সঞ্জয়ের কবিতা

সুখেন্দু তেলী

 

আয়নার ভিতর এত তথ্য কেন ?
আমি তো তাকে ডাকি না, বরং
চলে যেতে বলি, তবে কে তাকে ডাকে ?
ঘরের লাইট অফ করে, মুখ ঢেকে
সন্তর্পণে তার কাছে গিয়ে বলি, তথ্য,
তোমার নীতির প্রতি আমার উদারতা নেই
তুমি কাছে এলে আমার ঈশ্বর বড় বিচলিত হন,
এই ঘনাবৃত থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে যাও
মিথ্যে স্বপ্নচারী হয়ে সময় স্তব্ধ করা যায় না,
যে মিথ্যে রাম তোমায় ডাকে, তার কাছে যাও–
পুজো ও পুজ্যের ডালা হয়ে; আমি তো তোমায়
ডাকি না, চলে যেতে বলি, তবে এলে কেন ?

তথ্য শুধু ভেংচি কাটে, সগর্বে বলে, আমি তথ্য
তোর জন্ম, তোর মৃত্যু, পরমব্রহ্ম–

প্রচণ্ড ভিড়, গা ঠাসাঠাসি, বাস চলছে
রাস্তা থেকে সোজা শ্মশানের ভিতর; চণ্ডাল
ছেঁড়া আসনে ধ্যানস্থ মৃত অস্থির প্রতি,
কাঠ পুড়লে ডোমের মদ ও স্বজনের কান্না
ফুটন্ত হাঁড়ির ওপর অভিনব অঙ্কে উপচে পড়লে, দেখি,
অতিবিনম্র কণ্ঠে তথ্য টপ্পা গায়, আয়নায় স্বনিত–
প্রাণ দাও, মোহর নাও !

মরা মানুষের চোখ নেই, সম্পত্তি নেই, নেই শরীর
যে-যাই-বলে তাই বিশ্বাস করে, করুণা পায়, ভাতের সন্ধান–
দরবেশের মতো না-পাওয়া প্রেমকে তাদের নতমস্তক, শুধু
অনুসরণ করে, কামনা করে না;
গোত্র নিয়ে সাগর, অরণ্য পেরিয়ে প্রেতাত্মাগামিনী…
তারা নিঃস্ব,
ঘামের ফসলে অধিকার থেকে বঞ্চিত, নিজস্ব বলে কিছু নেই

যারা শ্রম দিতে পারে, তারা মরে না, ভিটেছাড়া হয়
যারা পারে না, তাদের মরণ হয়

কৃষ্ণ, তোমাকে কারা যেন মারছে, আমি শুনতে পাই;
দীর্ঘ প্রেম নিয়ে আয়ুষ্মান সাগরে অস্ত্র শাণিত হচ্ছে, যে
তরণী চালায় তাকে মারবার সংকল্প মহাজ্ঞানী শকুনির,
প্রথম অস্ত্র, বিশ্বাস– কিছুটা বলিষ্ঠ, কিছুটা সংহার
পরের অস্ত্র, কালকূট– কিছুটা মারি, কিছুটা হানি
দুই অস্ত্র নিঃসঙ্কোচে প্রত্যেক কবন্ধ অতিক্রম করে,
মৃত্যু অনিবার্য হলে পূর্ণিমা দ্যাখায় অন্ধকার, কৃষ্ণের
তোয়হীন খিদে, ক্ষত, চিৎকা-র–
মা যেভাবে সদ্য মরা সন্তানে উন্মাদ,

তাতে কাজ না হলে, সিঁদুর না হলে
আয়নার ভিতর থেকে তথ্য আদেশ দেয় শেষ অস্ত্রকে–
উস্কানির মস্তকে থাকা– ধর্ম,
এমন সঙ্কটে, শ্রীকৃষ্ণের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলীন হতে পারে !

প্রত্যেক ধারাসম্পাত শুধু তৈরি করে যায় ধ্বংসস্তূপ,
অসহায়রা তার অঙ্ক কষে না, খোঁজে
একটু জোগাড়, একটু আশ্রয়–।

আকাদেমির ভিতর প্রহেলিকাময়; দর্শকবৃন্দ এবং
নাট্যকার মহাকালে ধ্যানস্থ, সংলাপের পর সংলাপ,
দর্শকের মুখে ঢোকানো সুরবোধ, বলে,
‘দুলসিনিয়া ডনকে ভালোবাসে’ !
দর্শক বিশ্বাস করে, করলে, প্রম্পটারের বিকাশ না হলেও
তথ্যর বিকাশে প্রত্যেকে নতমস্তক।

সে-এক ভীষণ মজার যুদ্ধ,
যুদ্ধে কেবল সংখ্যা মরে
যুদ্ধ ছাড়া প্রত্যেকে মরে, মরেই যায়।

Be the first to comment

আপনার মতামত...