বিপ্লবীরা জাগলে আর কিছুর তোয়াক্কা করে না— ভালোবাসা ছাড়া

বিজয় প্রসাদ

 

‘আরব বসন্ত’-এর দশ বছর উদযাপন শুরু উপলক্ষে ট্রাইকনটিনেন্টাল ইন্সটিটিউট ফর সোশ্যাল রিসার্চ-এ নিজের পাক্ষিক নিউজলেটারে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২০-তে এই আলোচনাটি করেছেন মার্কসবাদী ঐতিহাসিক ও সাংবাদিক বিজয় প্রসাদ। নিবন্ধটি বাংলায় তর্জমা করেছেন সত্যব্রত ঘোষ।

 

 

১৭ই ডিসেম্বর ২০১০। টিউনিশিয়া শহরের সিডি বৌজিডে মহম্মদ বৌয়াজিজি নিজের শরীরে অগ্নিসংযোগ করেন। রাস্তায় একটি দোকান চালাতেন বৌয়াজিজি। পুলিশের জুলুমবাজি সহ্য করতে না পরে উনি এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেন। কিছুদিনের মধ্যেই টিউনিশিয়ার এই ছোট শহরের রাস্তায় নামে হাজার হাজার ক্রুদ্ধ মানুষ। তাঁদের ক্রোধের তাপ ছড়িয়ে যায় রাজধানী টিউনিশ শহরেও। সেখানকার ট্রেড ইউনিয়ন, সমাজসেবা সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক মণ্ডলীগুলি রাস্তায় রাস্তায় মিছিল আয়োজন করে দাবি তোলে জাইন এল আবিদিন বেন আলি-র সরকার অপসারিত হোক। টিউনিসিয়ার এই বিক্ষোভ আন্দোলনগুলিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একইরকম আন্দোলন ছড়িয়ে যায় ভূমধ্যসাগরের চারপাশে। কায়রো-র তাহরির স্কোয়ার-এ স্লোগান গর্জে ওঠে, ‘আস-সাব ইয়ুরিড ইস্কাত আন-নিজাম (এই শাসনের অপসারণ চায় মানুষ)’। সেই স্লোগান ছড়িয়ে যায় ইজিপ্ট থেকে স্পেনে। লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আন্দোলন।

মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। তাঁদের আবেগের যে বহিঃপ্রকাশ তা স্প্যানিশ ‘ইনডিগনেডোস’ শব্দটিতে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত— রুষ্ট অথবা ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলতে চান দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য শক্তিদের হাতে তাঁদের সব আশা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। ২০০৭-০৮ সালে ঋণ সঙ্কটের দরুন সারা বিশ্বে আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও নিজ নিজ দেশের কোটিপতিদের সঙ্গে রাষ্ট্রের যে সখ্যতা তা চেনা যাচ্ছিল সহজেই। ইতিমধ্যে যে দেশগুলিতে সরকার মানুষের পক্ষে (অন্তত কিছু কাজ করতে চায়), মানবিক নীতি প্রয়োগে তাদের আর্থিক মূলধন প্রবল গতিতে তলানিতে পৌঁছাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে তা দেখা কঠিন হলেও ফলশ্রুতিগুলি কম মারাত্মক ছিল না।

শাসনের অবসানের দাবিতে যে আবেগ ইন্ধন যোগাচ্ছে, সেই আবেগ সংখ্যাগরিষ্ঠের মনে তুফান তুলছে। অশুভ এবং অপেক্ষাকৃত কম অশুভ শক্তিকে নির্বাচনে নিরর্থক জিতিয়ে জিতিয়ে যে মন এতদিনে হয়ে গেছে নিস্তেজ। যে নির্বাচনী খেলায় মেতে এতদিনে প্রায় কিছুই বদলাল না, সেই খেলার বাইরে কিছু চাইছেন মানুষেরা। রাজনীতিবিদেরা এক কথা বলে নির্বাচনে লড়ে এসেছেন। ক্ষমতায় এলে করেন ঠিক তার উল্টোটা।

উদাহরণস্বরূপ, গ্রেট ব্রিটেনে ২০১০ সালে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয় লিবারাল ডেমোক্রাটসদের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফি বাড়বে না। যার পক্ষেই ভোট দেওয়া হোক না কেন, ফল এটাই যে মানুষদের কষ্টভোগ করতেই হবে। ‘গ্রিস, ফ্রান্স: এবার এখানেও!’ বলে গর্জে ওঠে গ্রেট ব্রিটেনের ছাত্ররা। চিলি দেশটাকেও ওরা স্লোগানে যুক্ত করতে পারত, যেখানে ছাত্ররা (ওখান বলে লস পিঙ্গুইনোস, মানে পেঙ্গুইন) শিক্ষাবাবদ বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল। ২০১১ সালের মে মাসে তারা আবার প্রতিবাদে সামিল হয়, যার জেরে পরবর্তী প্রায় দুটি বছর ধরে চলে ‘ইনভিয়েরনো এস্টুডিয়ান্টিল চিলিয়েনো’ অর্থাৎ চিলির ছাত্রদের শীতকাল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষরাও ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এ যোগ দিয়ে এই বিশ্বজোড়া ক্ষোভে সামিল হন। ২০০৭-০৮ সালে ঋণ সঙ্কটের জেরে বন্ধকি সমস্যার দরুন গণউৎখাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াল স্ট্রিটে দেওয়ালে লেখা হয়: আমেরিকান ড্রিম এক উপায়েই দেখা যায় – ঘুমিয়ে।

প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আস্থা কমেছে বলেই ‘শাসনের অপসারণ ঘটাও’— স্লোগানটি ওঠে। নব্য-উদারবাদী সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি যতটুকু দিচ্ছিল, মানুষরা চাইছিলেন তার চেয়েও বেশি। কিন্তু প্রতিবাদ যে শুধু সরকার উল্টে দেওয়ার জন্যেই চলছিল, তা নয়। কারণ, সমস্যাটা সরকারগুলিকে নিয়ে যে নয়, তা অনেকেই বুঝতে পারছিলেন। মানব সমাজের সামনে এই ধরনের রাজনৈতিক সম্ভাবনাগুলি খুলে যাওয়ার কারণে তৈরি গভীর এক সমস্যায় ভুগছে বিশ্ব। এক, অথবা তার থেকেও বেশি প্রজন্মকে বিভিন্ন ধরনের সরকারের নেওয়া খরচ কমানোর প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি, সোশ্যাল ডেমোক্রাটদের সরকারগুলির তরফ থেকে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে যে সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের চেয়ে ধনী উত্তমর্ণদের অধিকার রক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে সরকারগুলিকে প্রগতিশীল ভেবে নেওয়া হয়েছিল, যেমন পরবর্তীকালে গ্রিসে ২০১৫ সালে সাইরিজা (Syriza) জোটের খরচ না কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতা দেখে বিমূঢ় মানুষদের মধ্যে এমন তীব্র মনোভাব তৈরি হয়।

মানুষদের এই বিক্ষোভের চরিত্র বিশ্বজনীন। ব্যাঙ্ককে ২০১০ সালে ১৪ই মার্চ সামরিক শাসন, রাজতন্ত্র এবং বিত্তবান এক শ্রেণির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে লাল শার্ট পরিহিত শ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামেন। ২০১১ সালের ১৫ই অক্টোবর স্পেনে পাঁচ লক্ষ ‘ইনডিগনেডোস’ মাদ্রিদের রাস্তায় নামেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধে দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস একে ‘বিশ্বজোড়া রোষের বছর’ বলে চিহ্নিত করে। সংবাদপত্রের এক প্রমুখ নিবন্ধকার তাতে লেখেন ‘আন্তর্জাতিক স্তরে যুক্ত অভিজাত’-দের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের এই বিদ্রোহ, যারা আর্থিক বিকাশের কোনও উপকার থেকে বঞ্চিত, দুর্নীতির কারণে ক্রুদ্ধ।

২০০৮ সালের অক্টোবর মাসের অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর একটি রিপোর্টে দেখা যায় ১৯৮০ এবং ২০০০-এর মধ্যে OECD-র সদস্য পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশে অসাম্য ক্রমশ বেড়েছে। পরিস্থিতি সর্বনাশা হয়ে ওঠে উন্নয়নশীল বিশ্বে। ২০০৮ সালেই প্রকাশিত সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেল্পমেন্ট-এর একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯০ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে উন্নয়নশীল অঞ্চলের দরিদ্রতম জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের জাতীয় খরচ (ন্যাশনাল কনসামশন) কমেছে ৪.৬ শতাংশ থেকে ৩.৯ শতাংশে। সবচেয়ে কমেছে লাটিন আমেরিকায়, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এবং সাহারা মরুভূমি সন্নিহিত আফ্রিকায়, যেখানে দরিদ্রতমদের পঞ্চমাংশ মাত্র ৩ শতাংশ জাতীয় খরচ অথবা রোজগার করে। ২০০৮ সালের ঘোরতর সঙ্কট ঠেকাতে ব্যাঙ্কগুলিকে সাহায্য করতে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয় তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ভাগকে পুনরায় বিতরণ করা যায়নি, যার ফলে তাঁদের জীবন ক্রমশ হয়েছে আরও নিরাপত্তাহীন। এই সময়ে  বিশ্ব জুড়ে আন্দোলনগুলি গড়ে ওঠার বড় একটি কারণ এই অসাম্য।

তবে এই পরিসংখ্যানগুলিতে আশাব্যঞ্জক একটি ইঙ্গিতও ছিল। ২০১১ সালের মার্চ মাসে ইউএন ইকোনমিক কমিশন ফর লাটিন আমেরিকা অ্যান্ড দ্য ক্যারিবিয়ান-এর প্রধান অ্যালিসিয়া বারসেন লেখেন, উচ্চহারে আয়ের অসাম্য থাকলেও কয়েকটি দেশের সরকারের সামাজিক নীতির কারণে এই অঞ্চলে দারিদ্রের হার নেমেছে। ব্রাজিলের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি লুলা ডি সিলভা-র নেতৃত্বে সোশ্যাল ডেমোক্রাট সরকারের ‘বোলসা ফ্যামিলিয়া’ প্রকল্প, বলিভিয়ার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস এবং ভেনিজুয়েলা-র তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হিউগো সাভেজ-এর বাম সরকারগুলিকে বারসেনা এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। বিশ্বের এই অংশে বিক্ষুব্ধ মানুষেরা সরকার বানিয়ে নিজেদের লক্ষ্য চরিতার্থে আলাদা পথে হেঁটেছেন।

আরব বসন্ত (দ্য আরব স্প্রিং)-এর নামটি ১৮৪৮ সালে ইউরোপ জুড়ে বিদ্রোহগুলির স্মরণে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমের শক্তিগুলি লিবিয়া এবং সিরিয়াকে কেন্দ্র করে ইরান, সৌদি আরব এবং টার্কি-দের মধ্যে যুদ্ধে উৎসাহ দেওয়ার ফলে আরব স্প্রিং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে NATO-র আক্রমণে লিবিয়া ধ্বংসের পর আফ্রিকান ইউনিয়নের দাবি গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। ফরাসি ফ্রাঁ আর আমেরিকান ডলারের পরিবর্তে ‘আফ্রিক’ (Afrique) নামে মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলনের কথা থেমে যায়। ফরাসি এবং আমেরিকার সামরিক বাহিনীর বড় আকারের তৎপরতা শুরু হয় সাহেল অঞ্চলের মালি থেকে নিগের অবধি।

২০১১ সালে সিরিয়া সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে চাপ দেওয়া শুরু হয়। পরের বছর সেই চাপ আরও গভীর হয়। ২০০৩ সালে ইরাকের সঙ্গে আমেরিকার বেআইনি সময় থেকেই আরব সংহতির এই টুকরোগুলির আয়তন বাড়তে শুরু করে। ইরান এবং তার প্রতিপক্ষ (সৌদি আরব, টার্কি, এবং সংযুক্ত আমিরশাহি)-দের সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধে সিরিয়া হয়ে যায় ফ্রন্টলাইন। এর ফলে প্যালেস্টাইনের জন্যে লড়াই করার যে কেন্দ্রিকতা, তার গুরুত্ব হ্রাস পায়। ইজিপ্টে সদ্য গঠিত সামরিক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল মহম্মদ ইব্রাহিম স্পষ্ট বলেন, “আমরা এখন বিচারপতি, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের স্বর্ণযুগ উপভোগ করছি।” উত্তর আটলান্টিকের উদারবাদীরা তখন এই জেনারেলদের পিছনে ভিড় জমায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমান্যুয়েল ম্যাক্র ইজিপ্টের রাষ্ট্রপতি প্রাক্তন জেনারেন আবদেল ফত্তাহ এল-সিসিকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ পুরষ্কার লেজিয়ন দ্য’ হনার দিয়ে সম্মান জানান।

ওয়াশিংটন ইতিমধ্যে লাটিন আমেরিকায় সরকার উল্টে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধোঁকাদারির এক পর্ব শুরু করে যা ‘পিঙ্ক টাইড’ নামে চিহ্নিত হয়। ২০০২-এ ভেনেজুয়েলা সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান থেকে ২০০৯ সালে হন্ডুরাসে অভ্যুত্থান ঘটানো ছাড়াও হাইতি থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা-র প্রগতিশীল সরকারগুলির বিরুদ্ধে নানান ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে গেছে তারা। পণ্যের মূল্য, বিশেষ করে তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে উত্তর গোলার্ধে অর্থনৈতিক কাজকারবারগুলি দ্রুত এবং অসংলগ্ন হতে থাকে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বামপন্থী সরকারগুলির উপরে ওয়াশিংটন তথ্যগত, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক চাপ বাড়াতে থাকে, যা অনেক সরকারই সামলাতে পারে না। ২০১২ সালে প্যারাগুয়ের ফারনান্দো ল্যুগো সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের থেকেই বোঝা যায় ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ডিলমা-র উপর কী আসতে চলেছে।

অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের আশার শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত যুদ্ধ, অভ্যুত্থান এবং আইএমএফ-এর মতো সংস্থার তৈরি চাপ দিয়ে হটিয়ে দেওয়া হয়। ‘ট্যাক্স ও সাবসিডি রিফর্ম’ এবং ‘লেবার মার্কেট রিফর্ম’-এর মতো পুরনো শব্দবন্ধগুলি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এতে বেকার এবং ক্ষুধার্তদের জন্যে রাষ্ট্রের ত্রাণের প্রয়াসগুলির দমবন্ধ হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অনেক আগেই আশাভরসাগুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। ব্যবস্থার পচনই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে যখন অভিবাসীরা সমুদ্রে ডুবছে অথবা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি হচ্ছে আর সীমান্ত অতিক্রম করে মৃত টাকা পৌঁছে যাচ্ছে করমুক্ত স্বর্গরাজ্যে (সমুদ্রের মধ্যবর্তী বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার আঁকড়ে রাখা হয়েছিল। অঙ্কটি আকাশছোঁয়া বললে কম বলা হয়)।

এক দশক আগে ঘটে যাওয়া সেই বিদ্রোহগুলির দিকে ফিরে তাকালে ইজিপ্টের কারাগারগুলির সামনে আমাদের একবার থমকে তাকাতে হবে। আশা জিইয়ে রাখবার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া কিছু তরুণ সেখানে কারাবাসে আছে। আলা আবদেল এল-ফত্তা এবং আহমেদ দৌমা নামে দুই রাজনৈতিক কর্মী নিজের নিজের কারা কুঠুরি থেকে চেঁচিয়ে যে কথোপকথন চালায়, তা ‘গ্রাফিত্তি ফর টু’-তে প্রকাশিত হয়েছে। কীসের আশায় বিদ্রোহ করেছিলেন ওনারা? “আমরা লড়েছিলাম সেই এক দিন আনব বলে, এমন একটি দিন যা দমবন্ধ না করেই শেষ হতে হতে নিশ্চিত করবে যে আগামীকালটিও যেন আর পাঁচটি সাধারণ দিনের মতো আরেকটি দিন হয়।” বর্তমানের অপসারণ চেয়েছিলেন ওনারা, চেয়েছিলেন একটি ভবিষ্যৎ। আলা এবং আহমেদ বলেন যে বিদ্রোহীরা একবার জাগলে আর কিছুর তোয়াক্কা করেন না, ‘ভালোবাসা ছাড়া’।

নিজেদের কারা কুঠুরিতে বসে ওনারা ভারতীয় কৃষকদের গল্প শোনেন। যে কৃষকদের লড়াই সমগ্র এক রাষ্ট্রকে প্রেরণা দেয়। ওনারা শোনেন দূরে পাপুয়া নিউগিনি আরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হরতালে বসা নার্সদের কথা, ইন্দোনেশিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হরতালে বসা কারখানার শ্রমিকদের কথা। ওনারা শোনেন কীভাবে প্যালেস্তিনীয়দের এবং সাহারায়ুইদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা সারা পৃথিবীর রাস্তায় তোলপাড় জাগিয়েছে। ২০১০-২০১১-র সেই কয়েক মাস ধরে ছিল ‘দমবন্ধ নিশ্চয়তা’ যে ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু থাকবে না। এক দশক পরে মানুষরা আবার রাস্তায় নেমেছেন এমন এক ভবিষ্যতের খোঁজে, যা এই অসহ্য বর্তমান থেকে নিষ্কৃতি দেবে।


About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...