
দেবাশিস মিথিয়া
ভারতীয় কৃষিতে কর্পোরেট প্রবেশের নেতিবাচক প্রভাবগুলি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটাবে। খাদ্য নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি কৃষকদের কল্যাণ বাড়ানো কিংবা কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব থেকে কৃষিকে বাঁচানোর চেয়ে নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধিতে বেশি জোর দেবে যা ভারতের কৃষির দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বকে দুর্বল করবে। তাই নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার আগে তাদের সম্ভাব্য কু-প্রভাবগুলি খুঁটিয়ে দেখা খুব জরুরি। ভারতীয় কৃষির বর্তমান কঠিন চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করতে কৃষি গবেষণায় সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো এই মুহূর্তে আশু কাজ। কর্পোরেট প্রসঙ্গে বিশিষ্টজনদের মত, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে কর্পোরেট জায়েন্টদের সঙ্গে আইসিএআরের সমস্ত মউ বাতিল করে সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো। কৃষি এবং কৃষককে শোষণের হাত থেকে বাঁচানো
ঘটনা-১: রাহুল প্যাটেল, মহারাষ্ট্রের ধুলের বাসিন্দা। ৩৫ বছর বয়সী এই কৃষক ২০২২ সালে মনসান্টোর বিটি তুলা চাষ করেছিলেন, গোলাপী বোলওয়ার্মের আক্রমণে তাঁর ৭০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অথচ এই বীজের জন্যই তিনি প্রতি একরে ৬০০০ টাকা খরচ করেছিলেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়েন। মনসান্টো সেভাবে পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি।
ঘটনা-২: একই অভিজ্ঞতা হরিয়ানার ৪০ বছর বয়সী চাষি সুরেশ কুমারের। তিনি ২০২৩ সালে বায়ারের জিএম সরিষার বীজ ব্যবহার করে ত্বকের অ্যালার্জি, চোখের জ্বালা এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। নিজের চিকিৎসাতে তাঁর ৫০০০০ টাকা খরচ হয়েছিল। এছাড়াও কীটপতঙ্গ এবং রোগের আক্রমণে ফসলের ক্ষতি তাঁর জীবিকাকে নাড়িয়ে দেয়।
ঘটনা-৩: ৩৮ বছর বয়সী কৃষক, মহেশ সিং। পাঞ্জাবের এই কৃষক ২০২৩ সালে বাসমতি চাষের জন্য রিলায়েন্স অ্যাগ্রোর সঙ্গে ‘চুক্তিচাষে’ রাজি হন। কিন্তু রিলায়েন্স অ্যাগ্রো চালের দামের যে প্রস্তাব দেয় তা বাজারের চলতি দামের চেয়ে কম। অন্যদিকে মহেশকে বীজ, সার এবং কীটনাশকের জন্য রিলায়েন্সকে বেশি অর্থ দিতে হয়। অথচ সেই রিলায়েন্স অ্যাগ্রোই বাসমতির গুণমান ঠিক নেই এই যুক্তিতে ফসলের বেশিরভাগ অংশ কিনতে অস্বীকার করে। এতে মহেশের আর্থিক ক্ষতি হয় ১.৫ লাখ টাকা। তিনি ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনা-৪: গুজরাতের ৪২ বছরের কৃষক, রামেশ্বর প্যাটেল। ২০২২ সালে সিনজেন্টা জলবায়ু-সহনশীল বীজ ব্যবহার করে গমের চাষ করেন। লক্ষ্য জলবায়ু-সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলিকে ঠেকানো। কিন্তু অপ্রত্যাশিত খরায় তাঁর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা দিতে বীজটি ব্যর্থ হয়। অথচ বীজ, সার এবং সেচের জন্য রামেশ্বরের প্রচুর খরচ হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় কম ফলন হওয়ায় তাঁর ৮০০০০ টাকা ক্ষতি হয়। এখন তাঁকে ঋণ পরিশোধের লড়াই করতে হচ্ছে।
রাহুল থেকে রামেশ্বর প্রত্যেকেই আজ মনসান্টো, রিলায়েন্স অ্যাগ্রো, বায়ার এবং সিনজেন্টার মতন কর্পোরেটদের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন। এই কর্পোরেট কোম্পানিগুলি কৃষিতে প্রবেশের পর থেকেই ভারতে বৃহদায়তন চাষের ঝোঁক বেড়েছে। এতে ছোট কৃষকরা নিজের জমি থেকেই বিতাড়িত হচ্ছেন। তাঁদের জীবিকার সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত চাষে বীজ সরবরাহ করে সংস্থাগুলি নিজে, ফলে চাষির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা থাকে না। এই কর্পোরেট বীজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ বেশি। যা মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ক্ষতি করার পাশাপাশি চাষের খরচ বাড়ায়। কর্পোরেট চাষে ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত উত্তোলন জলসঙ্কট সৃষ্টি করছে। এছাড়া মাটির ক্ষয় এবং জমির উর্বরতাকেও কমিয়ে দিচ্ছে। কর্পোরেট চাষে মুনাফা বাড়াতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে চাষের বৈচিত্র্যেকে। কমছে কৃষির জলবায়ু-সহনশীলতা। চুক্তিচাষের নামে কৃষি-কর্পোরেটরা শোষণকে বহুগুণ বাড়িয়েছে। চুক্তিচাষে চাষিকে ফসলের অন্যায্য দাম দিলেও চাষির কিছু বলার থাকে না। এক্ষেত্রে চাষির দরকষাকষির ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। সংক্ষেপে, কর্পোরেটের মুনাফার লোভ সুস্থায়ী কৃষিব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক। এত কিছুর পরও দেশের সরকার ভারতীয় কৃষির যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছে এই ধরনের কৃষি-কর্পোরেটদের হাতে। কৃষক-শোষণের মাধ্যমে তাদের লাভের অনুকূল পরিবেশ গড়ে দিতে মোদি সরকার উঠেপড়ে লেগেছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর) ও বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে মউ স্বাক্ষরের দিকে তাকালে তা পরিস্কার হয়ে যাবে। ভারতীয় কৃষি গবেষণার সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিএআর এবং কৃষি কর্পোরেট বায়ার-এর সঙ্গে মৌ চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় ঘোষণা হয়েছিল বহুজাতিক সংস্থা এবং চাষিদের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ‘ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ক্ষমতায়ন’ ঘটানো হবে। এ-বিষয়ে সরকার নাকি আন্তরিক! কিন্তু জুন, ২০২৩-এ, ‘আমাজন কৃষাণ’ ও আইসিএআরের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এটি হাস্যকর মনে হল। আমাজন কৃষাণ-কে দায়িত্ব দেওয়া হল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং তার সাহায্যে চাষির আয়কে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া। ওই মাসেই ‘ইরিগেশান সিস্টেম লিমিটেড’-এর সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি হয় যে তারা আইসিএআর-এর সঙ্গে মরিচ, আদা ও তেঁতুলের উপর যৌথভাবে গবেষণা চালাবে। জলবায়ু-সহনশীল বীজ আবিষ্কার এবং তার থেকে উৎপন্ন ফসলের সুরক্ষা, আগাছা দমন এবং কৃষির যন্ত্রীকরণে নতুন উপায় বের করতে ওই বছর সেপ্টেম্বরে বহুজাতিক সংস্থা ‘বায়ারে’র সঙ্গেও পুনরায় মউ স্বাক্ষরিত হয়। এ-বছর নির্বাচনের ঠিক আগে, প্রাকৃতিক চাষ সম্পর্কে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিতে আইসিএআর চুক্তি করে ‘ধানুকা এগ্রিটেকের’ সঙ্গে। মোদি-৩ সরকার গঠিত হওয়ার পর মউ চুক্তি হয়েছে ‘করমণ্ডল ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘সিনজেন্টা ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার’ সঙ্গে। প্রথম বহুজাতিকটি কাজ করবে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য। সেখানে মাটি পরীক্ষা করে ফসলের কী ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন তার নিদান দেবে এবং সেই কাজের প্রসার ঘটাবে। দ্বিতীয়টি জলবায়ু-সহনশীল কৃষি বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রচারের কাজে যুক্ত থাকবে। শুধু আইসিএআর-ই নয়, কৃষি দফতরও মাইক্রোসফট কর্পোরেশন এবং পতঞ্জলির সঙ্গে তিন বছর আগেই মউ চুক্তি করে বসে আছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কৃষকদের জমি-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে। সংস্থাগুলি রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে চাষিকে উৎপাদন বিষয়ে পরামর্শ দেবে।
চুক্তির ধরন থেকে পরিষ্কার কৃষি-অর্থনীতিকে কর্পোরেট হাতে তুলে দেওয়ার সব ব্যবস্থা পাকা। চেষ্টা চলছে বাতিল হওয়া কৃষি আইন-কে পিছনের দরজা দিয়ে ফিরিয়ে আনার। সেই কাজে গতি আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। তার প্রতিফলন কেন্দ্রীয় বাজেটে চোখে পড়েছে। কৃষি-সংক্রান্ত গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং জলবায়ু-সহনশীল শস্যের বিকাশ— এই বাজেটে জোর পেয়েছে। এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি-গবেষণা পরিকাঠামোর সম্প্রসারণে। ঠিক হয়েছে চাষিদের জন্য নতুন ১০৯টি উচ্চ-ফলনশীল ও ৩২টি জলবায়ু-সহনশীল বীজের ব্যবস্থা করা হবে। ডাল ও তৈলবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য তাদের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনে সরকার জোর দেবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে কৃষির জন্য ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) গড়ে তুলবে। ডিপিআই-এর সাহায্যে ভূমি দফতরের অধীনে ৬ কোটি কৃষকের জমির তথ্য নথিভুক্ত করা হবে। প্রত্যেক চাষির আলাদা আলাদা ডিজিটাল আইডি থাকবে, সেখানে তাঁর আধারের সঙ্গে জমির রেকর্ডকে সংযুক্ত করা হবে। আগামী খরিফ মরশুমেই দেশের ৪০০টি জেলায় ডিজিটাল মাধ্যমে ফসল সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। যা চাষিদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ফসলের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। এতে নিখুঁতভাবে ফসল উৎপাদনের অনুমান সম্ভব হবে। জানা যাবে ফসলের বাজার-দামও। এছাড়াও আগামী দু-বছরে সারা দেশে ১ কোটি চাষিকে প্রাকৃতিক চাষে স্থানান্তরিত করা হবে। এইজন্য ১০,০০০টি প্রয়োজন-ভিত্তিক জৈব-ইনপুট কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অর্থাৎ বর্তমান বাজেটে দেশের অর্থমন্ত্রী কৃষির ডিজিটালাইজেশনে জোর দিয়েছেন। ডিজিটালাইজেশনের ফলে কৃষিতে ড্রোন, স্মার্ট ডেটা-চালিত ট্রাক্টর, আধুনিক অ্যাপস এবং সেন্সরের প্রয়োগ বহুগুণ বাড়বে। আর এই অছিলায় কর্পোরেট কোম্পানিগুলিকে কৃষিতে বেশি বেশি করে প্রবেশের সূযোগ করে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকার নিজে।
কৃষি-কর্পোরেটগুলিকে সূযোগসুবিধা পাইয়ে দিতে গিয়ে কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থ কীভাবে ক্ষুণ্ণ করা হল সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক। কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে দেশের কাছে জরুরি। কিন্তূ বাজেটে বিষয়টি জায়গা পেল না। প্রত্যাশা ছিল কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এমএসপি (সি২+৫০%) নির্ধারণ এবং সেই এমএসপি-তে সরকারি ক্রয়বৃদ্ধির ঘোষণা বাজেটে থাকবে। বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেল। কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের ঋণ মকুবের দাবিটিরও নিষ্পত্তি হল না বর্তমান বাজেটে। বছরের যে-সময়ে চাষের কাজ থাকে না সেই সময় মনরেগা গ্রামের মানুষের কাজের ব্যবস্থা করে শ্রমের বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখে। সেই মনরেগাতে ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাড়েনি। আখচাষিদের বকেয়া পরিশোধ ও আখের দামের স্থিতিশীলতার জন্য তহবিল ঘোষণার কোনও উল্লেখ বাজেটে নেই। রাবারের সহায়ক মূল্য কিলোপ্রতি ২৫০ টাকা, আপেলের উপর ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ‘পেঁয়াজ, আলু এবং সব্জি’-চাষিদের জন্য বাজার সুরক্ষার প্রত্যাশিত ঘোষণাও থাকল না বাজেটে। বাজেটে বীজ, সার, এবং কৃষি যন্ত্রপাতি-সহ কৃষি উপকরণের উপর জিএসটি প্রত্যাহার করে উৎপাদন ব্যয় কমাতে সরকার উদ্যোগী হবেন বলে আশা ছিল। এক্ষেত্রেও হতাশ করেছে কেন্দ্রীয় বাজেট।
কৃষিতে কর্পোরেট উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিগুলি আপাতদৃষ্টিতে উপকারী মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কৃষক, পরিবেশ এবং স্থানীয় খাদ্যব্যবস্থার ক্ষতিই করে। কয়েকটি ঘটে যাওয়া ঘটনা বললে তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনসান্টোর জেনেটিকালি মডিফায়েড (জিএম) বীজ ব্যবহার করে তুলাচাষিদের তুলাচাষে উৎসাহিত করে। কিন্তু দেখা গেল, এই চাষে ক্ষুদ্র চাষিদের ঋণ ও আত্মহত্যা বেড়েছে। কমেছে ফসলের বৈচিত্র্য। কর্পোরেট সংস্থা ‘কার্গিল’ কৃষকদেরকে শঙ্কর এবং জিএম বীজ সরবরাহ করেছে। বীজের উপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ চাষিদের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। এছাড়াও ভারতের কৃষিপণ্য বাণিজ্যে ও সংরক্ষণে সংস্থাটির বাড়বাড়ন্ত চাষিদের দরকষাকষির ক্ষমতা কমিয়েছে। ‘পেপসিকো’ আলু এবং অন্যান্য ফসলের জন্য ভারতীয় কৃষকদের চুক্তিচাষে বাধ্য করেছে। কৃষকদের চাষ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের উপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের এই বাড়-বাড়ন্ত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ভারতীয় চাষিরা ক্রমাগত কর্পোরেট শোষণের শিকার হচ্ছেন। মনসান্টোর আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের রফতানি বাড়াতে সয়াবিন চাষে জিএম সিড ব্যবহার করিয়েছে। অভিঞ্জতা হল, ফসলের বৈচিত্র্য হ্রাস, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি থেকে বিতাড়ন। এরাই মেক্সিকোতে ভুট্টার ফলন বাড়াতে জিএম ভুট্টার চাষ করে। এতে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে, কমেছে ফসলের বৈচিত্র্য। অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে ভুট্টার দেশীয় জাতগুলিকে। ব্রাজিলে সয়াবিন রফতানি বাড়াতে ‘কার্গিল’ বৃহদায়তনে সয়াবিন চাষ শুরু করে। এর ফলে বন উজাড়, বাসস্থানের ক্ষতি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের স্থানচ্যুতি ঘটেছে। সারা বিশ্বের কৃষিতে কর্পোরেটদের এরকম দাপাদাপির অজস্র উদাহরণ রয়েছে।
শেষে যেটা বলার, ভারতীয় কৃষিতে কর্পোরেট প্রবেশের নেতিবাচক প্রভাবগুলি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটাবে। খাদ্য নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি কৃষকদের কল্যাণ বাড়ানো কিংবা কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব থেকে কৃষিকে বাঁচানোর চেয়ে নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধিতে বেশি জোর দেবে যা ভারতের কৃষির দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বকে দুর্বল করবে। তাই নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার আগে তাদের সম্ভাব্য কু-প্রভাবগুলি খুঁটিয়ে দেখা খুব জরুরি। ভারতীয় কৃষির বর্তমান কঠিন চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করতে কৃষি গবেষণায় সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো এই মুহূর্তে আশু কাজ। কর্পোরেট প্রসঙ্গে বিশিষ্টজনদের মত, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে কর্পোরেট জায়েন্টদের সঙ্গে আইসিএআরের সমস্ত মউ বাতিল করে সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো। কৃষি এবং কৃষককে শোষণের হাত থেকে বাঁচানো।