
প্রবুদ্ধ বাগচী
সে অনেককাল আগের কথা। ভিক্টোরিয়ার পরী তখন কী এক কারণে ঘোরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই পরীকে কে সারিয়ে তুলবেন, তা নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে গেল। ব্যাপারটা গড়াল আদালতে। দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়— আদালতের আর সময় হয় না। অথচ দিনে দিনে মামলার পাহাড় কলকাতার ধাপার থেকেও উঁচু হয়ে ওঠে।
এমন সময় ভিক্টোরিয়ার পরীকে নাচানোর শুনানি হল। সেই সময় আমাদের ‘দুর্মুখ’ অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র লিখেছিলেন, হাজার হাজার গরিব মানুষের আর্জি আদালতের ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে, বেআইনি গ্রেপ্তারের জামিনের মামলায় নিরপরাধরা জেলে পচছেন, আর আদালতের বিচারকদের সব মামলা ছেড়ে পরীর নাচের মামলাই শুনতে হল?
কথাটা একেবারেই ভুল নয়। আদালতে নানা কারণে শয়ে শয়ে আবেদন জমা পড়ে, এবং প্রাথমিকভাবে তার গুরুত্ব বিবেচনা করেই তা গ্রহণ করা হয়। তাই এই প্রাথমিক নির্বাচন একরকম গুরুত্বের ক্রম নির্ধারণ বলেই ধরে নেওয়া যায়। সেদিক দিয়ে জামিনের মামলা বা আরও জরুরি বিষয় ছেড়ে আদালত যদি ভিন্ন কোনও বিষয়কে নিজেদের বিবেচনায় আনেন, সবার কাছে তা সুবিচার বলে নাও মনে হতে পারে। দ্বিমত হওয়ার অধিকার নাগরিক অধিকারের বাইরে নয়।
আমাদের বিচারব্যবস্থায় হাইকোর্ট মূলত সেই সংস্থা, যারা প্রত্যক্ষভাবে সরকারি ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলতে পারে এবং তার নিরসনে এগিয়ে আসতে পারে। যদিও আদালতের নিজস্ব কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই যার মাধ্যমে তারা তাদের নির্দেশ কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে পারে। সরকারি প্রশাসনের নাটবল্টু দিয়েই তাদের ইঞ্জিন চালাতে হয়। আমরা বড়াই করে বলি বটে, আদালতের কোপে পড়লে সমূহ বিপদ; কিন্তু এই ইঞ্জিন যদি সত্যিই আদালতের হুকুমে না চলে, তাহলে কাউকে গিয়ে সেই আদালতের কানের কাছে আবার বলতে হয়— হুজুর, আপনার নির্দেশ মানা হচ্ছে না। কারণ, আদালতের কোনও নিজস্ব চোখ-কান কার্যত নেই, কিছু বাছাই ব্যতিক্রম ছাড়া। আর আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহু বহু ঘটনা এ দেশে ঘটে, ঘটতেই থাকে। খুব জরুরি কোনও জনস্বার্থবাহী মামলাতেও সরকারি প্রশাসন আদালতের নির্দেশ মানেনি— এমন উদাহরণ প্রচুর। এই কারণে খুব উচ্চস্তরের প্রশাসকের শাস্তি হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত কদাচিৎ— প্রায় নেই। বড়জোর কোনও সরকারি আমলাকে কাঠগড়ায় তুলে বিচারপতি একটু কড়া ভাষায় বকাঝকা করেন, আর তিনি জোড়হাত করে বলেন— নাকে কানে খত দিয়ে কবুল করছি, এমন আর কখনও হবে না। আসলে এগুলো যাকে বলে ‘আইওয়াশ’— বিচারপতিরাও এটা জানেন না, এমন নয়।
এখন এই যে মানা-না মানার খেলা— এর পেছনে কি কোনও রাজনৈতিক বৃহত্তর বোঝাপড়া লুকিয়ে থাকে? এই বিষয়টা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে আমাদের একটা সময় একটু বাধো-বাধো ঠেকত— যেমন আগে নতুন বউয়ের লাগত ভাসুর বা শ্বশুরের সামনে ঘোমটা খুলে দাঁড়াতে। ইদানিং এই প্রশ্নে কিছুটা সংস্কারমুক্তি ঘটেছে।
মাত্র কিছুকাল আগের সাড়া-জাগানো আরজিকর খুন ও ধর্ষণ মামলায় যখন দোষীকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দেওয়া হল, তখন রাজ্যের প্রধান বললেন— আমাদের হাতে কেসটা দিলে আমরা ফাঁসি করিয়ে দিতাম!
‘আমাদের হাতে কেসটা দেওয়া’ মানে কী? ‘আমরা ফাঁসি করিয়ে দিতাম’ মানেই বা কী? কবিতার লাইনের মতো এইসব বক্তব্যের ব্যঞ্জনা প্রায় রোমাঞ্চকর। ইশারা কাফি হ্যায়।
অবশ্য ইশারার বাইরে এসে হাতে-কলমে কাজটা করে দেখিয়েছে গুজরাতের ভাইব্র্যান্ট সরকার। বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলার প্রমাণিত দোষীদের ওপর থেকে যাবতীয় ‘পাপের বোঝা’ স্খালন করে, তাঁদের ফুলে-মালায় বরণ করে, নতুন জীবনে স্থাপিত করে দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেভাবে ধর্মসংস্থাপনে যুগে যুগে প্রকাশিত হন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।
খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধের মামলা কোনওদিন তামাদি হয় না বলেই জানি। তাই ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’র সরকার সবরমতীর জলে সব ধুয়ে ফেলতে চাইলেও আদালতের অনুমোদন ছাড়া তা কি আদৌ সম্ভব হত?
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে শ্রীমতী গান্ধির গদি যখন হেলে পড়ল, তখন তিনি বিচারপতির ওপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ‘ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা’— এই প্রখর দীপ্তিতে যে এমন অস্তরবির আলো এসে পড়বে, তা ভদ্রমহিলা ভাবতেই পারেননি। এই রায়কে কোনওভাবে পাল্টে ফেলা যায় কি না, সেই চেষ্টাও একদম হয়নি— এমন নয়। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এরপর বিচারব্যবস্থার প্রতি তাঁর ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছায়— পারলে বিচারপতিদের হাতে গলা কাটতেই পারতেন!
কার্যত সংবিধানের বিয়াল্লিশতম সংশোধনের মাধ্যমে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন— রাষ্ট্রের মূল পরিচালনায় সংসদই শেষ কথা বলবে। আদালতকে নামিয়ে আনা হল দ্বিতীয় তলে। ‘কমিটেড জুডিশিয়ারি’র ধারণাটা শুরু হয় এই সময়কাল থেকেই— যেখানে সরকারের সুনজরে না থাকলে বিচারপতিরা পোস্টিং বা প্রোমোশনের সুবিধে পাবেন না।
অবশ্য সাতের দশকের একেবারে শেষে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি মথুরাদেবী ধর্ষণ মামলায় এমন এক কুৎসিত রায় দেন, যা আদালতের সংবেদনশীলতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।
সকলেই জানেন, মহারাষ্ট্রের এক গ্রামের গৃহপরিচারিকা মথুরা— যার বয়স তখন ষোলোরও নিচে— তাঁকে তাঁর নিয়োগকর্তার ছেলে জোর করে বিয়ে করে। এরপর মথুরার দাদা স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে, কিশোরীটিকে থানায় আটকে রেখে দুজন কনস্টেবল তাঁকে থানার মধ্যেই ধর্ষণ করে— যাদের একজন ছিল মদ্যপ।
স্থানীয় আদালত একে বলপূর্বক যৌন অত্যাচার বলে স্বীকৃতি দেয়নি। মুম্বই হাইকোর্ট এই রায় খারিজ করে ওই দুই কনস্টেবলকে সাজা দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেয়— যেহেতু ওই কিশোরী বিবাহিতা ছিলেন, তাই যৌন মিলনে তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল, ফলে থানা গারদে তাঁর ওপর যা ঘটেছে, তাতে তাঁর সম্মতি ছিল বলেই ধরে নেওয়া হবে। এবং তাঁর সক্রিয় প্রতিরোধের কোনও তথ্যপ্রমাণ যেহেতু নেই, তাই এটিকে ধর্ষণ বলা যাবে না।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কী রুচি!
এই রায়ের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পরে সংসদ ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করে, যার পেছনে ছিল আদালতের এই কদর্যতা।
তবে বিচারপতির সামলা পরে যাঁরা আদালতে বসেন, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় মাঝে মাঝেই প্রকট হয়ে ওঠে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ অভিজিৎ গাঙ্গুলি হলেও, ইতিপূর্বে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ্মা খাস্তগির কলকাতা পুরসভায় কংগ্রেস দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছিলেন। পরিবেশ আদালতের বিচারপতি গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় সল্টলেকে জমি চেয়েছিলেন, এমন কথাও শোনা গিয়েছিল। তবে উত্তর-২০১৪ আমলে এই পরিস্থিতির এক গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার রায়।
কয়েক দশক ধরে চলা বিতর্কিত বিষয়টিকে যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ম্যানেজ করেছেন, তা নজিরবিহীন। রায়ে বলা হয়েছিল, মসজিদ ভাঙা বেআইনি, কিন্তু রাম মন্দির সেখানে তৈরি করতে বাধা নেই, এবং যাবতীয় সরকারি প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রামের পাশেপাশে এক বিচারপতিও রাজ্যসভায় আসন পেলেন।
কার্যত, এর পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও আঞ্চলিক হাইকোর্টগুলিতে একটা বার্তা চলে গেল। সরকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের উপস্থিতি চায় না। বিচারপতি নিয়োগেও রাজনৈতিক খবরদারি থাকবে, এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁরা কিছু বিনিময়মূল্য পাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। তবে সেটা তোয়ালে মোড়া টাকা নাও হতে পারে। আর নগদবিদেয় হলেও, বিচারপতির ঠাকুরঘরে খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে টাকার তোড়া। অতীতে কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সুখরাম বা সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি এবং তাঁর বান্ধবীর ফ্ল্যাটে যেমন পাওয়া গিয়েছে।
এর আসলে কিছু অনিবার্য প্রতিক্রিয়া আছে। উপনিবেশের আমলেও ব্রিটিশ নিয়োজিত বিচারপতিরা ধোয়া তুলসিপাতা ছিলেন না। সুপ্রিম কোর্টের কুখ্যাত বিচারপতি এলাইজা ইম্পের নাম ইতিহাসে কালো দাগে রঞ্জিত— মহারাজা নন্দকুমারকে বিচারের প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়ার কারণে। কিংসফোর্ড, ডগলাস— এই নামগুলি শুনলেই একসময় বাংলার বিপ্লবীদের হাত বোমা ছোড়ার জন্য নিশপিশ করত।
কিন্তু স্বাধীন দেশের যা গর্বিত অর্জন ছিল— সেই বিচারব্যবস্থার জালে-উপজালে আজ নানা সংশয়ের জ্যামিতি। চাঁদির জোর বাড়লে এ-ই স্বাভাবিক। সব কিছু যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে বিচারের রায়ই বা কেন ব্রীড়াবনত নববধূ হয়ে থাকবে?
অনেকে পুরনো প্যাঁচাল পেরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমিতাভ লালার নাম টেনে এনে তৎকালীন শাসক বামপন্থীদের সমালোচনা করেন, কারণ তাঁরা বিচারপতির নামে স্লোগান তুলে দলীয় মিছিল করেছিলেন। এই যুক্তিতে কিন্তু বিশেষ সার নেই। রাজনৈতিক দর্শনের বিচারে কমিউনিস্টরা চালু বিচারব্যবস্থা মানেন কি না, সেটা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু কলকাতা শহরের রাজপথে রাজনৈতিক মিছিল, সভা-সমাবেশ করা যাবে না, বনধ ডাকা যাবে না— এটা কোনও ক্ষেত্রেই সাংবিধানিক রায় হতে পারে না।
শোনা যায়, “বনধ অসাংবিধানিক”— এই রায় একদা সুপ্রিম কোর্টও দিয়েছেন। কিন্তু এই রায় কি আদৌ যথার্থ ছিল? নাকি ব্যক্তি বিচারপতি বা বিচারপতিদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক ভাবনা এখানে প্রতিফলিত হয়েছে?
মুশকিল হয়, যখন এই আর্থিক বিনিময়ের ইঙ্গিতের বাইরেও বিচারপতিরা বিশেষ রাজনৈতিক অভিসন্ধি প্রায় প্রকাশ্য করে দেন। কেউ কেউ অভিযোগ করতেই পারেন— মাত্র বছরখানেক আগেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে অভিজিত গাঙ্গুলির অবস্থানের কথা। হ্যাঁ, সেই সময় তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যের শাসক দল প্রশ্ন তোলে, তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকারও হতে হয়। কিন্তু অচিরেই তিনি ভোল পাল্টে সেই অভিযোগেরই প্রামাণ্যতা দিয়েছেন।
মনে পড়তে পারে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে কেন্দ্রের শাসক দল নানা অছিলায় রাজ্যের জয়ী শাসকের ওপর খড়্গহস্ত হয় এবং পুরনো অভিযোগ তুলে কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে গ্রেপ্তার করায়। মধ্যরাতে কোর্ট বসিয়ে জামিনের শুনানি হয়, এবং নানা অজুহাতে বারবার তাঁদের জামিন নামঞ্জুর হতে থাকে।
সেই সময়ে কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেল এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে খুব একটা আইনের অনুগত সেবক বলে মনে হয়নি। পরে ওই প্রধান বিচারপতির (এখন তিনি আর নেই) ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে একান্ত আলাপে জানা গিয়েছিল— ভদ্রলোক তাঁর অধীনস্থ সমস্ত কর্মীদের সঙ্গেই খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। তবে সেটা অবশ্যই ভিন্ন প্রসঙ্গ।
গত বছর তিলোত্তমা-বিচার মামলা নিয়েও দেশের প্রধান বিচারপতি যা করেছেন, তা খুব স্বচ্ছ নয়। হাইকোর্ট থেকে নিজেরা মামলাটি গ্রহণ করে (সুয়োমোটো), যেভাবে বিচারের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন— একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, কোন স্বার্থকে তাঁরা কার্যত সিদ্ধ করলেন। মামলাটিকে গভীর, দীর্ঘস্থায়ী এক জটিলতায় ডুবিয়ে দেওয়ার পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
আবার যে সুপ্রিম কোর্ট নানাভাবে বলে এসেছে, জামিন পাওয়া নাগরিকের অধিকার— তাঁরাই অশীতিপর স্ট্যান স্বামীর জামিনের মামলা বছরের পর বছর শুনবারই সময় পায়নি। সদ্য-কারামুক্ত জিএন সাইবাবার ক্ষেত্রেও দেখা গেল একই ঘটনা।
অথচ বিগত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ইলেক্টোরাল বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে তারা রায় দিল বটে, কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্ককে তার বিস্তারিত খতিয়ান প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়ার পরও আজ পর্যন্ত তা কোন অথৈ জলে, আমরা জানি না। ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রেও এমন নির্দেশ ছিল, সম্ভবত তারও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
সরকার না চাইলে আদালতের নির্দেশ মানা হবে— এমনটা ভাবার পরিসর আজ আরও সঙ্কুচিত। নব্বইয়ের দশকে ‘জুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিজম’ বা বিচারবিভাগের অতিসক্রিয়তার কথা শোনা যেত। এখন যেন তাদের শীতঘুমে যাওয়া ‘অতিনিষ্ক্রিয়তার’ জমানা! তাদের দিয়ে যা কিছুই করিয়ে নেওয়া যায়। যায়ই তো!
পুরনো কলকাতায় যখন তেমন নিকাশিব্যবস্থা ছিল না, তখন বড়বাজার এলাকার মাড়োয়ারিরা বর্ষাকালে স্থানীয় কাঁচা নর্দমায় কতটা জল উঠবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বাজি ধরতেন। পোক্ত পয়ঃপ্রণালীর যুগে এখন আর সেই বাজির দরও নেই, কদরও নেই। যেমন নেই বিচারপতিদের মতিগতির ওপর। সহজেই বুঝে ফেলা যায় কী হতে যাচ্ছে, কেমনভাবে হতে যাচ্ছে। বাজির দর কমছে?