহন করেও সাম্প্রতিকতার জীবন দ্বন্দ্বে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ।ভাল লাগলো