আয়ুশি কর, বিষ্ণু নারায়ণ
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিহারের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র— পিপড়া, বাগাহা এবং মোতিহারিতে— ৩,৫৯০টি ঘটনায় নির্বাচন কমিশন একই ঠিকানায় ২০ বা তার বেশি মানুষকে ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সেই বাড়িগুলি আদৌ নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন এভাবেই ৮০,০০০-এরও বেশি ভোটার নথিভুক্ত করেছে
ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) বিহারের পিপড়া বিধানসভা কেন্দ্রের গালিমপুর গ্রামে একটি মাত্র বাড়িতে ৫০৯ জন ভোটারকে নিবন্ধিত করেছে— যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবার, জাতি ও সম্প্রদায়ের। সংখ্যাটা যতটা না বিস্ময়ের, তার থেকেও চমকপ্রদ তথ্য হল— আসলে সেই বাড়িটির কোনও অস্তিত্বই নেই।
একই গ্রামে আরও একটি ঘটনা সামনে এসেছে— সেখানেও এক অস্তিত্বহীন বাড়িকে ঠিকানা দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন পিপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ৪৫৯ জনকে ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করেছে।
দ্য রিপোর্টার্স কালেকটিভ-এর অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, গোটা দেশের ভোটার ডেটাবেস নতুন করে তৈরি করার যে নজিরবিহীন উদ্যোগ নির্বাচন কমিশন শুরু করেছে— যার সূচনা হয়েছে বিহার থেকে— সেই প্রক্রিয়ায় এটি কোনও একক ভুল নয়।
আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিহারের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র— পিপড়া, বাগাহা এবং মোতিহারিতে— ৩,৫৯০টি ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এরকম একই ঠিকানায় ২০ বা তার বেশি মানুষকে ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সেই বাড়িগুলি আদৌ নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন এভাবেই ৮০,০০০-এরও বেশি ভোটার নথিভুক্ত করেছে।
সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে, একই ঠিকানায় ২০ থেকে ৫০ জনকে পর্যন্ত ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই ঠিকানাগুলি কেবলমাত্র সংখ্যার ভিত্তিতে বাড়ির নম্বর, বা কোথাও গ্রামের নাম কিংবা ওয়ার্ডের নাম।
আমরা এই তিনটি কেন্দ্রে আরও ভয়াবহ কিছু উদাহরণ পেয়েছি। বাগাহার ভোটার তালিকায় দেখা গিয়েছে, ন-টি ক্ষেত্রে একই ঠিকানায় ১০০-রও বেশি ভোটার নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টিতে রয়েছে ২৪৮ জন ভোটার। মোতিহারি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনটি অস্তিত্বহীন বাড়ির ঠিকানায় ১০০ বা তারও বেশি ভোটারকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়টিতে— নির্বাচন কমিশনের নতুন ভোটার তালিকা অনুসারে— ভিন্ন ভিন্ন পরিবার, জাতি ও সম্প্রদায়ের ২৯৪ জন ভোটার একসঙ্গে বসবাস করছেন।
বিহারের চম্পারণ অঞ্চলের পিপড়া, মোতিহারি ও বাগাহা বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট নথিভুক্ত ভোটার প্রায় দশ লক্ষ। এর অর্থ দাঁড়ায়, মোট ভোটারের প্রায় আট শতাংশই সন্দেহজনক ঠিকানায় নথিভুক্ত।
এই হল নির্বাচন কমিশনের ৩০ দিনের ঝটিকা অভিযানের ফল, যা বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (এসআইআর)-র অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন বড় গলা করে দাবি করেছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যের ভোটার ডেটাবেসকে ‘শুদ্ধ’ করা হবে।
দ্য রিপোর্টার্স কালেকটিভ স্বাধীন তথ্যবিশ্লেষকদের একটি দলের সঙ্গে মিলে নির্বাচন কমিশনের সদ্য প্রস্তুত করা ভোটার ডেটা খতিয়ে দেখেছে— প্রথম ধাপে বিহারের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র: পিপড়া, বাগাহা ও মোতিহারি। পরে আমরা আমাদের এক সহকর্মীকে ওই কেন্দ্রগুলিতে পাঠাই তথ্য-পর্যালোচনার ফল মিলিয়ে দেখতে।
আমাদের অনুসন্ধান চমকে দেওয়ার মতো প্রমাণ হাজির করেছে— এসআইআর-এর প্রক্রিয়াতেই কাঠামোগত ও ব্যাপক মাত্রার ত্রুটি রয়ে গেছে। তথ্যপ্রমাণ স্পষ্ট করছে, তাড়াহুড়ো করে এই কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন অতীতের ভোটার ডেটাবেসে থাকা সমস্যা, ভুল এবং ভুয়ো নাম মুছে ফেলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এবং আরও খারাপ যেটা, সেটা হল— এতে নতুন করে আরও ভুয়ো তথ্য যুক্ত হয়েছে।
সন্দেহজনক ও ভুয়ো বাড়ি ভর্তি ভোটার
সন্দেহজনক ঠিকানায় ভোটার নিবন্ধনের বিষয়টি ফের সামনে এনেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। এই মাসেই মধ্য-বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি একটি এক-কামরার বাড়ির ঠিকানায় ৮০ জন ভোটারকে নথিভুক্ত করার ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন।
তিনি যে উদাহরণটি দিয়েছিলেন, সেটি কর্নাটকের ভোটার ডেটাবেসের— যা ২০২৪ সালে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। সেই বর্তমান ডেটাবেসের সমস্যাগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন গোটা দেশের জন্য যে নতুন ভোটার ডেটাবেস প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে আমরা সেটি পরীক্ষা করে দেখেছি।
আমাদের আগের প্রতিবেদনে[1] আমরা দেখেছি, বিহারের মাত্র একটি বিধানসভা কেন্দ্র— বাল্মীকিনগরের নতুন ভোটার তালিকার খসড়াতেই ৫০০০-এরও বেশি সন্দেহজনক বা নকল ভোটারের নাম রয়েছে। এঁদের ভোটার পরিচয়পত্র আবার উত্তরপ্রদেশেও বিদ্যমান।
এই অনুসন্ধান ও তথ্যবিশ্লেষণেও আমরা একই জিনিস দেখতে পেয়েছি— কীভাবে মানুষকে ভুয়ো ঠিকানায় সন্দেহজনকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এভাবে নথিভুক্ত হওয়া ৮০,০০০ জন সত্যিই বৈধ ভোটার, নাকি সন্দেহজনক— তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারে কেবল প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে সমীক্ষা। এসআইআর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নির্বাচন কমিশন এমন ঘরে ঘরে গিয়ে যাচাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
আমাদের দলের একজন পিপড়ার চারটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেন, আর প্রতিটি কেন্দ্রেই অন্তত একটি করে বাড়ি পাওয়া গেছে— যেখানে একই ছাদের নিচে বহু ভোটারকে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
আমরা প্রথমে যাচাই করি সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলি: পিপড়ার গালিমপুরে পাশাপাশি দুটি বুথ— ৩২০ এবং ৩১৯— যেখানে যথাক্রমে বাড়ি নম্বর ৩৯ ও ৪-এ ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে ৪৫৯ জন এবং ৫০৯ জনকে।
ভোটারদের কোনও ধারণাই ছিল না কীভাবে বা কোথায় তাঁদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছে। আমাদের কাছ থেকেই তাঁরা প্রথম প্রবল বিস্ময়ে শুনলেন যে তাঁদের গ্রামে শত শত ভোটারকে নথিভুক্ত করা হয়েছে একই ছাদের নিচে বসবাসকারী হিসেবে।
“এটা কীভাবে সম্ভব?” বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন শিবনাথ দাস— অমিত কুমারের বাবা, যে অমিত কুমার পিপড়ার ৩১৯ নম্বর বুথে একই ছাদের নিচে নথিভুক্ত হওয়া ৫০৯ জন ভোটারের একজন।
“গ্রামে মানুষ ভালবাসা আর ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে বটে, কিন্তু সবার আলাদা আলাদা বাড়ি আছে। মুসাহার সম্প্রদায়ের মানুষ আলাদা থাকে, দাস (বানিয়া) সম্প্রদায়ের মানুষ আলাদা থাকে। একইভাবে ঝাল (ব্রাহ্মণ) সম্প্রদায়ের মানুষও আলাদা থাকে,” ব্যাখ্যা করলেন দাস।

আমাদের প্রতিবেদক খোঁজখবর নিতে থাকলে গালিমপুরের গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ, কৌতূহল আর বিস্ময়ে মিশ্রিত প্রশ্ন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এক ভোটার বললেন, “মাঁঝি-মুসাহার জাতের মানুষ আর ব্রাহ্মণ-বানিয়া জাতের মানুষ একসঙ্গে কীভাবে থাকে? এটা তো যারা নাম-নম্বর লেখে, তাদের কারসাজি।”
গালিমপুর গ্রামীণ বিহারের অন্তর্গত, যেখানে এখনও জাতপাতের বিভাজন গভীরভাবে প্রোথিত। সেখানে রাজ্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের এই ‘দুঃসাহস’— সবচেয়ে বঞ্চিত দলিত সম্প্রদায় যেমন মাঁঝি ও মুসাহারদেরকে, ভোটার তালিকার কাগুজে হিসেবে হলেও, একই ছাদের নিচে ব্রাহ্মণ ও বানিয়াদের সঙ্গে বসবাসকারী হিসেবে দেখানো— গ্রামবাসীদের হতবাক করে দিয়েছে।
অজয় কুমার ঝা— যিনি ৩২০ নম্বর বুথে একই ছাদের নিচে থাকা ৪৫৯ ভোটারের একজন হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নথিতে অন্তর্ভুক্ত— ২০০৩ সালের বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনার ভোটার তালিকা দেখালেন। সেখানে প্রমাণ মিলল, সন্দেহজনক ও ভুয়ো ঠিকানার এই অদ্ভুত অনুশীলন ২০০৩ সালে ছিল না। ওই তালিকায় ৪৫৯ জন ভোটারের আলাদা আলাদা ঠিকানা ছিল।

বাইশ বছর পরে, মাত্র দুই মাসের মধ্যে একটি ‘পরিষ্কার’ ভোটার তালিকা তৈরির নামে, আরও বেশি প্রযুক্তি ও জনবল ব্যবহার করেও নির্বাচন কমিশন আক্ষরিক অর্থেই ভয়াবহ কাজ করেছে।
আমাদের মাঠপর্যায়ের যাচাইয়ে নিশ্চিত হয়েছে— শত শত ভোটারকে নথিভুক্ত করা যে চারটি ঠিকানা নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করেছে, তার একটিও বাস্তবে নেই।
কাল্পনিক ঠিকানা
গ্রামীণ এলাকায় কিংবা অস্থায়ী বাসস্থান, আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা বসবাস করেন এবং শহরের গৃহহীন মানুষদের বাড়ির নম্বর-সহ কোনও নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ওই ভোটারদের জন্য একটি কাল্পনিক নম্বর দেওয়া হয়, এবং নম্বরটির আগে ‘N’ যুক্ত থাকে।
ভোটার তালিকার পরবর্তী যে-কোনও পুনর্বিবেচনায় বুথ-স্তরের কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই দেওয়া নম্বর অপরিবর্তিত রাখতে হয়, অথবা কেবল তখনই সংশোধন করতে হয় যদি ব্যক্তি অন্যত্র চলে যান। ঘরে ঘরে যাচাইয়ের যে-প্রক্রিয়া, তার কার্যকারিতা বজায় রাখতে এ নিয়ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা দেখেছি, এইবার বিহারজুড়ে এসআইআর প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সেই নিয়মটিও মানেননি। ফলে বহু ক্ষেত্রে নতুন ভোটার তালিকা আগেরগুলির থেকেও নিম্নমানের হয়ে উঠেছে।
এরপর আমরা বুথ ১৯৬-এ যাই, যেখানে অস্তিত্বহীন একটি বাড়ি— নম্বর ২— এর ঠিকানায় ১০৪ জন ভোটারকে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
আবারও একই কাহিনি। মানুষ নিজেরা ফর্ম পূরণ করেননি; পূরণ করেছেন কর্মকর্তারা। আর গ্রামে এমন কোনও প্রাসাদও নেই যেখানে এক ছাদের নিচে ১০০-রও বেশি মানুষ থাকতে পারেন।

পিপড়া কেন্দ্রের বুথ ১৯৬-এর বাসিন্দা জাদুলাল শাহ ব্যাখ্যা করলেন, “এখানে কোনও বাড়িতে নম্বর নেই। আমাদের পুরো পরিবার— আমার ছেলে, পুত্রবধূ আর স্ত্রী-সহ— সবাই থাকি ওই পুরনো বাড়িতেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সঠিকভাবে বলতে পারি না কীভাবে আর কেন এমনটা ঘটল।”
শাহ বললেন যে তিনি নিজে গণনার ফর্ম পূরণ করেননি। তা পূরণ করেছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারাই। তিনি বললেন, “কেবল আধারকে নথি হিসেবে নেওয়া হয়েছিল, আর কয়েকজনের ক্ষেত্রে ছবি চাওয়া হয়েছিল। বাকিটা ফর্ম তারা নিজেরাই পূরণ করে নিয়ে গেছে।”

আমাদের প্রতিবেদকরা বুথ-স্তর থেকে শুরু করে জেলা-স্তরের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁরা সক্রিয়ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। কারও কারও সঙ্গে শেষমেশ যোগাযোগ করা গেলেও তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
আরও দুটি বুথে আমাদের প্রতিবেদকরা পরীক্ষা করে দেখেন যে, নির্বাচন কমিশনের বুথ-স্তরের কর্মকর্তারা ঠিকানার ঘরে ওয়ার্ড বা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম লিখে দিয়েছেন।
তাড়াহুড়োর কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রচলিত ও পুরনো নিয়ম— ‘N’ যুক্ত একটি কাল্পনিক ঠিকানা দেওয়ার প্রথা— সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়েছে।
আমরা এ-ও দেখেছি, ভুয়ো বা ভুল ঠিকানায় একসঙ্গে ঠেসে দেওয়া ৮০,০০০ ভোটারের অনেককেই একইভাবে এই বছরের জানুয়ারির চূড়ান্ত ভোটার তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসআইআর প্রক্রিয়ায় এর কোনও সংশোধন হয়নি।
আর এ থেকেই স্পষ্ট, এসআইআর সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেনি, যা নির্বাচন কমিশন দাবি করেছিল।
দোষ নির্বাচন কমিশনের, না বুথ-স্তরের কর্মীদের?
ত্রিশ দিনের ঝটিকা অভিযানে গণনার ফর্ম বিলি আর সংগ্রহের কাজে বুথ-স্তরের কর্মীদের হাতে সময় ছিল কেবল ওপর-ওপর কমিশনের নির্দেশ পালন করার। আমাদের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় বুথ-স্তরের কর্মকর্তারা বারবারই এ কথা বলেছেন।
৩১৯ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা শশী রঞ্জন ঝাকে আমাদের প্রতিবেদক খুঁজে বের করেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে বহু ক্ষেত্রেই গণনার ফর্ম বুথ-স্তরের কর্মকর্তারাই পূরণ করেছিলেন। তবে আমাদের অনুসন্ধানে যে ঠিকানার গরমিল ধরা পড়েছে, তার জন্য তাঁদের দায়ী করা যায় না— এ-কথাও তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বললেন, “আমি যখন থেকে বিএলও (বুথ-লেভেল অফিসার) হয়েছি, তখন থেকেই বহু ভুল দেখেছি আর তা যথাসাধ্য শুধরেছি, কিন্তু অনেক কিছুই তাড়াহুড়ো করে করতে হয়েছে… (এসআইআর-এর জন্য)। রাতের পর রাত জেগে কাজ করেছি, না জেগে উপায় ছিল না, কারণ দিনে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট কাজই করত না— রাতেই নথি আপলোড করতে হত। যাই হোক, এখানে কাউকে আলাদা বাড়ি বা হোল্ডিং নম্বর দেওয়া হয়নি। হলেও কেউ তা মনে করতে পারছে না।”
বিএলও-রা শুধু যে-কোনওভাবে কাজ শেষ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের সঙ্গে যাঁরা কথা বলেছেন (এবং নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন) তাঁদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ভুয়ো ও ভুল ঠিকানার সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে হবে সে বিষয়ে তাঁদের কোনও সঠিক নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
ঝা দুঃখ করে বললেন, “আমরা বুঝতে পারছি যে পুরো প্রক্রিয়াটিতে বিএলও-রাই হল মূল এবং সবচেয়ে দুর্বল ঘুঁটি, তাই সব প্রশ্ন তাকেই করা হবে। কিন্তু তার বাধ্যবাধকতাগুলো কে বুঝবে? সব কিছুর দায় তার ঘাড়ে চাপানো সহজ, কিন্তু তার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করবে কে?”
বেআইনি ভোটার তালিকা নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের জবাবে নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। নিজেদের ব্যর্থতার দায় ঝেড়ে ফেলে কমিশন দায় চাপায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর— সময়ে তালিকা সংশোধনের জন্য কমিশনকে না জানানোর কারণে। কমিশন নোটে লিখেছে, “মনে হচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দল এবং তাদের বুথ লেভেল এজেন্টরা (বিএলএ) যথাসময়ে ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখেনি এবং কোনও ভুল থাকলেও তা এসডিএম/ইআরও, ডিইও বা সিইওদের নজরে আনেনি।”
[1] Kar, Ayushi; Manwani, Harshitha & Sapru, Gayatri. Investigation: More than 5,000 Double and Dubious Voters from Uttar Pradesh make it to ECI’s Voter List for a Bihar Constituency. The Reporters’ Collective. Aug 11, 2025.
*প্রতিবেদনটি গত ১৭ আগস্ট দ্য রিপোর্টার্স কালেকটিভ-এ ইংরেজিতে প্রকাশিত

