একগুচ্ছ কবিতা
বিস্মরণ
তুমি আনন্দের খনি
আমি ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই
নিচে নেমে গেছি
আর উঠে আসতে পারছি না
বিরহ
রাত্রিশিশির ঝরে পড়ার শব্দ,
থেকে থেকে কুবোপাখির ডেকে ওঠা
তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব
শূন্য জলের গেলাস, তুমি সর্বত্র, সবদিকে—
প্রতিভা
যেভাবে ব্যথা দাও, মনে হয় দুঃখ তোমার কুটিরশিল্প
ন্যাপথলিন
কীভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, ভাবি, ওগো কাঠগোলাপ,
স্নায়ুশুভ্র, তুমি আমাকে ধরে রাখো
আমার মায়ের পুরনো মুখ, ধরে রাখো
একটা মস্ত কাঠের সিন্দুকে
কথা
কী বলেছ, মূলত বুঝিনি
শুধু তোমার বলার ভঙ্গি ও স্বরক্ষেপণ লক্ষ করে
স্পষ্ট বুঝেছি—
এই কথাকলি নীলিমাপ্রেরিত, যজ্ঞডুমুর, অথৈচৈত্র—
ছাদের উপর ঝোঁকা আমডালে আটকে
তারস্বরে “না, না” বলতে থাকা ছিন্ন হলুদ ঘুড়ি
সন্ধ্যা
আমাকে ভুল বুঝো না
আমাকে ভুল বোঝাও—
আমাকে প্রত্যাখ্যানে তোমারও কষ্ট হয়
প্রিয় নিঃসঙ্গতার আলো জ্বলে ওঠে, দেবী…
যাবজ্জীবন
মোহরদি, আপনার সঙ্গে যৌনতা আমার স্বপ্ন
অথচ দেখুন সমাজের কথা যদি বলি—
আপনার সঙ্গে ওসব করা একেবারেই অসম্ভব, অবৈধ, অনৈতিকও—
ধর্মাধর্ম মানলে এসব ভাবাও পাপ।
আপনাকে আমি কখনও পাব না
অথচ প্রতিবার আপনাতেই উপগত হই, মোহরদি
প্রতিটি সঙ্গমে আমি আপনাকে পাই—
প্রতিবার একই, একই পথে হাঁটি…
আমি কি আর ফটকের বাইরে বেরুব না কোনওদিন, মোহরদি?
ঋতাভরী
ঋতাভরীকে অকল্পনীয় মিষ্টি মনে হয়—
কেন এত মিষ্টিই মনে হয়?
অন্য কোনও স্বাদ তো মনে আসে না!
যেভাবে আদিম প্রাণ সরল শর্করা অণু ভেঙে
প্রথমবার আন্তঃআণবিক শক্তি রিলিজ করেছিল
হয়তো ওই মুখখানিও আমার ভিতরে
সেই একইরকমভাবে ক্রিয়াশীল…
যেন হোমিও শিশি হতে মসৃণ নেমে আসে
ঋতাভরী গ্লোবিউলস
আর মুখ ভরে ওঠে মিষ্টিতে
পেইনকিলার
ব্যথাও একধরনের ডিফেন্স মেকানিজম
ফুলের মতন মেয়েটি, কখন এসেছিল মনে আছে
এখন যে চলে গেছে, তাও জানি
কিন্তু এক্সাক্টলি কখন যে গেছে, বুঝতে পারিনি
এইসব প্রস্ফুটিত কবিতার নির্যাস স্মরণ করিয়ে দ্যায় যে এর নির্মাতা একজন আপাদমস্তক কবি। আনন্দ জাগায় এই কবির নির্মাণ।