হাম, তুম এবং ওহ্‌: কেন ভারতের পাকিস্তান সমস্যা আসলে পাকিস্তান ও চিন— দুজনকে নিয়েই

মণিশঙ্কর আয়ার

 


‘অপারেশন সিন্দুর’-এর ফলাফলের সামরিক স্বচ্ছতা যেমন প্রয়োজন, তেমনিই আমাদের কূটনৈতিক আক্রমণের ফলাফল নিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনা করাও উচিত নয়। পাকিস্তানি ও চিনা বাহিনীকে আলাদাভাবে বা একসঙ্গে সামরিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেওয়া যথোপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় হলেও, আরও জরুরি হল আমরা যেন কূটনৈতিক ঝড় তুলে দক্ষিণ এশিয়াকে আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্র নয়, বরং শান্তির এলাকা বানাতে পারি। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন এবং অবিচ্ছেদ্য সংলাপ প্রয়োজন, বিশেষ করে আমাদের বক্তব্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের সম্পূর্ণ অভাবের প্রেক্ষিতে, যেখানে আমরা পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের উৎস বলে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি

 

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মতে ৭ মে ঠিক মধ্যরাতের পর ২৩ মিনিটে পাকিস্তানে নয়টি সন্ত্রাসবাদী শিবির ধ্বংস করার ঘটনায় উদ্ভূত দুটি বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে আমাদের নীরব সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের শীর্ষ সামরিক জেনারেলদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, “ক্ষয়ক্ষতি” হয়েছে মেনে নেওয়া, যার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে এগুলো অনিবার্য— এই কথাটি যোগ করা; এবং দ্বিতীয়ত, প্রথম দফায় ঘটে যাওয়া “কৌশলগত ভুল” স্বীকার করা, যা দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এখনও যা প্রকাশিত হয়নি, তা হল ভারতীয় যুদ্ধবিমানের কতগুলো ও কোন ধরনের বিমান ধ্বংস হয়েছে। যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, যুদ্ধ চলাকালীন এটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মানে এই দাঁড়ায়, ‘অপারেশন সিন্দুর’কে যেহেতু অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এখনও শত্রুতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, মনে হচ্ছে, আমাদের যুদ্ধবিমানগুলোকে সীমান্তের খুব কাছ দিয়ে ওড়ানো “কৌশলগত ভুল” ছিল, যার ফলে পাকিস্তান বিমানবাহিনী চিনা অস্ত্র ব্যবহার করে আঘাত হানতে পেরেছিল। এই “কৌশলগত ভুল” সংশোধন করার অর্থ দাঁড়িয়েছিল আমাদের বিমানগুলো সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ওড়ানো। প্রশ্ন হল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি বোমা হামলার পরিকল্পনা করার সময় সীমান্তের একেবারে ধারে উড়ে যাওয়ার বিপদ কেন বিবেচনা কর হয়নি? বিশেষ করে যখন “কৌশলগত সংশোধন” করে আমাদের বিমানকে আরও ভিতরে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তা কি এই কারণে যে, আমরা পাক-চিন সামরিক সহযোগিতার মাত্রা কম মনে করেছিলাম? আর এই ভুল মূল্যায়নের মূল কারণ কি ছিল এই ধারণা যে, আমরা নিতান্ত দুর্বল পাকিস্তানের মোকাবিলা করছি এবং এটা না বোঝা যে পাকিস্তানি ‘দাউদ’ ইতিমধ্যেই চিনা ‘গোলিয়াথ’-এর সঙ্গে মিশে গেছে?

যদি সত্যিই পাক-চিন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রশক্তিকে “কম মূল্যায়ন” করা হয়ে থাকে, তবে কি তা পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে আমাদের  দীর্ঘদিন ধরে কোনও অর্থপূর্ণ যোগাযোগ না থাকার ফল? পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে— ১১ বছর— এবং ২০১৯ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক মিশন (হাইকমিশনার ও প্রতিরক্ষা সচিব-সহ) ছাড়াই চলছে। আর চিনের ক্ষেত্রে গালওয়ান উপত্যকায় অনুপ্রবেশের পর থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত সামান্য বা কোনও যোগাযোগই ছিল না। তাহলে আমরা কি পাক-চিনের যৌথ সামরিক শক্তির পূর্ণ মাত্রা জেনেও পাকিস্তানের এত কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার “কৌশলগত ভুল” করেছি? নাকি এই প্রতিপক্ষদের সঙ্গে স্থায়ী কথোপকথনের অভাবে তাদের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে জানায় ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, যার ফলে আমরা না-বলা সংখ্যক বিমান হারিয়েছি, যার মধ্যে মোদির গর্বের এক বা একাধিক রাফালও থাকতে পারে?

ফরাসি সরকার যে তাদের কূটনীতিকদের, বিশেষ করে সেইসব দেশে যেখানে রাফাল কেনার কথা ভাবা হচ্ছে, নির্দেশ পাঠিয়েছে যেন তারা চিন যে প্রচারে চিনা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মের পারফরম্যান্সের সঙ্গে রাফাল ও ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মের তুলনা করছে— তার মোকাবিলা করে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখা উচিত? এই ঘটনা ঘটেছে চিনা জেসি ১০ যুদ্ধবিমান ও চিনা পিএল-১৫ বিভিআর ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্ম প্রথমবারের মতো যুদ্ধে ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে।

কেনই বা চিন সবার কাছে তাদের অস্ত্র ও যুদ্ধসরঞ্জামের (আধুনিক ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধ-সহ) শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করবে যদি তাদের হাতে চারদিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এসবের পারফরমেন্সের কোনও প্রমাণ না থাকে? আর ফরাসিরা যদি না তাদের রাফালের ওপর যা ঘটেছে, সেই অনিশ্চয়তার কুয়াশা সরিয়ে ফেলতে চায়, কেনই বা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং চিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঠেকানোর জন্য তাদের কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে?

 

প্যাটন নগর সিনড্রোম

হয়তো আমরা প্যাটন নগর সিনড্রোমেও ধরা পড়েছিলাম। আমার প্রজন্মের পাঠকরা নিশ্চয়ই স্পষ্ট মনে করতে পারবেন যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে আমাদের ট্যাঙ্কগুলোর তুলনায় পাকিস্তানকে আমেরিকার দেওয়া অসংখ্য প্যাটন ট্যাঙ্কের খুব সুনাম ছিল। প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্যাটন ট্যাঙ্কের আমাদের ট্যাঙ্ককে অনেক পিছনে ফেলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বল প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আরও দুর্বল মোতায়েনের জন্য ভারত এত বেশি প্যাটন ট্যাঙ্ক অকেজো করে দিয়েছিল বা দখল করে নিয়েছিল যে পরে সেগুলো একত্রে এক জায়গায় রাখা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য জায়গাটির নাম দেওয়া হয় “প্যাটন নগর”। আমরা কি ভেবেছিলাম যে, যারা চিনা বিমান চালাচ্ছিল এবং তাদের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করছিল সেই পাকিস্তানিদের একই পরিণতি ঘটবে?

অবশ্য, চেংদু-ভিত্তিক চিনা এরোনটিক্স কর্পোরেশন ও চিনের সামরিক উৎপাদন ক্ষমতা, পাকিস্তানি পাইলটদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং যৌথ মহড়া আমাদের বিমানবাহিনীর অজানা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যে বিষয়টি বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি  অনুপস্থিত ছিল, তা হল ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর আগের কয়েক বছরে চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ।

সংলাপ ও পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক আমাদের পাক-চিন সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে সতর্ক করতে পারত। শীতল যুদ্ধের সবচেয়ে ঠান্ডা সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নও এভাবেই শত্রুর সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ বজায় রেখে একে অপরের সম্পর্কে জেনেছিল। অথচ আমরা সরে এসেছি।

আমরা যেন দুমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাস্তবে, আমাদের প্রধান সামরিক চ্যালেঞ্জ একদিকেই— পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে পাক-চিন ফ্রন্ট। ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের মতো আগের যুদ্ধগুলোতে আমরা চিন ফ্রন্টের ওপর সতর্ক নজর রেখেছিলাম, যেন তারা পাকিস্তানকে সামরিকভাবে সাহায্য করতে কোনও সাঁড়াশি আক্রমণ চালাতে না পারে। এখন, চিনের উপস্থিতি সরাসরি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চলে এসেছে। চিন শুধু উন্নত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে না বা আগের মতো বসে থেকে হিমালয়ের ওপার থেকে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার কথা ভাবছে না, চিনা বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানি সহকর্মীদের সঙ্গে বসে চিনে তৈরি যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধ পরিচালনা করছে।

চিনের কৌশলগত বাধ্যবাধকতাগুলো আমাদের বোঝা দরকার— যা তাদের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ‘চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর’ রক্ষার প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে। ভারত অনুমান করেছিল তা পাকিস্তানকে দেউলিয়া করবে। হয়েছেও তাই এবং চিনও জানত এমনই হবে। কিন্তু চিনের কাছে এই বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়া ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই করিডর তাদের সংকীর্ণ মালাক্কা প্রণালী এড়িয়ে সরাসরি, সহজে ও দ্রুত ভারত মহাসাগরে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

এই অমূল্য বিনিয়োগ রক্ষায় চিনকে পাকিস্তান-ভারত সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানকে সামরিকভাবে সমর্থন করতেই হবে। যখন আমরা পহলগামের ঘটনার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হিসাবে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ভবন ও যোগাযোগকেন্দ্র বোমা মেরে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম— এই বিশ্বাসে যে তাতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে “হাজার ক্ষতের” বহু পুরনো নীতি পরিত্যাগ করবে— তখন কি সে-কথা যথাযথভাবে বিবেচনা করেছিলাম? গত ৩৫ বছরে বারবার পাকিস্তানের ওই নীতি তাদের ব্যর্থতা ডেকে এনেছে, কিন্তু বিজেপিকে নির্বাচনে জেতার জন্য অসাধারণ কার্যকর হাতিয়ারও তুলে দিয়েছে।

তাই পাকিস্তানি ও চিনা বাহিনীকে আলাদাভাবে বা একসঙ্গে সামরিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেওয়া যথোপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় হলেও, আরও জরুরি হল আমরা যেন কূটনৈতিক ঝড় তুলে দক্ষিণ এশিয়াকে আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্র নয়, বরং শান্তির এলাকা বানাতে পারি। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন এবং অবিচ্ছেদ্য সংলাপ প্রয়োজন, বিশেষ করে আমাদের বক্তব্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের সম্পূর্ণ অভাবের প্রেক্ষিতে, যেখানে আমরা পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের উৎস বলে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি।

অতএব, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর ফলাফলের সামরিক স্বচ্ছতা যেমন প্রয়োজন, তেমনিই আমাদের কূটনৈতিক আক্রমণের ফলাফল নিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনা করাও উচিত নয়। শশী থারুর ও তাঁর সহকর্মীরা বিদেশ সফরে যাওয়ার অনেক আগে, ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহলগামের প্রান্তরে সন্ত্রাসী নৃশংসতার দুই দিন পরই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) বৈঠক করেছিল। ভেটো ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্যরা (যার মধ্যে চিনও আছে) সর্বসম্মতিক্রমে ওই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। অস্থায়ী সদস্যরা (যার মধ্যে পাকিস্তানও আছে) শুধু সন্ত্রাসবাদের নিন্দাই করেনি, দাবি জানিয়েছিল যাতে “অপরাধী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতা” এবং যারা অস্ত্র সরবরাহ ও সমর্থন করেছে তাদেরও বিচার করা হয়।

পাকিস্তান কোনও দ্বিধা না করেই ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিল— কারণ ইউএনএসসি একবারও ওই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের জন্য কারা দায়ী তার নাম উল্লেখ করার চেষ্টা করেনি। পাকিস্তানকে অভিযুক্ত তো করাই হয়নি, বরং ইউএনএসসি-র নীরবতা পাকিস্তানকে কার্যত দায়মুক্ত করেছে। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের ইউএনএসসি-র অবস্থান পরিবর্তন করানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শশী থারুর ও তাঁর দলের সাহসী প্রচেষ্টা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহচরের চেষ্টার পরও তা ব্যর্থ হয়েছে।

ভারত যে ফোরামেই পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করানোর চেষ্টা করেছে— ইউএনএসসি, ব্রিকস, এসসিও বা অন্যত্র— যেন ইউএনএসসির প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভাষার বাইরে যাওয়া যায়— কোনও ফোরামই তাতে সাড়া দেয়নি। ইউএনএসসি প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভাষায় অটল থেকেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে অপরাধী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতা এবং সমর্থক হিসাবে নাম উল্লেখ করা এড়িয়ে গিয়েছে। এমনকি ভুটান, মালদ্বীপ বা মরিশাসও— যাদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা সাধারণত আমাদের সমর্থন করে— এবার আমাদের পক্ষে কথা বলেনি। এটা এক সশব্দ কূটনৈতিক বিপর্যয়। আমাদের একমাত্র প্রকাশ্য সমর্থন এসেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে— যাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

 

এবং বিজয়ী হল

প্রকৃতপক্ষে, পহলগাম ঘটনার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী পাকিস্তান। শুধু যে পাকিস্তানকে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়েছে তাই নয়, বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল— দুটো থেকেই তাদের টলমল অর্থনীতিকে বাঁচাতে উদার অর্থ সহায়তা মিলেছে। পাশাপাশি চিন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বিশাল আর্থিক সাহায্য এসেছে। তাছাড়া, স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যিনি কথিত বেসামরিক সরকারের ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান না হয়েও হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের অভূতপূর্ব আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিশ্ব স্পষ্টতই মনে করছে, কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।

এক্ষেত্রে একমাত্র কৌশলগত পথ হল— পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে এক-মুখী যুদ্ধের আগেই, দুই ফ্রন্টে “সংকট নিরসন, সংলাপ, ও কূটনীতি” শুরু করা, এবং এভাবেই কূটনৈতিক পথ খোলা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যে উপদেশ দেন, কিন্তু নিজে মেনে চলেন না। যদি সত্যিই, মোদিজির ঘোষণামতো, এটি “যুদ্ধের যুগ” না হয়, তবে এখনই সময় এসেছে তিনি যেন আমাদের পশ্চিম ও উত্তরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন, পুনর্মিলনের জন্য— মুখোমুখি সংঘাতের জন্য নয়। আমাদের অজৈববৈজ্ঞানিক নেতা কি তাঁর তলোয়ার খাপে ঢুকিয়ে, বিশ্বের এই অঞ্চলে এক শান্তির দূত হিসাবে আবির্ভূত হতে পারবেন? যদি তা হয়, তবে সত্যিই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য লাইনে তাঁর বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও পিছনে ফেলতে পারবেন।


মণিশঙ্কর আয়ার ২৬ বছর ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবায় কাজ করেছেন, চারবারের সাংসদ, সংসদে দুই দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন, এবং ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় ছিলেন। তাঁর এই নিবন্ধটি ফ্রন্টলাইন পত্রিকায় গত ১৫ জুলাই ইংরেজিতে প্রকাশিত। পত্রিকার জন্য লেখাটি অনুবাদ করে দিয়েছেন প্রদীপ দত্ত।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...