একটি হাতির মৃত্যু এবং আমরা নেটিজেনরা

পারভেজ খান

 

এনডিটিভির সদ্য(০৩/০৬/২০২০) প্রকাশিত একটি খবর অনুযায়ী কেরলে একটি প্রেগনেন্ট হাতি কে আনারস এর সাথে ক্রাকার মিশিয়ে খাওয়ানো হয় এবং হাতিটি কিছুক্ষণ পর মারা যায়(১)। যথারিতি তারপর সোশাল মিডিয়ার পোস্টের বন্যা। ফেসবুক, টুইটার ভরিয়ে দেন নেটিজেন রা।ক্ষোভ হওয়ার ই কথা, কিন্তু ক্ষোভ কিসের বিরুদ্ধে? বলা হতে থাকে যে রাজ্যে প্রায় সবাই শিক্ষিত সেখানে এই অবস্থা? সরকার কি করছে? বাম সরকার বলেই এসব সম্ভব ইত্যাদি ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়েছে চীনের খাদ্যাভ্যাস টেনে যুক্তি খাড়া করা।যাই হোক কেউ এখনো বলেনি পাকিস্তান থেকে ক্রাকার মেশানো আনারস এনেছে কেরালার বাম সরকার-মানে ওই যেমন বলা হচ্ছিল আর পঙ্গপালের হানা নিয়ে।

যাই হোক আনারসে ক্রাকার মেশানো হয় কেন? আর কারা মেশায়? কেরালা এগ্রিকালচারাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতি সংরক্ষণ বিষয়ের এক্সপার্ট ও.পি. নাম্মির কথা অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামবাসীরা বন্যশুকরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে তারা আনারসে বাজি ভরে রাখে।হাতিটি হয়ত এক্সিডেন্টের শিকার, হয়ত বা না(৬)। হ্যা নিশ্চই নৃশংস, এবং বে-আইনিও বটে(১৯৭২ এর Animal protect act অনুযায়ী), কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু নগরায়ন এর ফল স্বরূপ, বিভিন্ন অঞ্চলে বন গুলোর মধ্যে সংযোগ নষ্ট হয়েছে, আবার বন-জঙ্গল দখল করে বড় শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এবং সেকারণেই বণ্যপ্রাণীর লোকালয়ে ঢুকে পড়া একটা নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।সোশাল মিডায় কল্যাণে আমরা বন অধিগ্রহণ করে কর্পোরেট কে বেচে দেওয়া নিয়ে কোনো কথা বলব না এমনকি খবর ও জানবো না, খবর রাখবো না, কিন্তু শুধুই সেন্টিমেন্ট মিশিয়ে গালাগাল করব-সমাধান হবে?২৮ শে জুন ২০১৯ এর ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে ২৩০০ এর উপর মানুষ মারা গেছেন মানুষ-হাতির সংঘর্ষে। বাকি প্রাণীর সাথে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যাও দেওয়া আছে সে রিপোর্টে(২)।১৫ অক্টোবর ২০১৭ তে ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট বলছে বসতি জনিত সমস্যায় মানুষ ও অন্য প্রাণীর সংঘাতে ভারতবর্ষে প্রতিদিন ২৮ জনের মৃত্যু হয়।(৫)একই ভাবে ম্যান-এনিম্যাল কনফ্লিক্ট বেড়েছে কেরালা তেও। ২০১৬ থেকে ২০১৮ তে সেই কনফ্লিক্ট ৬০২২ থেকে ৭২২৭ হয়েছে(৬)।

‘দ্য প্রিন্ট’ এ প্রকাশিত ৯ই নভেম্বর ২০১৮ এর একটি খবরে(৩) Indian Forest Service এর অফিসার পারভিন কাসওয়ান মন্তব্য করছেন- “Elephants live in a big families-even upto 100 elephants in one herd. They keep moving from forest to forest in search of food and water. But now forests are no more connected, since we have destroyed corridors for their movement. And that is why they are being killed on roads, railway lines, and by electricity lines.” গতবছরে দেশের রেলমন্ত্রী কে লোকসভায় একটি প্রশ্ন করা হয় যে দেশে কত প্রাণী রেল এক্সিডেন্টে মারা যায় এক বছরে? তার জবাব ও দেওয়া হয় মন্ত্রকের তরফ থেকে ৩রা জুলাই ২০১৯ এ, বলা হয় জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০১৯ এর মধ্যে ৩৫৭৩২ টি প্রাণীর মৃত্যু হয় যার মধ্যে ৬৫ টি হাতি।(৪)

যাই হোক এতক্ষণ যা বললাম তাতে এটা স্পষ্ট যে বাসস্থানের সংকোচনের ফলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে এবং সেখান থে সংঘর্ষের কারণে মৃত্যু হয় মানুষের ও অন্য প্রাণীর ও। কিন্তু তাই বলে কি আমরা এখন বলতে পারি ”দাও ফিরে সে অরণ্য, লও হে নগর!” সেটা নিশ্চই সম্পূর্ণ বাস্তববাদী চিন্তা হবে না এই মূহুর্তে। তাহলে উপায়? অহেতুক বনাঞ্চল নষ্ট যাতে না হয় সে যেমন দেখতে হবে তেমনি এনিম্যাল এক্ট অনুযায়ী এই ধরনের ফ্রুট বোম্বিং (ফলের মধ্য বাজি মিশিয়ে রাখা) জাতীয় নিষিদ্ধ কাজে যারা লিপ্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কেরল সরকার এফ আই আর করেছে ও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।সেখানকার বনদপ্তরের কর্মী জানাচ্ছে যে তাদের কাছে তথ্য আছে কোথায় কারা বন্য প্রাণীর হাত থেকে বাচতে এরকম ফাঁদ(ফ্রুট বোম্বিং) ব্যবহার করে, কিন্তু ওট হাতির জন্য ছিল কিনা সেটা বলা এখন ই অসম্ভব(৭)।

এবার সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গ। আমরা কুকুর দেখলে ঢিল মারবো আর হাতির মৃত্যু নিয়ে কেঁদে ভাসাবো দুটো তো একসাথে চলতে পারেনা।আবার কেউ যদি আমার ফসল ক্ষতি করে আমার জীবনের পক্ষে হানিকর হয়ে দাঁড়ায় তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে নেবোনা? তাহলে যে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম মিথ্যে হয়ে যাবে! আমি আমার বাঁচার প্যারামিটার এ তো বাকি জিনিস দেখবো বা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো বা প্রতিক্রিয়া দেবো, সেটাই স্বাভাবিক।পঙ্গপাল শষ্য খেয়ে নিচ্ছে তাই পাকিস্তানের দোষ দিয়ে চুপ করে থাকবো ব্যবস্থা নেবো না তা তো হয়না!যাই হোক এটা ভালো লাগে দেখতে যে এত পশুপ্রেমী আমার আসপাসে কিন্তু আবার খারাপ লাগে যখন দেখি- রাস্তায় শ্রমিক হেঁটে ক্লান্তিতে না খেতে পেয়ে মারা গেলে সেই তারাই চুপ করে থাকে, ইচ্ছে করে গণহত্যায় ইন্ধন দিলে সে নিয়ে কথা ফোটেনা, ও হ্যা হরিণ মারা সেলিব্রিটির জেল হবে কিনা ঠিক করতেই এত বছর লাগে, ধর্ষকের সমর্থনে মিছিল বেরোলে.. না না ওসব পলিটিকাল বিষয়। আমাকে পলিটিক্যালি কারেক্ট হতে হবে তাই হাতি মেরে সাথী আর মানুষ-ছি ছি রাজনীতি।


তথ্যসূত্র:

  1. https://www.ndtv.com/india-news/kerala-pregnant-elephant-that-ate-cracker-stuffed-pineapple-walked-for-days-in-pain-2239774
  2. https://www.thehindu.com/sci-tech/energy-and-environment/elephants-killed-over-2300-people-in-last-five-years-environment-ministry/article28208456.ece/amp/#aoh=15912564199373&amp_ct=1591256857560&csi=1&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&amp_tf=From%20%251%24স
  3. https://theprint.in/india/governance/human-animal-conflict-is-clear-present-danger-and-india-cant-afford-to-ignore-it/147105/
  4. https://m.timesofindia.com/india/no-of-animals-killed-on-rail-tracks-has-reduced-this-year-government/amp_articleshow/70063099.চমস
  5. https://www.hindustantimes.com/india-news/28-indians-are-killed-by-animals-everyday-health-ministry-report/story-DJbEudOfnlKQ28bclH90RO.html
  6. https://www.livemint.com/news/india/in-god-s-own-country-a-horror-story-of-wildlife-killing-unfolds-11591210828039.html
  7. https://www.thehindu.com/news/national/kerala/kerala-elephant-death-forest-officers-have-information-on-culprits/article31737270.ece

 

Be the first to comment

আপনার মতামত...