তারান্তিনো, সিজন দুই — আট

প্রিয়ক মিত্র

 

গত সংখ্যার পর

ধীরেন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ীর বাড়িতে ভারা বাঁধা। কিছু মেরামত চলছে। লাহিড়ীমশায় নিজেই তদারক করছিলেন কাজকম্মো। আজ তাঁর মন ফুরফুরে। ছেলে বিলেতফেরত ব্যারিস্টার। তাঁর বিয়ে আজ। মনের মধ্যে একটা হাল্কা ভাব লাহিড়ীমশায়ের। আজ মোচ্ছব হবে পূর্ণমাত্রায়। সকাল থেকেই ধীরেন্দ্রনারায়ণের ইয়ারদোস্তরা মৌতাত জমিয়েছে শেরির পেয়ালার ঠুংঠাংয়ে। ধীরেন্দ্রনারায়ণ একটু মেরামতের দিকটা তদারক করেই ফিরে যাবেন সদর ভবনে। যেখানে বিবাহের যাবতীয় উৎসব চলছে। বন্ধুদের আসরে তিনিও শামিল হবেন।

ধীরেন্দ্রনারায়ণ সবে কোনও এক মিস্তিরিকে মেজাজের বলে গাল পাড়তে শুরু করেছিলেন, এমন সময় এক চাকর ছুটে এসে বললে, ‘হুজুর, একজন লোক এয়েচে।’

ধীরেন্দ্রনারায়ণ বিশেষ পাত্তা দিলেন না। রেগে বললেন, ‘তা এটা বলার কী আছে রে অলম্বুষ? আজ বিয়ের দিন। গুষ্টির লোকজন থাকবেই।’

‘এজ্ঞে না! ইনি বে খেতে আসেননি।’

‘তা খেতে আসেননি যখন, তখন পাত পেড়ে না দিলেই হয়’, খেঁকিয়ে উঠলেন ধীরেন্দ্রনারায়ণ। ‘কথার ছিরি দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায়। তা খেতে আসেননি তো বিয়েবাড়িতে কুস্তি লড়তে এয়েচেন?’

‘এজ্ঞে!’

বিস্মিত হয়ে ধীরেন্দ্রনারায়ণ তাকালেন সেই চাকরের দিকে। চাকরের মুখে একটা নির্লিপ্ত, অথচ উদ্বিগ্ন ভাব। ধীরেন্দ্রনারায়ণ হতবাক, এবং ক্রুদ্ধ এবং বিভ্রান্ত। তিনি ধরতেই পারছিলেন না এই কথার কী প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত?

‘এজ্ঞে মানে! এজ্ঞে মানে কী রে! সত্যি সত্যি কুস্তি লড়তে এয়েচে?’

‘না মানে অমনতরই।’

ধীরেন্দ্রনারায়ণের ইচ্ছে করছিল ছড়ি তুলে চাকরটাকেই দু ঘা বসিয়ে দেয়। এমন শুভ দিনের সকালে হেঁয়ালি করছে কেন মর্কটটা!

ধীরেন্দ্রনারায়ণ খেপে উঠে বলল, ‘মানেটা কী! কে কুস্তি লড়তে এয়েচে?’

চাকরটা বলল, ‘এজ্ঞে, বললাম না, একটা লোক!’

‘সে বললে, কুস্তি লড়তে এয়েচে?’

‘এজ্ঞে!’

‘চোপ আহাম্মক!’ ধীরেন্দ্রনারায়ণের সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেল। ‘কে এয়েচে, কী বলেছে— ঠিক করে বল!’

‘এজ্ঞে, একটা লোক এসে কইল। বাবুকে ডাকো, বলো আমি তার যমদূত হয়ে এয়েচি।’

এইরকম তামাশা নিশ্চিত দর্জিপাড়ার ফচকে ছোঁড়ারা করছে। ধীরেন্দ্রনারায়ণ ছড়ি বাগিয়ে তাঁর চাকরকে বললেন, ‘চল তো দেখি!’

‘এজ্ঞে, একা যাবেন?’

‘কেন! সে কি দলবল নিয়ে এয়েচে নাকি!’

‘না। কিন্তু লোকটা কেমন যেন! সাহেব সাহেব দেখতে, অথচ সাহেব নয়। আর চোখের দৃষ্টি…’

‘আরে মানুষই তো! এমন ভাব, যেন চারপেয়ে কোনও বিকট জানোয়ার এয়েচে!’

‘এজ্ঞে চোখ তো জানোয়ারের মতোই! জানোয়ারের চোখ দেখলে এমন ভয় করে না। জানোয়ারের চোখে তো এমন খুনে ভাব থাকে না। মানুষকে তো বাইরে থেকে দেখে…’

‘আ মোলো যা! তোর জ্ঞান সকাল সকাল কে শুনতে চেয়েছে? বেম্মসমাজে যাতায়াত করছিস নাকি আজকাল?’

আর দাঁড়ালেন না ধীরেন্দ্রনারায়ণ। ছড়ি ঠুকতে ঠুকতে গটগটিয়ে চলে গেলেন ভেতরমহলের পানে।

চাকরটির কেন যেন মনে হল, এই যে সে তার বাবুকে দেখল, গটগটিয়ে হেঁটে চলে যেতে, এই তার বাবুকে তার শেষ দেখা।

এই এত অবধি ভেবেই, এই অলুক্ষুণে ভাবনার জন্য নিজেকে গালমন্দ করে চাকরটি আবার নিজের কাজে গেল।

কিন্তু সে ঠিকই ভেবেছিল।

ধীরেন্দ্রনারায়ণ তাঁর বৈঠকখানায় পা রাখা মাত্র ভূত দেখলেন। তাঁর হাত পা জমে স্থির হয়ে গেল।

শেষবারের জন্য বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা…

ধীরেন্দ্রনারায়ণ আছড়ে পড়লেন মাটিতে।

যাকে দেখে এই দশা হল ধীরেন্দ্রনারায়ণের, সেই ব্যক্তিকে তার ব্রহ্মাস্ত্র আর ব্যবহার করতে হলই না‌।

ধীরেন্দ্রনারায়ণের কপাল থেকে নেমে আসছে রক্তের ধারা। পড়ে গিয়ে তার মাথা ঠুকেছে সোজা শ্বেতপাথরের মেঝেতে।

সেই লাশকে পাশ কাটিয়ে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে গেলেন প্রমথরঞ্জন!

চাকর-বেয়ারা-দারোয়ান-বিয়েবাড়ির গুষ্টি সকলের ঘটনাটা নজরে পড়ার আগে, মানে ধীরেন্দ্রনারায়ণের লাশ নজরে পড়ার আগেই নিশ্চুপে সেখান থেকে বেরিয়ে এল প্রমথ ডাক্তার।

তার মামলা যখন চলছিল, তখন সাক্ষীর কাঠগড়ায় কারা উঠেছিল তাকে খুনি প্রমাণ করতে, হাড়ে হাড়ে মনে আছে প্রমথ ডাক্তারের।

অথচ এই লাহিড়ীর গুপ্তরোগ চেপে না রাখলে সে এতদিন ধরে তার লীলাখেলা চালাতে পারত? ছেলে যতই বিলেতফেরত হোক, বাপের এহেন লাম্পট্যের কথা জানলে আদর্শবান মুখুজ্জেবাড়ির মেয়ে এ বাড়িতে বউ হয়ে আসত কোনও কালে?

এ তো তাও প্রতিশোধ নেওয়াই হল না! আরও নিষ্ঠুর, আরও নির্মম হওয়া উচিত ছিল তার।

হনহন করে হাঁটছিল কালো ওভারকোট আর কালো হ্যাট পরে সাহেব সাজা প্রমথরঞ্জন। এসব পোশাক সে কোথায় পেয়েছে, সে অবিশ্যি অন্য কাহিনি। জেলে সে যা যা দেখেছে এব‌ং শুনেছে, তাতে জেল পালানোর পরে সে সন্ন্যাসী হয়ে যেতেও পারত, আবার সাক্ষাৎ শয়তান থেকে উন্মাদ রাক্ষস হয়ে উঠতে পারত।

দ্বিতীয়টাই সে বেছে নিয়েছে, তবে সে উন্মাদ নয়, সে এখনও আগের মতোই জানে, কীভাবে কৌশল করে বাঁচতে হয়।

শুধু মাঝেমধ্যে তার মাথার পোকা নড়ে ওঠে।

যে জন্য আগের খুনটা করে সে খুনের হাতিয়ার, অর্থাৎ, আতরমাখানো রুমালটা ফেলে এল লাশের পাশে।

দেখি শালা পুলিশ কেমন করে খুঁজে পায় আমাকে!

এখনও প্রায় একইরকমের একটা ভাবনা তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।

এই ধীরেন্দ্রনারায়ণ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে একরাশ মিথ্যে বলেছিল প্রমথরঞ্জনের নামে। সে নামকাটা ডাক্তার সে কথা ঠিক নিঃসন্দেহে! কিন্তু কোনও দিন এমন হয়েছে, যে তার চিকিৎসার সুফল ধীরেন্দ্রনারায়ণ ভোগ করেনি? তাহলে কোন মুখে সে বেমালুম বলে বসল, প্রমথরঞ্জন হাতুড়ে ডাক্তার! সে নাকি দয়া করে চিকিৎসা করাত প্রমথ ডাক্তারকে দিয়ে!

শালা বেইমান!

প্রমথ ডাক্তার রাগ ভোলে না।

এত অবধি ভেবেই আবার বিয়েবাড়ির দিকে পিছু হাঁটল প্রমথরঞ্জন। সাতপাঁচ না ভেবেই।

সে বাড়িতে পৌঁছনোর আগে থেকেই মরাকান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল তার কানে।

একবারও তার পা কাঁপল না ও বাড়িতে ঢোকার আগে। ছকটা নিখুঁত ছিল। ধীরেন্দ্রনারায়ণ নিজেই হার্টফেল করে পড়ে মরে গিয়েছেন। একটা চাকর তাকে দেখেছিল বটে, তবে খুব ভালো করে পুলিশকে বিবরণ দিতে পারত না, কারণ প্রমথরঞ্জনের অর্ধেক মুখ ছিল হ্যাটে ঢাকা। তবে হ্যাঁ, পুলিশ তদন্ত করে তার সূত্র ঠিক খুঁজে পেতই। সে তো তাই চায়!

কিন্তু যে কাণ্ডটা সে ঘটাতে যাচ্ছে, তার ফল ভালো হবে না।

বাগান পেরিয়ে সোজা ভেতরমহলের বৈঠকখানায় গিয়ে পৌঁছল সে।

ভিড়ে ভিড়াক্কার। ঘরের মাঝে ধীরেন্দ্রনারায়ণের মাথা বুকে নিয়ে হাউহাউ করে কাঁদছে সর্বাঙ্গে হলুদমাখা একটি গোবরগণেশ ছেলে।

‘ইঁক!’

তাকে দেখে আঁতকে ওঠার এই আশ্চর্য শব্দটা করল চাকরটাই।

‘আহ্! এত কান্নাকাটির কী আছে!’

গম্ভীর গলায় ধমক দিল প্রমথরঞ্জন।

চাকরের আঁতকে ওঠা দেখেই ঘরভর্তি লোকের দৃষ্টি তার দিকে ফিরেছিল। এবার এমন একটি বাক্য তার মুখ থেকে নির্গত হতেই সকলের চোখ কপালে উঠে তার ওপরেই স্থির হল।

কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি তার বিশালায়তন মুখের মাঝে ছানাবড়ার মতো দুটো চোখ নিয়ে প্রমথর দিকে তাকিয়ে কান্নামাখা গলায় প্রায় স্বগতোক্তি করে উঠল, ‘এ কে রে!’

‘ডাক্তার! সরো দেখি!’

ওই বিশালবপু ছেলেকে প্রায় একধাক্কায় সরিয়ে ধীরেন্দ্রনারায়ণের জবরদস্ত চেহারাখানা নিজের কোলে রাখল প্রমথ ডাক্তার। তার কোট-হ্যাট দেখে কারও তাকে ডাক্তার বলে মানতে কোনও কষ্ট হল না। শুধু চাকরটা কিছু বলতে চেয়েও পারল না।

দু দণ্ড ধীরেন্দ্রনারায়ণের ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল প্রমথ ডাক্তার। চোখেমুখে যে ভয়টা মৃত্যুর আগে জেগেছিল, তা এখনও লেগে আছে।

আর তা দেখেই রাগ আরও চল্লিশগুণ হয়ে গেল প্রমথর।

একখানা ছুরি বেরিয়ে এল তার পকেট থেকে।

‘ও কী করছেন ডাক্তারবাবু!’

ধীরেন্দ্রনারায়ণের ছেলে আর্তনাদ করে উঠল।

‘ময়নাতদন্ত!’

গম্ভীর গলায় উত্তর দিল প্রমথ ডাক্তার।

তারপর সেই ছুরিটা এলোপাতাড়ি বসাতে লাগল ধীরেন্দ্রনারায়ণের সারা দেহে। ঘরে কেউ জ্ঞান হারাল, কেউ পাথর হয়ে গেল এই দৃশ্য দেখে। কিন্তু কেউ বাধা দিতে আসতে পারল না।

তার কাজ সেরে যখন উঠল প্রমথরঞ্জন, তখন কসাইয়ের মতো রক্তমাখা সে।

ধীরেন্দ্রনারায়ণকে আর চেনা যাবে না। মাংসপিণ্ড দিয়ে তৈরি একটা অসম্পূর্ণ মানবদেহের গঠন চোখে পড়বে শুধু।

তাঁর ছেলে ততক্ষণে অজ্ঞান।

চাকরটার কাছে এগিয়ে এসে ধীরেন্দ্রনারায়ণ তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়াল এক লহমা। বলল, ‘দেখলে ভালো করে? পুলিশ দারোগাকে ঠিক করে জবানবন্দি দিও।’

এত অবধি বলে আবার সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল প্রমথরঞ্জন। কেউ তার পিছু নেওয়ার সাহস দেখায়নি। দারোয়ানরাও না।

তার গন্তব্য সে ঠিক করে নিয়েছে।

সূর্য দত্তরা পালিয়ে কোথায় যেতে পারে সে পরামর্শ তো তাদের প্রমথরঞ্জনই দিয়েছিল। শর্ত ছিল, তাকেও জেল থেকে পালাতে সাহায্য করতে হবে।

অনাদি চৌধুরীর বাড়ি! যা নাকি এখন ভূতের বাড়ি!

 

বিকেলের মধ্যে গোবিন্দরাম দাস এব‌ং শাজাহান ইলিয়াস এসে পৌঁছল ধীরেন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ীমশায়ের বাড়িতে।

খুনি কে, সে নিয়ে তাদের কোনও সন্দেহ ছিলই না। এবার চাকরের থেকে বিবরণ শুনে যখন ইংরেজ আর্টিস্ট ছবি এঁকে দিল, তখন তারা নিশ্চিত হল আরও।

গোবিন্দরাম আশ্চর্য মানুষ। এমন অপরাধ ঘটতে দেখে, এমন অপরাধীর পিছু ধাওয়া করে তার আনন্দ হয়।

অবাক হয় শাজাহান।

আজীবন স্বদেশিদের পিছু ধাওয়া করে সে যেন বুঝতেই পারে না, এমনভাবে কেউ কাউকে শুধু ব্যক্তিগত কারণে খুন করতে পারে। পুলিশে চাকরি করেও সে বুঝতে শেখেনি যে ব্যক্তিগত কারণেও মানুষ এত বড় অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

অথচ স্বদেশিদের কেউ ব্যক্তিগত কারণে কিছু করে না। করে দেশের জন্য।

সে স্বদেশিদের ধাওয়া করে কেন?

ব্যক্তিগত কারণে, নাকি দেশের জন্য?

কোন দেশ? ভারতবর্ষ তার দেশ না?

এই ভাবনাটা ভাবতে ভাবতেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল শাজাহান। সারাদিন সে যেন ঘোরে রইল। ওদিকে গোবিন্দরাম শহরজুড়ে খোচড় লাগিয়ে দিলেন। সেসব খোচড়রা প্রমথরঞ্জনের খোঁজে তোলপাড় করে ফেলল শহর।

সেদিন সন্ধেবেলা শাজাহান বসে লালবাজারে নিজের ঘরে। হঠাৎ উডপেক সাহেবের তলব এল।

শাজাহান হাজির হল উডপেকের ঘরে।

‘হাউ ইজ দ্য কিলার ডক্টর কেস প্রোগ্রেসিং?’

স্বদেশিদের মামলা থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার প‍র থেকে শাজাহান খুব হীনম্মন্যতায় ভোগে উডপেকের সামনে এসে দাঁড়ালেই। এই প্রশ্নের উত্তর মাথা নিচু করে, আমতা আমতা করে দিল শাজাহান।

গম্ভীরভাবে শুনলেন উডপেক। তারপর ধীরেসুস্থে একটা খবর দিলেন শাজাহানকে। থেমে থেমে যা বললেন, তার তর্জমা করলে এমনটা দাঁড়ায়—

‘দেখো, স্বদেশিদের কেসে তোমার ইনভলভমেন্ট ছিল বলেই খবরটা তোমাকে দিচ্ছি। ট্রাই টু কিপ ইট স্ট্রিক্টলি কনফিডেনশিয়াল। আমাদের দারোগা জনার্দন সান্যাল অ্যাবস্কন্ডিং স্বদেশি হুলিগানদের খোঁজ পেয়েছে। এদের সঙ্গে সাম ফাদার থাকতে পারে।’

নীরবে চোখ তুলল শাজাহান।

‘মেদিনীপুরের কাছে সাম অ্যাবানডনড হাউসে তারা শেলটার নিতে পারে। হুইচ বিলংড টু সাম অনাদি চৌধুরী।’

এই খবরে শাজাহানের খুব হেলদোল হল না। ধীরেন্দ্রনারায়ণের ক্ষতবিক্ষত লাশ তার চোখে ভাসছিল তখনও। যে রাগ থেকে ধীরেন্দ্রনারায়ণ খুন হয়েছেন, তার তল পাচ্ছিল না শাজাহান।

ঘরে আসতেই দেখা গেল গোবিন্দরাম অস্থির পায়চারি করছেন।

–তোমাকেই খুঁজছিলাম। ডাক্তারের খোঁজ দিয়েছে এক ভিস্তিওলা। সে শোভাবাজারের এক বাড়িতে প্রমথকে দেখেছে।
–চিনল কী করে?
–প্রমথর দাদা এককালে দাতব্য চিকিৎসালয় চালাত, সেখানে একে দেখেছিল।
–তাহলে তো সে বাড়িতে রেড করতে হয়!

রেড হল। সে বাড়িতেও প্রমথরঞ্জনের শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। এ বাড়িতে লুটপাটও চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইনি অনাদি চৌধুরীর এক আত্মীয়। এককালে যার পোষ্য ছিল প্রমথরঞ্জন।

এই নামটা শুনেই ঝলক খেলে গেল শাজাহানের মাথায়।

তাহলে স্বদেশিরা পালিয়ে যেখানে গেছে, প্রমথরঞ্জনও কি পালিয়ে সেখানেই…

 

এই ঘটনার পরের রাতেই অনাদি চৌধুরীর পোড়ো বাড়িতে লতাকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মহেশ সেন ও সনাতন হাজরা। আর সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন জয়চাঁদ নামক এক খানসামা, দারোগা জনার্দন সান্যাল, এক থুত্থুড়ে বৃদ্ধ ও ফাদার রুবেল; পুরুলিয়ার একটি গ্রামে একটি মিশনারি হোম চালান এই ফাদার রুবেল। যে অঞ্চলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহেশ সেন, যে অঞ্চলে লতা ধরা পড়েছে।

মহেশ সেন বা জনার্দন সান্যাল কেউই তখনও জানত না, কোনও এক অজ্ঞাত ফাদারের স্বদেশিদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনার কথা লালবাজারের গোয়েন্দারা আলোচনা করে চলেছেন কদিন যাবৎ।

 

আবার আগামী সংখ্যায়


তারান্তিনো-র সমস্ত পর্বের জন্য ক্লিক করুন: তারান্তিনো – প্রিয়ক মিত্র

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...