পঙ্কজ চক্রবর্তী

একগুচ্ছ কবিতা

 

বহুরূপী

তোমাকে বোঝার আগে পেয়েছি সূর্যাস্ত, জন্মদাগ
সুন্দর, প্রতিদিনের সুন্দর, অপমানের সুন্দর
তোমার তুমুল যৌনতা আমার কে হয়?
অন্ধকার ভিজে অন্তর্বাস, লাল বাড়ির বারান্দা
তন্ময় কষ্ট সব পেরিয়ে তোমাকে আমিও তো চাই
পাশের ঘরে, খড়ের গাদায় ছুঁচের মতো!

পাব না তবু, সম্ভাবনাটুকু হিংস্র মনের পদাবলি
বিদ্যাপতি বিরহ,
অনার্স ক্লাসের রোদ্দুর পেরিয়ে
মুক্তোবনে অনর্থক উলুধ্বনি নিজেই সেজেছে বহুরূপী

ফাঁকা ক্লাসঘর
পাজামার দড়ি খুলে ফেলছে মানুষ গড়ার কারিগর…

 

ফুড ডেলিভারি পার্টনার

সতেরোই বৈশাখ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, তোমার স্মৃতি নাই
তুমি জানো ১লা মে, মে দিবস, আনন্দ বাজারে
‘গণশক্তি’ রঙিন পাতা দেয় ফ্রিতে
তোমার জীবন মিডিয়া লিখেছে নিরপেক্ষ ছোবলে, অক্ষরে

মাত্র চার টাকা দেশি ও বিদেশি ঘটনার তুমুল প্রবাহ
মাত্র চার টাকা, বিনিময়ে ভরে নাও ওহে, দার্শনিক প্রজ্ঞার ঝুলি
আমাদের দুর্দশা যাবে না, কথাগুলি নেহাতই মামুলি

চায়ের দোকান, বৃষ্টির দিন, আঠেরো ঘণ্টার ডিউটি
তোমার গায়ে মুতে চলে যায় দেবতা ও পাইলট কার,
ভাবলাম ফিরে যাই, নিয়ে আসি ঘরে

ফিরিয়া ফল কী। আত্মীয়হীন পৃথিবীতে কে বা কাহার

 

শোকের আয়ু

যেন হেঁটে যাই গঙ্গাসুলভ, ফুরোয় না নিকটাত্মীয়
দেখা হয়েছিল, শ্রাদ্ধের দিন, কলা ও তিলের হলুদে
চলে যাওয়াটুকু এমনই রঙিন

আছে বাড়ি, সাবানে, তৈজসপত্রে, পুরনো ক্ষতের মাধুর্য
তবুও উনোন, খিদে, প্রবলতা, মহতের ধ্যান ভেঙে দেয়

নতুন জামাকাপড়, ছাতা, বিছানা বালিশ নিয়ে
ছোট ছেলে একটি ছায়ার লোভে পিছু পিছু ছোটে
পুরোহিত বসেছে রিক্সায়

পুকুরে, কলার খোলে, বিকেল পাঁচটা নাগাদ, সূর্যাস্তটি যায়…

 

আত্মপক্ষ

তিনটি চায়ের দোকান খুলে রাখি বুকের ভিতর
এই রহস্য, এই আদিম লিখেছি কবিতা

তোমাদের চিত্রকল্প, আশ্চর্য রূপক থেকে দূরে
নিজস্ব ভাষা নাই
তবু লেখা হয়, লেখা হবে দু-একটি সামান্য কবিতা

চায়ে ভেজা বাসি রুটি, শান্ত প্রস্তাবনা

পূর্বসূরি প্রণয় বাদাম ভেঙে উঁচুনিচু
নেমেছে মিছিল, ভাঙচুর
পর্দানশিনের পশ্চিম জল ও বাতাস

তারও আগে খুলে গেছে স্টেশন, টিকিট ঘর

আমাদের গোপনাঙ্গে চায়ের দোকান

 

গন্তব্য

‘সামান্য’ শব্দের উপর ভর করে
যাবতীয় সামান্য লেখা

তার কিছু শব্দ পড়ে আছে
ঝড়ে ও ঘাসের জঙ্গলে
আমার সমস্ত লেখা মনোরোগ ছেনে পেয়েছে তাহার ঝিনুক

ব্রিজের ওপর ছায়া ফেলে যে চলে যায়
শূকর পালকের গর্ভবতী বউ, আশ্রম বালক, পায়ুক্ষত
সে ও তো এক-পা দু-পা ওই সামান্যের দিকে

‘সামান্য’ রাষ্ট্রের বিষয়
আমি তার ছাঁট ও বৃষ্টি নিয়ে

কিছুদিন চুরি করে রেখেছি হাওয়ায়

 

জীবন যখন

প্রত্যাশা, কাছে ও দূরে, নেই কোনও মানুষের ছায়া

আমি যা দেখলাম রাঙা পথ, স্থির জলাশয়
নুড়ি ও পাথর, পাখির বাসার বিস্ময়

দেখছি মাটির হল্ট স্টশন
তার ওভারব্রিজ কাঁপছে হাওয়ায়

থেকে থেকে সামান্য বিষয়ের উপর বৃষ্টি এসে পড়ে…

 

আদরিনী

না বলা মমতা, তুচ্ছ নকশিকাঁথা উড়ছে হাওয়ায়
উড়ুক না হয়
আমি শুধু দেখছি বন্যাজলের নিচে শুয়ে

মধ্যরাতের সামান্য কুপি জ্বলছে আজ গোয়ালঘরে

মা মরা বাছুরটি যেন

না মরে সাপের কামড়ে

 

লিপিকর

তোমার সোনার কাঠি সেও তো অনেকদিন হল
স্যাকরার মনোধর্ম, স্পর্শের বাইরে লোভনীয় দাগ
শুধু যে জেগেছে প্রতিদিন অবরুদ্ধ যৌনতার দেশে
তার জন্য পুড়ে মরে দেবীর বাহন, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ

ধর্ম-আফিম জানে সন্তানের মনোরোগ গাছের সন্ন্যাস
চক্ষুলজ্জা শেষে ফিরে আসে প্রতিটি বিবাহপ্রস্তাব
হোমযজ্ঞ, বেদবাক্য, কুলাঙ্গার রাজজ্যোতিষীর!

সমস্ত জীবন আর সমস্ত লেখায় আজ রাখি সঙ্কেত
আজ যদি বলি অসম্ভব!
তোমার সোনার কাঠি, জন্মান্তর, প্রতীকের মায়া!
আমাকে নিশ্চল করে সে এসে দাঁড়ায়

অফিসফেরত পিতার ব্যাগের মতো নীল প্রেতচ্ছায়া

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...