ইউনেস্কো – আমেরিকার মহানিষ্ক্রমণ

ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য

 

অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট তখন ট্রুম্যানসায়েব। চোদ্দোই মে উনিশশো আটচল্লিশ সনের একটি প্রস্তাবনায় তিনি লিখছেন –

‘প্যালেস্টাইনে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের পত্তন হইয়াছে – এই মর্মে সরকার জ্ঞাত হইয়াছেন। উল্লিখিত রাষ্ট্রের সরকার এই সরকারের নিকট স্বীকৃতির নিমিত্ত আবেদন করিয়াছেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এই নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রের নূতন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করিল’।

ওই দিনেই তেল আভিভ ম্যুজিয়ামে ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ডাক দিলেন। এই ডাকের কয়েক ঘন্টা পরেই ট্রুম্যান সাহেবের ডাক, মানে চিঠি, যার কথা ওপরে লিখলাম।

ইসরায়েল দেশের পত্তনের সময় থেকেই স্যামচাচা তাদের সঙ্গে আছেন। না বলা ভালো তার আগে থেকেই। এর কারণ নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। তবে সে এক স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়। এই লেখা সেই আলোচনার জায়গা নয়।

অক্টোবরের বারো তারিখে আমেরিকা সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে দুনিয়াকে জানালেন – ইউনেস্কো, বা দ্য ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন-এর সদস্যপদ থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইছে। কারণ, তাদের মতে ইউনেস্কোর কাজকর্মে কিছু মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন আছে, এবং এই সংস্থার হাবেভাবে বড্ড বেশি ইসরায়েল-বিরোধী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই ঘোষণা বলবৎ হবে ২০১৮ সালের শেষ দিনে, অর্থাৎ ৩১-এ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারালের কাছে নিজেদের জন্য স্থায়ী পর্যবেক্ষকের আসনের অনুরোধ জানিয়েছে। সুতরাং, ইউনেস্কোর সদস্যপদ থেকে সরে যেতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ইউনেস্কো থেকে সরিয়ে নিতে চায় না।

ইউনেস্কোর ব্যাপারে একটু মনে করিয়ে দিই। এঁদের ছাপ আপনারা দেখেছেন তাজ মহলে, অজন্তা-ইলোরায়, আরও অনেক প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতি-সম্বলিত জায়গায়। অনেক কাজের মধ্যে ওয়র্ল্ড হেরিটেজের চিহ্নিতকরণ ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এই সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

কিন্তু মুশকিলটা হল, আমেরিকা যার কারণে ‘একেলা’ হতে চায়, সেই ইসরায়েল এই ঘোষণার সময় পর্যন্ত নিজেদের ইউনেস্কো থেকে সরিয়ে নেবার কথা বলেনি! রাষ্ট্রপ্রধান নেতান্যাহু না কী আমেরিকার এই কথা শুনে তারপরেই তড়িঘড়ি নিজের বিদেশমন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করার জন্য। আমেরিকার এই ঘোষণা শুনে ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারাল ইরিনা বোকোভা দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন – সারা বিশ্ব যখন লড়াইয়ে-লড়াইয়ে ধ্বস্ত, এমতাবস্থায় শান্তি ও সম্প্রীতির বাণীর প্রচারক ও আক্রান্ত সংস্কৃতিগুলির রক্ষাকর্তা ইউনেস্কোর থেকে আমেরিকার মতন দেশের নিজেকে আলাদা করে নেওয়া বহুপাক্ষিকতার ওপর আঘাত।

তবে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল, এমন মনে করে নেবার কোনও কারণ নেই। ডনাল্ড ট্রাম্প মোটেও প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নন যিনি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৮৪ সালে রোনাল্ড রেগনও ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে আসেন। কারণ হিসাবে ‘ইউনেস্কোর অত্যধিক সোবিয়েতপ্রীতি’-র দিকে আঙুল তোলেন। ২০০২ সালে আমেরিকা আবার ইউনেস্কোতে যোগ দেয়, ছোট জর্জ বুশের আমলে।

এই সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের যদি কোনও শুরু থাকে, তবে তা ২০১১ সালে। আসল কথার আগে দু’টো অন্য কথা।

২০০৯ সালে বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার পর থেকে আমেরিকা ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ওই বছর, এবং তার পরের বছরও হোয়াইট হাউসে থেকে এলেন। আমেরিকা ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প নেওয়া হল। ২০১১ সালে আমেরিকা প্যালেস্টাইনকে দু’শো মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিল। কিন্তু বাদ সাধল প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্যপদের দাবি। ইসরায়েলের প্রবল বিরোধিতার কারণে প্যালেস্টাইনের এই দাবিকে আমেরিকা সমর্থন জানাল না। এসবের মধ্যে ইউনেস্কো প্যালেস্টাইনকে পূর্ণ সদস্যপদ দিলে ওবামা সরকার ইউনেস্কোকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল। তার আগে পর্যন্ত ইউনেস্কোর মোট প্রাপ্ত দানের বাইশ শতাংশ আসত আমেরিকার থেকে।

এর মধ্যে বারংবার ইউনেস্কোর নানা কাজে আমেরিকা অসন্তোষ জানিয়ে এসেছে। জুলাই মাসে ইউনেস্কো প্রাচীন শহর হেব্রোনকে প্যালেস্টাইনের ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে। এই ঘোষণা রদ করবার জন্য ব্যক্তিগত স্তরে দরবার করেন রাষ্ট্রসঙ্ঘে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলি। এর আগে ২০১৬-র অক্টোবরে জেরুজালেমের প্রাচীন অংশে হারম-অল-শারীফ বা টেম্পল মাউন্ট কমপ্লেক্স-কে প্যালেস্টিনিয় বলে ঘোষণা করে ইউনেস্কো, যা ইজরায়েল নিজেদের ইতিহাসের অংশ বলে দাবি করছিল। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তৎকালীন প্রেসিডেন্টপদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পর্যন্ত ইউনেস্কোর এই ঘোষণার বিরোধিতা করেন। ২০১৫ সালে জর্ডন নদীর পূর্বপাড়কে যীশুর ব্যাপটিজম-এর সম্ভাব্য স্থান ঘোষণা করেও ইউনেস্কো ইজরায়েলের ক্ষোভের সম্মুখীন হয়। ২০১৪ সালে প্যারিসে ইসরায়েলে ইহুদিদের উপস্থিতি-সংক্রান্ত এক প্রদর্শনীও কিছু আরব দেশের বিরোধিতায় ইউনেস্কো বন্ধ করে দেয়। গত ছয় বছর ধরে জমতে থাকা মেঘের থেকে বৃষ্টি শুরু হল সবে।

তবে, আমেরিকার এই মহানিষ্ক্রমণের আশু কোনও ফল দেখা যাবে – এই ধারণা অবান্তর। ২০১৩ সাল থেকে এমনিতেই আমেরিকা ইউনেস্কোতে তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে, অনুদান বন্ধের কারণে। সুতরাং সেই অর্থে সদস্যপদ তাদের নেই। তবু পর্যবেক্ষক হিসাবে থেকে যাওয়ার অর্থ সমস্ত আলোচনায় যোগ দেওয়া এবং নিজের মতামত জানানো। সেই অর্থে ইউনেস্কোতে আমেরিকার গুরুত্ব একেবারে শূন্য হয়ে গেল না।

এতসব ইতিহাস সত্বেও এ-কথা বলতে হবে, এবারের মতন তড়িঘড়ি বিদায়ঘণ্টা বাজানো কিন্তু ২০১১ সালে হয়নি। এইবারের ঘটনার বিশেষত্ব হল – এই ঘটনা ডনাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর থেকে বেরিয়ে আসার অনেক ঘটনার একটা। ২০১১-তে পরিস্থিতি এইরকম ছিল না। গদিতে আসীন হবার কয়েক মাসের মধ্যেই ট্রাম্প সরকার ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এবং প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাকর্ড থেকে বেরিয়ে এল। ন্যাটো, ন্যাফটা এবং ইরান পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রেও পুরনো চুক্তি বাতিলের কথা বলছে এই সরকার। এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ট্রাম্প সরকারের এই পদক্ষেপ বা বক্তব্যসমূহ নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব, এবং ঐতিহাসিক।

এই ঘটনার আরও একটা সম্ভাব্য কারণ দেখা যাচ্ছে।

বুলগারিয়ার মানুষ ইরিনা বোকোভা ২০০৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর প্রধান পদে আসীন। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য যখন তিনি নির্বাচিত হন, তার আগে প্রশ্ন ওঠে আরব অঞ্চলের কাউকে ইউনেস্কোর প্রধান পদে আনার। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য তখন সফল হতে পারেনি। ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারাল পদের জন্য নির্বাচন সমাসন্ন। আরবের কোনও প্রার্থীকে এই পদে আনার চেষ্টাও তাই তুঙ্গে। এবং এইবার এই চেষ্টা সফল হবার সম্ভাবনা গতবারের থেকে অনেক বেশি। আরবের কোনও প্রার্থী যদি ইউনেস্কোর প্রধান পদে আসীন হন, তবে তা হবে ইসরায়েলের একেবারে না-পসন্দ। এতে ইতিহাসের বদল ঘটিয়ে প্যালেস্টাইনকেই তাদের ‘প্রমিসড ল্যান্ড’ বলে প্রমাণ করা হবে অনেক বেশি শক্ত কাজ। ইতিহাসের এই বিকৃতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অতীতে ইউনেস্কোর কিছু ঘোষণায় ইসরায়েল ও আমেরিকা বিরক্ত, সে-কথা আগেই বলেছি।

বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলোর সমস্ত কাজকর্ম প্রশংসার্হ না হলেও, এদের কার্যক্রমে বিভিন্ন সময়ে গোপন রাজনীতির কালিমা লাগলেও, এই কথা নির্দ্বিধায় বলা চলে, যে এই সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে মোটের ওপর বহুপাক্ষিকতার পক্ষে সওয়াল করে এসেছে।

তবু, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আমেরিকাই সবথেকে বেশিবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৮ সাল ইন্টারপল থেকে, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন থেকে, আর ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্ট থেকে।

তবে আমেরিকাই একমাত্র দেশ নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে নাইজিরিয়ার কথা, যারা গত সেপ্টেম্বরে নব্বইটা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

তবে আমেরিকার সরে যাওয়া আর নাইজিরিয়ার সরে যাওয়ায় পার্থক্য আছে। দুনিয়ার সবথেকে শক্তিশালী দেশ যখন দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোকে অস্বীকার করতে শুরু করে, তাদের মান্যতা দিতে অরাজি হয় তবে এই সংগঠনগুলোর অস্তিত্বই কিছুটা বিপন্ন হয়ে উঠতে বাধ্য। এক্ষেত্রে আমেরিকার ধামাধরা দেশগুলো যদি পরপর নিজেদের সরিয়ে নেবার খেলায় মেতে ওঠে, তবে বহুপাক্ষিকতার ধারণা যে প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন এমন সন্দেহও নেহাত অমূলক ঠেকে না, যে আমেরিকা এমন কিছু করতে চায় যা বহুপাক্ষিকতার ধারণার পরিপন্থী, ফলত তুলনায় ছোট দেশগুলোর পক্ষে বিপজ্জনক।

দুই বিশ্বযুদ্ধের পরে আমাদের নীলগ্রহে শান্তিস্থাপনার্থায় যে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে, এই সংঘাত কি আক্রমণাত্মক পুঁজিবাদের সঙ্গে সেইসব বহুজাতিক প্রাতিষ্ঠানিক ধারণার সংঘাত? এই প্রতিষ্ঠানেরা কোনওকালেই পুঁজিবাদের বিরোধিতা করেনি। বরং বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশের দানেই ভাঁড়ার পূর্ণ করেছে। তবে কি আমরা পুঁজিবাদের বিকাশের সেই স্তরে এসে পৌঁছলাম, যেখানে তার বেঁচে থাকার একমাত্র পথ আরও আরও বড় হতে হতে বিশ্বের তাবৎ ক্ষমতাকে নিজের হাতে নেওয়া?

এই প্রশ্নটা উঠল। উত্তরের অপেক্ষা কতদিনের হয়, দেখা যাক।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

9 Comments

  1. পুঁজিবাদ আক্রমণাত্মক না হলে, বিশ্বের তাবত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত না করতে চাইলে সাম্রাজ্যবাদ শব্দটার জন্মই হত না। ক্ল্যাসিকাল সংজ্ঞা অনুযায়ী অবাধ প্রতিযোগিতার স্তর থেকে পুঁজিবাদের একচেটিয়াত্বের যুগে পদার্পণই সাম্রাজ্যবাদের জন্মলগ্ন। অতএব, কোনও প্রশ্ন বা কনফিউশনের ব্যাপার বোধহয় নেই! এবার এই সব বহুপাক্ষিকতা? হ্যাঁ, মুখোশ মাত্র। এবং মুখোশের নিয়মেই তা সময়ে সময়ে খসে যায়।

    এক্ষেত্রে সমস্যাটা বোধহয় ভিন্নতর। মানে আমরা বিশ্বটাকে যেভাবে দেখি, বা যেভাবে আমাদের দেখানো হয়, বিশ্বটা কি তেমন একমেরু নয়? আমেরিকা বিশ্বের বাপ, তা সত্ত্বেও তাকেই এরকম গোঁসাঘরে খিল দিতে হল কেন, বা হচ্ছে কেন? তাহলে কাকু-জেঠুরাও কি তলে তলে তাল ঠোকা চালিয়ে যাচ্ছে? একমেরু বিশ্বের ধারণাটি কি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া তবে, ভয় দেখানোর জন্য? এবং, শেষমেশ, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ কি পৃথিবী বয়ে বেড়াচ্ছে তাহলে? এই প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হলে ভালো হত।

    কিন্তু, তা সত্ত্বেও, লেখাটি চমৎকার, এবং লেখক অবশ্যই ধন্যবাদার্হ। আরও বেশি করে ধন্যবাদ প্রাপ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে আনার জন্য। কেউ তো এসব আলোচনাই করে না দেখি…

    ভালো থাকবেন…

    • লেখাটা পড়ে ফেলার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা। আপনার সাজেশনও খুবই জোরদার।

      পুঁজিবাদ আক্রমণাত্মক তো বটেই। আমি বলতে চেয়েছি – আক্রমণের রকমফেরের কথা। এতদিন যা ছিল অনেক বেশী শীলিত, সেই আক্রমণের দাঁত-নখ বেরিয়ে পড়ছে এইবার। একমেরু বিশ্ব – এই বোধটা তো খুব পুরোনো নয়। ক’ বছরই বা হল!

      তবে মুখোশের খসে যাওয়াই নিয়ম – আপনি এইভাবে ব্যাপারটা দেখলেন। তাতেও আমি আপত্তির কোনও কারণ দেখছি না। আমার একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে, এই যা।

      • শীলিত কই ব্রতীন্দ্রবাবু! এই শীলন এবং দাঁত-নখ প্রদর্শন, এ তো যুগপৎ চলেছে, এবং তার প্রচুর নজিরও আছে। এই বহুপাক্ষিকতার ভড়ং প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র তো রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং তার নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে একই সময়ে ইরাক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয় আর তাতে ভেটো দিয়ে ইরাকে বোম ফেলা হয়। সে কারণেই বললাম, এ স্রেফ মুখোশ, এবং তার ধর্ম মেনেই সে মাঝেমাঝে খসে পড়বে।

        তবে হ্যাঁ, মুখোশ ভড়ং যাই হোক না কেন, আমরা সেটুকুই যাতে পালিত হয়ে সেই দাবী তুলব, তুলতে হবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ বা দ্বিমত নেই…

  2. জরুরী আলোচনা৷ ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আমেরিকা যেভাবে গোঁয়ার্তুমি করে সব বহুপাক্ষিক সহযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসছে, জলবায়ু চুক্তিই হোক বা ইরানের পরমাণু ইস্যু, ইউনেস্কো ত্যাগ তারই একটা ধারাবাহিকতা৷ তবে এটাও মানতে হবে যে নব্বইয়ের দশকের একমেরু বিশ্ব কিন্তু এখন ঠিক নেই৷ চীনের অর্থনৈতিক উল্লম্ফন আর রাশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ না জানাক, যথেষ্ট চাপে রেখেছে৷ সিরিয়া থেকে আসাদকে উৎখাত করতে না পারা, উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে না পারা তারই ফলশ্রুতি৷ ক.ব. ঠিকই বলেছেন, কাকু জেঠুদের তাল ঠোকায় বাবার গোঁসাসা হয়েছে৷

  3. আচ্ছা, একটা অন্য প্রশ্ন… এ প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান কী? মানে ঘোষিত বিবৃতি জাতীয় কিছু আছে?

    • আজ পর্যন্ত তেমন কিছু চোখে পড়ে নি। আর, এ-বিষয়ে ভারত কোনও স্টেটমেন্ট দেবে বলেও আমার মনে হয় না। বড়োজোর দুঃখজনক-ফনক বলে হাত ধুয়ে ফেলবে।

আপনার মতামত...