![bk-oct-22](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bk-oct-22.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
চার নম্বর নিউজডেস্ক
উৎসব সম্প্রীতির কথা বলে। স্বতন্ত্রভাবে বড় পত্রিকার শিরোনামে থাকার মতো ঘটনা কটা হয়? অধিকাংশই অনালোচিত, অথচ নিজস্ব পরিসরে তা সমাদর ও ভালবাসায় ভরে থাকে। উৎসব এভাবেই জানান না দিলেও বছর বছর ভালবাসার কথা বলে আসে।
বাংলা বা বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে ত্রিপুরা, ওড়িশা বা অসম, বা খোদ বাংলাদেশ— এমন গল্প সংখ্যায় কম নয়। যেমন অসমের শিবসাগরের নবযুবক দুর্গোৎসব সমিতি। আয়োজকের অধিকাংশই সংখ্যালঘু মুসলিম। থানা রোডে বাপরিপট্টি মসজিদের দেওয়ালের একই পরিধি ব্যবহার করেই বাইরে বড় করে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে, যা এবছর ৬২-তে পড়েছিল। পুজোর লাউডস্পিকার যেমন চলে চললেও দুই ধর্মের বোঝাপড়ায় নমাজের সময় স্পিকার বন্ধ থাকে। আবার নমাজ হয়ে গেলে চালু হয়ে যায় গান। পুজোর ওই কটা দিন এভাবেই উৎসবে মাতেন স্থানীয় মানুষ। ফরিদুল ইসলাম, সঞ্জয় পারেখদের এই মিলিত সহাবস্থানের উদ্যোগকে প্রথমে স্থানীয় প্রশাসন অবাস্তব বললেও পরে মেনে নেয়। প্রথমে দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোগে অন্য একটি অঞ্চলে পুজো চললেও স্থানের সঙ্কুলান কম হওয়ায় মসজিদের পাশেই পুজোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা প্রাথমিক বাধা কাটিয়ে এখন রমরমিয়ে চলছে।
![](https://i1.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bkoctin@1.jpg?resize=640%2C427&ssl=1)
ত্রিপুরার তুলারমঠ, মল্লারপাড়ার মুসলিম বস্তি। সঙ্গে সামান্য কিছু হিন্দু। মিলিত সহাবস্থানের আরেক গল্পের নায়ক জাহাঙ্গির মিয়া, হানিফ আলি, শাহ আলম, স্বপন দাশ। আয়োজকদের দুর্গাপুজো ২০০৩ থেকে শুরু হয়ে এবছরও সমান তালে হয়েছে। পুজো কমিটির সদস্য ৫০০০ পেরিয়েছে। স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হানিফ বা শাহ আলমদের চোখে মুখে পুজোর কটা দিন আলোর রোশনাই। ত্রিপুরার সোনামুড়ার কাছে আরেক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে ভালবাসায়, নিষ্ঠায়।
![](https://i1.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bkoctin@2.jpg?resize=640%2C360&ssl=1)
অন্য এক গল্পের নায়ক কোহিনুর ইসলাম। ১৯৮৬ সালে ওড়িশার বারিপদা সংলগ্ন গাংরেজ গ্রাম পঞ্চায়েতের তেঁতুলিডাঙা গ্রামের ৭৪ বছরের বৃদ্ধ কোহিনুর ইসলাম তৈরি করেছিলেন তেঁতুলিডাঙা দুর্গাপূজা কমিটি। কমিটির সদস্য সংখ্যা আজ ৫০০য় পড়েছে। ৩৭ বছর ধরে চলে আসা এই পুজোয় প্রধান আয়োজক কোহিনুরকে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তাঁর দুই মেয়ে তাহা ও জোহা পারভিন। বড় মেয়ে তাহা একটি মার্কিন কোম্পানির এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত, ছোট মেয়ে জোহা অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। আর্থিক সহায়তার ভার এই দুই মেয়ের। কেন শুরু করলেন পুজো? কোহিনুরের স্মৃতিতে চলে এল, সুদূর বারিপদায় পুজো দেখতে যাওয়া গ্রামের মেয়েদের মুখ। কোহিনুর ভাবলেন, পুজো কেন গ্রামে হতে পারে না? নিজেই উদ্যোগ নিলেন। তারপর বাকিটা রাজ্যে এক নিদর্শন তৈরি করল। ২১ বছর ধরে সেই পুজোর পুরোহিত পরিতোষ নন্দ বলছেন যত্ন দিয়ে এবং যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গেই কোহিনুরের পরিবারের এই উদ্যোগের কথা। আলো, সাজসজ্জা সব মিলিয়ে প্রতি বছর চমকে দেয় তেঁতুলিডাঙা। সঙ্গে থাকেন দীপক মিশ্র, বিজন দাশ, ভগীরথী নায়েক বা অনিল কুমার নায়েকদের মতো বন্ধু-সদস্যরা।
![](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bkoctin@3.jpg?resize=640%2C427&ssl=1)
বাংলাদেশের নারাইল জেলার মহিষখোলায় মসজিদ, মন্দির ও চ্যারিটি হাসপাতালের এক সহাবস্থানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বহু বছর ধরে, যা এবছর ৪০-এ পড়ল। চিত্রা নদীর তীরে বয়ে যাচ্ছে ধর্মীয় বিভেদ পরোয়া না করা অন্য এক শক্তির আরাধনা।
![](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bkoctin@4.jpg?resize=640%2C359&ssl=1)
সবশেষে কলকাতার গল্প। খিদিরপুরের ফাইভ স্টার ক্লাবের ৭০ বছরে পড়া দুর্গাপুজোর কমিটির ১৩ জন সদস্য মুসলিম। আলিপুরের একটি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ৬৩ বছরে পড়ল ৭৮ পল্লীর দুর্গাপুজো। ৭০ জন সদস্যের আয়োজক কমিটির ৪০ জন মুসলিম। এবং তৃতীয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত গল্পের নায়ক মহম্মদ তৌসিফ রহমান। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ১৩-এ শরিফ লেনে চলে আসা দুর্গাপুজো ১৬ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। এলাকার সমস্ত হিন্দু পরিবার সমস্যার কারণে অন্যত্র চলে গেলেও থেকে গেছিল সেন পরিবার। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজো ২০২১ সালে নতুন করে শুরু হয়। অঞ্চলের একমাত্র হিন্দু সেন পরিবারের হয়ে দুর্গাপুজো আয়োজন করে আসছে ২৯ বছরের তৌসিফ। পরিবারের সায়ন্তন সেন বা গায়ত্রী দেবীর কথায় ঝরে পড়ে ভালবাসা। অবশ্য এই পুজোর আয়োজন ছাড়াও ছেলেটির পরিচয় ছড়িয়ে গেছে আরও অনেক জায়গায়। একসময় দলীপ ট্রফিতে খেলা ক্রিকেটপাগল তৌসিফ একটি দুর্ঘটনায় পায়ে বড়সড় চোট পান, যা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে শেষ কুড়ুল চালায়। অবশ্য স্বপ্নের কারিগররা এতে দমবার পাত্র নন। রাজাবাজার অঞ্চলে র্যাগপিকার মহিলাদের জন্য টয়লেট বানানোর কাজ শুরু করেন তৌসিফ। ৫০ থেকে টয়লেটের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছয় ৩০০-তে। যার পরিণাম ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এইচডিএফসি-র পক্ষ থেকে তৌসিফকে ‘আসলি হিরো’ সম্মানে ভূষিত করা।
![](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2022/10/bkoctin@5.jpg?resize=640%2C360&ssl=1)
তাই, পুজো আসুক, যাক, খবরে আসুক, না আসুক, কোথাও না কোথাও আলপনাদের পাশে আয়েশারা থাকছে, ভালবেসে থাকছে, এও কি কম পাওনা?