অর্ঘ্যদীপের ফেবুদেওয়াল থেকে

অর্ঘ্য দীপ 

 

সেই ছেলেটা যে কোনও কারণে দুঃখ পেলে, খুব একা হওয়ার মতো একটা ঘর খোঁজে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে বলে। সেই ছেলেটা যে বড় অল্পতেই ভয় পেয়ে যায় আর তার চাইতেও অল্পতে আবেগের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। সেই ছেলেটা যে কোনও দলে মিশে যেতে পারেনি কখনও, অথচ দল বেঁধে তাকে নিয়ে “মজা” করেছে অনেকেই, করেছে অনেক, অনেকবার। সেই ছেলেটা যার কোনও প্রেমিকা নেই। সেই ছেলেটা যে তার পছন্দের মেয়েটিকে অন্য কোনও পুরুষের হয়ে যেতে দেখেছে দূর থেকে। সেই ছেলেটা যে ঠিক ততটা “পুরুষ” হয়ে উঠতে পারেনি কোনওদিনই…

সেই ছেলেটাকে আমরা সকলেই অল্প-বিস্তর চিনি, কিন্তু গ্রাহ্য করি না।

কঙ্কনা সেনশর্মার ডিরেক্টোরিয়াল ডেবিউ “এ ডেথ ইন দ্য গ্যঞ্জ”-এ সেই ছেলেটা হল সুটু। যার ভালো নাম শ্যামল চ্যাটার্জী। বয়স তেইশ হলেও যার একমাত্র বন্ধু আট বছরের বাচ্চা একটা মেয়ে। এহেন সুটু মার্কশিটের ওপরে ছবি আঁকে কত কী আর ডায়েরীর পুরনো পাতা থেকে খুঁজে পায় একটা প্রজাপতির মৃতশরীর, তারপর অতি যত্নে সেটাকে রাখে আঙুলের ফাঁকে। এবং তার মা অসহায়ের মতো নিকট আত্মীয়াকে চিঠিতে লেখেন, “সুটুর জন্য আমার খুব চিন্তা হয় দিদি… এত ভালো স্টুডেন্ট হয়েও এমএসসি পরীক্ষাতে ফেল কী করে করল ও?”

আমি না সিনেমাটার রিভিউ লিখতে বসিনি। সেরকম কোনও ইচ্ছেই আমার নেই। তুখোড় “হিউমর” সমৃদ্ধ ফিল্ম-রিভিউ লেখার যে কায়দাটি অধুনা প্রবলভাবে জনপ্রিয় হয়েছে ফেসবুকে, সেই পরিসরে দাঁড়িয়ে এমন একটা ছবির রিভিউ লেখা যায় না। অন্তত আমি পারব না। ছবির গল্প নিয়েও কিছু তেমন বলার নেই আমার। যারা ট্রেলারটা দেখেছেন, মোটামুটিভাবে প্লটটা কী হতে পারে সেটা বোধহয় আন্দাজ করে নিতে পারবেন সকলেই। বাকিটুকু, ছবিটা যারা দেখবেন, তাদের জন্যই তোলা থাকুক বরং…

সাতের দশকের হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে অত্যন্ত অনুপুঙ্খভাবে ধরতে চেয়েছেন কঙ্কনা। আসলে অনেকেই তো চান এমনটা করতে, এবং বিশ্রীভাবে অসফল হন। কিন্তু কঙ্কনা সেটা পেরেছেন। ঠিক যেমন, সুটুর চরিত্রে ভিক্রান্ত এবং অন্যান্য পার্শ্ব-চরিত্রে প্রায় সব অভিনেতারাই যা করেছেন এই ছবিতে, সত্যি বলছি, হালফিলের কোনও হিন্দী সিনেমায় এরকমটা তো দেখিনি খুব একটা… এবং এই প্রসঙ্গেই বলে রাখা ভালো, নেপথ্য সঙ্গীত ছবিটাকে উত্তীর্ণ করেছে এক অপার আশ্চর্যের দিকে।

সবশেষে শুধু এটুকুই বলতে পারি, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, এই সিনেমাটা আমার মধ্যে কোথাও ঠিক থেকে যাবে। ছবির একেবারে শেষ দৃশ্যে সুটু যেমন করে তাকিয়ে থাকে তার চারপাশের পৃথিবীটার দিকে, যেন তাকিয়ে থাকা ছাড়া তার আর কিচ্ছুটি করার নেই, কোনওদিনও ছিল না… সেই দৃষ্টিটার মতোই “এ ডেথ ইন দ্য গ্যঞ্জ” সিনেমাটা আমাকে হন্ট করবে। করতেই থাকবে…

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4821 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...