রাজনীতির দাবার নতুন ঘুঁটি অভিবাসী শ্রমিক

দেবাশিস মিথিয়া

 


ঘরে ফিরলে অভিবাসী শ্রমিকরা কী পাবেন, তার ফিরিস্তি দেওয়া হলেও বড় প্রশ্নটা হল— এই শ্রমিকদের কেন কাজ খুঁজতে বাইরের রাজ্যে যেতে হয়েছিল? এর মূলে রাজ্যে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। পশ্চিমবঙ্গ আজ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কাজের সুযোগ কম, যার ফলে অনেকেই জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হন অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে। এই প্রবণতা আরও বাড়ে যখন কৃষিকাজ থেকে আয় কমে যায়। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের করুণ হাল, সেখানে কাজ সৃষ্টির বালাই নেই। ফলে শিল্পে উন্নত এবং নির্মাণক্ষেত্রের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভিনরাজ্যগুলিতে কাজের সুযোগ ও মজুরি দুই-ই বেশি থাকে। এই অর্থনৈতিক বৈষম্যই অভিবাসী শ্রমিকদের জন্মভূমি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রেক্ষাপটেই, সরকার ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছে

 

ওরা কারা?
চেনেন না ওদের?
ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের— এক নেই-রাজ্যের বাসিন্দে
ওদের কিছু নেই।

এই ‘ওঁরা’ হলেন অভিবাসী শ্রমিক। যাঁরা জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন। তাঁদের দুর্দশা অনেক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্প্রতি এঁদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ নামের একটি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এতেই নাকি ঘরে ফেরা এই শ্রমিকদের দুর্দশা ঘুচবে— সরকার তেমনটাই ভাবছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গের অভিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও সুযোগ-সুবিধা

বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকদের ওপর হেনস্থা ও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে প্রকল্পটির সূচনা। প্রকল্পে বলা হয়েছে যে সকল অভিবাসী শ্রমিক রাজ্যে ফিরে আসবেন, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এই পুনর্বাসন প্যাকেজ অনুযায়ী, ফিরে আসা শ্রমিকরা এককালীন ৫,০০০ টাকা পাবেন। যতদিন তাঁরা নতুন কাজ না পাচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়া, তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রয়োজনে ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘খাদ্যসাথী’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, এবং ‘কর্মশ্রী’-র মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও তাঁরা পাবেন।

 

কেন অভিবাসী হতে হয়

ঘরে ফিরলে অভিবাসী শ্রমিকরা কী পাবেন, এ তো গেল তার ফিরিস্তি। কিন্তু যে প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, এই শ্রমিকদের কেন কাজ খুঁজতে বাইরের রাজ্যে যেতে হয়েছিল? এর উত্তর রাজ্য সরকারের জানা। কিন্তু প্রকাশ্যে বলতে পারছে না! এর মূলে রাজ্যে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। পশ্চিমবঙ্গ আজ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কাজের সুযোগ কম, যার ফলে অনেকেই জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হন অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে। এই প্রবণতা আরও বাড়ে যখন কৃষিকাজ থেকে আয় কমে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হয়। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের করুণ হাল, সেখানে কাজ সৃষ্টির বালাই নেই। ফলে শিল্পে উন্নত এবং নির্মাণক্ষেত্রের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভিনরাজ্যগুলিতে কাজের সুযোগ ও মজুরি দুই-ই বেশি থাকে। এই অর্থনৈতিক বৈষম্যই অভিবাসী শ্রমিকদের জন্মভূমি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রেক্ষাপটে, সরকার ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছে। এখন প্রশ্ন হল, এই ধরনের প্রকল্প কি সত্যিই কর্মসংস্থানের সমস্যার সমাধান করতে পারবে, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

 

‘শ্রমশ্রীনতুন কিছু নয়

‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে সরকার ও শাসক দল যতই ঢাক পেটাক, এটি নতুন কোনও উদ্যোগ নয়, বরং একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে পশ্চিমবঙ্গের আগের সামাজিক প্রকল্পগুলির সঙ্গে এটি মিশে যায়। ‘কর্মসাথী’ পোর্টাল অভিবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘খাদ্যসাথী’ এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে অপরিহার্য পরিষেবাগুলি প্রদান করা হবে। ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প গ্রামীণ অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ৫০ দিনের মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে ‘কর্মসাথী’ যুবকদের স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য সহজে ঋণ ও ভর্তুকির ব্যাবস্থা করছে। ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে জবকার্ডের মাধ্যমে ‘কর্মশ্রী’-তে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে, যা ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।

 

নগদ অনুদানের পিছনে রাজনীতি

তবে, ‘শ্রমশ্রী’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। যখন একজন অভিবাসী শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে ফিরে আসেন, তখন তাঁর কাছে কোনও কাজ থাকে না। এই জরুরি অবস্থায় তাঁদের সাহায্য করার জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে এক বছর পর্যন্ত মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। এই সাহায্যটুকু তাঁদের টিকে থাকার জন্য খুবই জরুরি, কারণ এর মাধ্যমে তাঁরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, যদি একজন শ্রমিক এক বছর ধরে বা কাজ না পাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ভাতা পেতে থাকেন, তবে কি তিনি নতুন কাজের জন্য চেষ্টা করবেন? এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি এবং শর্তহীন নগদ অনুদান অনেক সময় শ্রমিকদের কাজ খোঁজার আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে তাঁরা ভাতা পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেতে পারেন, যা তাঁদের ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যকে ব্যাহত করবে। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের সবার মুখে মুখে যেটা ঘুরছে— এই সামান্য অনুদানে কী হবে? এই প্রসঙ্গে, বর্ধমানের একজন অভিবাসী শ্রমিক রফিকুল শেখ বলেন, “টাকাটা হাতে পেলে খুব উপকার হবে ঠিকই, কিন্তু শুধু এই ৫০০০ টাকা দিয়ে তো আর সব সমস্যার সমাধান হবে না। কাজ যদি না পাই, তাহলে এক বছর পর আবার কী করব? আসল কথা হল, আমাদের এখানে কাজের ব্যবস্থা চাই, যাতে আর অন্য রাজ্যে যেতে না হয়।”

অন্য যে সমালোচনাটি শোনা যাচ্ছে, সেটি রাজনৈতিক। অনেকেই এটিকে মানবিকতার মোড়কে মোড়া একটি রাজনৈতিক চাল হিসেবে দেখছেন। এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। মুখ্যমন্ত্রী বারবার অভিযোগ করছেন, ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে— যা পূর্বপরিকল্পিত। এই ভাষাগত নিপীড়নের অভিযোগকে প্রকল্পের মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ যেন এক রাজনৈতিক চাল। বাঙালি পরিচয়কে উস্কে দিয়ে নির্বাচনের আগে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের রাজনৈতিক জমি শক্ত করছে। কিন্তু রাজনীতির এই খেলায় কি অসহায় মানুষগুলির সত্যিকারের দুর্দশা ঘুচবে?

 

নগদ অনুদানের বিশ্বব্যাপী সাফল্য

তবে এই ধরনের নগদ অর্থ হস্তান্তর কর্মসূচিগুলির সঠিক রূপায়ণ ঘটাতে পারলে শুধু দারিদ্র্য কমানোই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশ্বজুড়ে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে। এই কর্মসূচিগুলি প্রমাণ করেছে যে নগদ অর্থ মানুষের মধ্যে কেবল অলসতা সৃষ্টি করে না, বরং তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে, মানবসম্পদ উন্নত করতে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর মতো দেশে এই ধরনের কর্মসূচিগুলি মানুষের পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মান বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও, দেখা গেছে এই অর্থপ্রদানগুলি অর্থনীতিতে গুণক প্রভাব তৈরি করে, অর্থাৎ দেওয়া প্রতিটি টাকা বাজারে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়ায়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাঁরা এই ধরনের সহায়তা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন এবং নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। সামগ্রিকভাবে, এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগদ অর্থ স্থানান্তর কর্মসূচিগুলি একটি দেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।

 

নগদ অনুদানে দুর্নীতি

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নগদ অর্থ হস্তান্তর প্রকল্পগুলিতে এত দুর্নীতি— তাই নতুন এই প্রকল্প নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ‘শ্রমশ্রী’-র সঠিক রূপায়ণ পশ্চিমবঙ্গে সত্যিই কি সম্ভব? চলুন, রাজ্যের যেসব নগদ অর্থ হস্তান্তর কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি একটু খতিয়ে দেখি।

ক্যাগ রিপোর্ট: সিএজি-র ২০২১-২২ সালের প্রতিবেদনে রাজ্য সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুদান বাবদ ২.২৯ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছিল যার কোনও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেয়নি। সবচেয়ে বেশি বকেয়া ছিল পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগে (৮১,৮৩৯ কোটি টাকা) এবং স্কুলশিক্ষা বিভাগে (৩৬,৮৫০ কোটি টাকা)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই রিপোর্টকে ‘মিথ্যায় ভরা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

রেশন দুর্নীতি: এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দাবি করেছে, পশ্চিমবঙ্গের রেশন বণ্টন কেলেঙ্কারির পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

কন্যাশ্রী ও অন্যান্য দুর্নীতি: ‘কন্যাশ্রী’-র মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত প্রকল্পেও তহবিল আত্মসাৎ-এর ঘটনা সামনে এসেছে। এছাড়াও, ‘দুয়ারে সরকার’ এবং ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিও দুর্নীতির অভিযোগের শিকার হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে এই ধরনের প্রকল্প দলের মধ্যে ‘কাট-মানি সংস্কৃতি’কে উৎসাহিত করেছে।

সিএজি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিপুল পরিমাণ টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা না দেওয়া, বহু কোটি টাকার রেশন দুর্নীতি এবং ‘কন্যাশ্রী’-র মতো প্রকল্পে তহবিল আত্মসাৎ করার মতো অভিযোগগুলি পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

 

শ্রমশ্রীপ্রকল্পে সম্ভাব্য ঝুঁকি

এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ঘোষিত ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পটি যে দুর্নীতিমুক্ত হবে, এমনটা ভাবা বোকামি। দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। যেমন:

  • ভুয়া বা অযোগ্য ব্যক্তিদের প্রকল্পের আওতায় এনে তহবিল আত্মসাৎ করার চেষ্টা হতে পারে।
  • পোর্টালে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কারচুপির শিকার হতে পারে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে নিবন্ধনের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
  • অন্যান্য প্রকল্পের মতো, ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধা পেতেও স্থানীয় নেতা বা ফড়েদের কাছে শ্রমিকদের টাকা দিতে হতে পারে।
  • রাজনৈতিক প্রভাব প্রকল্পের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করতে পারে। ক্ষমতাশীল দলের স্থানীয় কার্যকর্তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করতে পারেন।

যে-কোনো সামাজিক প্রকল্পে দুর্নীতি কেবল আর্থিক অপচয়ই ঘটায় না, বরং এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলিও নষ্ট করে দেয়। যখন সুবিধাভোগীরা তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন, তখন দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মানব-উন্নয়নের মতো লক্ষ্যগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে সরকারি প্রকল্পের প্রতি জনসাধারণের বিশ্বাস নষ্ট হয়, যা বৃহত্তর রাজনৈতিক অসন্তোষের জন্ম দেয়— ঠিক যেমনটা আমরা সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতার ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি।

পরিশেষে বলা যায়, রাজ্যের শাসক দল ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যে কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে যান, সেই মূল সমস্যার সমাধান না হলে কেবল নগদ অর্থ দিয়ে তাদের দুর্দশা দূর করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান মিলবে না। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে এর আগে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, তাতে এই নতুন প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান সে অর্থে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। মনে রাখতে হবে, এই রাজনৈতিক দাবার খেলায় অসহায় মানুষগুলো যেন কেবল নতুন ঘুঁটি হয়ে না থেকে যান। তাই সরকারের উচিত বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।


*মতামত ব্যক্তিগত

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...