
পাঁচটি কবিতা
ছারপোকা মারার সহজ উপায়
ছারপোকা কীভাবে মারা যেতে পারে— বেশ কিছুদিন এ নিয়ে লেখাপড়া করলাম। এই পদ্ধতির তালিকা বেশ লম্বা। কখনও পিটিয়ে, কখনও পুড়িয়ে, কখনও ঘিরে ধরে ছুরিকাঘাতে, গাছের গায়ে বেঁধে— এমন কি কখনও কখনও বন্দুক দিয়েও ছারপোকা মারা যেতে পারে। কখনও তাচ্ছিল্য দিয়ে মেরে ফেলা যায়, কখনও নিছক ভুলে গিয়ে, অবজ্ঞা করে। ছারপোকাকে রক্ত না খাওয়ার রিহ্যাব সেন্টারে দু-মাসের জন্য পাঠিয়ে অথবা নিছক রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে— এইসব নানা উপায় রয়েছে।
এরপর কেবল আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে, আপনি কে আর আপনি কাকে ছারপোকা ভাবছেন। কিন্তু আরও জরুরি বিষয় যেটা আপনি ভাবছেন না, তা হল আপনাকে কারা প্রকাশ্যে বা তলায় তলায় ছারপোকা ভাবছে।
শিরোনামহীন
কত কিছু নিয়ে কবিতা লিখলাম
সামান্য জলের ঘায়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে পাহাড়
মোটা দেওয়াল ফাটিয়ে মাথা তুলছে
অশ্বত্থগাছের চারা
থুপথুপে কুকুরছানার সামনে থমকে গেছে
শহরের ট্র্যাফিক—
এ সব নিয়ে কবিতা লেখা যাচ্ছে
অথচ
কত কিছুর উপরে থুথু ছুড়ে যেতে হবে
ছরছর করে পেচ্ছাপ করে যেতে হবে—
এসব নিয়ে এক পংক্তিও লিখতে পারছি না!
লেখা
অনেকদিন কিছু লেখা হয়নি
সরঞ্জাম সাজিয়ে বসে থেকেছি
মিছিল কিবোর্ড সাদা পাতা
কখনও অসময়ের বৃষ্টি
সাজিয়ে রেখেছি।
আবার কবে যেন তুমি ফিরে আসছ
এই ছোট শহরে
সকালের সিঙ্গারার পুর
জিলিপির টক গন্ধ
কয়লা পোড়ার দম আটকানো কার্বন
এই ছোট শহরে
সাজিয়ে রেখেছি।
অনেকদিন কোনও লেখা হয়নি
কবে যেন তুমি ফিরে আসছ
এই ছোট শহর লিখে রাখছি।
পরিচয়
এক একদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে
নিজেকে অন্যরকম লাগে।
তখন আর সাহস করে
ভোটার কার্ডের দিকে তাকাই না।
সোমবার মনে হল আমার নাম হারাধন দাস
চালের আড়তদার, নকল গোবিন্দভোগ বেচি।
বুধবার আয়না থেকে নিবারণ বাঁড়ুজ্জে
আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালেন।
আজ আমি সুন্দরবনের সেই ইস্কুলমাস্টার,
যে সিপিএম থেকে এখন
বেমালুম তৃণমূল হয়ে গেছে
রডোডেনড্রন রঙের পাঞ্জাবি
আজন্ম ঘোলাজল খাওয়া একগ্রাম মানুষ
জলের স্বাদ জানে না।
আমার মিনারেল ওয়াটারের বোতল দেখিয়ে
একজন জিজ্ঞেস করে—
এই জল কেমন খেতে?
জলের স্বাদ ঠিক কেমন
আমিও কখনও ভেবে দেখিনি।
আমি মদের স্বাদ জানি,
কোল্ড ড্রিঙ্কসের স্বাদ জানি
ফলের রসের স্বাদ জানি…
কিন্তু জল কেমন খেতে
আমিও ঠিক জানি না।
এইসব বলে নিজের রসিকতায়
আমি নিজেই হাসতে থাকি।
আমার সঙ্গে হাসে একগ্রাম মানুষ।
হাসতে হাসতে হাসতে হাসতে
এত হাসির দমকে আমাদের চোখে
জল চলে আসে।
ঠিক তখন আমার মনে পড়ে—
আমার একটাও রডোডেনড্রন রঙের পাঞ্জাবি নেই।