“পুঁজিবাদের আত্মহননকারী ঝোঁকগুলোকে কেবল ফাঁস করে দিয়েছে এই অতিমারি”— নোম চমস্কি

জিপসন জন এবং জিতীশ পিএম

 

ট্রাইকন্টিনেন্টাল ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল রিসার্চ-এর দুজন ফেলো জিপসন জন আর জিতীশ পিএম The Wire-এর জন্য নোম চমস্কির এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।

চমস্কি একজন ভাষাবিদ এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী ব্যক্তি যিনি নব-উদারতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সামরিক-শিল্প-সংবাদমাধ্যম জোটের সমালোচনার জন্য সুপরিচিত।

সাক্ষাৎকারটি ‘দি ওয়ার’-এ গত ১৮ মে ২০২০তে প্রকাশিত।

চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় তর্জমা করেছেন প্রবীর মুখোপাধ্যায়

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী কারণে নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হল? এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা না সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা? এবং কোভিড-১৯ সঙ্কট সত্ত্বেও মার্চ মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি পায়। আপনি কি মনে করেন যে এই ঘটনা মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে?

এই অতিমারির উৎসের দিকে দেখতে গেলে এক পা পিছিয়ে গিয়ে দেখলে কাজের কাজ হবে। এই অতিমারি অপ্রত্যাশিত কোনও ঘটনা নয়। ২০০৩-এর সার্স (SARS) মহামারির পর থেকেই বৈজ্ঞানিকেরা পূর্বানুমান করছিলেন যে হয়তবা সার্স করোনাভাইরাসের এক পরিবর্তিত রূপে আরেকটি অতিমারি খুবই সম্ভাবিত। কিন্তু শুধু জানা থাকলেই তো হবে না। এ বিষয়ে কারুকে কিছু করতে হবে। এ বিষয়ে ওষুধ কোম্পানিদের আগ্রহ নেই। তারা বাজারব্যবস্থার সংকেত অনুসরণ করে, আর মুনাফা আসে অন্য জায়গা থেকে। সরকার দায়িত্বভার নিজের ওপর তুলে নিতে পারত, কিন্তু নব্য-উদারবাদী মতবাদ সে পথ বন্ধ করে রেখেছে।

সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল-এ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ স্থিরভাবে কমিয়ে দিয়ে আর যারা আগে থেকে সতর্কবার্তা দিতে পারত সেইসব সরকারি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ট্রাম্প অবস্থাকে আরও খারাপ করে ফেলেছেন। সেকারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অদ্ভুতভাবে এক অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল। যে ভাইরাস থেকে অসুস্থতা হচ্ছে সেই ভাইরাসটিকে চিনের বিজ্ঞানীরা দ্রুত শনাক্ত করলেন, এর যাবতীয় জিন-উপাদানের পূর্ণাঙ্গ সমাহারের পরম্পরা (sequenced the genome) বার করে ফেললেন আর জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সব প্রাসঙ্গিক তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিলেন।

বেশ কয়েকটি দেশ সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হয়ে [সংক্রমণের] সমস্যাকে অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে আটকে রাখতে সমর্থ হল। মার্কিন গোয়েন্দা ও স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসারেরা নিয়মিতভাবে যেসব সতর্কবার্তা পাঠাল ট্রাম্প সেগুলিকে অগ্রাহ্য করলেন, জোর দিয়ে বললেন যে এটা [কোভিড-১৯] ঠিক আরেকটা ফ্ল্যু-এর মত, আর খুব তাড়াতাড়ি উধাও হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মার্চ মাসে এসে যখন তিনি এ বিষয়ে নজর দিলেন তখন ইতিমধ্যেই অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছে। শত-সহস্র মার্কিন নাগরিক ইতিমধ্যেই মারা গেছেন আর অতিমারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

এইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে তিনটি আঘাতের সম্মুখীন হল: পুঁজিবাদী চিন্তন, পুঁজিবাদের নব-উদারবাদী বর্বর রূপ আর এমন এক সরকার জনসাধারণ বিষয়ে যার কোনও মাথাব্যথা নেই।

রাষ্ট্রপতি কোনও একটি বিষয়ে যখন একটা নির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেন তখন সেই অবস্থানকে সমর্থন করলে সমর্থনকারীর কিছু লাভ হতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই লাভের আশা দ্রুত হ্রাস পেতে লাগল। [করোনা প্রসঙ্গে] তালগোল পাকিয়ে ফেলা আর অপরাধিক কাজকর্ম করার জন্য তার পুনর্বার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা হয়ত দুর্বল হয়েছে, কিন্তু নভেম্বরের আগে আরও অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।

এই অতিমারির ওপরে নজর রাখা আর একে প্রতিরোধ করার কাজে তথ্য-প্রযুক্তি আর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন দেশকে সহায়তা করেছে, কিন্তু স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ আর সরকারি নজরদারি যে ক্রমবর্ধমান সে বিষয়েও  বিশেষজ্ঞরা নিজেদের দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করছেন। এ প্রসঙ্গে আপনি কি সহমত পোষণ করেন?

পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করছে এমন শক্তি [সমাজে] বিদ্যমান। ব্যবসায়ী জগৎ আর তাদের সঙ্গে যুক্ত প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রবাদী শক্তিরা অধিকতর স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ-সহ [আগে যেমন ছিল সেই] পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়। লোকায়ত শক্তিগুলি চায় অধিকতর ন্যায়সঙ্গত আর মুক্ত দুনিয়ার পথে অগ্রসর হতে। [শেষ পর্যন্ত] কী ঘটবে সেটা নির্ভর করবে এই সব শক্তিগুলির পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর।

 


আরেকটি, সম্ভবত আরও প্রবল অতিমারি আসতে পারে বলা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানেন কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, কিন্তু কারুকে তো প্রস্তুতি নেওয়ার কাজটা করতে হবে। আমাদের ঠিক চোখের সামনে যা আছে তার থেকে শিক্ষা নিতে আমরা যদি রাজি না থাকি তবে তার ফল হবে মারাত্মক।

 

আজকের পরিপ্রেক্ষিতে দরিদ্রদের যে অবস্থা তার উন্নতি করার জন্য কী কী অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত? বিভিন্ন দেশের সরকার কি এক নতুন সামাজিক-গণতান্ত্রিক পথের দিকে এগিয়ে যাবে, না [জনগণের ওপর] কঠোরতর সংযম ও যেন-তেন-প্রকারেন এই পরিস্থিতির থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা গ্রহণ করবে?

যে ধরনের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সেটা আমাদের জানা আছে। কিন্তু বর্তমান সঙ্কটগুলি থেকে কি পরিস্থিতির যে উদ্ভব হবে সেটা আমাদের জানা নেই। বর্বর পুঁজিবাদ গত চল্লিশ বছর ধরে চালিয়ে আসছে  নব-উদারতাবাদ। এর লাভ যারা ভোগ করেছে, বর্তমান অতিমারি আর অন্য অনেক অকাজের জন্য তারা দায়ী। এরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে এটা সুনিশ্চিত করার জন্য যে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে সেটা যেন তারা নিজেদের স্বার্থপরতার প্রয়োজনে যে সমাজব্যবস্থা তারা গড়ে তুলেছে তার থেকেও কঠোরতর এক নতুন রূপ নেয়। সশক্ত প্রতিরোধী শক্তিগুলি না থাকলে ওরা সফল হবে। এমনটাই যে হবে এটা কিন্তু পূর্বনির্ধারিত নয়।

এক সম্পূর্ণ আলাদা আর সুন্দরতর দুনিয়া যাতে গড়ে উঠতে পারে তারজন্য লোকায়ত শক্তি সুনির্দিষ্ট রূপ নিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [বার্নি] স্যান্ডার্সের আর ইওরোপে ইয়ানিস ভার‍্যুফাকিস-এর আহ্বানে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশন্যাল গঠনের মধ্য দিয়ে এরকম হচ্ছে। এখন গ্লোবাল সাউথের দেশেরাও [অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বের দেশেরাও] এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

বর্তমান সঙ্কট যতই নির্মম হোক না কেন, এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতি সামনে আসছে এই কথা আমাদের মনে রাখা উচিত। বিশাল মূল্য দিয়ে তবেই এই অতিমারি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যাবে। কিন্তু মেরুপ্রদেশের বরফের চাদর বা হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়া, অথবা বিশ্বব্যাপ্ত ঊষ্ণায়ণ [গ্লোবাল ওয়ার্মিং]-এর যেসব শোচনীয় ফলাফল ঘটে চলেছে সেই অবস্থার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। দুনিয়া আজকে যে পথে চলেছে সেই একই পথে যদি চলতে থাকে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার একটা বিরাট অংশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়াবে। আর সেটা হবার জন্যে সুদূর ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। অতি সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা হিসেব করে বলছে যে যদি আমরা এখনকার মত চলতে থাকি তাহলে পৃথিবী আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই ঐ স্তরে পৌঁছে যাবে।

রব ওয়ালেশের মত মহামারি-বিশেষজ্ঞরা অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন যে মুনাফা-প্রতাড়িত পুঁজিবাদীর অমোঘ ঘটনাপরম্পরার ফলে অনধিকার প্রবেশ হয়েছে বন্যপ্রাণী বাস্তুতন্ত্রে, মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত বেশি বেশি করে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আর এর ফলে মানবশরীরে ভাইরাস সংক্রমণের রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে। আজ পুঁজিবাদের সঙ্কট স্বাস্থ্যের সমস্যা হিসাবে সকলের সামনে অনাবৃত হয়ে পড়েছে। সে কারণে যে অবস্থা ছিল ‘স্বাভাবিক’ সেখানে আর মানুষ ফিরে যেতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আপনি কী চিন্তা করছেন?

উনি [রব ওয়ালেশ] সম্পূর্ণ সঠিক কথা বলছেন। স্বাভাবিক আবাসস্থল ধ্বংস করে আর বাস্তুসাম্যের পক্ষে হানিকর এমনভাবে জমি ব্যবহার করার ফলে এই ধরনের ভাইরাস-সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে [এই নতুন করোনাভাইরাসের] এই ক্ষেত্রে এরকমটাই হয়েছে। এই স্বাস্থ্য সঙ্কটের মাধ্যমে লাগামহীন পুঁজিবাদের আত্মহননকারী প্রবৃত্তিগুলি আরও নানাভাবে অনাবৃত হয়ে পড়েছে। ২০০৩-এ সার্স মহামারির পরে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন যে সম্ভবত আরেকটা করোনাভাইরাস মহামারি হতে পারে আর জোর দিয়েছিলেন যে আমরা তার প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুতি নিই। কে এরকম করতে পারে?

এই [মহামারি প্রতিরোধ] কাজ করার যথেষ্ট রসদ মজুদ আছে বিশাল আর অতি-ধনী ওষুধ কোম্পানিদের হাতে, কিন্তু তারা মুনাফা সৃষ্টির স্বাভাবিক পুঁজিবাদী যে মহামন্ত্র তার কাছে দায়বদ্ধ। এ কাজ থেকে তো মুনাফা আসবে না! সরকার এই কাজে হাত লাগাতে পারে, কিন্তু সেখানেও নব-উদারনীতিবাদী বিধিনিষেধ আটকে রেখেছে তাদের। যে দুনিয়া বেসরকারি শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে সরকারের নাক গলানো নৈব নৈব চ। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে— আর সেটা হচ্ছে নিজেদের সৃষ্টি করা সঙ্কটে যখন অর্থবান আর কর্পোরেট সেক্টর আটকে পড়ে তখন তাদের সেই সঙ্কট থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপর— ঠিক যে কাজ এখন সরকার করছে।

বিশ্বব্যাপ্ত ঊষ্ণায়ণ বহু গুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আরেকটি অতিমারি, হয়তো বা এখনকার অতিমারির থেকেও মারাত্মক, আসতে পারে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে বিজ্ঞানীরা জানেন, কিন্তু কারুকে তো কাজটা করতে হবে। আমরা যদি স্থির করে থাকি যে আমাদের ঠিক চোখের সামনে যা সব ঘটে চলেছে তা থেকে আমরা শিক্ষা নেব না তাহলে ফল হবে মারাত্মক।

প্রসঙ্গক্রমে, আমাদের পক্ষে এমনটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে বড় ওষুধ কোম্পানি আর সরকারই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। জনগণ যাদের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে থাকে সেই বাঘা বাঘা ওষুধ কোম্পানিদের অস্তিত্বই বা থাকবে কেন এটা নিশ্চয় একটা উপযুক্ত প্রশ্ন। এই কোম্পানিগুলোকে কেন সামাজিকীকরণের আওতায় আনা হবে না, অন্তত এদের নিয়ন্ত্রণভার শ্রমিক আর সমাজের হাতে কেন তুলে দেওয়া হবে না যাতে করে এরা জমা করা সম্পদ আর ব্যক্তিগত ক্ষমতার চাহিদার দিকে নজর না দিয়ে মানবিক প্রয়োজনের দিকে নজর দিতে পারে?

এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংহতি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা দেখছি যে জাতিগত আর বিদেশিদের প্রতি ঘৃণাসূচক দোষারোপের পালা চলেছে, চিনকে শাসানো হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে অর্থ প্রদান বন্ধ করা হচ্ছে, ইরান আর ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবন্ধ জারি করা হচ্ছে, চিকিৎসার সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে পারস্পরিক কাড়াকাড়ি চলেছে। প্যাট্রিক ককবার্ন বলছেন যে এগুলি মার্কিন আধিপত্যবাদ হ্রাস পাচ্ছে বলে হচ্ছে। আপনি কি সহমত?

এই উদাহরণগুলির অধিকাংশই হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের কুৎসিত মুখচ্ছবি আর তাদের অনুসৃত অস্বাভাবিক বিকৃত সাম্রাজ্যবাদের এক ধরন। কিন্তু আরও অনেক আছে, সেগুলি অনেক কিছুই প্রকাশ করে। ইওরোপিয়ন ইউনিয়নের কথা ধরুন— ইউনিয়ন (সঙ্ঘ) শব্দটি নজরে রাখুন। ইওরোপিয়ন ইউনিয়নের সবচেয়ে অর্থবান আর ক্ষমতাশালী দেশ জার্মানি, এরা কিন্তু বেশ ভালোভাবেই এই সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। এর থেকে খুব বেশি দূরে নয়, এর দক্ষিণেই আছে সেই দেশটি যেটি এই অতিমারির ফলে ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছে: ইটালি। জার্মানি কি ইটালিকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছে? এখনও অবধি যা প্রকাশ পেয়েছে তার থেকে দেখা যাচ্ছে যে উত্তর হচ্ছে  “না”। সৌভাগ্যক্রমে ইটালি কিউবা থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছে। আন্তর্জাতিকতাবাদের এটা একটা প্রকৃত উদাহরণ, যদিও প্রথমবারই যে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তেমনটি নয়। পরিস্থিতি আমাদের দেখাচ্ছে কী ধরনের আন্তর্জাতিকতা আমাদের নিদারুণভাবে প্রয়োজন— আর কী ধরন্রর স্বার্থপরতা আমাদের সক্কলকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতির আঘাত হানছে। তার মত ব্যক্তিও মার্কিন আধিপত্যবাদের গুরুতর লোকসান ঘটাতে পারে এটা বাস্তবসম্মত নয় বলেই আমার মনে সন্দেহ। মার্কিন ক্ষমতা সর্বব্যাপক। সামরিক দিক থেকে দেখতে গেলে এই ক্ষমতার কোনও তুলনাই হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এমন একমাত্র রাষ্ট্র যে অন্য দেশের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবন্ধ লাগাতে পারে— তৃতীয় দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই প্রতিবন্ধ নিয়ে যতই বিরোধিতা থাকুক না কেন অন্যদের এটা মেনে চলতেই হবে। ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন “এই শতকের কর্মসূচি” প্রকাশ করে তখন সেটাই হয়ে দাঁড়ায় মূল কাঠামো যা অন্যেরা গ্রহণ করবে। অন্য কোনও দেশ যদি এটা প্রকাশ করত তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসত ঠাট্টা-তামাশা, অবশ্য যদি কেউ সেটাকে নজর করে দেখতও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক সংস্থাগুলি সারা পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে, যে কোনও অর্থনৈতিক শ্রেণিতে এদের স্থান সর্বদা হয় প্রথম নয় দ্বিতীয়।

অন্য দেশেরা হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি বেশি করে অপছন্দ বা তার থেকেও বেশি কিছু করছে। কিন্তু ওরা একে সঠিক কারণেই ভয় করে। বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এর আন্তরিক কোনও প্রতিযোগী নেই।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...