ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা— বিশ্ব-প্রতিক্রিয়ার বৃহত্তম অগ্রগতি ও লড়াইয়ের পথ

কুণাল চট্টোপাধ্যায়

 


ট্রাম্পের এই বিজয় মার্কিন দেশের সবচেয়ে ধনীদের, এলন মাস্ক, জেফ বেজোস, ক্রিপ্টো কারেন্সি-ভক্তদের এবং পশ্চিম উপকূলের প্রযুক্তি, বিশেষত ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোচ্চ মালিকদের বিজয়। কিন্তু শুধু তা নয়। ট্রাম্পের বিজয় হল উদারপন্থী বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে উগ্র দক্ষিণপন্থার অগ্রগতির অংশ। ভারতে মোদি, ব্রাজিলে বোলসোনারো, ফিলিপাইনসে দুয়ের্তে— এই একই রাজনীতির এক অর্থে চুড়োতে আছেন ট্রাম্প

 

৬ নভেম্বর ২০২৪, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সঙ্গে, মার্কিন সেনেট এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস, দুই কক্ষেই রিপাবলিকান দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিগত ট্রাম্প-শাসনকালে সুপ্রিম কোর্টে যাঁদের ট্রাম্প মনোনয়ন করেছিলেন তাঁদের ধরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রব্যবস্থার সবকটি অঙ্গই এখন রিপাবলিকান দলের হাতে, এবং রিপাবলিকান দল এত উগ্র দক্ষিণপন্থীদের হাতে যে নিক্সনকে পর্যন্ত তুলনায় ঠান্ডা মাথার লোক মনে হবে। এই বিজয় মার্কিন দেশের সবচেয়ে ধনীদের, এলন মাস্ক, জেফ বেজোস, ক্রিপ্টো কারেন্সি-ভক্তদের এবং পশ্চিম উপকূলের প্রযুক্তি, বিশেষত ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোচ্চ মালিকদের বিজয়। কিন্তু শুধু তা নয়। ট্রাম্পের বিজয় হল উদারপন্থী বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে উগ্র দক্ষিণপন্থার অগ্রগতির অংশ। ভারতে মোদি, ব্রাজিলে বোলসোনারো, ফিলিপাইনসে দুয়ের্তে, এই একই রাজনীতির এক অর্থে চুড়োতে আছেন ট্রাম্প। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদ, একদিক থেকে বলা যায় এই মুহূর্তে এমন এক সাম্রাজ্যবাদ, রাজনৈতিক স্তরে যার কোনও প্রতিপক্ষ নেই, তাই বিশ্ব-রাজনীতিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কী করবে বা করবে না, সেটা প্রত্যেক দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হওয়া প্রথমবারের চেয়ে কম জঘন্য হবে না। স্বৈরতান্ত্রিক এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও কড়াভাবে দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই যে-সব প্রস্তাব এসেছে, তাদের মধ্যে আছে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে ছাটাই করা, গোটা আমলাতন্ত্রকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণে আনা। একমাত্র স্বপন দাশগুপ্তের মতো সরাসরি ফ্যাসিবাদের সমর্থকরা বলতে পারেন (দ্য টেলিগ্রাফ, ৭ নভেম্বর ২০২৪) যে ট্রাম্পের বিজয় গণতন্ত্রের কোনও ক্ষয় আনবে না।

ট্রাম্পের জয় ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাস্থ্যের অধিকার হরণ করবে, লিঙ্গসমতার উপর কেন্দ্রীয় সমর্থন তুলে নেবে, রেক্স বনাম ওয়েড মামলা সুপ্রিম কোর্টে উলটে দেওয়ার পর গর্ভপাতে নারীর অধিকার আরও আক্রমণে ফেলবে। ডাক মারফৎ গর্ভপাত পিল পাঠানো প্রায় নিশ্চিতভাবেই বন্ধ হবে। মেয়েদের ভোটাধিকার সঙ্কোচন নিয়ে “আলোচনা” “মূলস্রোতে” চলে আসবে। ট্রাম্পের সুপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপরে ব্যয়বরাদ্দ কমানো হবে, এবং কার্বন সঙ্কোচনের লক্ষ্য দূরে সরে যাবে।

ট্রাম্প ভোটের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি প্রথম দিন থেকেই একনায়ক হবেন। এটা কতটা ভোটের সময়ে বাজার গরম করা, এবং কতটা বাস্তব প্রতিশ্রুতি, সেটা বলা কঠিন। কিন্তু এইরকম উগ্র গণতন্ত্রবিরোধী প্রচার করেও যে তিনি এত ভোট পেয়েছেন এবং জয়যুক্ত হয়েছেন, সেটা অবশ্যই চিন্তার কথা। ট্রাম্প এবং ট্রাম্পের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী জেডি ভান্স দুজনেই একটা বইকে সমর্থন করেছেন, যে-বইটার নাম আনহিউম্যান্স, এবং যে-বইকে পিনোচেতের কায়দায় বামপন্থী কর্মীদের গণহারে খুন করার ইস্তাহার বলা চলে। বস্তুত, পিনোচেতকে দিয়েই নয়া-উদারনৈতিক রাজনীতির সূচনা। এবার নয়া-উদারনীতি তার ফ্যাসিবাদ/উগ্র দক্ষিণপন্থী পপুলিজম ঘেঁষা মুখ ফেরাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের মূল কেন্দ্রগুলিতে।

যে প্রশ্ন করা জরুরি, তা হল এই প্রবলভাবে উগ্রতম দক্ষিণপন্থার জয় কেন হল, কীভাবে হল? ভোটের দিকে তাকালে, এবং তারপর রাজনৈতিক প্রচারের দিকে তাকালে, আমরা বুঝতে পারব, এটা যত না ট্রাম্পের জয়, তার চেয়ে বেশি ডেমোক্র্যাটিক দলের পরাজয়।

সাল রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাট গ্রিন+অন্য বাম উগ্র দক্ষিণপন্থী অ-রিপাবলিকান
২০২৪

(১৩ই নভেম্বর সকাল অবধি)

৭৫,৫১৮,৮৯৫ ৭২,৩৭২,৩৩২ ৭৩১,২১১+১৩০,৩৪৫ (পিএসএল)+৭১৬৫৮ (কর্নেল ওয়েস্ট) ৭০৬,৮১০+৬২১,৬৯২
২০২০ ৭৪,২২৩,৯৭৫ ৮১,২৮৩,৫০১ ৪০৫,০৩৪ ১,৮৬৫,৫৩৫
২০১৬ ৬২,৯৮৪,৮২৮ ৬৫,৮৫৩,৫১৪ ১,৪৫৭,২১৬ ৪,৪৮৯,৩৪১
২০১২ ৬০,৯৩৩,৫০৪ ৬৫,৯১৫,৭৯৫ ৪,৬৯,৬২৭ ১,২৫৭,৯৭১
২০০৮ ৫৯,৯৪৮,৩২৩ ৬৯,৪৯৮,৫১৬ ১৬১,৭৯৭+৭৩৯,০৩৪ (র‍্যালফ নেডার—নির্দল, প্রাক্তন গ্রিন) ৫২৩,৭১৫+১৯৯৭৫০

 

আমরা উপরের সারণী থেকে দেখতে পাই, দুই প্রধান সাম্রাজ্যবাদীদের দল ছাড়া উগ্র দক্ষিণপন্থী (লিবার্টেরিয়ান, রক্ষণশীল ইত্যাদি) এবং পেটি-বুর্জোয়া বামপন্থী গ্রিন দল, বিভিন্ন বাম গোষ্ঠী, যথা ২০২৪-এ পিএসএল ও র‍্যালফ নেডারের ভোট। বড় তৃতীয় দলের প্রার্থীদের অনেক সময়ে মার্কিন নির্বাচনে বলা হয় স্পয়লার, অর্থাৎ যেন, নামে সকলের ভোটে দাঁড়াবার অধিকার থাকলেও, ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান ছাড়া বাকিরা শুধু ভোট কাটার দল। নির্বাচন ব্যবস্থা এমন, যাতে অন্য কোনও দল রাষ্ট্রপতি কেন, নিচের দিকেও জয়ী হতে না পারে। ১৯২০ সালে নিউ ইয়র্ক রাজ্য কংগ্রেসে তো ৫ জন নির্বাচিত সমাজতন্ত্রীকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা মিলে বিতাড়িত করেছিল।

২০০০ সালের নেডার প্রচারের সম্পর্কে ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ ছিল, তিনি ডেমোক্র্যাটদের ভোট কেটে রিপাবলিকানদের জয়ী করেছেন। সেবার গণভোটে বুশ পেয়েছিলেন ৫০,৪৫৬,০০২ ভোট, এবং গোর (ডেমোক্র্যাট) ৫০,৯৯৯,৮৯৭ ভোট। নেডার পেয়েছিলেন ২,৮৮২,৯৯৫ ভোট। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র দুটি রাজ্য ইলেকটোরাল কলেজে আনুপাতিক আসন বণ্টনের ব্যবস্থা রেখেছে। অন্য সব জায়গায় যে-রাজ্যে যে-প্রার্থী বেশি ভোট পায় সে সব ইলেকটোরাল কলেজের আসন পায়। ফলে বুশ গণভোটে পিছিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল কলেজে ৫ ভোট বেশি পেলেন। নেডার ফ্লোরিডাতে ৯০০০০-এর বেশি ভোট পেয়েছিলেন, আর গোর এক বিতর্কিত ব্যালট গণনায় ফ্লোরিডাতে সামান্য ভোটে (১০০০-এর কম) হেরেছিলেন, ফলে ২৫টি ইলেকটোরাল ব্যালট বুশের দিকে চলে যায়। স্পষ্টত, ২০২৪ সালের ভোট অনেক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। রিপাবলিকান দল অনেকদিন পরে গণভোটেও এগিয়ে। এই শতাব্দীতে ডেমোক্র্যাটরা অনেক বেশিবার গণভোটে এগিয়ে থেকেছে, ইলেকটোরাল কলেজে হারলেও। ২০০৪ সালে জর্জ বুশ, এবং তার আগে ১৯৮৮ সালে তার বাবা জর্জ বুশ (জ্যেষ্ঠ), গণভোট জেতেন। এর কারণ, ডেমোক্র্যাট দল নিজেদের দেখায় কৃষ্ণাঙ্গ ভোটদাতা, নারী, সমপ্রেমী, ট্রান্সজেন্ডার, শ্রমিক, ইত্যাদি সব সামাজিকভাবে নিচে ঠেলে দেওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে।

এই ভোট ট্রাম্প জেতেননি, ডেমোক্র্যাটরা হেরেছে। ২০২০-র তুলনায় তাদের ভোট কমেছে ১২ লাখের বেশি, যেখানে ট্রাম্পের ভোট ২০১৬-র তুলনায় ২০২০-তে অনেকটা বেড়েছিল, কিন্তু ২০২০-র তুলনায় এবার সামান্য বেড়েছে, যেটা জনসংখ্যা বাড়ার ফলে হয়েছে ধরা যায়। আর গ্রিন পার্টির জিল স্টাইন যত ভোট পেয়েছেন, দুই দক্ষিণপন্থী প্রার্থী তার চেয়ে অনেকটা বেশি ভোট পেয়ে ট্রাম্পের ভোটই বেশি “কেটেছেন”। হ্যারিস গতবার বাইডেন যা ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে ৮৯ লাখ ভোট কম পেয়েছেন।

 

‘লেসার ইভিল’ তত্ত্ব এবং বামপন্থী মোড়কে সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন

অথচ, ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের সময় থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থীদের বড় অংশ বলে আসছেন, দক্ষিণপন্থী ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেওয়া ভাল। ১৯৬০-এর দশকে নিউ লেফট এই ধারণাকে প্রশ্ন করলেও, শ্রমিক আন্দোলন অধোগতিতে যাওয়ার পর তাদের অনেকে আবার ওই রাজনীতিতেই ফেরেন। ১৯৮৪-র নির্বাচনে এক নতুন ধাঁচের ‘কম খারাপ’কে সমর্থন করার রাজনীতি সামনে এল। রোনাল্ড রিগানের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভিতর থেকে প্রগতিশীল প্রচারভিত্তিক রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পদ চেয়ে একজন ‘প্রাইমারিতে’ লড়বেন। তিনি শেষ অবধি পার্টির প্রার্থী হতে পারবেন না, কিন্তু ওই লড়াই অল্পবিত্ত, নারী, কৃষ্ণাঙ্গ, স্পেনীয়ভাষী, প্রথম প্রজন্ম বিদেশ থেকে আসা নাগরিক, এঁদের সকলকে আশা দেবে যে ডেমোক্র্যাটিক দলে প্রাণ আছে, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তারা ভাবে। ১৯৮৪-তে সেই কাজটা করলেন রেভারেন্ড জেসে জ্যাকসন। জ্যাকসন প্রস্তাব করলেন যে সামরিক খাতে ব্যয় কমিয়ে সামাজিক বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়ানো হোক। তিনি ট্রেড ইউনিয়নদের অধিকারের পক্ষে, শ্রম আইন শ্রমিকের স্বার্থে সংশোধনের পক্ষে, এবং ফ্যাক্টরি ক্লোজারের বিপক্ষে সরাসরি কথা বললেন। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে জ্যাকসন উদারনৈতিক সাম্রাজ্যবাদীদের প্রচণ্ড রাগের কারণ হলেন, কারণ তিনি বললেন যে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামগুলিকে সমর্থন করা উচিত, পরমাণু অস্ত্র বর্জন করা দরকার, ইত্যাদি। তিনি নিজে নিকারাগুয়ার ওর্তেগা এবং কিউবার কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করলেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্ব নিশ্চিত করলেন যে প্রার্থী হবেন জিমি কার্টারের উপ-রাষ্ট্রপতি ওয়াল্টার মনডেল। তিনি প্রার্থী মনোনীত হওয়ার আগে ট্রেড ইউনিয়ন আমলাতন্ত্রের সাহায্য চাইলেন, কিন্তু প্রার্থী হয়ে যাওয়ার পর (স্বাভাবিকভাবেই) সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির স্বার্থে প্রচার শুরু করলেন। রিগান যতটা সামাজিক ব্যয় কমিয়েছিলেন, তিনি সেটাও পুরো ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন না। অথচ জ্যাকসন এবং উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণাঙ্গ ভোটদাতারা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে থেকে গেলেন। ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টস অফ আমেরিকা তো মনডেল কত গুণী প্রগতিশীল, সেই গান গাইতে শুরু করল— ঠিক যেমন এবার তারা করেছিল কমলা হ্যারিসকে নিয়ে।

১৯৮৪-র সঙ্গে ২০২৪-এর অনেক মিল আছে। ডিএসওসি এবং নিউ আমেরিকান মুভমেন্ট ১৯৮২ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডিএসএ গঠন করে যে ভিত্তিতে তার অন্যতম হল ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন। ২০১৬ সালে বার্নি স্যান্ডার্সের নির্বাচনী প্রচার অনেক বছর পরে ডেমোক্র্যাটিক দলে ওই “সমাজতন্ত্রী” বুলি ফিরিয়ে আনল। কিন্তু ১৯৮৪-র মতোই, অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে (প্রাইমারি বলে পরিচিত) স্যান্ডার্স হেরে গেলেন, প্রার্থী হলেন হিলারি ক্লিন্টন, কিন্তু বৃহত্তর ইভিল ট্রাম্পকে হারানোর জন্য স্যান্ডার্স এবং অনেক বড় আকারের ডিএসএ ক্লিন্টন, এবং তারপর একে একে বাইডেন ও হ্যারিসের জন্য প্রচার করলেন। ২০১৮ সালে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেস কংগ্রেসে নির্বাচিত হলে ডিএসএ-র সদস্যসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৯০,০০০ পেরিয়ে যায়। কিন্তু ডিএসএ ডেমোক্র্যাটিক দলকে ঠেলে বাঁদিকে নিয়ে যায় নি। ডিএসএ, এবং স্যান্ডার্স, ডেমোক্র্যাটিক দলের সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতিকে একটা বাম আচ্ছাদন দিয়ে ঢেকে রাখার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদকে সাহায্য করেছে।

 

বাইডেন-হ্যারিস: দাবি বনাম বাস্তব

কিন্তু তার একটা সীমা ছিল। বাইডেনের গত চার বছর সেই সীমা পেরিয়ে গেছে। মার্কিন অর্থনীতিতে বাইডেনের চার বছর শ্রমজীবী মানুষের কোনও উপকার করেনি। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে, অধিকাংশ মার্কিন বেতনভুক শ্রমিক-কর্মচারীর প্রকৃত আয়বৃদ্ধির হিসেব (অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করে আয় আসলে কতটা বাড়ল সেই হিসেব) দেখায়, ওটা বাড়েনি। অথচ চোখের সামনে তাঁরা দেখছেন, খুব অল্প সংখ্যক ধনী বছর বছর আরও ধনী হচ্ছে। আর, যখন পৃথিবী কোভিড থেকে মুক্তি পাচ্ছে, সবে অর্থনীতি লকডাউন থেকে বেরোচ্ছে, সেই সময়ে প্রবল মূল্যবৃদ্ধি ধাক্কা মারছে। বাইডেন তখন কী করলেন? ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটির সভাপতি ভোটে হারের পর সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সমালোচনার জবাবে দাবি করেছেন, বাইডেনের নীতি ছিল শ্রমিকের পক্ষে। বাস্তবে কী হয়েছিল? প্যান্ডেমিকের সময়ে সাময়িক যে সুবিধা পেয়েছিলেন শ্রমজীবীরা, যেমন চিকিৎসা, বেকারদের সাহায্য, সে-সব এবার কেটে বাদ দেওয়া হল। টাকা ঢালা হল পরিকাঠামো নির্মাণে যেখানে লাভ করল বড় পুঁজি। এক্সিট পোল দেখাচ্ছে, যাঁদের কলেজ ডিগ্রি আছে তাঁদের ৫৫ শতাংশ হ্যারিসকে এবং ৪২ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, আর যাঁদের কলেজ ডিগ্রি নেই তাঁদের ৫৬ শতাংশ ট্রাম্প এবং ৪৩ শতাংশ হ্যারিসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ২৫,০০০ থেকে ৪৯,৯৯৯ ডলার আয় যাঁদের তাঁদের ৫১ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, ৫০,০০০ থেকে ৭৪,৯৯৯ ডলারের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ ট্রাম্পকে, ১০০,০০০ ডলার ও তার বেশি যাঁদের আয় তাঁদের ৫৩ শতাংশ হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন। সত্যি যদি হ্যারিস ১৯৬০-এর দশকের পর সবচেয়ে শ্রমিকদরদি সরকারের অঙ্গ হতেন তাহলে ভোটে এই ছবি দেখা যেত না।

শেষ মুহূর্তে বাইডেনের বদলে হ্যারিসকে আনা কোনও বাস্তবিক পরিবর্তন ছিল না। হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারে দু-তিনটে ছদ্ম প্রগতিশীলতা ছিল— যেমন হ্যারিসকে আফ্রিকান-আমেরিকান এবং এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে দেখানো, নারী হিসেবে দেখানো। ১০ সেপ্টেম্বর, হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্প সাপের মতো হিসহিস করে বলেছিল, “সবাই জানে ও মার্ক্সবাদী।” সত্যি? হ্যারিসের সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন এলিজাবেথ চেনি, ২০১৯-২০২১-এ কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী, এবং প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ডিক চেনির মেয়ে। ডিক চেনি এবং এলিজাবেথ চেনি উভয়েই যুদ্ধবাজ এবং মার্কিন বড় পুঁজির কট্টর প্রবক্তা বলে পরিচিত। হ্যারিসের অন্যতম বড় কর্পোরেট সমর্থক ছিল গোল্ডম্যান-স্যাক্স। হ্যারিস নিজে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে কিরা ভাষায় জানিয়েছেন, তিনি আজীবন ইজরায়েলের সমর্থক ছিলেন। গাজাতে চলমান গণহত্যার সময়ে বাইডেন প্রশাসন ইজরায়েলকে অকুণ্ঠ সাহায্য করে গেছে, যুদ্ধাস্ত্র দিয়েছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘে নেতানিয়াহুর গণহত্যার পক্ষে থেকেছে। হ্যারিসের বড়পুঁজি-প্রেম আজকের না। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে হ্যারিস ওয়ান ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হননি, যদিও তাঁরই দফতর দেখিয়েছিল, ২০০৮-এর আর্থ সঙ্কটের সময়ে এই ব্যাঙ্কের হাজার হাজার গৃহঋণ অন্যায়ভাবে বন্ধ করা “ব্যাপক অপরাধ”। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট যখন নির্দেশ দিয়েছিল, জেলে এত বেশি মানুষ যে ভিড় কমাতে হবে, হ্যারিস তার বিরোধিতা করে বলেন, তা হলে জেলে বন্দিদের দিয়ে শস্তা শ্রম পাওয়া কমে যাবে।

হ্যারিসের গোটা নির্বাচনী প্রচার ওই ঢং-এর ছিল। তিনি ও তাঁর প্রচার ম্যানেজাররা ট্রাম্প সরকারে এলে যে সব হুমকি দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে এক নৈর্ব্যক্তিক গণতন্ত্র রক্ষার ডাক দিলেন, অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আদৌ লিঙ্গসাম্য, বর্ণসাম্যের দেশ নয়, শ্রেণিবিভাজন যে সেখানে উৎকট, তা নিয়ে বাস্তব কোনও পদক্ষেপের কথা বললেন না। তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁদের ওই লোকদেখানো কিছু বুলিতেই সবরকম সংখ্যালঘু খুশি থাকবেন।

 

ট্রাম্প কেন শ্রমজীবীদের ভোট পেলেন?

ট্রাম্পকে শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা অবশ্যই বেশি ভোট দিয়েছে, কারণ ট্রাম্প নির্লজ্জ বর্ণবাদ ও পুরুষ প্রাধান্যবাদের প্রবক্তা। কিন্তু ট্রাম্পকে ফ্যাসিবাদী বা পপুলিস্ট বলে লাভ কী, যদি ডেমোক্র্যাটিক দল বাস্তবে তার বিকল্প কিছু না হয়? ট্রাম্পের আন্দোলন মার্কিন মূলস্রোত বুর্জোয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং ওই রাজনীতির নির্যাস।

বিশ্বজোড়া যে প্রতিবিপ্লবী জোয়ার চলেছে, তা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের আংশিক বিজয় থেমে যাওয়ার ফল। উপনিবেশদের মুক্তি, অশ্বেতাঙ্গ মানুষের অধিকার, মেয়েদের অধিকার, এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়ের অধিকার, বিশ্ব ধনতন্ত্রের চেহারা বদলের সঙ্গে, এবং শ্রেণিসংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণির ধাক্কা খাওয়ার ফলে, সবকটিই আজ আক্রান্ত হচ্ছে। ট্রাম্পের আবেদন সবচেয়ে বেশি গেছে শ্বেতাঙ্গদের কাছে, অপেক্ষাকৃত কমবয়সিদের কাছে, খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী উগ্র দক্ষিণপন্থীদের কাছে এবং এলন মাস্ক সমর্থক টেকনো-সর্বস্বদের কাছে। ট্রাম্প অধিকাংশ “সুইং স্টেটে” জয়ী। সুইং স্টেট বলা হয় সেই সব রাজ্যকে, যেখানে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান, কেউ ধারাবাহিকভাবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রাখতে পারেনি। তার কারণ, আমরা আগেই দেখেছি, সব সময়ে যে ট্রাম্প বিরাট বেশি ভোট পেয়েছে তা নয়। একটা ক্ষেত্রে তো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। মিচিগান রাজ্যের আরব/মুসলিম অধ্যুষিত ডিয়ারবর্ন কংগ্রেস কেন্দ্রে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী প্যালেস্টিনীয়-আমেরিকান রাশিদা তলাইব ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জেমস হুপার পেয়েছেন ৩০ শতাংশ ভোট। কিন্তু ওই কেন্দ্রে হ্যারিস ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। আরবরা ট্রাম্পকেও খুব বিশ্বাস করেন না, করার সামান্যতম কারণ নেই। কিছু ভোট ট্রাম্পের দিকে গেছে, কিছু জিল স্টাইনের দিকে, কিন্তু অনেকে (৭৫ শতাংশ) রাষ্ট্রপতি পদে ভোটটা দেননি। তলাইব কংগ্রেসে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার ছিলেন, এবং তিনি হ্যারিসকে এ-বিষয়ে সমর্থন করতে রাজি হননি।

মার্কিন শ্রমিকশ্রেণির এক উল্লেখযোগ্য অংশও এবার ডিএসএ ইত্যাদির মিষ্টি কথা শুনতে রাজি ছিলেন না। ভোটের ফল বে্রোবার পর সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি শ্রমিকশ্রেণিকে ত্যাগ করেছে, শ্রমিকশ্রেণিও যে সেই পার্টিকে ত্যাগ করবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য অন্যরকম মনে করবে। তারা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, ভোটের ফল দেখিয়েছে, তাদের এত “বাম” হওয়া (বা এত “ওক” হওয়া) ঠিক ছিল না (ও মা! তাই নাকি?)। তারা বলছে, ছাত্ররা প্যালেস্টাইনের সমর্থনে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে “গোলমাল” করলে তাদের কড়া হাতে শিক্ষা দেওয়া দরকার, নারীসমতার চেয়ে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাদের বাইরে বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, ইত্যাদি। অর্থাৎ, তারা ট্রাম্পকে হারানোর জন্য, বা ২০২৮ সালে ট্রাম্পের উত্তরাধিকারীকে হারানোর জন্য, তাদের মতো আরও দক্ষিণপন্থী হয়ে যেতে চাইবেন, ও হবেন।

ট্রাম্পের রাজনীতি অতিদক্ষিণপন্থী, কিতু এক ধরনের দক্ষিণপন্থী, যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন পপুলিস্ট বা জনবাদী। বিজেপির সঙ্গে তুলনা না করে এখানে তুলনা করা যেতে পারে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে (অবশ্যই এই তুলনা একদমই একটি দুটি প্রসঙ্গে, কারণ একজন বিশ্বের প্রধানতম সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রধান দুই দলের একটির নেতা, অন্যজন মাঝারি উঠতি বুর্জোয়া দেশের দক্ষিণপন্থী এক আঞ্চলিক নেত্রী)। কিন্তু দুজনেই দক্ষিণপন্থী দিক থেকে দরিদ্রের কথা তোলে। সম্প্রতি মমতা ব্যানার্জির সমর্থনে রণবীর সমাদ্দার একটি প্রবন্ধে তাঁকে ও তাঁর রাজনীতিকে পপুলিস্ট বলে চিহ্নিত করেছেন। ট্রাম্পও সেই অর্থে পপুলিস্ট। সে আমেরিকার শ্রমজীবীদের বলছে, বিশ্বায়ন আমেরিকার অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে। এ-কথা বুঝতে হবে যে ৪০ বছরে মার্কিন দেশে ট্রেড ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকের অনুপাত ২০ শতাংশ থেকে নেমে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ শ্রমিক এখন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন থেকে লাভবান কীভাবে হওয়া যায় তা জানেন না, আর আমলাতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা ১৯৩০-এর দশকের জন লুইস বা জিমি হফার মতো অসংগঠিতদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বিদেশিরা এসে চাকরি নিয়ে নিচ্ছে, বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি মার্কিন শিল্পের ক্ষতি করে শ্রমজীবীর বিপদ আনছে, এই ধরনের প্রচার অনেক বেশি দাগ কাটছে। ট্রাম্প কমিউনিস্টদের আক্রমণ করে, কিন্তু নিজেকে জনগণের মানুষ হিসেবে তুলে ধরে। যেখানে হ্যারিস উচ্চ পেটিবুর্জোয়া মূল্যবোধের উপরে জোর দেন, সেখানে ট্রাম্প ও তার পক্ষ “এলিট”-বিরোধী বিষোদ্গার করে। ঠিক যেমন করেন মমতা ব্যানার্জির বুদ্ধিজীবী সমর্থকরা— যারা শ্রেণিকে বাতিল প্রতর্ক বলেন, কিন্তু কলকাতার এলিটের সঙ্গে রাজ্যের নিম্নবর্গীয়, বা প্রান্তিক মানুষের তথাকথিত বৈপরীত্যের কথা বলেন। ট্রাম্পের এলিট অনেকটা অবয়বহীন। তারা বড় বুর্জোয়া নয়— তারা উচ্চশিক্ষার জগৎ, তারা রাজনীতিবিদ, তারা তথাকথিত “ডিপ স্টেট” (কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র) প্রভৃতি। মূল্যবৃদ্ধি ও মজুরিহ্রাসের যুগে ট্রাম্প স্বপ্ন দেখিয়েছে “আমেরিকাকে আবার মহান করো”— এমন এক স্বপ্নের যুগে ফেরাও যখন শুল্কে ঘেরা মার্কিন অর্থনীতিতে, “বহিরাগত”হীন এক দেশে সবাই আরামে বাস করত।

 

ট্রাম্প ও আগামীদিনের রাজনীতি

বাস্তবে অবশ্য অন্যরকম বিকাশ ঘটবে। ট্রাম্প শক্তির ব্যয় কমাতে ও সার্বিক খরচ কার্বন জ্বালানি ব্যবহার বাড়াবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু সে মার্কিন শিল্পের শক্তি বাড়াতে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেটা হলে মূল্যবৃদ্ধি হবে। ট্রাম্প রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ব্যয়সঙ্কোচন করবে, ফলে মার্কিন নাগরিকদের চাকরি বা মজুরি বাড়তে পারে না। কিন্তু মানুষ কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখে ভোট দেয় না। দক্ষিণপন্থী পপুলিজম উগ্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত।

আর মানুষ নিজের স্বার্থে লড়াই করলে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান বাইনারি থেকে তারা সরছে। উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা হল, সুপ্রিম কোর্ট রেক্স বনাম ওয়েড মামলা নতুন করে বিচার করে গর্ভপাতের উপর দেশজোড়া যে অধিকার মেয়েদের ছিল, সেটা বাতিল করেছে কিছুদিন আগে। ফলে প্রতি রাজ্যে স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে আরও অনেক বিষয়ে ভোট হয়েছে। সাতটি রাজ্যে গণভোটে রাজ্য সংবিধান সংশোধন করে রাজ্যস্তরে গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সাতটির মধ্যে পাঁচটিতে ট্রাম্প জয়ী হয়েছে। অর্থাৎ, মেয়েদের অধিকার রক্ষা করতে হলে হ্যারিসকে ভোট দিতে হবে, এটা অনেকেই মানেননি। গণআন্দোলন গড়া, গণআন্দোলনকে শ্রেণিচরিত্র দেওয়া, এই হল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবং ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার রাস্তা।

ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির একটা দিক স্পষ্ট— ইজরায়েলের গণহত্যার প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে। কিন্তু ট্রাম্প যদি ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সাহায্য বন্ধ করেন তাহলে পুতিনের সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণবাদ মজবুত হবে। দীর্ঘমেয়াদিভাবে এর ফলে নতুন করে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র হবে। কিন্তু এখানে ডেমোক্র্যাটরা আরওই কোনওরকম মিত্র হতে পারে না। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই জরুরি। কিন্তু তার জন্য প্রাথমিক দরকার সামাজিক আন্দোলনের উপরে জোর দেওয়া, প্রগতিশীল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলা, এবং এমনকি নির্বাচনী ক্ষেত্রে, যত দুর্বল হোক না কেন, দুই সাম্রাজ্যবাদী পার্টির বিপরীতে শ্রমিকশ্রেণির স্বাধীন রাজনীতি করবে এমন এক দল গড়ার দিকে পদক্ষেপ নেওয়া।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4953 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...