অক্টাভিও পাজের কবিতা

অনির্বাণ চন্দ

 

মেক্সিকোয় ৩১ মার্চ ১৯১৪-এ জন্ম অক্টাভিও পাজ়-এর। পিতামহের কাছ থেকে কমবয়সেই সাহিত্যের দীক্ষা। মেক্সিকান ডিপ্লোম্যাট হিসেবে ঘুরেছেন নানান দেশে। ১৯৬২ সালে এসেছিলেন ভারতেও। লিখেছেন অজস্র কবিতা। তাঁর কবিতায় বারংবার এসেছে মার্ক্সিজ়ম ও সুররিয়ালিজ়মের ছোঁয়া, প্রবহমান সময়ের কাহিনি। ১৯৯০ সালে পান সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯ এপ্রিল ১৯৯৮-এ চলে যান চিরঘুমের দেশে।

এখানকার সমস্ত কবিতাই ‘The Collected Poems of Octavio Paz 1957-1987’ (edit. Eliot Weinberger) থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

 

অন্যজন

নিজের জন্য একটা মুখোশ বানিয়েছিল লোকটা।

তার আড়ালেই

বাঁচত, মরত, অজস্রবার ফিরে-ফিরে আসত
পুনর্জন্মে।

এখন ওর মুখে
সেই মুখোশেরই বলিরেখা;

ওর বলিরেখাগুলির কোনও মুখ নেই

(‘The Other’)

 

আত্মপরিচয়

বারান্দায় একটা পাখির টিঁ টিঁ—
খুচরো পয়সার বাক্সে একটা কয়েনের ঝনাৎ

পাখিটার ডানায় সামান্য হাওয়া,

আর একঝলকেই— ফুড়ুৎ!

হয়তো ওই বারান্দায় কোনও পাখি নেই
আর
নেই কেউ, কোনও লোক—

যে বারান্দায় আমি বসে আছি…

(‘Identity’)

 

জলসূত্র

ঋষিকেশের পরেও

গঙ্গা সবুজ।

পর্বতমালার উপরে গুঁড়ো-গুঁড়ো হয়ে পড়ে আছে দিগন্তের কাচ।
আমরা স্ফটিকের উপর পা ফেলি।
চারিদিকে থির হয়ে আছে স্তব্ধতা
আকাশের নীলের মাঝে

শুভ্র পাথর, কালো মেঘের তুলি;

তুমি বলে উঠলে: এ-দেশে অজস্র ঝরনা, না?

সে-রাত্তিরেই তোমার বুকের ঝরনায় আমার অবগাহন

(‘The Key of Water’)

 

পথ

বাতাসের চেয়ে বেশি

জলের চেয়েও অধিক

ঠোঁটের চেয়েও গভীর

অথচ পালক, পালক…

তোমার শরীর তোমারই শরীরের পথচিহ্ন

(‘Passage’)

 

অনেক দূরের প্রতিবেশী

গত রাতে

গর্জন গাছটা আমাকে কী যেন বলবে-বলবে…

বলল না

(‘Distant Neighbor’)

 

ব্যাপ্‌টিজ়মের ফলে

হাসান নামের তরুণটি এক ক্রিশ্চিয়ান মেয়েকে বিয়ে করবে­­­—
এই ভেবে পালটে ফেলল ধর্ম।
পাদ্রি তার নাম দিলেন ‘এরিক’— যেন কোন্‌ এক ভাইকিং!

এখন হাসানের দুটো নাম

একজনই স্ত্রী

(‘The Effects of Baptism’)

 

প্রত্যুষা

এক-এক করে অন্ধকার খুলে ফেলছে

ত্রস্ত শীতল হাতগুলি…

আমি চোখ খুলে ফেলি, স্থির—

একটা তাজা ক্ষতের মাঝখানে

আমার বেঁচে থাকা, ঘরবাড়ি

(‘Dawn’)

 

আকাশে আলোর দাগ

বাতাসিয়া হাত, ঠোঁট—

জলজ হৃদয়
উঁচু-উঁচু ইউক্যালিপ্‌টাসে ঝুঁকে আছে মেঘ

প্রতিদিন জন্মেছে যে প্রাণ,
প্রতিজন্মে এসেছে যে মৃত্যু—

আমি চোখ মুছে দেখি:

এ-পৃথিবী জুড়ে আকাশ বয়ে যায়

(‘Daybreak’)

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4667 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

আপনার মতামত...