সুদীক্ষা ভাটি — এক আকাশ ছোঁয়ার গল্প

সুদীক্ষা ভাটি

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেই বহুচর্চিত প্রবাদকেই আর একবার সত্যি করল সুদীক্ষা ভাটি। ছোটবেলা থেকেই প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে যুঝতে থাকা সুদীক্ষা সিবিএসসি-র টুয়েলভ-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৯৮% নম্বর পেয়ে জেলায় প্রথম হয়ে এবার প্রবাসের পথে। মেধা ও অসাধারণ ফলাফলের দৌলতে সে জিতে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাবসন কলেজের ১০০% স্কলারশিপ, যার আর্থিক মূল্য ভারতীয় অঙ্কে প্রায় ৩.৮ কোটি টাকা। বাবসন কলেজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির অন্তপ্রেনারশিপ কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। অথচ সুদীক্ষার পারিবারিক চালচিত্রের দিকে তাকালে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ছবি ধরা পড়ে। পারিবারিক মাসিক আয় মাত্র ৬০০০ টাকা, বাবা সামান্য চায়ের দোকান চালিয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিন গুজরান করেন।

ছোটবেলা থেকেই পৃথিবী বদলানোর স্বপ্ন দেখা সুদীক্ষার সমাজ বদলানোর হাতেখড়িও ছোটবেলাতেই। ইতিমধ্যেই সে ভয়েস অফ ওমেনের সদস্য হয়ে গেছে এবং তার এলাকার লোকজনকে শিক্ষার প্রয়োজনীতা বোঝাচ্ছে ও ইভ টিজিং-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস যোগাচ্ছে।

সুদীক্ষা নিজেই জানায় যে সে তার ভাই-বোনদের গর্ব ও অনুপ্রেরণা এবং তার পরিবারেরও বিশ্বাস সে নতুন পথ দেখাবে। কিন্তু এতদূর আসার পথটা আদৌ সুগম ছিল না। আর্থিক অসচ্ছলতা ছিল প্রথম অন্তরায়। তার কিছুটা সমাধান হয় যখন ২০১১-তে সে বিদ্যাজ্ঞান স্কুলে (উত্তরপ্রদেশের বুলান্দশর ও সীতাপুরে প্রতিষ্ঠিত স্কুল, যারা অসচ্ছল, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ক্যাম্পাসে রেখে পড়ায়) পড়ার সুযোগ পায়। এছাড়াও এরকম একটা সাহসী পদক্ষেপের জন্য প্রাথমিকভাবে পরিবারের কিছুটা বিরুদ্ধেও যেতে হয়েছে তাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সুদীক্ষার অদম্য জেদের কাছে হার মেনে নেয় সবকিছুই। তবে এত দেশের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই কেন সে বেছে নিল সে প্রসঙ্গে সুদীক্ষা জানায়, প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েই খুব ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়। ওখানের ইচ্ছেমতো পড়াশোনা পদ্ধতি, হাতে-কলমে ও ফিল্ড-বেসড কাজ শেখার সুযোগ প্রাথমিক আকর্ষণের কারণ। তাছাড়া বিশ্ব সংস্কৃতিতে আগ্রহী সুদীক্ষার মতে এই চার বছরের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা আগামী দিনে তার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও সাহায্য করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে পড়ার জন্য সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, সামাজিক কাজে যোগদান, পাঠক্রম বহির্ভূত কাজে অংশগ্রহণ, ইংরাজিতে সাবলীলতা ইত্যাদি দেখা হয়। স্কুলে দুর্দান্ত ফলাফল, সিলেবাস বা পাঠক্রমের বাইরেও ডিউক টি আই পি, পেনসিলভেনিয়া স্কুল অফ গ্লোবাল অন্তপ্রেনারশিপ ইত্যাদিতে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ, স্যাট ও টোয়েফেল-এ অসাধারণ ফলই সুদীক্ষাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।

আগামী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুদীক্ষার পরামর্শ যে কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের লক্ষ্যে অটল থাকতে হবে। ফলাফলের কথা না ভেবে নিজের সেরাটা দিতে হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও ডায়েটেরও দরকার। যদিও ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে এখনও পারিবারিক চাপটা একটা বড় বাধা, কারণ এখনও আমাদের দেশে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংকেই সবচেয়ে সফল পেশা হিসেবে ধরা হয়। সুদীক্ষার মতে, প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর তার পছন্দ অনুযায়ী বিষয় বাছা উচিত যাতে সে তার নিজের সত্যিকারের মেধা আবিষ্কার করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

এই সাফল্যের জন্য সুদীক্ষা তার স্কুলের সমস্ত শিক্ষকশিক্ষিকা ও পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ যাঁরা তাকে নিরন্তর ভরসা যুগিয়েছেন ও পাশে থেকেছেন। তবে সুদীক্ষা শুধুমাত্র তার স্কুল বা পরিবারেরই নয়, সমস্ত দেশেরই গর্ব। আগামী দিনে সে আরও আরও সাফল্যের পথে এগিয়ে যাক এবং এরকম আরও অনেক সুদীক্ষাকে প্রাণিত করুক, তৈরি হোক আরও অনেক আকাশ ছোঁয়ার গল্প।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...