একটি কাছিম ও জনৈক সমুদ্রের গল্প

একটি কাছিম ও জনৈক সমুদ্রের গল্প -- অলোকপর্ণা

অলোকপর্ণা

 

অসুখের মা বাপ এক করে ছেড়েছে মিতার শরীরটা। মাথার ভিতরে একটা ঘন ভীমরুল ভনভন করছে ডাক্তারের চেম্বার থেকেই। কেউ গুলি করে দিয়েছে এমন চাপ বুকে বুকে। একটু টোকা পড়লেই রাস্তায় সে বৃদ্ধ ইমারতের মতো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ধসে যেতে পারে। রিপোর্টের পর রিপোর্ট হাতে নিয়ে তার পাশে শুভেন্দু এভাবে বাসায় ফিরল, যেন হাঁটুর নিচে তার কোনও পা নেই।

পৃথিবীর সবকিছুই ভারী এমন ঘরে ঢুকে দেখা গেল চেয়ারে স্থবির রাতুল। আঠারোর চোখে মুখে পৃথিবীর প্রতি অবিশ্বাসের ভাব স্পষ্ট। দোষ কারও নয় গো মা, তবু মিতা চোখ তুলে তার মুখের দিকে আর চাইতে পারল না। হাত পা ধোয়ার অজুহাতে বাথরুমে আত্মগোপন করল। ভালো হত যদি জীবনের বাকিটুকু এই বাথরুমের ভিতর থেকে যাওয়া যেত। আলো কমে এসেছে চোখে। বাইরে থেকে রাতুলের কান্নার আওয়াজ শোনা গেল, এইটুকু শব্দ বেঁচে আছে কানে, এইটুকু আওয়াজ এখন পৃথিবীর। মিতা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বাথরুমের আয়নার নিজের দেহে নাচার নজর দেয়। একটা শরীর দাঁড়িয়ে আছে।

কিছু নেই, কোনও কিছুই নেই। তবু এতে তনুময়ের হাত পড়েছিল। তনুময়!

বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল মিতার অসুখ। ঘরের মধ্যে সোফায় ও চেয়ারে বসা স্বামী সন্তান কেউ মুখ তুলে তাকাল না তার দিকে। রাতুল কেঁদে চলেছে, তবে এখন তাতে শোক না, ক্ষোভ উচ্চকিত। ফেনা ফেনা ক্ষোভ রাতুলের ঠোঁট উপচে পড়ছে বাইরে। মিতার অসুখ কাউকে না ঘাঁটিয়ে বেডরুমে এসে নিজেকে শুইয়ে দিল বিছানায়। ওঘরে এখন অসংখ্য প্রশ্ন অহেতুক পাক খাচ্ছে।

মিতা স্থির করল, সে ঘুমোবে।

একটা অন্ধকার এসে মিতার মাথাটা তারিয়ে তারিয়ে গিলে নিতে লাগল। তোষকের ভিতর বেমালুম তলিয়ে যেতে যেতে মিতা শুনল, কোথা হতে যেন ঢেউয়ের আওয়াজ আসছে।

এক ঘন্টা পর বেডরুম থেকে মিতার জোম্বি বসার ঘরে এসে ঘোষণা করল, “আমি আমার চিকিৎসা করাতে চাই না।”

দোষ কারও নয় গো মা। সেই রাতে, সেই মুহূর্তে, রাতুল এবং শুভেন্দুর এতে সায় ছিল। তারা তখন কোণঠাসা। বাতাস হতে নিঃশ্বাসের শব্দটুকুও বেমালুম উধাও হয়ে গেল। চারদিক শুনশান।

 

চোখেআঙুল রান্নার মেয়েটা এসে আবিষ্কার করল মিতার মন ফের ভালো নেই। বেলা রোজ বারোটা, আর মিতা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। দুধ জ্বাল দিতে গিয়ে দেখছে সকালের দুধ কেটে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত তিন মাসে বানের জলে ভেসে গেছে দেহের সব আলো। মশাল জ্বেলে দেখার মতো চেহারা হয়েছে মিতার। যেই দেখে, প্রশ্ন করে, “এমন চেহারা কেন?” মিতা চেষ্টা করে সমস্ত দোষ ঋতুবদলের মরশুমের ঘাড়ে চাপাতে। তবু অসুখের বাড়ি কেউ এসে পড়লে অসুখ টের পেয়ে যায়। কানফিসফিস খেলে পাড়াপ্রতিবেশীরা অসুখের সঙ্গে। মোড়ের মাথার ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা মিতাকে যেন এমনি এমনি চেটে চেটে খাচ্ছে রোগটা, আর দৃশ্যখানা হয়েছে চমৎকার। আত্মীয় আনাগোনা চলে খবরের সন্ধানে। খাঁড়াই দেওয়ালের মতো মিতা শব্দকে যথাযথ ফেরত পাঠায়। গায়ে মাঝে মাঝে র‍্যাশ জন্মায়। র‍্যাশের উপর আঙুল বুলিয়ে মিতা নিজের দেহকে ছেলে ভোলায়, “না না।”

শুভেন্দু সেদিন ডাক্তারের চেম্বারে তর্ক জুড়েছিল, “কীভাবে সম্ভব! যেকোনও ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় আমরা সবাই সচেতন থাকি! আর আমার রিপোর্ট তো নেগেটিভ! তুমি কোথাও কারও ব্যবহার করা ব্লেড কোনওদিন ইউজ করেছিলে?” শুভেন্দুর ছেলেমানুষি দেখে হাসি ও কান্না যুগপৎ পেয়েছে মিতার, মুখ স্বর পায়নি। টের পাওয়া মাত্র শুভেন্দুর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছিল। হাঁটুর তলা থেকে পাও গেছিল খসে। ঘষটাতে ঘষটাতে বাড়ি ফিরেছিল প্রাগৈতিহাসিক দম্পতি।

এই বাড়িতে সেই রাত থেকে শুধু ঘোষণা হয়। আলাপ চলে না। কথাও হয় না। রাতুল হোস্টেলে ফিরে যাওয়ার আগে ঘরে এসেছিল। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মিতাকে দেখে চলে গেল। একদিন অফিস থেকে ফিরে শুভেন্দু ঘোষণা করল, “মেজদার সঙ্গে বাজারে দেখা হয়েছিল, মিথ্যে বলতে হল, বললাম তোমার স্কিন ক্যানসার, আমরা চেষ্টা করছি।”

চামড়া, চামড়া, এই চামড়া দিয়ে সবকিছু ঘেঁটেছে মিতা, নিজেকেও। পৃথিবীর যাবতীয় জানাশোনা তার এই চামড়া মারফত। তনুময়কেও। মিতা কোনও প্রতিবাদ করে না।

মিতাকে ঘিরে একটা শৌখিন ইগলু গড়ে তুলছে মিতার অসুখ। ইগলুর বাইরে থেকে শুভেন্দু মিতাকে দেখে। কীসের ইগলু জানার প্রয়োজন বোধ করে না। পরন্তু ইগলু দেখে ঘেন্না পায় সে। মিতার চেয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে শৌখিন ইগলুর গড়ে ওঠা দেখে সে আড়চোখে। ভিতরটা ধিকিধিকি করে তার, ধিক্‌! ধিক্‌! করে, ইচ্ছে হয় ঝুড়ি উল্টে সাপ কতখানি— তা দেখার। কিন্তু সাহসে কুলায় না। মিতাকে জর্জরিত দেখে সে অদৃষ্টকে আশ্রয় করে। প্রথম রাত থেকেই সে ঘুমোচ্ছে পাশের ঘরে, ব্যবহার করছে রাতুলের বাথরুম।

 

একদিন সন্ধ্যায় মিতার অসুখ ঘরের মধ্যের হাতিটাকে মুক্তি দিতে গেলেই শুভেন্দু দুচোখে হাত চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠল, “আমি জানতে চাই না, আমি শুনতে চাই না! আমার না জানাই ভালো, না শোনাই ভালো।”

মিতা তবু বলল, “শোনো।”

এই ঘর, এই সংসার নিমেষে গলা অবধি বালির তলায়। একেবারে ডুবে যাচ্ছে বুঝে মিতা রেহাই দিল বাধ্য হয়ে। বরং বলল, “সীমা ফোন করেছিল বিকেলে, বলছিল, আমরা সাউথে কেন যাচ্ছি না…”

শুভেন্দু মুখ তুলে তাকিয়েছে মিতার দিকে, মিতা বলে চলে, “আমি ভাবছিলাম সাউথে গেলে কেমন হয়,”

“ওখানে তো অনেক লাইন দিতে হয় এত রোগী! সময় লাগে, পড়ে থাকতে হয় মাসের পর মাস। অতদিন ছুটি পাব না…”

হাঁটু থেকে পা-নিখোঁজ খাটো শুভেন্দুকে থামিয়ে দিয়ে মিতা বলে, “আমি সমুদ্রের কথা ভাবছিলাম… দক্ষিণের মহাসমুদ্র…”

শুধু আজ নয়, গোপনে গোপনে মিতা প্রায়ই সমুদ্রের কথা ভেবেছে। তার এটুকু মাফযোগ্য মুদ্রাদোষ। রাতুল বড় হওয়ার পর থেকে শুভেন্দু কখনও তার কাছে ঘেঁষেনি। আর কিছু না হলেও, মধ্যবিত্ত গৃহবধু মিতাকে সমুদ্র ভাবনা শীর্ষসুখ দিয়েছে একালে সেকালে। তনুময়ও সেভাবেই। দীঘার হলিডে হোম। শুভেন্দু মদ খেয়ে লাট ঝাউবনে। মিতা আর তনুময় বড়ই হাসছে। ভিতর থেকে হাসছে। আসল হাসি উঠে আসছে নোনা অন্তর হতে। যেন এতদিন তারা কেউ কিছুই বলেনি কাউকে। লবণাক্ত সকল কথা। ঝিনুকের মতো বালি থেকে মিতাকে কুড়িয়ে নিল তনুময়। পকেটে ভরে ফেলল একেবারে। দীঘার হলিডে হোম। ঘর থেকে সমুদ্রের আওয়াজ পাওয়া যায়। মিতার ফূর্তি উথলায় তনুময়ের নোনা নোঙর। তুফান একটা উঠল বেশ কষে।

শুভেন্দু যখন ফিরে এল তখন খেলাশেষে চাঁদ উঠেছে হলিডে হোমের কার্নিশে।

পরের দিন শুভেন্দু একা একা মাছের আড়ত দেখতে গিয়েছে। সেদিনও সমুদ্র মিতাকে আরেকপ্রস্থ খেল হলিডে হোমের খাটে। এই দুবারই মাত্র মিতার সমুদ্রমন্থন।

তার কোনও খেদ ছিল না। অপরাধবোধও জন্মায়নি কোনওদিন এ নিয়ে। সমুদ্রের কাছে গিয়ে মানুষ সমুদ্র তো হবেই। পাহাড়ে গিয়ে মানুষ তুষার। নদীর কাছে মানুষ অবাধ্য। অরণ্যে বুনো। তা না হলে কথার খেলাপ করা হয়। তা না হলে লোকঠকানো। নিজেকে ঠকানো। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, বনকে প্রবঞ্চনা।

হঠাৎ দমকা কাশি এসে মিতাকে লুঠ করে নিল। আজকাল সবকিছুই নাছোড়। সপ্তাহব্যাপী সর্দিকাশি, পেট খারাপ। জিভে স্বাদ নেই তো নেইই। চোখের পাতা সারাদিন ভারি হয়ে থাকে। শুভেন্দু চুপ করে মিতার কাশি দেখে। বেলাগাম কাশি তার ফুসফুস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কাশিটা মিতাকে পুষছে। কাশিটা মিতার গলায় বেল্ট পরিয়ে তাকে চার দেওয়াল-সিলিং চড়াতে বেরিয়েছে, চড়াচ্ছেও। কাশতে কাশতেই হাত তুলে মিতা শুভেন্দুকে নিশ্চিত করে বলে— “সমুদ্র।”

 

রোদ কী অদ্ভুত নিঠুর। মিতার ছায়াও জ্বলে যাচ্ছে। শুভেন্দু ঘর থেকে পারতপক্ষে বেরোচ্ছে না। স্থানীয় ভাষা না জানা মিতা একাকী ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা কাছিমের মতো সমুদ্রের গন্ধে গন্ধে, জলের দিকে এগিয়ে চলে। সমুদ্রতটে মহিলারা জল থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখছেন। পুরুষেরা নিমগ্ন। মাছরাঙা বিয়ারের বোতল পড়ে আছে বালিতে বালিতে। কান, গলা চাদরে ঢেকে ছাতা মাথায় মিতা জলের কাছে চলেছে। এখানে বাতাসের যা বাতিক তাতে ছাতা তার হাত মানবে না। ছাতা ভাঁজ করে নিদারুণ রোদের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরে মিতা। কপালের র‍্যাশ জ্বলে পুড়ে যায়। ধীরে ধীরে জলের কাছে গিয়ে সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে জল থেকে তার নিজের প্রেত উঠে আসার অপেক্ষায়। লোকে বলে সমুদ্র কিছু নিলে ফেরত দিয়ে যায়। মিতাকে যে ঢেউ দীঘায় সেই যে খেল, কই ফেরত দিল না তো আর?

তনুময়ের অসুস্থতার খবর বিচলিত করেনি কাউকে। সবাই আগে থেকেই জানত কিডনির সমস্যা। সবাই জেনেছিল কিডনি ফেইলিওর, মাল্টি অর্গ্যান ফেইলিওর। তার মৃত্যুতে শুভেন্দুদের অফিসে স্মরণসভা ডাকা হয়েছিল। মিতাও গিয়েছিল। দেখেছিল দেওয়াল ঘেঁষে তনুময়ের বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। স্বেচ্ছায় তাঁকে প্রণাম করে এসেছিল মিতা। করুণা করেই কিছুটা। অযাচিত শ্রদ্ধা পেয়ে যদি বৃদ্ধের শোক লঘু হয়, মন্দ কী? ফেরার পথে ট্যাক্সিতে মিতা দেখেছিল শুভেন্দু চোখের জল লুকোচ্ছে। অথচ মিতার কখনও কান্না পায়নি। তনুময়ের কথা ভাবলে চিরকাল তার সমুদ্রকে মনে পড়েছে যে সমুদ্র তার শাশ্বত, একচেটিয়া।

এখন জলের দিকে চেয়ে মিতা নিজেকে ভাবছে। ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে, গলায় একটা ব্যথা এমন। মাথাটা টলে উঠল যেন। মিতা বাধ্য হল ছাতা খুলে পিছিয়ে আসতে। সমুদ্রের কাছে এসে যদি না সমুদ্র, তবে মিতার আর কীই বা রইল? স্খলিত পায়ে সে হোটেলে ফিরে দেখল শুভেন্দু ফুটবল ম্যাচ দেখছে টিভিতে। নিজের বিছানায় শুয়ে মাথা অবধি চাদর টেনে দিল মিতা। নিদারুণ সূর্যের দেশে এসেও অকারণ শীত করছে তার।

রাত অবোধ হলে ঘুম ভাঙে মিতার। গলার নিচটা টনটনে ব্যথা। গ্ল্যান্ড ফুলে ফুলে উঠেছে। ঘরের আলো নিভিয়ে শুভেন্দু ঘুমোচ্ছে পাশের খাটে। অন্ধকারেই ফ্লাস্ক থেকে গ্লাসে গরম জল ঢালে মিতা। জল খেতে খেতে সেই প্রথম সে আবিষ্কার করল— সমুদ্রের আওয়াজ এই ঘর থেকে শোনা যায়— চমকে উঠল সে। কান, গলা ঢেকে নিশিতে পাওয়া মিতা ঘর ছাড়ল। রিসেপশনে এলে তাকে একজন কর্মী হোটেলের নিজস্ব সমুদ্রতটে যাওয়ার দিকনির্দেশ করল ইশারায়। পলকা মিতা সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখল পূর্ণিমা— জানা ছিল না, অথচ হয়ে আছে।

সৈকতে কেউ নেই। শুধু জ্যোৎস্নার লুটোপুটি। নিজের পালকের মতো শরীরটা নিয়ে মিতা বালুতে পা রাখে। ইচ্ছে হয় চটি খুলতে। চটি খুলে সে পা ডুবিয়ে দেয় ঠান্ডা বালিতে। ধীরে ধীরে জলের দিকে এগিয়ে চলে। দমকা হাওয়ায় তার গলা থেকে চাদর খুলে যায়। বালিতে তা ফেলে রেখে মিতা জলের প্রতি ধায়। চাঁদের বেঁচে থাকা দেখে সে। দেখে সমুদ্রের নোনা বেঁচে থাকা। দেহ থেকে শীত উবে যায়। দেহ থেকে এক এক করে সমস্ত খোলস ছেড়ে রেখে সদ্যোজাত কাছিমের মতো বুকে হেঁটে সে এগিয়ে যায় সমুদ্রের কাছে। তারপর, পতাকার মতো দেহ আগলে জ্যোৎস্নায় খাঁড়া হয় মিতা।

এইটুকু তো হাত, এইটুকু তার বাহু, এইটুকু বাহুমূল, এই তো স্তন, একটু স্তনবৃন্ত, এইটুকু গ্রীবা, এইটুকু চিবুক, এইটুকু নাক, চোখ, হা ললাট! উত্তাল কালো চুল, সর্বগ্রাসী কালো চুল! এই তো মেরুদণ্ড, এটুকু পাঁজর, এটুকু নাভি, এটুকু তলপেট, একটুকু যোনি, এই নিতম্ব, এই ঊরুসন্ধি, এই ঊরুদ্বয়, এটুকু জঙ্ঘা, এতটুকু গোড়ালিরা, এতটুকু পায়ের পাতা, এতটুকু পায়ের আঙুল, এতটুকু নখ লেগে আছে তাতে। ব্যস, মিতা এই পর্যন্তই।

নিজেকে জলে নিমজ্জিত করে ফেলে সে। যেন, আজ সমুদ্র নিলে নিক, ফিরিয়ে দেবে কি দেবে না, তার চিন্তা সমুদ্রের একান্ত। অদ্ভুত ঘোরে পড়েছে মিতা। ঢেউয়ের উপর ঢেউ জাবর কাটছে। মিতা ওলোটপালোট হচ্ছে যেচে যেচে। হঠাৎ একদফা জল এসে মিতার নাক মুখ দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।

তেতো। জলটা নোনতা নয়। তিতকুটে। সঙ্কীর্ণমনা।

বুকে হেঁটে তিক্ত সমুদ্র ছেড়ে বালুতে উঠে আসে মিতা। হাড়কাঁপানো শীতে বালুতে পড়ে থাকা চাদর আঁকড়ে ধরে আশরীর মুড়ে নেয়।

সামনে তখনও সমুদ্রের আস্ফালন, তিক্ত সমুদ্রের আস্ফালন। মিতার সমুদ্র কবে যেন তেতো হয়ে গেছে, কেউ জানতে পারেনি। নষ্ট একতাল সমুদ্রের সামনে বসে মিতার আকণ্ঠ আফশোস হয়।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. সমস্ত স্পেসটাই অসুস্থ। এটা করতে পারা কম কথা নয়।

আপনার মতামত...