কলকাতা, নয়… — ৩য় পর্ব

অশোককুমার মুখোপাধ্যায়

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

গলিপথ, রাজপথ

হেয়ার স্কুলে সকালের ক্লাস আরম্ভের আগে গান— প্রেয়ার! আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর…। রেখাদি হারমোনিয়ম বাজিয়ে গান ধরতেন, কখনও বেলাদি, সবাই গলা মেলাত। মানুষটির মতোই রেখাদির গলা নরম, সুরেলা। সেই তুলনায় ল্যামব্রেটা স্কুটার চেপে স্কুলে আসা নাতিদীর্ঘ বেলাদি, বেলা দুগার, মেজাজে একেবারে ঝাঁঝালো দেশাত্মবোধক। ১৯৬২-৬৩ সালে শিল্পী বরের পেছনের আসনে বসে প্রতিদিন কেউ স্কুলে আসছে, এ তেমন সাদামাটা দৃশ্য নয়! দেখার জন্য আমাদের অনেকেই নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকত।

গানের পর সারি দিয়ে ক্লাসে যাওয়া। সাড়ে দশটায় ছুটির ঘণ্টা বাজলেই হইহই করে বেরিয়ে এসে বাড়ি ফেরা। যবে থেকে নিজের মতো পথচলা, ফিরতি রাস্তার সামান্য অদল-বদল হয়। মির্জাপুর স্ট্রিট (বাবা বলতেন, এই রাস্তার নাম হয়েছে সূর্য সেন স্ট্রিট। অতএব, নতুন নামে ডাকা উচিত)-শ্রীগোপাল মল্লিক লেন-ব্রজনাথ দত্ত লেন-সিদ্ধেশ্বর চন্দ্র লেন-আমহার্স্ট স্ট্রিট-স্কট লেন। কলেজ স্ট্রিটে ট্রাম চলত, বাসও। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলেটির রাস্তা পার হতে অসুবিধে হয়নি তেমন। স্কুল ফটকের সামনেই জেব্রা ক্রসিং। দু-দিক ভালো করে দেখে নিয়ে রাস্তা পার হও, গোলদিঘির রেলিঙে হাত বুলোতে-বুলোতে, দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ঘেরাটোপের মধ্যে থাকা পান্থপাদপ গাছটিকে এক ঝলক দেখে নিয়ে সূর্য সেন স্ট্রিটে পড়েই গলিপথ ধরে নাও। পরস্পরের সই-পাতানো গলি সব! ঠিক তোমায় পায়ে-পায়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটে পৌঁছে দেবে। ব্যস, দু-দিক দেখে ওই বড় রাস্তা পেরিয়ে স্কট লেনে ঢুকে আটচল্লিশ নম্বরের এলা রঙের বাড়ির সবুজ দরজায় কড়া নাড়া। খুবই সহজ তখন হাঁটাচলা!

শ্রীগোপাল মল্লিকের গলির একটি বাড়ি থেকে পাওয়া যেত ডাল সাঁতলানোর গন্ধ। সে আশ্চর্য গন্ধ আমাদের সঙ্গে-সঙ্গে পথ চলত যতক্ষণ না এই গলি অন্য গলিতে ঢুকিয়ে দেবে তোমায়! যেদিন পাওয়া যেত না, ধরে নিতাম যিনি রান্না করেন তাঁর ডেঙ্গু হয়েছে! কথায়-কথায় ডেঙ্গু হয় তখন। আমাদের পাশের বাড়ির মেয়ে শিবানী, যে খোনা গলায় কথা বলত, মারাই গেল ডেঙ্গুজ্বরে। তারপরেই আমার ভাইয়ের ঘনজ্বর এবং তা কালীপুজোর সময়ে। নিশ্চিত। কারণ, ওর মুখের হাসি দেখবার জন্য সদর দরজা খুলে তুবড়ি জ্বালান হল ঘটা করে। পরে জানা গেল, না ডেঙ্গু নয়, বাতজ্বর— রিউম্যাটিক ফিভার!

গলিপথের আর এক চেনা গন্ধ নোনাধরা দেওয়ালের। দেওয়ালের গায়ে অবধারিত, অনিবার্য উই ভূগোলের ম্যাপ এঁকে চলেছে! আমাদের চাঁপাতলা, নেবুতলার উই বিশ্ববিখ্যাত। সত্যি! এই যে সারকুলার রোডের (এখন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) জোড়া গির্জা, সেন্ট জেমস চার্চ, তার আগের ঠিকানাটা কোথায়? নেবুতলা লেন। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সেন্ট টমাস চার্চের আদলেই তৈরি। বিশপ রেজিন্যাল্ড হেবার ঈশ্বরের সেবায় একে উৎসর্গ করলেন ১২ নভেম্বর ১৮২৯। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল উইপোকার আক্রমণ। গাঁথনিতে উই, দেওয়ালে উই, কাঠামোতে উই! ভেতরে-ভেতরে ফোঁপরা হয়ে গেছে চার্চ-বাড়ি। তিরিশ বছর পরে একবার সারাবার উদ্যোগ নিয়েছিল সাহেবরা। কাজ চলবার সময়ে, ২৩ অগস্ট ১৮৫৯ ভোরবেলায় বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ল। একটা গোটা চার্চকে মাটিতে মিশিয়ে দিল উইপোকাবাহিনী! সাহেবরা অন্যত্র পালিয়ে বাঁচল।

এইজন্যই নিয়মিত ধুলো ঝাড়তে হত চাঁপাতলা, নেবুতলার পড়ুয়াদের। সে তুমি উকিল-অধ্যাপক-গবেষক-ডাক্তার যাই হও, উই ছাড়বে না। সাতকাণ্ড রামায়ণকে অন্তত তিনবার উইয়ের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছি আমি, সেই বালকবেলায়! কিন্তু কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডের কয়েকটি পাতা একবারে দাগী হয়ে গিয়েছিল। মেঘনাদবধ কাব্যের দিকে তেমন নজর দিতে পারিনি মাস ছয়। দেখলাম মলাট অক্ষত। কী আনন্দ! কিন্তু যেই না আদর করে পাতা সরানো, সব ধুলো! যারা একটা গোটা চার্চ উপড়ে দিচ্ছে তাদের কাছে রামায়ণ-মহাভারত-মেঘনাদবধ কাব্য, ভারতের সংবিধান সব নস্যি! প্রতি মাসে ইলেকট্রিক মিটারের নম্বর টুকতে আসতেন যারা, তাঁদের জানাই ছিল মিটার বক্সের সামনে উইয়ের সারি দেখা যাবে, না দেখা গেলে টর্চধারী কোনও রসিক ইন্সপেক্টর জিজ্ঞাসা করতেন— কী ঝাড়পোঁছ হয়েছে নাকি!

কানাই ধর লেন দিয়ে ফেরা হত কখনও-সখনও। ওই গলিতে হারমোনিয়ম-তবলা বানাবার দোকান ছিল। চোখের সামনে দেখতাম বেসুরো আওয়াজ কীভাবে সুরের বশ মানছে। অবাধ্য প্যঁ-পোঁ-ভ্যাঁ-পোঁ-ক্যাঁ-ক্যাঁ বদলে যাচ্ছে শান্ত-শিষ্ট ‘সা-রে-গা-মা’য়। এইরে… ঠিক মিলেও মিলল না সুর… কারণ কানে তো তেমন সুর, যা সন্ধেবেলায় চারপাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসে, তার সঙ্গে ঠিক মিলছে না… এই… এইবার মিলেছে। যতক্ষণ না সুরে বসছে সব কিছু, নড়তে মন চাইত না— দম আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। মিলে গেলে ‘ঠিক-ঠিক’ ভঙ্গিতে মাথা নড়ত আমাদের। যিনি সুরে বাঁধছিলেন যন্ত্রটিকে, হাসতেন— ‘এখনও নিখুঁত হয়নি, আরও সুর আসবে, আরও সূক্ষ্ম হবে… যত বাজাবে তত সুর খুলবে… ছ মাস পরে টিউনিং করালে আরও ভালো হবে।’ কলকাতার গলিতেই সুর চিনতে শেখা প্রথম। খুব ইচ্ছে করত হারমোনিয়ম কেনবার। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাড়ির অনেক ইচ্ছের মতোই এও বিশ্বকর্মার পুজোর কাটা ঘুড়ি— নীরবে হাওয়ায় ভেসে গেছে। কানাই ধর লেনের আর এক আশ্চর্য— ছাতার বাঁট তৈরির কারখানা। তখন তো ছাতার বাঁট মানে কোনও জটিল প্লাস্টিক বা দো-আঁশলা ধাতুর কারবার নয়, এ হল প্রাকৃতিক বেতের উপাচার। তার আঁশ ছাড়িয়ে ঘষে-ঘষে মোলায়েম করা থেকে চাকচিক্য আনবার ক্রিয়াকর্ম দেখা মানে চৌষট্টি পাতার রুদ্ধশ্বাস স্বপনকুমার গোয়েন্দা-কাহিনি পড়া! কালো কাপড়ের ছাতার জন্মবৃত্তান্ত আর শুঁয়াপোকার প্রজাপতি হয়ে ওঠায় খুব কিছু তফাৎ নেই।

কানাই ধর লেনে নাকি যুগান্তর পত্রিকার দপ্তর ছিল, বাবা বলেছিলেন। এ সেই ১৯০৬ সালের যুগান্তর, যাতে ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, দেবব্রত বসু, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়— এঁরা সব। যাতে নিজেদের ভয় ভেঙে ইংরেজদের লাঠিপেটার দাওয়াই দেওয়ার কথা লেখাতে এক বছরের জন্য জেলে থাকবার সাজা হয়ে গেল ভূপেন্দ্রনাথের। এমনি থাকা নয়, তেলের ঘানিও টানতে হবে স্বামী বিবেকানন্দের এই ছোট ভাইটিকে! জ্ঞানগম্যি হওয়ার পর বাড়িটা খুঁজে বের করবার চেষ্টা করেছিলাম। ঠিকানা ধরে বাড়িতে গিয়েওছিলাম, কিন্তু যুগান্তর পত্রিকার কোনও চিহ্ন নেই! আমাদের স্কট লেনেও একটা দাঁত বের করা বাড়ি ছিল, সম্ভবত দশ নম্বর, অরবিন্দ ঘোষ নাকি লুকিয়েছিলেন কিছুদিন, অনেকদিন পরে দেখলাম, তাতে একটা ফলক লেগেছে।

সিদ্ধেশ্বরচন্দ্র লেন এমনিতে সাদামাটা। এলাকার অন্য বাড়ির মতোই এই গলির বাড়িগুলোও গায়ে-গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে। শুধু দুটি উঁচু বাড়ির মাঝে একটুখানি ফাঁক— বাড়িয়েও যদি বলি আড়াই ফুট। বাড়িদুটিকে পর্বত ভাবতে পারলে, এই ফাঁক নিশ্চয়ই গিরিখাত। এ-পারে চোখ রাখলে ও-পারের লোক চলাচল দেখা যায়। সেই তিনশো মিটার লম্বা গিরিখাত দিয়ে অচঞ্চল হাঁটলে তিন মিনিটে ও-পারের প্রেমচাঁদ বড়ালের গলিতে পড়া যেত, যেখানে ওই রাস্তা আমহার্স্ট স্ট্রিটের কোলে ওঠবার তোড়জোড় করছে। আচমকা খুঁজে পাওয়া এই গিরিসঙ্কট সত্তর সালের সাহসী বন্ধুদের পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় খুব কাজে লেগেছিল।

শনি-রবিবারের বিকেলটার জন্য মুখিয়ে থাকতাম দু ভাই (এক পিসি ‘আদর করে’ আমাদের ১৯৫৯ সালের হিন্দি ছবির নামে ‘দো গুণ্ডে’ বলে ডাকত)। কারণ, বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া হবে। বৌবাজার স্ট্রিট আর আমহার্স্ট স্ট্রিট যেখানে কাটাকুটি খেলছে, ঠিক সেইখানেই এম বি সরকারের সোনার দোকান, যা এখন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, তার সদরের ঠিক উল্টো ফুটপাথে দাঁড়ালে দেখা যেত ডানদিকে শিয়ালদা স্টেশন থেকে (ওইখানেই ট্রামডিপো) ট্রামলাইন গড়াতে-গড়াতে কোলে বাজারের পাড় ঘেঁষে এসে বৌবাজার স্ট্রিট ধরে পশ্চিমের গঙ্গা লক্ষ করে ছুটেছে। চোদ্দ নম্বর ট্রাম আসত ঠিকই। দাঁড়াতে-না-দাঁড়াতেই, প্রথম কামরায় উঠেই ঝপ করে সবুজ আসনে বসে পড়া। শনি-রবিবার খালিই পাওয়া যায়। সেই হাইকোর্টের গুমটিতে পৌঁছে নেমে পড়তাম আমরা। ফিরতি ট্রামের সময়গুলি জেনে নিতেন বাবা। তারপর হাঁটতে-হাঁটতে সোজা ইডেন গার্ডেনস্‌। বাগানের দক্ষিণের ফটক দিয়ে গড়ের মাঠ। দৌড়ের নেশা চেপে যেত। দৌড়তে-দৌড়তে মনে হত এ যেন গল্পে শোনা তেপান্তরের মাঠ! যতই দৌড়ই কোনও দিন ফুরোবে না।

সন্ধের রং ধরলেই, পূবপ্রান্তের দোকানগুলিতে আলো জ্বলে উঠত। আলোর কারিকুরিতে দেখা যেত কেটলি থেকে কাপে চা পড়ছে। কাপ ভর্তি হতেই আলো নিবে আবার জ্বলে উঠল— লিপটন টি। এনি টাইম ইজ লিপটনস্‌ টি টাইম।

হাইকোর্টের ট্রামগুমটিতে ফিরে কখনও দেখা যেত সবুজের ছোঁয়া লাগা সাদা ট্রাম একলা, চুপচাপ ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে। কোনও যাত্রী নেই। আমরা বসলে কিছুক্ষণের মধ্যেই কন্ডাক্টর ছাড়বার ঘন্টি বাজাতেন।

এমনই এক রবিবারের বিকেলে আশুকাকু আমাদের রাবড়ি খাইয়েছিল। সময়টা যে বিকেল ছিল, বেশ মনে আছে। কারণ, সকালবেলায় জেঠুর কাছে বকুনি খেয়েছিলাম।

এক ডজন কচুরি কিনতে পাঠিয়েছিল জেঠু। রাস্তা পেরোলেই জগৎলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। কচুরি কিনলাম। না চাইতেই দুটো গুজিয়া ফাউ পাওয়া গেল। এই ফাউ পাবার ব্যাপারটা বড় অদ্ভুত। বিশেষত, টক দইয়ের ব্যাপারে। যদি মিষ্টি বা নোনতা কেনার পর বলা হত— একটু দই ফাউ দাও না কাকু, দিয়ে দেবে। কিন্তু যদি সত্যি কথা বলা যায়, একটু পাতবার মতো দই দাও— দেবে না। সন্ধেবেলায় ছুঁচ কিনতে গেলে দেবে না। কী যে সব দস্তুর!

সকালবেলায় ফাউ দইয়ের দরকার নেই, পাওয়া গেল গুজিয়া। মিষ্টিদুটো মুখে পুরে, শালপাতার চ্যাঙারি ভরা গরম কচুরি হাতে দুদিক দেখে রাস্তা পেরিয়ে স্কট লেনে ঢুকে পড়েছি। আর একটা বাড়ি পার হলেই আমাদের বাড়ির লোহার গেট। হঠাৎ হই হই করে উঠল রাস্তার লোক। মাথায় কে যেন ঝাপটা মারল। ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা! দেখি একটা চিল ছোঁ মেরে চ্যাঙারির ঢাকনা আর কয়েকটা কচুরি নিয়ে উধাও! ঘরে ফিরতেই জেঠুর বকুনি— ‘একদম হাঁদারাম, চিলটাকে তাড়াতে পারলি না!’ বাবা জেঠুর পক্ষে। মাও চুপচাপ। খুব রাগ হল। আর একবার হাঁদারাম বলতেই আশুকাকু ক্ষেপে গেল— ‘আচ্ছা বড়দা, ও কী করে বুঝবে চিল আসছে? আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটবে নাকি? ঠোঙাটা হাতছাড়া না করে যে ঘর অবধি এনেছে এই-ই অনেক… যে কটা কম পড়বে আমি নিয়ে আসছি..’ দড়াম করে দরজা বন্ধ করে কাকু বেরিয়ে গেল।

মনটা খারাপ হয়ে রইল অনেকক্ষণ। আসলে গুজিয়া মুখে দিলেই আমার সব বোধ জিভে জড়ো হয়। এই জন্যই অন্যমনস্ক ছিলাম। তবেই না চিলটা…

বিকেলবেলায় আশুকাকু নিয়ে গেল সেই জগৎলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। ভেতরে বসলাম। শ্বেতপাথরের টেবিল, কাঠের চেয়ার। তখন সব খাবারের দোকানই বোধহয় এমনই। দোকানদারকে দেখতে মালপোয়ার মতন। তাকে কাকু আলাদা করে কীসব বলল। একটু পরেই প্লেটে করে লালচে-সাদা আধা-তরল পদার্থ চলে এল টেবিলে।

–এ আবার কী?
–খেয়েই দ্যাখ্‌ না…

মুখে দিয়েই মনে হল কোথায় লাগে গুজিয়া-জিলিপি-অমিত্যি। এ তো দারুণ খেতে, আরামে চোখ বুজে আসে।

–কাকু এটা কী?
–রাবড়ি… ওই দ্যাখ্‌ রাবড়ি তৈরি হচ্ছে।

দোকানের কোনায় মাটির উনুন। দুধ ভর্তি বিশাল কড়া চাপান উনুনে। কড়ার তলায় আঁচ। ওপরে হাতপাখা নেড়ে চলেছে একটি ছেলে।

খাওয়ার পরে কাকু দোকানিকে বলল, ‘এ আমার ভাইপো, যখনই এসে রাবড়ি চাইবে, দেবেন।’

তারপর অনেকবার জগৎলক্ষ্মীতে গেছি। বলেছি ‘আশুকাকুর ভাইপো, রাবড়ি খাব।’ দোকানি সঙ্গে-সঙ্গে বলতেন, ‘হ্যাঁ বাবা, বসো।’ কথার পিঠেই হাঁক পাড়তেন, ‘এই… আশুদার ভাইপোকে রাবড়ি…’ যার বোঝবার সে ঠিকই বুঝে যেত ফরমায়েশটা। টেবিলে এসে যেত রাবড়ি আর গেলাস-ভর্তি জল! আশুকাকু তখন আমার নায়ক। কাকুর নাম করলেই এইরকম আড়েবহরে বিশাল এক দোকানদার বসিয়ে রাবড়ি খাওয়ায়! এরকম কাকু কজনের আছে?

পরে, লায়েক হওয়ার পর বুঝেছিলাম, কাকুর নামে ওই দোকানে মাসকাবারি খাতা ছিল। মাসের শেষে কাকু হিসেব মেটাত।

 

(ক্রমশ)

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...