যেভাবে চলল কৃষক আন্দোলন— একটি সালতামামি

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন কার্যকরী হওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছিল এ বছর ১৭ সেপ্টেম্বর। আইন তিনটি হল কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য (উন্নয়ন) আইন, ২০২০; অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধনী) আইন, ২০২০; এবং কৃষিপণ্যের দাম সুনিশ্চিত রাখতে কৃষকদের (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) চুক্তি আইন, ২০২০। কৃষকরা আশঙ্কিত হয়েছিলেন যে এই আইনগুলি কার্যকরী হলে তাঁরা সরকার নির্ধারিত কিছু বাছাই ফসলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের যে সুরক্ষাকবচ পেয়ে থাকেন সেটি নষ্ট হবে, এবং তাঁদের কর্পোরেটদের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে।

প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল গত বছর ২৫ নভেম্বর। সেদিন মূলত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে কয়েক হাজার কৃষক তাঁদের “দিল্লি চলো” কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভারতের রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দাবি— তিনটি কৃষি আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।

দেখা যাক কেমনভাবে এই আন্দোলনের চাকা গড়াল—

৫ জুন, ২০২০: কেন্দ্র সরকার তিনটি কৃষি বিলের কথা ঘোষণা করল। ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রকে বেসরকারি পরিচালনায় নিয়ে আসার লক্ষ্যেই এই তিনটি নয়া কৃষি বিল।

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০: সংসদে অর্ডিন্যান্স আনা হল।

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০: লোকসভায় অর্ডিন্যান্স পাশ হল।

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০: রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে অর্ডিন্যান্স পাশ।

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০: পাঞ্জাবে কৃষকরা তিন দিন ‘রেল রোকো’ কর্মসূচির ঘোষণা করলেন।

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০: সারা ভারত কিসান সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এআইকেএসসিসি)-র ডাকে সারা দেশে কৃষকরা রাস্তায় নামলেন।

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০: কৃষি বিলগুলিতে রাষ্ট্রপতির সিলমোহর পড়ল এবং সরকারের গেজেটে নোটিফিকেশন দেওয়া হল। অতঃপর বিলগুলি কৃষি আইনে পরিণত হল।

২৫ নভেম্বর, ২০২০: নতুন কৃষি আইনগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ শুরু হয়। ৩ নভেম্বর সারা দেশে একটি পথ অবরোধ কর্মসূচিও পালিত হয়। এর পর পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষক ইউনিয়নগুলি একটি ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনের ডাক দেয়। যদিও দিল্লি পুলিশ কোভিড ১৯-প্রোটোকলের ধুয়ো তুলে তাঁদের মিছিল করে রাজধানীতে ঢোকার অনুরোধ খারিজ করে দেয়।

২৬ নভেম্বর, ২০২০: কৃষকদের দিল্লিমুখী শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস দিয়ে আক্রমণ চালায়। পুলিশ তাঁদের হরিয়ানার আম্বালা জেলায় আটকে দিতে চেয়েছিল। পরে অবশ্য কৃষকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য উত্তর-পশ্চিম দিল্লির নিরঙ্কারী ময়দানে যেতে দেওয়া হয়।

২৮ নভেম্বর, ২০২০: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব দেন কৃষকরা দিল্লির সীমান্তগুলি ছেড়ে বুরারির নির্দিষ্ট প্রতিবাদস্থলে চলে গেলেই তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। কৃষকরা তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, দাবি করেন তাঁদের যন্তরমন্তরে প্রতিবাদ অবস্থান চালাতে দেওয়া হোক।

২৯ নভেম্বর, ২০২০: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, এতদিন সমস্ত দলই কৃষকদের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। একমাত্র তাঁর সরকারই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করল।

৩ ডিসেম্বর, ২০২০: সরকার কৃষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথম দফা আলোচনায় বসল। কিন্তু বৈঠকে কোনও ফল হল না।

৫ ডিসেম্বর, ২০২০: দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোল না।

৮ ডিসেম্বর, ২০২০: কৃষকরা ভারত বন্ধের ডাক দিলেন। অন্য রাজ্যের কৃষকরাও সমর্থন জানালেন।

৯ ডিসেম্বর, ২০২০: কৃষি আইন তিনটিতে কিছু সংশোধনী আনার কেন্দ্র সরকারের প্রস্তাব কৃষক নেতারা খারিজ করে দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, যতদিন না আইন তিনটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহৃত হচ্ছে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং আরও তীব্র করে তুলবেন।

১১ ডিসেম্বর, ২০২০: তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন সুপ্রিম কোর্টে গেল।

১৩ ডিসেম্বর, ২০২০: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করলেন যে কৃষকদের প্রতিবাদ আন্দোলনে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর হাত আছে। তিনি আরও বললেন কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে সরকার সব সময়েই রাজি।

১৬ ডিসেম্বর, ২০২০: সুপ্রিম কোর্ট জানাল বিতর্কিত আইনগুলি নিয়ে সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা কাটাতে তারা মধ্যস্থতা করার জন্য একটি প্যানেল তৈরি করে দিতে পারে।

২১ ডিসেম্বর, ২০২০: কৃষকরা সমস্ত প্রতিবাদস্থলে একদিনের অনশন ধর্মঘট পালন করলেন।

৩০ ডিসেম্বর, ২০২০: সরকার এবং কৃষক নেতাদের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় অচলাবস্থা ভাঙার কিছুটা সম্ভাবনা দেখা যায়। এই বৈঠকে সরকার খড় পোড়ানোর জন্য জরিমানা মকুব করার প্রতিশ্রিতি দেয় এবং ইলেকট্রিসিটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২০-তে যে পরিবর্তনগুলি করা হয়েছিল সেগুলি না করার কথা বলে।

৪ জানুয়ারি, ২০২১: সপ্তম দফার বৈঠকে আবার অচলাবস্থা ফিরে আসে কারণ সরকার কোনওভাবেই নয়া কৃষি আইনগুলি সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে সম্মত হয় না।

৭ জানুয়ারি, ২০২১: সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইনগুলির এবং প্রতিবাদ আন্দোলনের বিপক্ষে যেসব পিটিশনগুলি পড়েছিল ১১ জানুয়ারি সেগুলি শোনার দিন ধার্য করে। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল কোর্টে জানান যে সরকার এবং কৃষক নেতাদের মধ্যে বৈঠকে “হয়তো সমাধানসূত্র বেরোতে পারে”।

১১ জানুয়ারি, ২০২১: কৃষকদের আন্দোলন সম্পর্কে সরকারের মনোভাব এবং কার্যকলাপকে সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কার। সর্বোচ্চ আদালাত জানাল, অচলাবস্থা কাটাতে ভারতের একজন প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে তারা একটি কমিটি বানিয়ে দেবে।

১২ জানুয়ারি, ২০২১: সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করার ওপরে স্থগিতাদেশ জারি করল এবং একটি চার সদস্যের কমিটি বানিয়ে দিল। এই কমিটি সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগুলির বিষয়ে তাদের পরামর্শ জানাবে।

ওইদিনই সোনিপত পুলিশ দলিত শ্রমিক এবং রাজনৈতিক কর্মী নোদীপ কৌরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের প্রচেষ্টা, দাঙ্গা লাগানো, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীর ওপর হামলা চালানো, এবং আরও কিছু অভিযোগ আনা হয়। পুলিশের বক্তব্য— কুন্ডলি শিল্পতালুকে ম্যানেজমেন্ট এবং কর্মীদের মারধর করা হয়েছে এমন একটা খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল যখন সেখানে পৌঁছয় তখন নোদীপ এবং তাঁর সহযোগীরা তাদের ওপর চড়াও হয়।

মজদুর অধিকার সংগঠনের সদস্য নোদীপের দাবি, তিনি কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলছিলেন বলেই তাঁকে টার্গেট করা হয় এবং মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

২৬ জানুয়ারি, ২০২১: কৃষক সংগঠনগুলি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে একটি ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দিয়েছিল। সেদিন হাজারের বেশি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

সিংঘু এবং গাজিপুরের প্রচুর কৃষক তাঁদের পূর্বনির্ধারিত যাত্রাপথ পরিবর্তন করে মধ্য দিল্লির আইটিও এবং লালকেল্লার দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, লাঠিচার্জ করে। কিছু কৃষক পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করে এবং সরকারি সম্পত্তি ভাংচুর করে। কিছু আন্দোলনকারী লাল কেল্লার দেওয়াল বেয়ে উঠে ওপরে নিশান সাহিবের পতাকা তুলে দেয়। এই সব ঘটনায় একজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়।

২৮ জানুয়ারি, ২০২১: উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলা প্রশাসন রাতের মধ্যে সংলগ্ন দিল্লির গাজিপুর সীমান্ত খালি করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে। সন্ধ্যার মধ্যে সীমান্তের প্রতিবাদস্থলে পুলিশ এবং দাঙ্গাবিরোধী ফোর্স জমা হতে শুরু করে। আন্দোলনকারীরা সেখানেই ক্যাম্প করে, এবং রাকেশ টিকায়েত সহ তাঁদের সমস্ত নেতারাই পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে তাঁরা সেখান থেকে যাবেন না।

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সোশাল মিডিয়ায় মন্তব্য করার জন্য সরকার ‘সেলিব্রিটি’দের ওপর খড়্গহস্ত। সরকারের বক্তব্য মন্তব্যগুলি “না সঠিক, না দায়িত্বশীল”। আন্তর্জাতিক পপ তারকা রিহানা, তরুণ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং আইনজীবী ও লেখক মীনা হ্যারিস, যিনি আবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভাইঝি, ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় মন্তব্য করার পরেই সরকারের এহেন বিষোদ্গার।

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: কৃষক আন্দোলন নিয়ে একটি ‘টুলকিট’ তৈরি করার জন্যে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল ‘দেশদ্রোহিতা’, ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’ এবং ‘ঘৃণা ছড়ানো’র অভিযোগ করে এফআইআর দায়ের করে। এই টুলকিট-টিই গ্রেটা শেয়ার করেছিলেন। বুধবার তিনি তাঁর আসল টুইটটি মুছে দেন, কিন্তু বুধবার রাতেই টুলকিট-টির একটি পরিমার্জিত রূপ টুইট করেন।

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: আন্দোলনকারী কৃষকরা দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত দেশ জুড়ে ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি পালন করেন। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার সমস্ত রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। দেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্ত সাড়া পড়ে।

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: ২৬ জানুয়ারির ঘটনায় অভিযুক্ত পাঞ্জাবি অভিনেতা, পরবর্তীতে অ্যাক্টিভিস্ট দীপ সিন্ধুকে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তার করে।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: দিল্লি পুলিশ ২১ বছর বয়সি পরিবেশকর্মী দিশা রবিকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ, তিনি নাকি থুনবার্গের শেয়ার করা টুলকিট-টি এডিট করেছিলেন।

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: সংযুক্ত কিসান মোর্চা সারা দেশ জুড়ে রেল রোকো-র ডাক দেয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন আটকে পড়ে, বাতিল করা হয়, বা রুট চেঞ্জ করতে হয়। যদিও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টার-এর এক মুখপাত্র জানান, এই রেল রোকো বিক্ষোভের জন্য সারা দেশে রেল পরিষেবার ওপর খুবই সামান্য প্রভাব পড়েছে।

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: দিল্লির একটি সেশন কোর্টে দিশা রবির জামিন মঞ্জুর

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১: পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট নোদীপ কৌরের জামিন মঞ্জুর করল। কৌর জেল থেকে ছাড়া পেলেন।

২ মার্চ, ২০২১: চণ্ডীগড় পুলিশ সেক্টর ২৫ থেকে শিরোমণি অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল সহ পার্টির অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করল। তাঁরা বিধানসভা ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে বিধানসভা অভিযান করছিলেন।

৫ মার্চ, ২০২১: পাঞ্জাব বিধানসভা একটি রেজোলিউশন পাশ করে নয়া কৃষি আইন তিনটি নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করে নিল। জানানো হল কৃষকদের এবং পাঞ্জাবের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। আরও জানানো হল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য-ভিত্তিক সরকারের খাদ্যশস্য অধিগ্রহণের যে ব্যবস্থা এতদিন ধরে চলছিল সেটিই কার্যকর থাকবে।

৬ মার্চ, ২০২১: কৃষকদের দিল্লি সীমান্তে অবস্থানের ১০০ দিন পূর্ণ হল।

৮ মার্চ, ২০২১: সিংঘু সীমান্তে প্রতিবাদস্থলের কাছে গুলি চলল। কেউ হতাহত হননি।

৪ এপ্রিল, ২০২১: ফসল কাটার সময় আসায় সিংঘু সীমান্ত থেকে কিছু ট্রাক্টর পাঞ্জাবে ফেরত গেল। অবস্থানকারী কৃষকরা সেগুলির জায়গায় বাঁশ এবং জাল দিয়ে তাঁবু বানালেন।

১৫ এপ্রিল, ২০২১: হরিয়ানার উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা আবার শুরু করার আর্জি জানান। অনুরোধ করেন, যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার যেন একটা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান’ করা হয়।

২৬ এপ্রিল, ২০২১: দীপ সিন্ধু দ্বিতীয় জামিন পেল।

২৭ মে, ২০২১: অবস্থান আন্দোলনের ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে কালা দিবস পালন করলেন কৃষকরা। দাহ করা হল সরকারের কুশপুত্তলিকা। সীমান্ত তিনটিতে অবস্থানকারীদের সংখ্যা কিছু কমলেও কৃষক নেতারা স্পষ্ট জানালেন তাঁদের দাবি পূরণ না হলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতেও তাঁরা প্রস্তুত। ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত আবারও বলেন, যতদিন না আইন তিনটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার হচ্ছে, তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

৫ জুন, ২০২১: কৃষি আইন আনার এক বছর পূর্তির দিনটিকে সম্পূর্ণ ক্রান্তিকারী দিবস হিসেবে পালন করলেন কৃষকরা।

২৬ জুন, ২০২১: প্রতিবাদ আন্দোলনের ৭ মাস পূর্তি উপলক্ষে কৃষকরা দিল্লি অভিমুখে মিছিল করলেন। সংযুক্ত কিসান মোর্চা জানাল হরিয়ানা, পাঞ্জাব, কর্নাটক, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় প্রচুর কৃষককে আটকে দেওয়া হয়েছে।

জুলাই, ২০২১: প্রায় ২০০ জন কৃষক সংসদ ভবনের বাইরে একটি সমান্তরাল বর্ষা অধিবেশন শুরু করলেন— নাম দেওয়া হল কিসান সংসদ। সেই সংসদে তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব করা হল। সংসদ ভবন চত্বরে গান্ধিমূর্তির সামনে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রতিবাদ সংঘটিত করতে থাকলেন। কৃষি আইন প্রত্যাহার করে কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রর কাছে আর্জি জানানো হল সেই প্রতিবাদগুলি থেকে। আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ট্রাক্টরে করে সংসদে এলেন। কৃষি আইন এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার বিক্ষোভ এবং সরকারকে কোণঠাসা করার জেরে সংসদ অধিবেশন বারবার মুলতুবি হতে লাগল।

৭ আগস্ট, ২০২১: ১৪টি বিরোধী পার্টির নেতা সংসদ ভবনে মিলিত হয়ে যন্তরমন্তরে কিসান সংসদ দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাহুল গান্ধি বললেন, “কৃষকরা তিনটি কৃষি বাতিলের যে দাবি জানিয়ে আসছেন, আজ সমস্ত বিরোধী দল একসঙ্গে সেই দাবি সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের কৃষকদের আমরা আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিতে চাই।”

২৮ আগস্ট, ২০২১: হরিয়ানার কার্নালে জাতীয় সড়কের ওপর বস্তারা টোল প্লাজায় প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। বহু মানুষ আহত হন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে বিজেপির একটি সভা ছিল যার সভাপতিত্ব করেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। এই সভা উপলক্ষেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে কৃষকরা জড়ো হয়েছিলেন কার্নালে।

তাঁরা বিজেপি নেতাদের কালো পতাকা দেখাচ্ছিলেন, রাস্তা অবরোধ করারও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিতে সেটা সম্ভব হয়নি। তখন তাঁরা ওখানেই জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। নেতাদের গাড়ি চলে যাওয়ার পর পুলিশ কৃষকদের ওপর নির্মমভাবে চড়াও হয়।

সেই ঘটনার পর থেকেই কৃষকরা আয়ুশ সিনহার সাসপেনশন এবং তার বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ওই ২৮ আগস্টে এই আইএএস অফিসারটি পুলিশবাহিনিকে নির্দেশ দিচ্ছিল যে একজনও যেন মাথা না ভাঙা অবস্থায় পুলিশি কর্ডন টপকে না যেতে পারে।

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১: মুজফফরনগরে মহাপঞ্চায়েত করে কৃষক নেতারা হাজারো কৃষকের সামনে ঘোষণা করলেন আসন্ন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে তাঁরা শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করবেন।

৭-৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১: ব্যাপক সংখ্যায় কৃষকরা কার্নালের মিনি-সেক্রেটারিয়েট অবরোধ করলেন। তাঁদের তিনটি দাবি— ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় নিহত কাজলের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাঁর পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে; লাঠিচার্জের ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন সবাইকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; এবং কার্নালের এসডিএম আয়ুশ সিনহা এবং আর যেরকম পুলিশকর্মী এই লাঠিচার্জের ঘটনার জন্য দায়ী সবার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে এবং কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১: ৫ দিন লাগাতার অবরোধ চলার পর অবশেষে হরিয়ানা সরকার পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে ২৮ আগস্টের ঘটনার তদন্ত করাতে সম্মত হয় এবং একই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আয়ুশ সিনহাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। কৃষক ইউনিয়নগুলির নেতা গুরনাম সিং চাধুনি এবং হরিয়ানার অতিরিক্ত মুখ্যসচিব দেবেন্দর সিং নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা চালানোর পর সরকার এবং কৃষকরা এই সমঝোতায় আসেন।

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১: প্রজাতন্ত্র দিবসের হিংসাত্মক ঘটনা যে একটি ‘গভীর এবং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’, নিজেদের এই থিওরি প্রমাণ করতে দিল্লি পুলিশ নভেম্বর ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় ট্রাক্টরের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করল চার্জশিটে।

কিন্তু দিল্লি পুলিশের এই তথ্যের সূত্র যারা সেই ট্রাক্টর অ্যান্ড মেকানাইজেশন অ্যাসোশিয়েশনের তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে প্রতি বছরই এই সময়ে সারা দেশেই ট্রাক্টরের বিক্রি বাড়ে— নভেম্বরে ৫১.২৫ শতাংশ হারে, ডিসেম্বরে ৪৩.০৯ শতাংশ হারে এবং জানুয়ারিতে ৪৬.৭৫ শতাংশ হারে।


সৌজন্যে: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...