কালো প্লাস্টিক বাক্স ও কিছু আশঙ্কিত প্রশ্ন

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

 


অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ধরনের কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারগুলোর সিংহভাগই তৈরি হয় রিসাইকেল্ড প্লাস্টিক দিয়ে, যার বেশিরভাগই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট বা শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য পদার্থ, ছাঁট প্লাস্টিক, এমনকি ই-বর্জ্য পদার্থও। এইসব উপাদান আমাদের দেশে যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই কন্টেইনার তৈরির কাজে। ব্রিটেনের এক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই কালো রঙের কৌটো তৈরিতে ফ্লেম রিটার্ডেন্টস এবং বিপজ্জনক হেভি মেটালও অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইসব উপাদানের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা জাগায়

 

উৎসবের মরশুম মানেই রীতিমতো খাওয়াদাওয়ারও মরশুম। খাইয়ে জাত হিসেবে বাঙালির সুখ্যাতি দুনিয়াজোড়া। মা, দিদিমা, ঠাকুমার আমল থেকে শুরু করে হাল আমলের রিঙ্কা-পিঙ্কা-টিঙ্কাদের সাজানো-গোছানো মডিউলার কিচেনের অন্দরমহলেও সেই ধারাবাহিকতায় কোনওরকম ছেদ পড়েনি। বরং পৃথিবীর নানা প্রান্ত খুঁজে বাঙালি নানারকম মনোলোভা খাদ্যের সম্ভারে রসনার তৃপ্তিসাধন করছে যুগ যুগ ধরে। আমার অবশ্য এসব নিয়ে এই মুহূর্তে সামান্যতম মাথাব্যথা নেই। পুজোর মরশুমে ইদানিং বাড়ির হেঁসেল বন্ধ রাখাটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে। চারিদিকে দেখো চাহি— রকমারি খাবারের খুশবু, প্লাস্টিকের কন্টেইনারে ভরে, কতশত খাবারের দোকান-হোটেল-রেস্তোরাঁ নিমেষেই হাজির আমাদের বাড়ির দোরগোড়ায়।

লক্ষ করে দেখবেন, খাবারের বাক্স বদল হয়েছে সম্প্রতি। সাদা রঙের কন্টেইনারের পরিবর্তে কালো রঙের রিসাইকেলড প্লাস্টিকের কৌটোয় লোভনীয় সব খাবার আসছে আমাদের রসনাবিলাসের জন্য। কিন্তু এই কৌটোগুলো কি স্বাস্থ্যসম্মত উপাদানে তৈরি?

সমস্যাটি একান্তই আমার একার, বোধহয় তেমন নয়। প্রথম প্রথম প্রগতির গতি দেখে বেশ পুলকিত হতাম, এখন তার সহচর দুর্গতির কল্যাণে সব ঘেঁটে ঘোল। বুঝতে পারছি, এমন হেঁয়ালি-ভরা সূচনাকথা পড়ে কিছুই বোধগম্য হল না। দাঁড়ান, কথার গিঁটটা একটু আলগা করি।

একালে বাড়ির একঘেয়ে খাবারে নাকি মন ভরছে না আমাদের, তাই ফোন ঘেঁটে নিত্যনতুন খাবারের অর্ডার করতে কমবেশি সবাই আমরা বেশ পারঙ্গম হয়ে উঠেছি। অর্ডার করতে যতটুকু সময় দেরি! প্রায় নিমেষেই দুয়ারে হাজির গুপী-বাঘার সহচরেরা— কোর্মা, কালিয়া, পোলাও— “জলদি লাও, জলদি লাও!” ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলারও প্রয়োজন নেই। ঘর ঘিরেই এখন জমে উঠেছে খানা-খাজনা!

সঙ্গে একান্ত দোসর হিসেবে সত্যিই জমে উঠছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক কন্টেইনার। নানান তাদের আকার-আকৃতি, গড়ন-পিটন। তবে যতই আধুনিক হয়ে ওঠার বড়াই করি না কেন, আমাদের মধ্যে একটা সাবেকি সংরক্ষণবাদী মানসিকতা এখনও বোধহয় ঘাপটি মেরে রয়েছে, বিশেষ করে আমাদের মা-মাসিদের মধ্যে। সবকিছুকেই তাঁরা এখনও দুচ্ছাই করে ফেলে দেন না, যতক্ষণ না তা ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর এভাবেই আমাদের ঘরে জমতে থাকে খাবারের সঙ্গে আসা প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলো।

কন্টেন্ট যখন কন্টেইনারে এসে পৌঁছেছে, তখন এই বিষয়ে দু-একটা কথা বলি। আপনি কি খেয়াল করেছেন, যে পাত্রে এখন খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, তার চেহারায় বেশ খানিকটা বদল এসেছে। এতদিনের সাদা রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারের চেহারা বদলে গেছে। সম্পূর্ণ সাদা নরম পাত্রের বদলে এখন কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারে করে খাবার সরবরাহ করছেন পরিচিত কোম্পানিগুলো। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই মুহূর্তে দিল্লি ও মুম্বাইয়ের নব্বই শতাংশ খাবার সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত কন্টেইনারগুলোই কালো প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। হাতে নিয়ে দেখলে দেখবেন, এগুলো আগের তুলনায় মজবুত এবং বেশ মসৃণ ও চকচকে চেহারার।

ঠিক কোন মানের প্লাস্টিক দিয়ে এগুলো তৈরি? এগুলো কি ভার্জিন প্লাস্টিক থেকে তৈরি, না কি রিসাইকেলড প্লাস্টিক থেকে? এমন কন্টেইনারে খাবার পাঠানো হলে তা কি আমাদের শরীরের পক্ষে নিরাপদ? এই কালো প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলো কি পুনর্নবীকরণযোগ্য? তেমন না হলে তো এই বর্জ্যের দীর্ঘমেয়াদি বোঝা বইতে হবে ধরিত্রীকে।

কেন আমাদের চেনা সাদা রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারের বদলে এই কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারের আবির্ভাব হল? মাথা ও মনের ভেতর এইসব কিলবিল করা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই নিবন্ধের অবতারণা।

আমরা নানান ধরনের পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি প্রায় প্রতিদিনই। দেশের খাদ্যশিল্প বা ফুড ইন্ডাস্ট্রি-তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বিগত এক দশকে। মা-মাসিমার চেনা হেঁসেলে যত পরিবর্তন এসেছে, তত ছোট হয়ে গেছে আমাদের চেনা হেঁসেলের পরিচিত কর্মব্যস্ততার সাবেকি ছবিটা।

বাড়িতে পরিচিত কেউ আসবে শুনলেই এই প্রজন্মের আধুনিক (!) গিন্নিরা মোবাইল ফোন খুলে পরিচিত রেস্তোরাঁ বা হোটেলের খোঁজখবর নিতে শুরু করে দেন। সুইগি, জোমাটো, উবের ইটস বা বিভিন্ন ক্লাউড কিচেনের কল্যাণে আমাদের আমলের স্বপ্ন দেখা খাবার এখন কৌটোবন্দি হয়ে নিমেষেই হাজির হয়ে আমাদের ডাইনিং টেবিলে খুশবু ছড়ায়।

অর্ডারমাফিক খাবার পাঠানোর এই কন্টেইনারের ভোলবদলের পেছনে কী কারণ, তা জানতে প্রশ্ন করেছিলাম আমাদের এলাকার সুপরিচিত এক রেস্তোরাঁয় ম্যানেজারমশাইকে। আমার প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক পাল্টা প্রশ্ন করলেন— “কেন স্যার! খাবারের কোনও অসুবিধা হয়েছে?”

আমি বললাম— “না, ঠিক তা নয়। আসলে আমি এই বদলের পেছনের কারণটা সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিতে চাইছি, অন্য কিছু নয়।”

“আসলে কি জানেন স্যার, কাস্টমারদের অর্ডার অনুযায়ী আমরা যখন খাবার পাঠাই, তখন বিশেষ কয়েকটি ব্যাপারে আমাদের নজর দিতেই হয়— যেমন পাত্রগুলো হিট রেজিস্ট্যান্ট কিনা। সকলেই গরম গরম খেতে পছন্দ করেন। এবার কড়াই থেকে গরম খাবার ঢাললে কন্টেইনারটি যদি দুমড়ে-মুচড়ে যায়, তাহলে তো সব্বোনাশ!”—ম্যানেজারমশাইয়ের জবাব।

সভয়ে বলে ফেললাম— “এমনটা হয়?”

আমাকে বাগে পেয়ে তিনি সোৎসাহে উত্তর দেন— “হয় মানে? আলবৎ হয়! ধরুন, মাটনের কোনও প্রিপারেশন খুব গরম, তাকে কন্টেইনারের ভেতরে দিতেই দেখা গেল তা বেশ নরম হয়ে গেছে। তখন ওটাকে ঠিকমতো কৌটোবন্দি করা মানে কুকুরের বাঁকা লেজ সোজা করা।” নিজের রসিকতায় খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে ওঠেন ভদ্রলোক।

এমন উত্তরে আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়েছি বুঝতে পেরে ভদ্রলোক আবার বোঝাতে শুরু করলেন— “বুঝলেন স্যার, আরও কতগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, যেমন পাত্রটি টেকসই কিনা। ধরুন, ডেলিভারি বয়রা খাবার নিয়ে বেরিয়ে গেল, মাঝপথেই যদি কন্টেইনারটি ফেঁসে যায়! দেখবেন, দু-রকম সাদা রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারে খাবার পাঠানো হয়— একটা ট্রান্সপারেন্ট, স্বচ্ছ; এক্ষেত্রে আপনি বাইরে থেকেই দেখতে পারবেন ঠিক কোন খাবার আপনাকে পাঠানো হয়েছে। আর একধরনের সাদা রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারের বডিটা ওপাক, অনচ্ছ। ঢাকনা না খুলে আপনি দেখতে পাবেন না, ঠিক কী আছে ভেতরে। এমন কন্টেইনারের ব্যবহার আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া খরচের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হয় আমাদের। এখন আমরা অনেক সময় কাস্টমারদের প্রেফারেন্স জানতে চাই— ঠিক কোন মানের প্লাস্টিক কন্টেইনারে খাবার নিতে চান। অনেকেই সাশ্রয়ী মূল্যের জিনিস খোঁজেন। সেক্ষেত্রে আমরা সাদা রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারে খাবার পাঠিয়ে দিই। অর্ডারের রেঞ্জ দেখেও আমরা কিচেনে ইনস্ট্রাকশন পাঠিয়ে দিই যে এই বিশেষ ধরনের কন্টেইনারে খাবার ডেলিভারি হবে।”

আরও কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে কিলবিল করে। তবে ওদের ব্যবসার পিক আওয়ারে এভাবে ম্যানেজারমশাইকে আটকে রাখা সমীচিন হবে না মনে করে, আমি ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। কিন্তু প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে। ঠিক কবে থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এদেশের খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে এই কালো প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলোকে উপভোক্তাদের অজ্ঞাতে কাজে লাগানো শুরু হলো? সমীক্ষা-সূত্রে জানা গেছে, মোটামুটি ২০১০-এর দশকে ভারতে খাবার সরবরাহ ব্যবস্থার জয়যাত্রা শুরু হয়। খুব দ্রুত গতিতে দেশের বড় বড় মহানগরীতে এই ব্যবসা প্রসার লাভ করে। নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের মধ্যে এই রেস্টুরেন্ট-কেন্দ্রিক খাদ্যাভ্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। এর সূত্র ধরেই কালো প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলো খাবার সরবরাহের কাজে বহুল পরিমাণে ব্যবহার করা শুরু হয়, কারণ এগুলো শক্তপোক্ত, তাপসহনীয়, সাশ্রয়ী এবং দূরে বহন-উপযোগী।

২০১৮–১৯-এর মধ্যেই এই ধরনের কন্টেইনারের ব্যবহার অনেকটাই বেড়ে যায়। ২০২২ সালে সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সংস্থার করা waste audit-সংক্রান্ত এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, দিল্লি, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর মতো ব্যস্ত মহানগরীতে ব্যবহৃত কন্টেইনারের ৯০ শতাংশই হল কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনার। কলকাতা তখনও এই বিষয়ে সম্ভবত খানিকটা পিছিয়ে ছিল, অথবা সমীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছিল এই মহানগরীকে।

এখানে প্রশ্ন উঠবে, এই কালো প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলোকে নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কারণ কী? ভাবছেন তো, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে আবার সাপ না বেরিয়ে পড়ে! আমাদের সাদা চোখে দু-ধরনের কন্টেইনারকে রঙের পার্থক্য ছাড়া একইরকম বলে মনে হবে। প্লাস্টিকের রং পরিবর্তনের জন্য কালো কার্বনের পিগমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এই কালার পিগমেন্টগুলোর বিশেষত্ব হল, এরা ইনফ্রারেড আলো শোষণ করতে পারে। এর অর্থ, এই কালো প্লাস্টিকের কন্টেইনারগুলোকে অধিকাংশ রিসাইকেল যন্ত্র দ্বারা শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এই সীমাবদ্ধতার কারণেই ব্যবহারের পর এগুলোর ঠাঁই হয় ভাগাড়ে অথবা ইনসিনিরেটরে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ধরনের কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারগুলোর সিংহভাগই তৈরি হয় রিসাইকেল্ড প্লাস্টিক দিয়ে, যার বেশিরভাগই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট বা শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য পদার্থ, ছাঁট প্লাস্টিক, এমনকি ই-বর্জ্য পদার্থও। এইসব উপাদান আমাদের দেশে যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই কন্টেইনার তৈরির কাজে। ব্রিটেনের এক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই কালো রঙের কৌটো তৈরিতে ফ্লেম রিটার্ডেন্টস এবং বিপজ্জনক হেভি মেটালও অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইসব উপাদানের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা জাগায়।

আমাদের দেশে মোট প্লাস্টিকের প্রায় ৭০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয় অসংগঠিত শিল্প ইউনিটগুলোতে। এই ধরনের ইউনিটগুলোর কার্যপদ্ধতি ও নিরাপত্তা মান নিশ্চিত নয়। ফলে সেইসব ইউনিটে তৈরি উপকরণ কতটা স্বাস্থ্যবিধি-সম্মত, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। তবে মাথায় রাখতে হবে, সব কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারই ক্ষতিকর নয়, তবু এগুলো থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়।

কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ‌্যবিদদের তরফে কয়েকটি সঙ্গত অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ—

কাঁচামালের অজ্ঞাত উৎস: খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত সাধারণ কন্টেইনারগুলো তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক যৌগ পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট (Polyethylene Terephthalate) এবং ভার্জিন পলিইথিলিন (Virgin Polyethylene) থেকে। এদের উৎপাদন ও ব্যবহারক্ষেত্র সম্পর্কে সব মহলই ওয়াকিবহাল, এবং কঠোর বিধিনিয়মের মধ্যেই এদের উৎপাদন হয়। অন্যদিকে, কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনার তৈরিতে ঠিক কোন্ কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অজ্ঞাত থেকে যায়।

নিয়ন্ত্রণে সমস্যা: কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারগুলো ইনফ্রারেড রশ্মি শোষণ করতে পারে বলে রিসাইকেল প্লান্টে এদের আলাদা করা সম্ভব নয়। ফলে এরা পৃথিবীর বুকে একপ্রকার স্থায়ী বোঝা হয়ে পড়ে থাকে এবং পরিবেশের ক্ষতি করে।

কন্টেইনার থেকে রাসায়নিক ক্ষরণের সম্ভাবনা বেশি: সাধারণত পলিপ্রোপিলিন (Polypropylene) থেকে তৈরি কন্টেইনারগুলোকে প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভে গরম করা যায়, কারণ এগুলো সেই ব্যবস্থায় সহনীয়। কিন্তু কালো রঙের প্লাস্টিক কন্টেইনারগুলো ঠিক কোন্ প্রাথমিক উপাদান থেকে তৈরি, তা অনেক সময় স্পষ্ট নয়। ফলে এমন পাত্রে গরম, তৈলাক্ত বা টক স্বাদের কোনও খাবার ঢালা হলে তা থেকে খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঘাবড়ে যাচ্ছেন না তো? এ কালের দস্তুর এমনই— কোনও কিছুতেই নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই। এই লেখা পড়ে যদি বাইরে থেকে খাবার আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, তাহলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে, কমবে না। তা হলে উপায়? উপায় নেই— এমনটা কখনওই নয়। নতুন ভারত উঠে আসছে নতুন নতুন ভাবনার হাত ধরে। কালো প্লাস্টিকের সমস্যা সম্পর্কে খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও তেমনভাবে ওয়াকিবহাল নয়। তাই সকলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে। কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষে অবশ্য প্লাস্টিক কন্টেইনারের বিকল্প পাওয়া খুব কঠিন নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বেশ কয়েকটি বিকল্প উপকরণের কথাও জানিয়েছেন। যেমন—

এক. আখের ছিবড়ে বা বাগাসে থেকে তৈরি কন্টেইনার। এই ধরনের কন্টেইনারগুলো শুধু সবরকমের খাবার পরিবহনেরই উপযুক্ত নয়, এক‌ই সঙ্গে মাইক্রোওয়েভে ব্যবহারযোগ্য ও জৈব-বিয়োজ্যও।

দুই. সুপুরির খোলা থেকে তৈরি কন্টেইনার। এই ধরনের কন্টেইনার ইতিমধ্যেই বাজারে পাওয়া যায়। সুপুরির খোলায় কোনও রাসায়নিক পদার্থ থাকে না, ফলে এগুলোও প্রাকৃতিকভাবে বিয়োজ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভবিষ্যতে এই কন্টেইনারগুলো প্লাস্টিকের উপযুক্ত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়াও আরও কিছু বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবা হয়েছে, এবং সেগুলোর পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়েছে। আমরা সবাই আশা করি, প্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর উপকরণের পরিবর্তে জৈব কৃষিজ উপাদানের ব্যবহার একদিন আমাদের এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দেবে।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. ছেলে ছোকরা ক্ষেত্রবিশেষে বাইরের খাবার খেতে বাধ্য হয়। কন্টেনার পছন্দের অপশন থাকেনা বলেই মনে হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আটকানো যাবেনা। নিয়ন্ত্রণের কথা উঠলেই আবার অর্থনীতির কথা শুনিয়ে দেওয়া হয়। যাব কোথায় !

Leave a Reply to Soumen Roy Cancel reply