![bk9 তিতওয়ালা](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2018/07/bk9.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
চার নম্বর নিউজডেস্ক
‘
জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন’– শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উচ্চারণ। কিন্তু জঙ্গল গড়ে তোলেন কে? ভারতবর্ষ যাদব পায়েং বা অনিল এবং পামেলা মালহোত্রার নাম জেনেছে সম্প্রতি। এই একতরফা নগরায়নের মাঝে অরণ্য গড়ে তোলার জেহাদ নিয়ে যারা লড়ে গেছেন। সেখানে পশুপাখিদের বসতি গড়তে দিয়েছেন নিজেদের মতো করে, শ্বাস ফেলার পরিসর পেয়েছে তারা।
ক্ষয়িষ্ণু জমির ওপর, সবুজহীন ভূমির ওপর জেগে ওঠা অরণ্যের পেছনের এই কারিগররা দলে ভারি হচ্ছেন রোজ। আশার কথা, ক্ষেত্রবিশেষে বনবিভাগও এ বিষয়ে তৎপর হচ্ছে। যেমনটা ঘটেছে থানের তিতওয়ালা-তে। তিতওয়ালা-র রুন্ডে এলাকায় কালু নদীর চরাচর জুড়ে ১৯ হেক্টর জমি ছিল বন্যপ্রাণের আখড়া, গাছপালায় মোড়া অক্সিজেনপূর্ণ এই এলাকা ছিল একটি দূষণহীন ফুসফুস। ক্রমে বনজঙ্গল কাটা শুরু হল নির্বিচারে, দূষণের মাত্রা বাড়ল, ভূমিক্ষয় শুরু হল। বিস্তীর্ণ বনভূমি হারিয়ে গেল।
সম্প্রতি বনবিভাগ ঠিক করেছে শহর, উন্নয়ন এবং তার সঙ্গে বেড়ে চলা দূষণকে সামলাতে অক্সিজেনের এত বড় ভাণ্ডারকে যদি আবার জাগিয়ে তোলা যায়। সেজন্য সম্প্রতি একটি এনজিও-র সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। পর্যাবরণ দক্ষতা মণ্ডল নামক এই এনজিও-টির কর্মীরা ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এই জমিটির দায়িত্ব নেয়। তারপর শুরু হয় এক নতুন কর্মকাণ্ড।
কীভাবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে এই এনজিওটি? সঙ্গীতা জোশি, এনজিও-র এক কর্মী জানাচ্ছেন, “এই প্রকল্পের শুরু থেকেই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এখানকার যাবতীয় সবুজ ফিরিয়ে আনা। তার জন্য এই এলাকার মাটি, জলস্তর প্রভৃতি পরীক্ষা করে আমরা বিচার করি কী জাতীয় উদ্ভিদ এবং বন্যপ্রাণ এখানে অভিযোজিত হয়ে টিকে থাকতে পারবে, সেই অনুযায়ী বিশেষ কিছু প্রজাতির গাছের চারা আমরা এখানে রোপণ করি।”
এমনকী এনজিও-র কর্মীরা তাদের বাড়িতে বা অন্যত্র রোপণ করা চারাকে এই জমিতে এনে আবার রোপণ করেছে। এই উদ্ভিদগুলোর টিকে থাকা নিশ্চিত করা খুব সহজ কাজ ছিল না। এইভাবে ধীরে ধীরে সব মিলিয়ে ৮০০০টি গাছ বেড়ে উঠতে শুরু করেছে এই অঞ্চলটি জুড়ে। এই গাছগুলির ৯৮ শতাংশই এই পাহাড়ি এলাকাটিতে দিব্য বেঁচে আছে। আর এর প্রভাবেই তিতওয়ালা-র এই জঙ্গলটিতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে কীটপতঙ্গ, পাখি এবং পশুরা।
কে ডি থ্যাকারে, বন সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী, এই প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে জানাতে গিয়ে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, “আরও বহু ক্ষেত্রেই এ জাতীয় বেসরকারি সংগঠনগুলির সঙ্গে আমাদের চুক্তি আমাদের সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিতওয়ালা-তে এক বছরেরও কম সময়ে এই এনজিও-টি জঙ্গলের সবুজকে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। পতঙ্গ এবং পশুপাখিরা ক্রমে এই জঙ্গলটিতে ফিরে আসছে; বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য সুরক্ষিত হচ্ছে।”
“মানুষ যে মাটিকে কাঁদাল/লুট করে মাটির জীবন/সে মাটি শুভেচ্ছা পাঠাল/ঘাসের সবুজে প্রাণপণ”— কবীর সুমন লিখেছিলেন। মানুষের জন্যই ধ্বংস হয়েছিল এই জঙ্গল, মানুষের হাত ধরেই আবার এই বনানী তার নিজস্ব চেহারা ফিরে পেল। কিছুদিনের মধ্যেই তিতওয়ালা-র জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র আবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বেড়ে উঠবে সবুজ, পশুপাখিরা ফিরে পাবে তাদের আস্তানা!