মৃত পাখিদের গান – ১৫শ পর্ব

অবিন সেন

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পর্ব — দুই

তিন

রুবি পালের বাড়িতে তালা ঝোলানো। কিন্তু তার ঘরের ভিতরে আলো জ্বলছে বলে মনে হয়। গলির এ দিকটা একটু অন্ধকার, তবু চারপাশের বাড়ির জানালা থেকে আলো এসে রাস্তার মাঝে মাঝে পড়েছে। সেই আধো অন্ধকার আধো আলোতে তন্ময় সামন্ত একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। তার যেন মনে হয়, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! খুনি কি তবে তাদের আগে আগেই খবর পেয়ে যাচ্ছে! সে একটু ধন্ধে পড়ে যায়। সে কি একবার প্রবালকে ফোন করবে? তারপরে সে একবার ভাবল, রুবি হয়তো নিজের ঘরে তালা লাগিয়ে কোথাও গিয়েছে। কিন্তু তার কাছে তো ইনফরমেশন ছিল, রুবি সন্ধ্যা থেকে বাড়িতেই আছে। বিকেলে রুবি আর হ্যামিলটন গল্প করেছে এ খবর পাক্কা। তার পরে রুবির বাড়িতেই ফিরে আসার কথা। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে রুবি কোথাও বের হয় না। সামন্তর কাছে পাক্কা খবর আছে।

কিছুক্ষণ সে এমনি দাঁড়িয়ে থাকল। তারপরে সে দরজার তালা ভাঙারই সিদ্ধান্ত নেয়। তালা ভেঙে ঢুকে দেখল, বসার ঘরের বড় আলোটা জ্বলছে। সে কি আলো জ্বেলেই বাইরে গিয়েছে? না তেমনটা বোধহয় নয়। দরজার মুখেই একটা আধ খাওয়া সিগারেট পড়ে আছে। সামন্ত ঝুঁকে সিগারেটের টুকরোটা কুড়িয়ে আলোর দিকে তুলে ধরে দ্যাখে। দামি ‘ডানহিল’ সিগারেট। রুবি সিগারেট খায় না। সে জানে। তবে কে? তার মাথার ভিতরে একটা প্রশ্ন চিহ্ন খেলা করে। ‘আবার একটা কিডন্যাপ?’ সে একজন কনস্টেবলকে দিয়ে গাড়িটা পাঠিয়ে দিয়ে প্রবালকে ফোন করে দেয়।

প্রবালের বাড়ি বেশি দূরে নয়, ফলে তার পৌছাতে বেশি দেরি হল না। তবুও তখন রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে। গলির মোড়ে দু একটা ছোট দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই হেতু গলিটা এখন বেশ অন্ধকার। আশপাশের বাড়িগুলোর জানলাও একটা একটা করে বন্ধ হয়ে আসছে। গলিটা এখন থমথমে আর নীরব। আকাশে মেঘ। কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন বৃষ্টি নামবে। প্রবাল ভাবে প্রতিটা খুনের সঙ্গেই যেন বৃষ্টির যোগ। এক বৃষ্টি-বিলাসী খুনি যেন শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অথচ তারা তার কোনও হদিস করে উঠতে পারছে না।

প্রবালকে ‘ডানহিল’ সিগারেটের টুকরোটা দেখায় সামন্ত। প্রবাল ঘরের মধ্যে চোখ বুজে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকে। সে যেন কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া নাটকের পুনরাভিনয় চোখের সামনে অনুভব করার চেষ্টা করছে।

রুবির এক চেনা ব্যক্তি এসে দরজায় কড়া নড়ল। রুবি দরজা খুলে দিয়েছে! দরজা খুলে দিয়ে কি সে অবাক হয়েছে? নিশ্চয়ই কিছুটা অবাক হয়েছে সে। কারণ যে এসেছে সে কখনও রুবির বাড়িতে আসেনি আগে। কিন্তু এখন কেন এসেছে? রুবি তাই ভেবে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে? কী বলবে? ভেবে ভেবে কূলকিনারা না পেয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরে সেই ব্যক্তি কী বলল রুবিকে? এমন কিছু যাতে করে রুবি আনন্দে অবাক হয়ে যায়। অবাক হয়ে রুবি ভিতরের ঘরে চলে যায়। সাজপোশাক পরে। হালকা মেকআপ। ততক্ষণ সে একটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়। রুবির পোশাক পরা হয়ে গেলে পরে আগন্তুক বলে, তার গাড়ি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা এইটুকু পথ পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে পড়ে।

সামন্তর ডাকে প্রবাল যেন একটা ঝাঁকানি খেয়ে আবার বাস্তবে ফিরে আসে।

স্যার কী ভাবছেন?

ভাবছি আমাদের খুনিকে নিশ্চয়ই কেউ দেখেছে এখানে। এই গলিপথটুকু তারা নিশ্চয়ই হেঁটে পার হয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠেছে। এর মধ্যে কেউ কি তাদের দেখেনি?

ঠিক স্যার।

আসার সময় দেখেছি, মোড়ের মাথায় একটা পান বিড়ির দোকান তখনও খোলা। চলুন দেখি সেটা এখনও খোলা আছে কী না!

সামন্ত বলল,

স্যার রুবির মোবাইলটা ট্র্যাকিং-এ দিয়েছি। যদিও সেটা এখন সুইচ অফ।
খুব লাভ কিছু হবে কি?
লাভ আছে। ফোনটা লাস্ট কালীঘাটের লাল আলো এলাকায় ট্রেসে হয়েছে। ঘণ্টা খানেক আগে।
কালীঘাট?

প্রবাল যেন একটু অবাক হয়।

সে আশা করেনি, রুবি কালীঘাটের বেশ্যাপাড়ার দিকে যেতে পারে!

তা হলে প্রবীরকে বলুন একবার খোঁজ নিতে।
বলেছি স্যার।

তারা হাঁটতে হাঁটতে গলির মুখে এসে দেখল পান-বিড়ির দোকানটা তখনও খোলা আছে। প্রবাল সেটার সামনে গিয়ে একটা সিগারেট কিনে সেটা দড়ির আগুনে ধরিয়ে নিয়ে খোস গল্প শুরু করে দিল। সামন্ত একটু তফাতে দাঁড়িয়েছিল।

প্রবাল একবার হাঁক দিয়ে বলল,

সামন্তবাবু পান খাবেন নাকি?

সে ইশারায় হাত তুলে না বলল। পান খেয়ে বাড়ি ফিরলে গিন্নি আবার সন্দেহ করবে। এমনিতেই আজ বাড়ি ফিরে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়াতে হবে। তার ওপরে আবার এতটা রাত হয়ে গিয়েছে।

সামন্ত দেখতে পেল, প্রবাল তার মোবাইলটা বার করে সেটাতে কী যেন দেখাল সেই পান-বিড়িওলাকে। সে দরদ দিয়ে পান সাজতে সাজতে প্রবালের কথায় মাথা নাড়ছিল।

পানটা মুখে পুরে দিয়ে প্রবাল গাড়িতে উঠে বলল,

সামন্তবাবু কাল একবার টালিগঞ্জ পাড়ার সেই সিনেমা পরিচালকের কাছে যাব। দেখি হ্যামিলটনের কোনও খোঁজ পাই কিনা। বুঝলেন, হ্যামিলটনের খোঁজ আমাদের পেতেই হবে। সে আমাদের মিসিং লিঙ্ক।

***

 

ওদিকে আর একজন অন্ধকারে বসে আছে হ্যামিলটনের জন্যে। নিজের মনের ভিতরে সে ডাক দিয়ে উঠল। চিৎকার করে উঠল। “হ্যামিলটন” “হ্যামিলটন” কোথায় কোথায় তুমি। সে দৌড়ে উপরের ঘরে চলে যায়। একবার বোনের ঘরে উঁকি দেয়। ফিস ফিস করে বলে ‘বোন ভালো থাকিস, আমি আসছি, তুই কিন্তু খেয়ে নিস।’ সে নিজের ঘরে ফিরে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান করে। ‘হ্যামিলটন, হ্যামিলটন, তোমার বাড়ি যাব।’ তার পরে মুচকি মুচকি হাসে। সে আয়নার সামনে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকে। একবার উঠে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ায়। বৃষ্টি আসবে কি? নিশ্চয়ই বৃষ্টি আসবে। বৃষ্টিকে তো আসতেই হবে। আসতেই হবে। আবার সে আয়নার সামনে ফিরে আসে।

মনে মনে আবার বলল,

“এই মাত্র মেঘ করল, দু চার টাকার মৃত্যুদিন…
এক বেলা দু বেলা শোক…”

কী যেন একটা কষ্ট তার ভিতরে। কষ্টটা এখুনি আসে আবার এখুনি সরে যায়। যেন মেঘ সরে গিয়ে আবার আনন্দ হেসে উঠবে। জঠরের ভিতরের এক অন্ধকারের ভিতরে সে আবার বেঁচে ফিরবে। সে বনানীর কথা ভাবল। সেই সারি সারি ধানের মাঠের পরে গাছের সারি, গাছের সারি বেয়ে মেঘ নেমেছে, সেই মেঘের কোলের কাছে বনানীর কোলের কাছে সে একদিন ফিরে যাবে। বনানী তাকে মেঘ করা শিখিয়েছে, শিখিয়েছে মেঘের গর্জন, মেঘের বর্ষণ। সে মেঘের বর্ষণের কাছে ফিরে যাবে।

“তোমাদের মনে আছে সেই কেমন বৃষ্টি সাতসকালে?”

বনানী তার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। আর কত দিন সে অপেক্ষা করে থাকবে? বেশিদিন কি সে আর অপেক্ষায় থাকবে? না না সে তা পারবে না! তাকে সব কাজ জলদি করতে হবে। তার সাজপোশাক পরা হয়ে গিয়েছে। সে আয়নার সামনে থেকে আবার দৌড়ে নিচে নেম গেল। গাড়ি বার করল গ্যারাজ থেকে। এখন অনেক রাত। অনেক রাতে শরীরে বিষ ঢালতে হয়। সে শিখেছে। সে এসব শিখেছে একদিন বনানীর কাছে। একবার গাড়ির ডিকিটা খুলে দেখে নিল সে। না সেই বাক্সটা ঠিক তেমনই আছে। তার সারা মুখে একটা বিষাদের হাসি খেলে যায়।

সে গাড়ি ছুটিয়ে দেয়। মনে মনে আওড়ায়,

“কেন আমি অন্ধকার বিষাদ ছাপাই?
কেন আমি মেঘে মৃত তারার শরীর
এখনও বহন করে নিয়ে চলি কাঁধে?
কেন বা আমার রাস্তা ফাঁদ থেকে ফাঁদে
গিয়ে পড়ে বার বার? অচেনা পরীর
ডানা ছিঁড়ে কেন আমি হাহাকার করি
ঘরে এসে? কেন করি?”

***

 

বদু দরজা খুলে দিল। যদিও না খুলে দিলেও চলত। পিছনদিকের দরজাটা খোলাই থাকে। তবে আজকাল বদু সেটা বন্ধ করেই রাখে। লড়বড়ি নামে সাধুচরণের কুকুরটা যে ঘরটাতে থাকতে সেই ভাঙা ঘরটার এক দেওয়ালে একটা দরজা। সেই দরজা খুলে দিলে একটা সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নীচে। সেটা সাধুচরণ জানত না। সে এখন গভীর ঘুমে ডুবে আছে। আজকাল সে সারাদিন প্রায় ঘুমিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বদু তাকে খাবার দেয়। সে খায়। খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সারা বাড়িটার রাজা এখন বদু ওরফে বদ্রিনারায়ণ।

সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলে আবার একটা দরজা পড়ে। সেই দরজাটা খুলে দিলে একটা প্রশস্ত ঘর। ঘরে ঢুকলেই একটা বোঁটকা গন্ধ এসে নাকে লাগে। পচা-পোড়া গন্ধ, তার সঙ্গে পেচ্ছাপের অ্যামোনিয়ার গন্ধ। মাঝে মাঝে ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করা হয় ঘরটা। কিন্তু বদ্ধ ঘরে গন্ধটা থেকেই যায়। এই বিশাল হল ঘরের লাগোয়া একটা ছোট ঘর। সেটা বন্ধই থাকে।

বড় হলটার একপাশে নানা রকমের যন্ত্রপাতি রাখা। একটা বড় কাঠের চৌকির মতো। সেটার উপরে রুবি শুয়ে আছে। তার সারা শরীরে কোনও পোশাক নেই। তার একটা হাত, ডান হাত আর বাম পা লোহার শিকল দিয়ে সেই কাঠের খাটের সঙ্গে বাঁধা। তার ঠোঁটের কস বেয়ে একটা রক্তের ধারা নামে এসে কাঠের উপরে তার চুলের সঙ্গে লেপটে আছে। সে চিৎকারের চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। একটা ঘড় ঘড় শব্দ মাছির মতো যেন ঘরের ভিতরে উড়ে বেড়াচ্ছে। তার জিভটা নেই। তার কাটা জিভটা একপাশে একটা বেঞ্চের উপরে রাখা কাচের বয়ামে তরলের ভিতরে ঢুবিয়ে রাখা। এই রকম কাচের বয়ামে আরও তিনটি জিভ রাখা আছে।

বদ্রির সঙ্গে সঙ্গে সে নীচে নেমে আসে। শিস দেয়। গুন গুন করে গান গায়। বদ্রিকে বলে,

কী রে শালা নিয়েছিস নাকি?

বদ্রি দাঁতগুলো বার করে। হাসে কি না বোঝা যায় না।

গতরাতেই বদ্রি একবার রুবিকে ধর্ষণ করে গিয়েছে।

সে বদ্রির পিঠ চাপড়ে দেয়। বলে,

এখন একবার হবে নাকি?

বদ্রি আবার তার দাঁত বিকশিত করে ঘাড় নাড়ে। তার পরেই সে জামাকাপড় খুলে নগ্ন হয়ে গিয়ে রুবির শরীরের ওপরে উঠে পড়ে। তার স্তন-দুটো খামচে ধরে। আঁচড়ে কামড়ে একাকার করে তোলে।

একটা টুল নিয়ে সে রুবির মাথার কাছে বসে থাকে। চোখ মেলে দেখে বদ্রির কালো কুৎসিত শরীর রুবির ফ্যাকাসে শরীরের উপর উথালি পাথালি করে। সে চোখ ভরে দ্যাখে। আহা কবেকার দেখা সেই সোনালি ধানের ক্ষেত বেহিসেবি হাওয়ায় কাঁপে। সে একবার রুবির মাথার কাছে কান নিয়ে যায়। রুবির আত্মার ভিতর থেকে যেন একটা গোঙানির শব্দ উঠে আসে। সে কান পেতে শোনে। তার কান জুড়িয়ে যায়। সে ফিস ফিস করে বলে রুবির কানে কানে,

শুনতে পাচ্ছিস? একটা অসহায় মেয়ের কান্না? শুনতে পাচ্ছিস?

তার গলার স্বর সাপের মতো হিস হিস করে রুবির কানে প্রবেশ করে। রুবি চোখ মেলে তাকাতে চায়। কিন্তু তার চোখের পাতা ভীষণ ভারি। সে তাকাতে পারে না। একবার তাকিয়েই সে আবার চোখ বন্ধ করে দেয়। তার চোখের কোল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

বদ্রির পিস্টন থেমে গিয়েছিল। ক্লান্ত হয়ে সে রুবির শরীর থেকে উঠে পড়ে। বলে,

স্যার হয়ে গেছে।

সে তখন সেই টুল থেকে উঠে আসে। একটা চাবুক নিয়ে এসে সপাং সপাং করে সে রুবির ক্লান্ত শরীরটাকে চাবকাতে থাকে। গুনে গুনে ঠিক পঁচিশবার চাবুক মারে সে। তার পরে চাবুক ফেলে দিয়ে টুলটায় গিয়ে বসে। দু-হাত দিয়ে মুখ ঢাকে সে। তার সারা শরীরের ভিতর থেকে একটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায়। তার খুব কাঁদতে ইচ্ছা করে। খুব। খুব।

সে সেই টুলটাতে বসে বসে গায়ের জামাটা খুলে ফ্যালে। সারা গাটা তার দারুণ ফর্সা। বুকের বাদামী স্তনবৃন্তের উপরে সে হাত বোলায়। কী ব্যথা! হাত বোলাতে বোলাতে সে স্তনবৃন্তের উপরে চাপ দেয়। ভীষণ চাপ দেয়। আহা! কি ব্যাকুল ব্যথা। সে পকেট থেকে একটা লম্বা কাঁটা বের করে। রুবির নগ্ন শরীরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেই কাঁটা সে নিজের স্তনবৃন্তে আমুলে বিদ্ধ করে দেয়। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। সেই রক্তের ধারা তার বুক পেট বেয়ে নামতে নামতে তার প্যান্টের ভিতরে ঢুকে তার যৌনকেশ ভিজিয়ে দেয়। তার ভীষণ আনন্দ হয়। সে দেখতে পায় সুন্দর এক ধানক্ষেত বিছানায় যেন বিছিয়ে আছে। তার সেই বিপুল চুলের রাশি বিছানার কানাচ বেয়ে নেমে এসে প্রায় মাটি ছুঁয়ে গিয়েছে। সেই ধানক্ষেতের উপরে এক শাদা রক্তাভ ঘর্মাক্ত দস্যু উথালি পাথালি করছে। ভিজে সবুজ পাতার কাঁচা গন্ধ যেন ঘাম গন্ধের সঙ্গে মিশে গিয়ে সারা ঘরে রোঁয়ার মতো ভেসে ভেসে আসছে। সেই ঘরের জানালার ফাঁকে এক বালকের বয়স বেড়ে গিয়েছে হঠাৎ। সে ফুটবল ক্রিকেট খেলতে ভুলে গিয়েছে। বরং সে অন্ধকার ঘরের ভিতরে আশ্চর্য খেলায় মেতে উঠেছে দিনের পরে দিন।

নিজের মনের ভিতরে তার হঠাৎ বিষাদ ভরে ওঠে। আনন্দ ভেসে গিয়ে কোথাও একটা হাহাকার জলের অতল গভীর থেকে বুজগুড়ির মতো ভেসে ভেসে ওঠে।

মনে পড়ে। এই তো সেদিনের কথা। তিতলি এসে বলল,

দাদা, আমি সিনেমায় অভিনয় করব। অডিশান দিতে যাব কাল।

তার পাশে তখন দাঁড়িয়ে ছিল তার বান্ধবী বিশাখা।

বিশাখাও নাকি যাবে তার সঙ্গে অডিশন দিতে।

সে বিশাখার দিকে তাকিয়েছিল। কী সুন্দর হয়ে উঠেছে বিশাখা! বেশ কয়েকদিন পরে সে বিশাখাকে দেখল। তার বিপুল সৌন্দর্য যেন সবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। সে বিশাখার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না। বিশাখা তার মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে থেকে চোখ সরাতে যেন বলে উঠেছিল,

দাদা, তোমার তো কোর্স কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। তুমিও চলো না আমাদের সঙ্গে।

সে সেদিন যায়নি। কেন যায়নি! কেন যায়নি সে?

সে চিৎকার করে ওঠে।

আর একটা স্তনের বোঁটায় সে কাঁটাটা আমূলে বিঁধিয়ে দেয়। আবার ফিনকি দিয়ে রক্ত।

সে টুল থেকে উঠতে গিয়ে টলে পড়ে যায় যেন। তার পরে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রুবির চুলের মুঠি ধরে একবার আক্রোশে ঝাঁকানি দেয়।

তারপর টলতে টলতে সে কোণের সেই ছোট ঘরটার ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

 

আবার আগামী সংখ্যায়

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4861 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...