প্রক্সি

প্রক্সি -- রিনি গঙ্গোপাধ্যায়

রিনি গঙ্গোপাধ্যায়

 

ডোরবেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে প্রক্সি প্রথমেই ছুটে মেইনডোরের সামনে গিয়ে কয়েকপাক ঘুরে নিয়েছে। তারপর বাথরুমের সামনে এসে দু-তিন বার ডাক দিয়েই আবার ছুটেছে মেইনডোরের কাছে। ইতিমধ্যে ডোরবেল আবার বেজেছে; ফলে প্রক্সির ছুটোছুটি আর হাঁকডাক আরও খানিকটা বেড়েছে; সুমি নির্ঘাৎ সুযোগ বুঝে বাইরে বেরিয়েছে! নিরালা স্নান অসম্পূর্ণ রেখেই কোনওরকমে হাউসকোটটা গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে এল। প্রক্সি দ্বিগুণ উৎসাহে ওর পায়ে পায়ে ঘুরছে, দৌড়চ্ছে দরজার দিকে; ওকে সামলে দরজার আইহোলে চোখ রেখে নিরালা অবাক হয়; আইহোল হাত দিয়ে চেপে অন্ধকার করে রেখেছে কেউ। নিরালা দাঁড়িয়ে পড়ে। ওদিকে প্রক্সিকে আর কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না; ও এবার দরজাটা ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছে! ক্রমাগত দরজা আঁচড়াচ্ছে আর নিরালার হাউসকোট ধরে টানছে; আগন্তুকও ডোরবেলটা বাজিয়ে চলেছে একনাগাড়ে। নিরালা প্রক্সিকে দেখে বোঝে, পরিচিত কেউই এসেছে নিশ্চই… নইলে প্রক্সি এত খুশি হত না! ওরা তো গন্ধ পায়! এইসময় কে আসতে পারে ভাবতে ভাবতে দরজা খুলেই নিরালা দেখে, অনুরাগ। ওকে অবাক হওয়ার সময়টুকুও না দিয়ে অনুরাগ ওকে কোলে তুলে নেয়।

‘তুমি?’

‘ইয়েস ডার্লিং, আমি।’ বলতে বলতেই অনুরাগ নিরালাকে নিয়ে একচক্কর ঘুরে নেয়। সেই সঙ্গে তার সেই মনমাতানো দরাজ হাসি যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে…

নিরালা অনুরাগের কোল থেকে নেমে ওকে জাপটেজড়িয়ে ধরে। আনন্দে চুমু খেতে গিয়ে অনুরাগের গলায় হালকা কামড় বসিয়ে দেয়; অনুরাগ উফ করে ওঠে। আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে নিরালাকে। প্রক্সি অনুরাগের গায়ের ওপর লাফাতে থাকে, ডাকতে থাকে… অনুরাগ একটা হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিলে ও হাত চাটতে শুরু করে… একমুহূর্তের মধ্যে বাড়ির থমথমে পরিবেশটা কেমন চেঞ্জ হয়ে যায়।

আজ প্রায় ছ মাস পর অনুরাগ বাড়ি ফিরল। ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার; ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়টাই বাইরে থাকে। নিরালা একাই এত বড় বাড়িটায় থাকে। অবশ্য সুমি আছে…. বাড়ির কাজকর্ম করে টুকটাক; আর নিরালাকে সঙ্গ দেয়। যদিও নিরালাকে সঙ্গ দেওয়ার চেয়ে টিভি দেখাটাই বেশি প্রেফার করে সুমি। তাতে নিরালা বরং স্বস্তিই পায়… সুমির গল্প মানেও তো সেই সিরিয়াল, নয়তো পাড়ার লোকের গল্প…. কার বাড়িতে শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়া, কার বাড়িতে ভায়ে-ভায়ে লাঠালাঠি… এই সব। ওসব শোনার চেয়ে গল্পের বই পড়ে সময় কাটানো ঢের ভাল। ইচ্ছে হলে মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প রান্নাও করে নিরালা; রান্নার দিদি তখন হাতে হাতে কেটেকুটে গুছিয়ে দেয়। আর আছে প্রক্সি, নিরালার একাকিত্ব দূর করার জন্য অনুরাগের দেওয়া গিফ্‌ট।

বিয়ের পরপরই অনুরাগকে জাহাজে ফিরে যেতে হয়েছিল… এমার্জেন্সি ছিল। প্রায় এক বছর অনুরাগ বাড়ি ফিরতে পারেনি। অনুরাগের বাবা-মা বিয়ের আগে থেকেই ওদের জন্য আলাদা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। নিরালার বাপের বাড়ি জামশেদপুর; এত বড় বাড়ি ফাঁকা রেখে সেখানে গিয়ে থাকাও সম্ভব হয়নি। বাবা-মা এসেছিলেন কয়েকদিনের জন্য; কিন্তু টানা থেকে যাওয়া তাঁদের পক্ষেও পসিব্‌ল হয়নি। ফলে নিরালা একাই থাকতে বাধ্য হয়েছিল। সারাদিনে এক-দুবার হয়তো অনুরাগের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যেত। বাকি সময়টা কী করে কাটবে, নিরালা বুঝতে পারত না! দিনের পর দিন বই পড়ে, শপিং করে কাটানো সম্ভব! বন্ধুরাও তো নিজের নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত! এই পঁচিশ বছরের জীবনে নিরালার এমন কোনও জগৎই গড়ে ওঠেনি যেখানে সে অনেকটা সময় একা একা কাটাতে পারে। গান, বই, রান্না… সে আর কতটুকু! জীবনে তো এমন এক-একটা সময় আসে যখন শুধুই জড়বস্তুর সঙ্গে দিন কাটতে চায় না। জীবনের সবটুকু রস চেটেপুটে নেওয়ার জন্য একজন মানুষের দরকার পড়ে; একজন ভালোবাসার মানুষ; যার সঙ্গে আদরে-সোহাগে, ঝগড়া-কান্নায় জীবনটাকে চূড়ান্ত উপভোগ করে নেওয়া যায়! আর ঠিক সেই সময়টায় অনুরাগের অনুপস্থিতি নিরালাকে ক্রমশ জীবন থেকে বিচ্যুতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল; তার একাকিত্ব তার মন ছাপিয়ে শরীর, শরীর ছাপিয়ে মনকে এতটাই শূন্য করে ফেলেছিল যে, নিরালা ডিপ্রেশনে তলিয়ে যেতে বসেছিল; ওই এক বছরের বিভীষিকা আজও যেন মাঝে মাঝে তাড়া করে ফেরে নিরালাকে। নিরালা দিনের পর দিন খাটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে থাকত; উঠত না, খেত না, এমনকী স্নান করতেও ইচ্ছে করত না ওর! রাত্রিদিন শুধু যেন কী ভাবত… অথচ কী যে ভাবছে তাও পরিষ্কার করে বলতে পারত না। অনুরাগের মা, নিরালার বাবা-মা অনুরাগকে সবই জানিয়েছিল। অনুরাগ নিজেও নিরালার পরিবর্তনটা বুঝতে পেরেছিল। কারণ নিরালা সেই সময় অনুরাগের সঙ্গেও আর কমিউনিকেট করতে পারছিল না। অনুরাগ দশটা কথা বলে একটার উত্তর পেত; অনুরাগের কথামতোই অনুরাগের মা তখন নিরালাকে নিয়ে সায়কিয়াট্রিস্টের কাছে যান; যদিও কাউন্সিলিং বা ওষুধপত্রে বিশেষ উপকার হচ্ছিল না। ডাক্তার তখন পেট রাখার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী অনুরাগ আরও প্রায় তিনমাস বাদে কালো একটা ল্যাব নিয়ে বাড়ি ফেরে।

‘এই নাও… আজ থেকে এই তোমার সঙ্গী’….

নিরালা কোলে তুলে নিয়েছিল ছোট্ট নরম কুকুরটাকে। কুকুরটাও অমনি তার লাল টুকটুকে জিভ দিয়ে চেটে দিয়েছিল নিরালার মুখ।

–কি, পছন্দ হল আমার সাবস্টিটিউটকে?

নিরালা হালকা হেসেছিল এ কথা শুনে। মানুষের বিকল্প কুকুর! কেমন অদ্ভুত লেগেছিল।

অনুরাগ তারপর কত গল্প করে বুঝিয়েছিল মানুষের থেকেও মানুষের সবচেয়ে ভাল সঙ্গী হতে পারে কুকুর। ‘কারণ ভালোবাসা ছাড়া তার আর কোনও দাবি নেই। বিনিময়ে সে তোমাকে দেবে প্রশ্নহীন আনুগত্য আর নিরলস সঙ্গ। তোমাকে ভালোবাসবে, ওর নিজস্ব ভাষা আর জেস্‌চার দিয়ে তোমার সঙ্গে কমিউনিকেট করবে, ঝগড়া করবে, তুমি কষ্টে থাকলে তোমাকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করবে, তুমি কাঁদলে ও তোমাকে ভোলাবে…. মোট কথা ঠিক যা যা করলে মানুষের ইগো স্যাটিসফায়েড হতে পারে সে সব করবে।’

নিরালার একবার মনে হয়েছিল বলে, ‘কুকুরের সঙ্গে সাহিত্য আলোচনা চলতে পারে, বা জীবনের রাগ-অনুরাগের আলোচনা! গান গেয়ে কুকুরকে জিজ্ঞাসা করা যায়, ভালো হয়েছে কি না! অথবা সেজেগুজে কুকুরের কাছে জানতে চাওয়া যায়, কেমন লাগছে! প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণার উপশম হতে পারে কুকুর!’ কিন্তু কিছুই বলা হয়নি। ও শুধু উচ্চারণ করেছিল একটি নাম, ‘প্রক্সি’।

–প্রক্সি? সে আবার কী?
–ওর নাম।
–ধুস, প্রক্সি আবার একটা নাম হল?
–কেন নয়! তুমিই না বললে, ও তোমার সাবস্টিটিউট!
–হ্যাঁ, কিন্তু তাই বলে…
–সেই জন্যই তো ওর নাম প্রক্সি।

অনুরাগ এ নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি। শুধু খুব একচোট হেসেছিল।

সেই প্রক্সি এখন বছর তিনেকের। যেমন তার লম্বা-চওড়া চেহারা; তেমনি খোলতাই তার গায়ের রঙ; চকচকে কালো থেকে যেন ঝিলিক ওঠে! সে নিরালার একনিষ্ঠ ভক্ত। সারাদিন নিরালার পায়ে পায়ে ঘোরে; নিরালা খেতে না দিলে খায় না। বিকেলে তার সব খেলা নিরালার সঙ্গে। ঘুমোয় নিরালার বিছানায়।

অনুরাগ আসাতে এ কয়েকদিন অবশ্য ঠাঁইনাড়া হতে হয়েছে প্রক্সিকে! তার জায়গা হয়েছে সুমির ঘরে। নিরালা আর অনুরাগ তাকে বাইরে বের করে দিয়ে বেডরুমের দরজা বন্ধ করলে সে রীতিমতো চেঁচিয়ে তার প্রতিবাদ করেছে; ওরা সকাল সকাল সারাদিনের জন্য কোথাও বেরোলে প্রক্সি দুপুরে খাবার খায়নি; মন খারাপ করে শুয়ে থেকেছে; তার অভিমান ভাঙাতে নিরালাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনুরাগ সেই নিয়ে হাসাহাসি করেছে। বলেছে, ‘এ তো দেখছি অরিজিনালের চেয়ে প্রক্সির দাম বেশি।’

সেদিন রাতে অনুরাগ আদর করছিল নিরালাকে; যদিও নিরালা ইজ মাচ অ্যাক্টিভ দ্যান অনুরাগ। বিয়ের পর কয়েকদিন তো নিরালা এত লজ্জা পেত, এত আড়ষ্ট হয়ে থাকত যে, অনুরাগেরও অসুবিধে হত। ডিপ্রেশনের সময়টায় নিরালা চূড়ান্ত নিস্পৃহ হয়ে গিয়েছিল; অনুরাগ হাজার চেষ্টা করেও নিরালাকে জাগিয়ে তুলতে পারত না। নিরালা বিছানায় মড়ার মতো পড়ে থাকত। প্রক্সি আসার পর থেকে নিরালা আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। এখন তো ওদের সেক্স লাইফে মেন রোল প্লে করে নিরালাই। ভালবাসায় আদরে আঁচড়ে কামড়ে অনুরাগকে পাগল করে দেয়। অনুরাগ বোঝে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই মিলন; নিরালা একটু অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যায়। সেদিনও তেমনি… এমন সময় বেডরুমের দরজায় প্রক্সি পাগলের মতো আঁচড়াতে শুরু করেছে। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। নিরালা প্রথমে শুনতে পায়নি; তারপর উঠে দরজা খুলতেই প্রক্সি প্রায় নিরালার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আদরে আদরে নিরালাকে অস্থির করে দিচ্ছে; নিরালার মুখ, ঠোঁট, চোখ চেটে দিচ্ছে; নিরালাকে চিৎপাত করে মাটিতে ফেলে তার ওপর উঠে বসেছে ও; কিছুতেই ওকে সরানো যাচ্ছে না। অনুরাগ যথারীতি প্রথমে হাসছিল। কিন্তু তারপর যখন প্রক্সিকে সরাতে গেল তখন ওদের দুজনকেই চমকে দিয়ে প্রক্সি হঠাৎ আক্রমণ করে বসল অনুরাগকে। খুব জোরে না হলেও অনুরাগের হাতে হাল্কা কামড় বসিয়ে দিল। ওর চেহারা তখন অদ্ভুত হিংস্র হয়ে উঠেছিল। কেমন আড়চোখে ও অনুরাগকে দেখছিল আর মুখে একটানা গরগর আওয়াজ করছিল। নিরালা তাড়াতাড়ি ওর গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। আর ও তত নিরালার তলপেটের খাঁজে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছিল।

যাই হোক, বাড়ির কুকুর, তাই টিটেনাস নিয়েই ব্যাপারটা মিটল। কিন্তু প্রক্সি আর আগের মতো রইল না। অনুরাগ ওর কাছাকাছি গেলেই ও সমস্ত রাগ উগরে দিতে চাইছে অনুরাগের ওপর। অস্বাভাবিক ব্যবহার করছে; সারাক্ষণ নিরালার গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকছে; তবে সবচেয়ে বেশি রিঅ্যাক্ট করছে অনুরাগ নিরালার কাছে যেতে চাইলে বা নিরালাকে স্পর্শ করলে! দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি এমন হল যে, অনুরাগের সঙ্গে প্রক্সির এক বাড়িতে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠল। বাধ্য হয়ে প্রক্সিকে বেঁধে রাখতে হল। তাতে জটিলতা বাড়ল বই কমল না। প্রক্সি একেবারেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিল; ওর চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে; ও সোজাসুজি কারও দিকে তাকাচ্ছে না। কেউ কাছে যেতে চাইলেই কষের দাঁতগুলো বিশ্রীভাবে বের করছে। ওকে দেখে তখন ভয় লাগছে। ফলে অনুরাগ সিদ্ধান্ত নিল, প্রক্সিকে ডাক্তার দেখানো দরকার।

ডাক্তারের সামনে প্রক্সি কিন্তু স্বাভাবিক ব্যবহারই করল। অনেকদিন পর ডাক্তারকে দেখে খুশি হল; আদর করল; আর ট্রেনিং এর সময় ওকে যা যা শেখানো হয়েছিল সবই একের পর এক করল; কোথাও কোনও সমস্যা আছে বলেই মনে হল না। শুধু অনুরাগ কোনও ইনস্ট্রাকশন দিলে সেটা একবারও ফলো করল না। ডাক্তার বললেন, ‘ওর কোনও মেন্টাল প্রবলেম হয়েছে। কোনও কারণে ও মনে করছে আপনি এসে পড়াতে ওর গুরুত্ব কমে গেছে। তাই ও এভাবে রিঅ্যাক্ট করছে। আপনারা বরং ওকে একটু সময় দিন; একসঙ্গে ঘুরতে বেরোন, খেলাধুলা করুন; তাতে উপকার হতে পারে।’

কয়েকদিন সেই মতো চলল। নিরালা আর অনুরাগ প্রক্সিকে নিয়ে বেড়াতে বেরোল, পার্কে গেল, খেলাধুলা হল; প্রক্সি আবার আগের মতোই অনুরাগের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করল। সব ঠিকই আছে মনে হল। শুধু নিরালাকে যেন একমুহূর্তও কাছছাড়া করতে চায় না প্রক্সি। নিরালা বাথরুমে থাকলে দরজার বাইরে প্রক্সি বসে থাকে। নিরালা ডাইনিং টেবিলে বসলে প্রক্সি ওর মাথাটা গুঁজে দিতে চায় নিরালার দু পায়ের খাঁজে। রাতে প্রক্সিকে বেঁধে রাখতে হয়। নইলে নিরালার ঘরে যাওয়ার উপায় থাকে না। অনুরাগ অবাক হয়, ‘আশ্চর্য না, কুকুরদেরও এই ধরনের মেন্টাল প্রবলেম হয়! কাছের মানুষের থেকে দূরে চলে যাওয়ার ভয়!’

নিরালা তাকিয়ে থাকে অনুরাগের দিকে। কোনও উত্তর দেয় না।

–আমি ভেবেছিলাম, আমি ফিরলে ও খুব খুশি হবে! কুকুররা তো অনেকদিন বাদে পরিচিত মানুষকে দেখে খুশি হয়! কিন্তু…

নিরালা অল্প হাসে, বলে, ‘ও তোমার সাবস্টিটিউট কি না! তাই তোমাকে দেখে হিংসে হয়েছে!’ নিরালাকে সামান্য উদাস দেখায়।

–স্ট্রেঞ্জ… ল্যাব কিন্তু ভীষণই ফ্যামিলিয়ার হয়! অথচ…
–কেন! শোনোনি, বাড়িতে ছোট বাচ্চা এলে কুকুরদের হিংসে হয়! রাগ হয়!
–হ্যাঁ, কিন্তু প্রক্সি তো আমার কোলে করেই এ বাড়িতে এল! আর আমাকেই…

নিরালা আর উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে কী যেন চিন্তা করতে থাকে।

সেদিন দুপুরে সুমি নীচের ঘরে টিভি দেখছে; প্রক্সিকে এই সময়টা নার্ভ রিল্যাক্সিং ওষুধ দেওয়া হয়; যাতে দিনের বেলাটা ও ঘুমোয়। অনুরাগ আর নিরালা দোতলায় বেডরুমে মেতেছে শরীরী খেলায়। নিরালা পাগলের মতো কামড়ে দিচ্ছে অনুরাগকে। ওর সারা শরীরে জিভ বুলিয়ে দিচ্ছে। অনুরাগের আরাম লাগছে; আবার ভিতরে ভিতরে কেমন একটা অস্বস্তিও টের পাচ্ছে। নিরালা ওর ওপর এতটাই দাপাদাপি করছে যে, অনুরাগ মাঝে মাঝেই নিরালাকে নিরস্ত করতে বাধ্য হচ্ছে। নিরালা ততোধিক উত্তেজনায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। নিরালার আদর কেমন যেন পাশবিক হয়ে উঠেছে! সে কি শুধুই এই জন্য যে, নিরালা অনেকটা সময় অনুরাগকে ছাড়াই দিন কাটাতে বাধ্য হয়! তাই কি ওর সেক্স-আর্জ দমন করে রাখতে রাখতে এমন একটা জান্তব রূপ নিয়েছে! অনুরাগ এসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। হঠাৎই দরজায় গরগর আওয়াজ শুনে ওরা দুজনে চমকে তাকিয়ে দেখে, প্রক্সি হিংস্রভাবে দেখছে অনুরাগকে। অনুরাগ খানিকটা ভয় পেয়ে সরে যেতেই প্রক্সি তাকাল নিরালার দিকে। মুহূর্তের মধ্যে ওর চোখের রাগ মুছে গিয়ে ফুটে উঠেছে তীব্র আকুলতা… এক অরণ্য গন্ধে ঘর ভরে উঠেছে! অনুরাগকে বিস্মিত করে নগ্ন নিরালা দু হাত বাড়িয়ে দিল প্রক্সির দিকে। প্রক্সি প্রবল আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরালার কোলে…

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4666 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...