দ্বিতীয় বর্ষ, অষ্টম যাত্রা : চলচ্চিত্রচঞ্চরী

স্টেশন মাস্টার

 

কালেজমন্থক খোকাখুকুরা, দামড়া জরাগ্রস্ত বুদ্ধিব্যবসায়ীগণ, বাজারসংকীর্তনের ম্যানেজমেন্ট-শিক্ষিত হাফ-আংরেজ বাবুবিবিনিচয় ও বামপন্থা-লইয়া-কী-করিব এবম্বিধ ভাবনায় ভাবুক অমুকপন্থীগণ :

অই শুনো বাঙ্গালা চলচ্চিত্রের শতবর্ষের ঘণ্টা বাজিয়া উঠিয়াছেন! স্বীয় লোলচর্ম হাইনেকে ঢাকিয়া বয়ঃপ্রাপ্ত সদাতরুণ নায়কবাবুটির হস্তে রাংতার ঘণ্টাটি শোভা পাইতেছেন। বাবু অগ্রে বামে হেলিয়া অতঃপর দক্ষিণে দুলিয়া সেই ঘণ্টা বাজাইলেন। অহো তাহার শোভা হেরিয়া আমরা কান্দি কী হাসিয়া কুটি হৈ ভাবিয়া পাই না।

অভ্যন্তরের খেলুড়েবাবুটি তাঁহার শতবর্ষের আড়াল টুটিয়া মুচকিহাস্যরত পর্বতের হা-হা হাস্যরত লালিপুষ্পটির ন্যায় প্রস্ফুটিত হৈয়া কহিলেন, অহে অমুক লোকটি ভালা, শ্যালকেরে টুকদু বঙ্গপ্রদূষণ দিয়া দিস! আর অমুকটি কৃতজ্ঞতায় গদ ২ হৈয়া কহিল, আহা বাবুটি আমার কলার কত না ইসে, অর্থাৎ সমঝদার! কৈ পূর্বে কেহ তো ইত্যাকার বিষোদ্গার করতঃ অমুকটি অতঃপর যাহাতে পড়িল তাহার নাম প্রসেসন! ললাটে লিখিল ‘ছিঃ’! কবিগুরু বলিয়াছেন যারে লোকে বলে ছি তার জেবনে কাজ কী?! ইহা স্মরণে আসিলে বাঙ্গালি তাহারে এবং তাহার চতুষ্পার্শের সকলেরে ভোটে-ভোটে ভরিয়া তুলিল, যেমন জাঙ্গিয়ার বিজ্ঞাপনে নায়কটিকে চুমায় ভরিয়া তোলে লাস্যময়ী নারী।

ইত্যাকার লীলাসমাপনান্তে জনগণ মৃতদেহটি স্কন্ধে তুলিয়া লইল। নন্দনবনের কিফ্‌-প্রাঙ্গণে বহু টেংরি চর্বণ করিয়া ও মদ্যপানপূর্বক তাঁহাদের মনে পড়িল, আরে! মড়াটা কার তা তো দেখা হয় নাই! মড়া লৈয়া মহা গোল উঠিলে ফেজটুপি-পরিহিত এক পুরোহিত আসিয়া নিদান দিলেন, মড়াটি লৈয়া আইস আমরা বার্তোলুচ্চি-পিজ্জা-গুচ্চি ইত্যাদি খেলি। খেলুড়েবাবুটি এবং তারও পিতাঠাকুর মুচকি হাসিলেন। এদিকে রাত হৈয়াছিল ওদিকে দুনিয়া টলিতেছিল বলিয়া টলির ভায়েরা মড়া পুড়াইয়া গোল চুকাইয়া দিল। হীরালাল ভাবিলেন, যাক! অতঃপর ভবের খেলা সাঙ্গ হৈল!

ইতোমধ্যে কয়জন টেঁটিয়া একজোট হৈয়া সিনেমা-সিনেমা করতঃ একটি ইশতেহার প্রকাশ করিয়া ফেলিল। তাহাতে স্বাক্ষর দিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, চণ্ডী মুখোপাধ্যায়, সত্যব্রত ঘোষ, কৌশিক মজুমদার এবং নাসিরুদ্দিন শাহ। বাঙ্গালি গণপতিবাহন সাহিত্যবংশীতে বিলক্ষণ ভুলে, ইহা শিরোধার্য করিয়া যথাবিহিত উপায়ে ফাঁকে-ফোঁকরে স্মরণ, প্রবন্ধ, গল্প, অন্যগদ্য, অণুগল্প, কবিতা, অনুবাদ সাহিত্য, হুইলার্স স্টল, ভালো খবর, ধারাবাহিক উপন্যাস ও পরিবেশ-বিষয়ক হাহাকার – সকলই প্রক্ষেপণ করা হৈল।

এই ইশতেহার প্রকাশ হৈল দেখিয়া সুধী পাঠিকা বিচলিত হৈবেন না। ‘এরাই তো ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রেকেচে’ বলিয়া দলে দলে নবতরঙ্গ-পরবর্তী অ্যাড-তোরঙ্গ জঁরের ছবি দেখুন।

খুশ থাকুন!

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

5 Comments

  1. প্রচ্ছদ জুড়ে থাকা ভাঁড়ের দইয়ের মতোই উপাদেয় সম্পাদকীয়! যথারীতি সুলিখিত, উপভোগ্য।

      • কী কাণ্ড বাপু! আমি তো দই ভেবেছি। বগুড়ার দই এরকম ভাঁড়ে দেখেছি। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন ভুলে বিব্রত হওয়ার বদলে বেশ একটু অট্টহাসি দিলেম 🙂

  2. এরকম ভাঁড়ে চা কি বাংলাদেশে বেমিল, ম্যাডাম তৃণা? আর ছবিটা গরম চায়ের হলেও লেখাটা লেড়ো বিস্কুট। কামড়াতে শক্ত তবে একবার যুঝে নিতে পারলে ভারি উপাদেয়।

    • আমি অন্তত এমন মাটির ভাঁড়ে চায়ের প্রচলন বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়(যেহেতু আমি ঢাকার মানুষ) দেখিনি দেবব্রতদা। এখনকার অবস্হা সম্পর্কে সঠিক বলতে পারবো না। আমার দই মনে হয়েছে…এখনও চা বলবার পরও, তাই হচ্ছে…. ভাবনার কথা, নয়! লেড়ো বিস্কুটের নাম শুনেছি বটে, চাক্ষুষের অভিজ্ঞতা নেই। 🙂

Leave a Reply to নাহার তৃণা Cancel reply