
কৌশিকরঞ্জন খাঁ
ভাইকে চোখের সামনে বদলে যেতে দেখে ভীষণ বিষণ্ণ শুভ্র। কেননা এই ভাই আসলে তারই নিখুঁত পর্যবেক্ষণের মধ্যে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠেছিল। বয়সের তফাত দশ বছরের হওয়ায় অভ্রর প্রতি একটা বাৎসল্য ভাব অনুভব করতে শুরু করেছিল তার নিজের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তার মিষ্টি মুখ, কুচকুচে কালো চুল, মায়াবী দুই চোখ সেই ছেলেবেলা থেকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে তাকে আলাদা সত্তা হিসেবে ভাবতেও পারত না সে। অভ্র ছিল আসলে শুভ্রর ছেলেবেলার সবচেয়ে নাজুক খেলনা। এই খেলনা ভেঙে যাওয়া তো অনেক পরের কথা, কারও হাত দেওয়ারও জো ছিল না। স্কুল থেকে ফিরে অভ্রকে কোলে তুলে বাড়ির আশেপাশে একটা চক্কর দিতে না পারলে তার শান্তি ছিল না। তার মুখে সবে যখন আধো আধো বুলি ফুটছিল সেই সময় ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিনে এনে টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করে রাখত শুভ্র। এখন আর টেপরেকর্ডারের চল নেই, কিন্তু ক্যাসেটটা যত্ন করে রেখে দিয়েছে সে। হয়তো চালালে এখনও অভ্রর সেই প্রথম বলতে পারা কথাগুলি শোনা যাবে।
সবসময় চোখে চোখে আগলে রাখার মধ্যেও অভ্র ছোটবেলায় কত অঘটন ঘটিয়ে ফেলত! একবার প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার সময় সে এক ভীষণ অনর্থ ঘটিয়ে ফেলেছিল। মা তাকে স্নান করাবে বলে চায়ের কেটলিতে জল গরম করে রেখেছিল। অভ্র তেল মেখে দুষ্টুমি করতে করতে কেটলির নলে মুখ দিয়ে অনেকটা জল টেনে ফেলেছিল। গলার ভেতরটা পুড়ে যাওয়ায় অভ্র কয়েকদিন ভাত খেতে পারেনি। শুধু লিকুইড ঠান্ডা খাবার দুধে সুজি রেঁধে দেওয়া হত। সেই সময় শুভ্র কোথা থেকে শুনে এসেছিল পাকা কলা খাওয়ালে খাদ্যনালীর পোড়া ক্ষতের উপশম হয়। সে নিজে হাতে কলা পেস্ট করে ভাইয়ের মুখে ধরত। সবার শুশ্রূষায় অভ্র স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে শুরু করলে তবে শুভ্রর গলা দিয়ে ভালভাবে খাবার নেমেছে।
ভাইকে আগলে রাখতে রাখতেই শুভ্র নিজে বড় হয়ে উঠেছে। তাই ভাইয়ের বড় হয়ে ওঠাটা কোনওদিনই খেয়াল করা হয়নি শুভ্রর। সেই অভ্র একদিন ফোনে কথা বলার সময় বলে দিল— তুমিই জোর গলায় বরাবর বলবে আর আমাকে তোমার সব কথা শুনে যেতে হবে? আমার কোনও ইচ্ছে অনিচ্ছে মতামত নেই!
সেই প্রথম শুভ্র বুঝেছিল ভাই বড় হয়ে উঠেছে। একজন আলাদা মানুষ হয়ে উঠেছে। বাবা মারা যাওয়ার সময় অভ্র উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছিল। পরীক্ষা শুরুর সাতদিন আগে সারারাত শ্মশানে কেটেছিল অভ্রর। গুরুদশার সাদা মার্কিন কাপড়েই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। শুভ্র রিকশায় পাশে বসিয়ে ভাইকে নিয়ে পরীক্ষার হলে গেছে। ঠায় বসে থেকেছে। এ-সময় বাবা বেঁচে থাকলেও অভ্রকে নিয়ে যেত। শুভ্র নির্বাক ভাইয়ের মনের কথা বুঝতে পারত। রিকশায় পাশে বসে তার দীর্ঘশ্বাসগুলো টের পেত। খুব খারাপ লাগত শুভ্রর। এত অল্প বয়সে মাথার উপর থেকে বটগাছের ছায়া উঠে গেল! শুভ্র সেই সময় অর্থাৎ তার সাতাশ বছর বয়সে বাবার জন্য দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলারও সাহস পায়নি। কেননা গোটা পরিবার তখন তার মুখ চেয়ে। সে ভাঙন অন্য দুজনের চোখে বন্যা এনে দেবে। নির্বাক মা ও ভাইয়ের মুখ চেয়ে হাসতে হয়েছে এবং শোককে আমল না দেওয়ার অভিনয় করতে হয়েছে। আদতে শুভ্ররও জগৎ জুড়ে সূর্যের আলোর মতো বাবাই ছিল একমাত্র অবলম্বন ও সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
পরীক্ষা শেষ হলে অভ্র যখন শুকনো মুখে বেড়িয়ে আসত হল থেকে তখন দূর থেকে দেখে শুভ্রর বুকটা টনটন করত। মাথাটা নিচের দিকে হেলিয়ে, যেন কত গভীর চিন্তায় মগ্ন। তার হাঁটার মধ্যে ঠিক বাবার মতো একটা নিয়মিত ছন্দ আছে। যেন বাবার কৈশোর হেঁটে আসছে। একইরকম হাঁটা। ছেলেকে নিতে আসা মানুষগুলো তাদের দেখে ‘ইসস্’ শব্দ করত অস্ফুটে। গুরুদশার একটি ছেলে মার্কিন কাপড় হাতে কুশাসন নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে বলেই নয়, সেই ছেলের প্রতি অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে আরেকটি গুরুদশাপ্রাপ্ত ছোকরা বয়সী ছেলে। ইসসটা হয়তো দুজনের কথা ভেবেই মুখ দিয়ে বেরোত।
শুভ্র বহুদিন দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখেনি তাকে। আজ মনে হচ্ছে অভ্র বহুদূর থেকে হেঁটে আসুক। একবার বাবাকে অনুভব করা যাবে। অভ্রও পাগলের মতো ভালবাসত বাবাকে। বাবার মৃত্যুর সদ্যপরবর্তী দিনগুলোতে আত্মমগ্ন অভ্রকে দেখে খুব কষ্ট হত। মনে হত সারাক্ষণ বাবার সঙ্গে যেন নিজের মনে কথা বলে চলেছে। একদিন ভুলবশত বাইরে থেকে বাবার মোবাইলে কলও করে ফেলে। ফোনটা ধরেছিল শুভ্র। হ্যালো বলতেই শুনেছিল অভ্রর গলা ‘বাবা!’, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিল— ওহ! ভুল করে ফেলেছি। সেদিন শুভ্র বুঝেছিল— বাবা ছাড়া অভ্র কত অসহায়! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয়— এই ছেলেকে বাবার অভাব বুঝতে দেওয়া যাবে না।
বাবার মৃত্যুর সময় শুভ্র কাঠবেকার। কিছু কিছু টিউশন করে মফস্বল শহরে। টিউশনের টাকা এবং মায়ের ফ্যামিলি পেনশনের টাকায় রেখেদেখে সংসার চলে যেত। বাহুল্য না করলে মফস্বল শহরে সংসার চালানো খুব কষ্টের নয়। কিন্তু অভ্রর জন্য মনকেমন করত সে-সময়। বাবা বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই অভ্র কিছু জেদ, কিছু আবদার করতই। কিন্তু অভ্র কিছুই চায় না। মাধ্যমিক দিয়েও তাকে ছেলেবেলার খেলনাগাড়ি সাজিয়ে থাকতে দেখেছে। দেখে দেখে শুভ্র ভেবেছে— এ ছেলে কবে বড় হবে!
যেদিন কলকাতার পিজি হাসপাতালে বাবা মারা গেলেন সেদিন হঠাৎ করে বদলে গেল শুভ্রর জগৎ। চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার। সংসার কী জিনিস সে জানত না। বাবার হোটেলে খেতে গ্র্যাজুয়েশন করার পরবর্তী দিনগুলোতে শুধুই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াত। সংসার যে পরিচালনা করতে হয় এই ধারণাটুকুই ছিল মাত্র কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল না। মাত্র সাতাশ বছর বয়সের ছেলের থাকেও না। সে জানত না পরিবারের কত টাকা আছে। কোথায় কোথায় সে-সব রাখা আছে। অপারেশন করার জন্য বাবা কিছু ক্যাশ হাতে দিয়েছিলেন। টাকাগুলো হাতে নিতে নিতে অনুভব করেছিল এ এক ভীষণ দায়িত্ব। যার টাকা তিনি অপারেশন টেবিলে শুয়ে থাকবেন। তিনি ভালমন্দ কোনও পরামর্শই দেওয়ার অবস্থায় থাকবেন না। ওই সময় হাসপাতাল থেকে যোগাযোগ করত। শুভ্র তখন ‘পেশেন্টপার্টি’। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাকেই নিতে হবে। বাড়িতে মা ও ছোটভাই অনেক আশা নিয়ে তার মুখ চেয়ে বসে থাকবে।
কিন্তু বেলুন সার্জারি করার ধকল নিতে পারলেন না অসিতবাবু। দুদিন আইসিসিইউ-এর বেডে ছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন নাকি আর ফিরবেন না। কোমায় থাকতে থাকতেই তাঁর আঙুল নড়ে উঠেছিল যখন শুভ্র শেষবারের মতো জীবিত বাবাকে দেখার সুযোগ পেয়েছিল। শুভ্র পরে অনুভব করেছিল বাবা হয়তো বলতে চেয়েছিলেন— সবাই থাকল, দেখিস।
এক ফোনেই বদলে গিয়েছিল তার ভাই ও মায়ের জগৎ। পরম নিশ্চিন্ততার স্নেহছায়া এক লহমায় কে যেন সরিয়ে নিল! এরপর সমস্তটুকুই ঊষর মরুভূমির গল্প। বাড়িতে ফোন করে খবরটা জানিয়েছিল শুভ্র। তার দুদিন আগে থেকেই বিদায়ের বাজনা বেজে গেছিল। বাবা সিরিয়াস, যে কোনও খবরের জন্য প্রস্তুত থাকো। মা বলেছিল— ঠিক ফিরবে। ঠাকুরকে ডাকছি। ফোনটা অভ্রই ধরেছিল। শুধু বলেছিল— অ্যাঁ!
তারপর পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছে শুনেছে অভ্র বাবার ডেডবডি আসার অপেক্ষায় শূন্যচোখে বারান্দায় বসেছিল। মাঝেমাঝে উঠে গিয়ে মাকে সামলেছে। কিন্তু চোখ থেকে একফোঁটা জল পড়তে দেয়নি। তার চোখের জলে মায়ের শোক আরও ভিজে উঠুক তা সম্ভবত সে চায়নি। মাঝরাতে শুভ্র ডেডবডি নিয়ে বাড়ি ফিরলে প্রথমেই ভাইয়ের কথা মনে হয়। অভ্র শান্ত হয়ে বাবার মরদেহের পা ছুঁয়ে বসেছিল। চোখ লাল হয়ে থাকলেও একফোঁটা জল ফেলেনি। শ্মশানের কাজ একটুও ভেঙে না পড়ে শেষ করেছে। গত কয়েকদিন আগে যে ভাইকে রেখে সে বাবাকে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিল, এ ভাই সে যেন নয়। একটা রোবট ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন নিশুতি রাতের শ্মশানভূমিতে। বাবার মৃতদেহ স্নান করাচ্ছে দাদার দেখাদেখি। ঘি, সাবান মাখাচ্ছে দাদার দেখাদেখি। পাঠশোলাতে আগুন নিয়ে মুখাগ্নি করছে দাদার দেখাদেখি। কিন্তু দাদার যেমন চোখ দিয়ে অবিরত জল ঝরছে তেমনটা ঘটছে না দাদার দেখাদেখি। রুদ্ধবাক একটা মূর্তি জানে না কী করতে হয়, প্রিয় দাদাকে শুধু নকল করে চলেছে।
কিছুদিনের মধ্যেই শুভ্র ধীরে ধীরে বুঝতে পারে অভ্র মনে মনে অনেক বড় হয়ে গেছে। পড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে হয় না। চোয়াল শক্ত করে উচ্চমাধ্যমিক দিতে গেল তার সঙ্গে।
এসবের মধ্যেই দুর্গাপূজা আসে। অভ্র বলে, দাদা চলো মাকে নিয়ে প্রতিমা দেখে আসি।
শুভ্র কোনওদিন প্রতিমা দেখেনি। বুঝতে পারে অভ্র আসলে মায়ের একাকিত্ব কমাতে চাইছে। মুগ্ধ হয়ে দেখে ভাইকে। নিজের মধ্যে থাকা ছেলেটা কত সূক্ষ্মভাবে ভাবতেও শিখে গেছে। পুজোর দিনগুলো বাড়িতেই খুটখুট করে কাটাল। বাবার মৃত্যুর পর প্রথম পুজো। শুভ্র অভ্র এবং তাদের মায়ের সেই প্রথমবার জামাকাপড় হল না। চারিদিক থেকে কতরকম গান ভেসে আসছে কিন্তু সে-সব করুণ মনে হয়েছিল তাদের কাছে। শুভ্রর মনে হয়েছিল ভাইকে, মাকে হালকা করতে কিছু অনর্গল কথা বলে চলে। পারেনি। সমস্ত শক্তি এক করেও পারেনি। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, সবচেয়ে নির্ভরতার মানুষটি সেই প্রথম পুজোর দিনগুলোতে তাদের সঙ্গে ছিল না। অভ্র এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যাতায়াতের পথে বাবার চন্দন পরানো কালার ছবিটার দিকে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত। শুভ্র সে-সব দেখেও না-দেখার ভান করে থাকত। কেননা অভ্র দেখে ফেললে অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে।
একদিন অভ্র প্রথম আবদার করল— পরীক্ষার পর তিনমাস বাড়িতেই তো বসে, একটা পিসি হলে ভাল হয়। শুভ্র অবাক হয়। কেননা অভ্রর ম্যাচিউরিটি আসেনি। পড়াশোনাতেও তেমন ভাল নয়। এই ছেলে কম্পিউটার দিয়ে কী করবে! সে তো অনেক জ্ঞানগম্মির ব্যাপার। তবুও অভ্রর নামে বাবার করে যাওয়া এলআইসির মানিব্যাক পলিসির টাকায় তাকে কম্পিউটার কিনে দেয়। বহুদিন পর সে মুখ ফুটে কিছু চেয়েছে। এর মানে সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
প্রথম প্রথম শুভ্র দেখেছে ভাই নতুন কম্পিউটার নিয়ে মেতে আছে। শুভ্রর কেমন নিজেকে বাবা বাবা মনে হয়। ভাইকে খুশি রাখতে পারার মধ্যে নিজের মধ্যে বাবার ছায়া দেখতে পায়। বাবাও তাদের জন্য কিছু করে দূর থেকে তৃপ্তি অনুভব করতেন। নতুন বাড়ি হওয়ার পর হাতটান। এ-বাড়ি ও-বাড়িতে মায়ের দুধটা, মাছটা ফ্রিজে রাখতে যাওয়া দেখতে দেখতে এবং তাদের দুই ভাইয়ের বায়নায় একটা লাল ফ্রিজ কিনে এনেছিলেন। নতুন ফ্রিজে অভ্রর আইসক্রিম তৈরি করে চেটে চেটে খাওয়া দেখে বাবা সোফায় বসে বসে তৃপ্তি পেতেন। রিটায়ারমেন্টের পর জায়গা কিনে বাড়ি করতে নিঃশেষ হয়ে গিয়েও ছেলেদের আবদার রাখতে পেরে তাঁকে যতটা খুশি হতে দেখা যেত শুভ্র ততটাই খুশি হয়েছিল অভ্রকে কম্পিউটার কিনে দিয়ে।
অনভিজ্ঞ অনভ্যস্ত হাতে সংসার সামলাতে নেমে নিজেকে সফল মনে হয়। পরিবারের মানুষগুলোকে খুশিতে রাখার মতো সাফল্য আর কী আছে একজন সদ্য-তরুণ সংসার পরিচালকের!
আজকে তিলে তিলে সাবধানতায় গড়ে তোলা অভ্র নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য কৃতিত্ব দাবি করে না শুভ্র। কেননা সে বিশ্বাস করে কেউ কাউকে তৈরি করতে পারে না। পরিবেশের প্রভাবে তৈরি হওয়ার খিদে জন্ম নেয়। বাবা মারা যাওয়ার পর অভ্র নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ অনুভব করেছিল। মাথার উপর বাবা নেই— এই নিরাপত্তার অভাবই তাকে ভিতর ভিতর আমূল বদলে দিয়েছিল। তার বাচ্চামোগুলো দ্রুত উবে গিয়েছিল। চিন্তাভাবনা পরিণত হয়ে উঠেছিল।
পলিটেকনিক নিয়ে অনেকেই পড়াশোনা করে। কিন্তু সেই শিক্ষাটাকেই পেশায় পরিণত করার জেদ ছিল। তাই অন্য কোনও লাইনে উঁকিঝুঁকি না দিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিপ্লোমাকেই সম্বল করে মাটি কামড়ে পড়েছিল জীবনযুদ্ধে।
এই মফস্বল শহরের বহু ছেলে ডিপ্লোমা করে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে এসে নির্ভেজাল বেকারত্ব মেনে নেয়। অভ্র সেসব না করে সামান্য টাকায় বেসরকারি ফার্মে চাকরিতে জয়েন করে। তারপর কোম্পানি পরিবর্তন করতে করতে, লাঠি ঝাঁটা খেতে খেতে তাকে আজ সফল বলা চলে। ভাল মাইনে পায়। কলকাতা শহরে এতটুকু বয়সে নিজের পয়সায় এবং কিছুটা লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে।
সঙ্ঘাতটা লাগে এখান থেকেই। শুভ্রর দুই ছেলে। অভ্র সদ্যবিবাহিত। তার এখনও সন্তান হয়নি। শুভ্র চিন্তা করেছে— অভ্রর যা প্রফেশন, তাতে তার আর মফস্বলে ফেরার কোনও চান্স নেই। এই অবস্থায় পৈতৃক একতলা বাড়িটার ছাদে লোন নিয়ে সে দোতলা করেছে। এখন জায়গাজমির যা দাম তাতে নতুন করে জমি কিনে তার মতো সরকারি অফিসের করণিকের পক্ষে দুই ছেলের জন্য দুটো স্থাবর করা অসম্ভব। হাউস বিল্ডিং লোনটা শোধ হতেই ষাট বছর পার হয়ে যাবে। তাই অভ্র এলে একদিন তাদের ছাদবাগানে ঘুরতে ঘুরতে বলে— তোকে তো বাবার করা একতলাটা দিয়ে দিয়েছি। এখানে তোকে কিছুই করতে হয়নি। তোর তো বালুরঘাটের বাড়ি আর প্রয়োজন নেই। তুই তোর অংশটা আমাকে বিক্রি করে দে। বাজারমূল্য দেব। সেই টাকা থেকে তোর ফ্ল্যাটের লোনটাও শোধ করতে পারবি।
অভ্রর কাছে প্রস্তাবটা খারাপ মনে হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে সে বলেছিল— ঠিক আছে। ভেবে দেখি।
শুভ্র জীবনের দায়িত্বগুলোকে সঠিক হিসেবে সমাধান করতে পারার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে ভেবে অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিল। দাদা হিসেবেও কর্তব্যের ত্রুটি করেনি; বাবা হিসেবেও সঠিক দায়িত্ব পালন করতে চলেছে। দুই ছেলের জন্য দুই তলা বন্দোবস্ত করে রাখতে পারছে। মধ্যবিত্ত জীবনে এর বেশি আর কে চায়? বছরে-দু বছরে সে-ও কলকাতায় যাবে, অভ্রও আসবে তার দেশের বাড়িতে। কাগজকলমে নাম যাই থাক না কেন, আসলে তো কলকাতার ফ্ল্যাট বা বালুরঘাটের বাড়ি— তা তো দুই ভাইয়েরই।
কলকাতায় পড়াশোনা করার সময় থেকেই অভ্র কম আসত। মেরেকেটে বছরে দুবার, তাও মাত্র কয়েকদিনের জন্য। শুভ্র অনুভব করেছে অভ্রর মধ্যে যে-কোনও কিছুর প্রতি টান এবং আবেগ কম। সেটা তার ছোটবেলা থেকেই। বাড়িতে কাকাতো পিসতুতো মামাতো ভাইবোনেরা এলেও কোনওদিন খুব একটা মাতামাতি করতে দেখা যায়নি। কলকাতা থেকে দু-দিনের জন্য এলেও বাড়িতে বসে গল্প করতে বা সময় কাটাতেও দেখেনি শুভ্র। বরং শুভ্রর মধ্যে আজীবন এক সংসারী মন বাস করেছে। নতুন বাড়ি হওয়ার সময় বাবার সঙ্গে সর্বসময় দাঁড়িয়ে থেকে তিলেতিলে বাড়িটা তৈরি করেছিল। অভ্র তখন খুবই ছোট। স্কুল থেকে ফিরে নতুন বাড়ি দেখতে আসতে তাকে খুব কম দেখা যেত। তারপর বাড়ির আনাচে-কানাচে এটা-ওটা গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তোলাতেও শুভ্র একাই ছিল। অভ্রর ওসব নিয়ে কোনওদিনই মাথাব্যথা ছিল না। যা হচ্ছে হোক সে যেন নিজের এক মানসিক জগতেই মশগুল থাকত।
বর্ষাকাল শেষ হয়ে শরতের আকাশ যখন তাদের বাড়িটার উপর ছেয়েছিল, একদিন শুভ্রর খুব মন খারাপ হয়। বাবার তৈরি বাড়িটা বর্ষার জল খেয়ে শ্যাওলা নিয়েছে প্রচুর। রং থাকলে এটা হত না। শুভ্র ফোন করে— অভ্র বাড়িটা একবার রং করলে হয় না! একবার আয়। একটু রিপেয়ার করে রং করি।
অভ্র কথা কানেই তোলে না— ও এখন দরকার নেই। পরে কোরো।
শুভ্র হতাশ হয়। অভ্র এখন ভালই উপার্জন করছে। ফ্ল্যাট কিনেছে। নিত্যনতুন জিনিস দিয়ে সাজাচ্ছে। সেসব ছবি পাঠাচ্ছে। শুভ্র আনন্দ পায়। ভাইয়ের সাফল্যই তার সাফল্য। সে মনে মনে ভেবেছে— ও আরও বড় হোক। আজ যদি অভ্র নিজের পায়ে না দাঁড়াতে পারত, বেকার হয়ে ভ্যাগাবন্ডের মতো ঘুরত, সেটা তারই ভাল লাগত না। সেটা তার ব্যর্থতাই হত। কিন্তু পৈতৃক বাড়ির অংশীদার সে। তাকেও রক্ষণাবেক্ষণে যথেষ্ট আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকাল শুভ্র বোঝে ভাইয়ের উপর অধিকারটা কমে আসছে। ছোটবেলায় কত শাসন করেছে। গায়েও হাত তুলেছে। আজ একটু জোরগলায় কিছু বললেই শুনতে হয়— তুমি একাই বলবে! আমি শুধু শুনে যাব!
শুভ্র নিজেকে বোঝায় চিরকাল তো ভাই বা সন্তান ছোট থাকে না! বড়দের কাছে ছোট থাকলেও তারা বড়ই হয়ে যায়। তাদের আত্মসম্মান জন্মায়। তখন পুরনো স্বরে কথা বলা যায় না। আজ রাহুল-রুবাইকে যেভাবে শাসন করতে পারছে, ধমকাতে পারছে, আর কিছুদিন বাদে পারবে না। তখন তাদের সম্মান আহত হবে।
শুভ্র চিরকালের মেজাজি। আগে ছেলেবেলায় অভ্রকে পড়াতে বসলে কত মেরেছে। যখন ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরতে রাত করলে শাসন করতে করতে গালে এক চড় মারে। অভ্র তীব্রভাবে চড় মারার প্রতিবাদ করে বলে— মুখে যা খুশি বলো, তাই বলে চড় মারবে?
শুভ্র সেদিনই বোঝে অভ্র আর ছোট নেই। তার সম্মানবোধ জন্মে গেছে। তারপর থেকে শাসন তর্জন-গর্জনেই সীমাবদ্ধ ছিল। তারপর কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন সে বোঝে, বিবাহিত উপার্জনক্ষম ভাই জোর গলায় কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেয়। এখন কথা হবে সমানে সমানে।
মনখারাপ হলে শুভ্র মুখ গুঁজে ভেবেছে তার দেখা–শোনা–বোঝাটাই এক জায়গায় আটকে থেকে গেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলাতে পারছে না। সম্পর্কের পাটিগণিত বদলে গিয়ে ক্যালকুলাসে ঢুকে পড়েছে এটা বুঝতে সে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। শুধু স্নেহ দিয়ে নয়, সম্পর্ক বজায় রাখতে গেলে মর্যাদাও দিতে হবে এগিয়ে চলা সময়কে।
ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতে শুভ্র দোটানায় পড়ে যায়। স্বাতী বলছে, তাওয়া গরম থাকতেই রুটি ভাজতে হয়। তুমি তো লোনে আছ, এই মুহূর্তে অভ্রর কাছ থেকে টাকা দিয়ে ওর অংশটাও কিনে নেওয়া সম্ভব নয়। মা বলছে অভ্র দিতে রাজি হলে বেশ কিছু টাকা দেবে।
স্বাতীর কথাও ফেলতে পারছে না শুভ্র। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোকে অনির্দিষ্টকালের উদ্দেশ্যে ফেলে রাখা যায় না। বাড়িটায় একাধিপত্য হলে দুই ছেলের ভবিষ্যতের আস্তানা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তাছাড়া অনাদরে থাকা বাড়িটার দেখভালও হবে। ছোট বলেই হয়তো, আজ পর্যন্ত অভ্র বাড়ির সংস্কার বা রেনোভেশন নিয়ে মাথা ঘামায়নি। অভ্র যখন পলিটেকনিক পড়তে গেল তার পর-পর শুভ্র চাকরি পেল। কয়েক মাসের বেতন থেকে টাকা জমিয়ে বাবার তৈরি সাদামাটা বাথরুমটাকে আধুনিক করে। নিজের বিয়ের আগে বাড়িটা পাথর লাগিয়ে রং করে বদলে দেয়। সেসব এখন তো অভ্রর। আসলে বাবার তৈরি বাড়িটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখার মধ্যে দিয়েই বাবার পূরণ না হওয়া ইচ্ছেগুলিকেই বাস্তবায়িত করতে চেয়েছে সে।
কথাটা কীভাবে বলবে ভাবতে ভাবতে ঘরময় অশান্ত পায়চারি করে। দাদার কাছে সহজে দাবি পেশ করা যায়। ভাই তো! সব কথা সহজে বলে ফেলা যায় না, যদি না সে নিজে বিষয়টা নিয়ে ভাবে। বড়দের বাধ্যবাধকতা থাকেই, সেই কারণে বাড়ির অংশ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতে বারংবার দ্বিধায় আক্রান্ত হয়।
একটা সময় পর কড়া সিদ্ধান্ত নেয় শুভ্র। সেইমতো অভ্রকে ফোনে ধরে।
—কী করছিস? খাওয়াদাওয়া হয়েছে?
—হ্যাঁ। বলো।
—বলছিলাম যে তোর সঙ্গে বাড়ির ব্যাপারে একটু আলোচনা করতাম। ফাঁকা আছিস?
—হ্যাঁ। ফাঁকাই তো! বলো।
—তোর হাউস বিল্ডিং লোনটা কত অ্যামাউন্টের?
—সাড়ে পঁচিশ। কেন?
—ইএমআই কত দিতে হচ্ছে?
—দশ হাজার।
—অসুবিধে হচ্ছে না?
—না। এখন তো সবে শুরু হল। অসুবিধা হচ্ছে না।
—না। বলছিলাম যে তোর তো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি। মিছিমিছি লোনের চাপ মাথায় নিয়ে ঘোরার কী আছে? তার চেয়ে বরং বাড়ির অংশটা ছেড়ে দিলে আমি যে টাকা দিতাম তাতে বেশ কিছুটা শোধ হয়ে থাকত।
ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘ নৈঃশব্দ্যে সময় কাটতে থাকে।
—হ্যালো! শুনছিস?
—হ্যাঁ। শুনছি তো।
অভ্রর গলাটা হুবহু বাবার গলার মতো শুনতে লাগে। অভ্রও বলেছে ফোনে নাকি শুভ্রর গলাও বাবারই মতো। ফোনে দুজন দুজনের কাছে বাবার মতো হয়ে যায়।
—তোর মতামত কী?
—আমি তো আগেই বলেছি। আমি পৈতৃক বাড়ির অংশ ছাড়ব না। কষ্ট করে ফ্ল্যাটের ইএমআই ঠিক মাসে মাসে দিয়ে যাব। কিন্তু ও-বাড়িতেই তো আমার শৈশব ছড়িয়ে আছে। কত স্মৃতি! নতুন ল্যান্ডফোন আসা, ফুটবল বিশ্বকাপের আগে প্রথম রঙিন টিভি। একটা ফুটবলের মতো দেখতে টেবিলঘড়ি ফ্রি দিয়েছিল। সেটা টিভির উপরেই রাখা থাকত। তুমি রাত জেগে জেগে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে। বাবাও। বাবা ব্রাজিল তুমি আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা গোল খেলে টেনশনে পায়চারি দিতে। মেসি তখনও পিকচারে আসেইনি। সেবার হিট ছিল স্যাভিওলা বাতিস্তুতা। ক্যানিজিয়া রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বসেই লাল কার্ড দেখে নিয়েছিল। সেই নিয়ে বাবা তোমাকে ঠুকলে তুমি রেগে যেতে।
এক নিঃশ্বাসে কথা বলে চলছিল অভ্র। শুভ্রর শুনতে বেশ লাগছিল। অনেক পুরনো ঘটনার কোলাজ উঠে আসছে অভ্রর কথায়। একেকটা ঘটনা যেন দৃশ্যের মতো সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। অভ্র বলে চলে, তারপর বাড়িতে আমার বহুদিনের বায়নার তুমি একটা ছোট্ট অ্যাকুয়ারিয়াম কিনে এনেছিলে। মাঝেমাঝেই নতুন মাছ কিনে এনে আমরা মাতামাতি করতাম। কাউকে না বলে একা একা আত্রেয়ী নদী থেকে জলের নিচের গাছ আনতে চলে গিয়েছিলাম বলে তুমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলে। বলেছিলে অ্যাকুয়ারিয়াম বেঁচে দেবে। আমি সত্যিই ভেবে মনের দুঃখে দুপুরবেলায় ভাত খাইনি। সন্ধ্যায় তুমি আমার প্রিয় মাছ রেডটেল শার্ক নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিলে। বাবা টাকাপয়সা নষ্ট করে মাছ কেনা পছন্দ করত না কিন্তু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দিব্বি অ্যাকুয়ারিয়ামের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। আজও আমি অনুভব করি বাবা এসে মাঝেমাঝেই অ্যাকুয়ারিয়ামের সামনে দাঁড়ায়।
শুভ্র তাৎক্ষণিকভাবে ভুলেই যায় ভাইকে সে পৈতৃক অংশ ছেড়ে দিতে ফোন করেছিল। সেও অভ্রর সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মৃতির উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে— দীপান্বিতায় সারাবাড়ি টুনিবাল্বে সাজাতিস তুই। এখন রাহুল–রুবাই সাজানোর জন্য জেদ করে। আমার সাজাতে বিরক্ত লাগে। ওদের বলি কাকাই এলে পরেরবার সাজাব। অনেক ক-বছর তুই কালিপুজোয় বাড়িতে আসিস না।
অভ্র বলে, হ্যাঁ বেশ কয়েকবছর কালিপুজোতে বাড়িতে যাওয়া হয় না। এবার যেতেই হবে।
একটু থেমে ধরা গলায় বলে, এত সব কিছু জড়িয়ে আছে। তা থেকে নিজেকে আলাদা করি কীভাবে? ওই বাড়ির সঙ্গে সমস্ত সম্বন্ধ চুকিয়ে দিলে আমিই কি আনন্দে থাকতে পারব?
শুভ্র হতাশ হয়। জীবনের সহজ সমাধান হল না। অভ্রর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু তার সবেধন নীলমনি এই বাড়িটা। সেটার নিচতলা বিনেপয়সায় ভাইকে দিয়ে দিয়েছে। উপরতলায় লোন নিয়ে বাড়ি করে ফেঁসে আছে। তার সেই ক্ষমতাও নেই যে আলাদাভাবে কিছু করে। আবার অভ্রর কথাগুলোও সত্যি। শৈশবস্মৃতি থেকে ভাইকে বিচ্ছিন্ন করার অধিকার তার নেই। স্বেচ্ছায় সে যদি ছেড়ে দিত, সেটা আলাদা ব্যাপার। জোর তো করতে পারে না। অভ্রর সঙ্গে কথা বললেই সে দুর্বল হয়ে যায়। মনে হয় বাবার সঙ্গে কথা বলছে। দূর থেকে অভ্রর হেঁটে আসা দেখলে মনে হয় বাবা হেঁটে আসছে। অভ্র বসে থাকলে পেছন থেকে বাবা বলে মনে হয়। বাবা যেমন নিজের হাতে তৈরি বাড়িটাকে জীবন দিয়ে ভালবাসত, অভ্রর কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে যেন বাবার সঙ্গেই কথা বলছে। বাবাকে কি এর বেশি কিছু বলা যায়! সেটা অমানবিক। অভদ্রতা।
শুভ্র আচ্ছা বলে ফোন কাটে। নিস্তব্ধতার প্রাচীরে হেলান দিয়ে নিজের সঙ্গে কত কথা হয়! বড়ভাই নিজেও তো বাবা। বাবাহীন দুনিয়ায় ছোটভাইয়ের কাছে বড়দাদাই তো একটা ভরসার বিরাট জায়গা। বাবার মতো। বাবারা কত কিছু সহ্য করে মুখ বুজে। বাবাদের দেনাপাওনার হিসেব করলে চলে না।