![bukaowski](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2018/06/bukaowski.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
চার্লস বুকাওস্কি
অনুবাদ : শুভঙ্কর দাশ
নবম পর্বের পর
১০/৩১/৯১
দুপুর ১২টা ২৭ মিনিট
একটা খুব খারাপ দিন গেল ঘোড়দৌড়ের মাঠে, এমন নয় যে প্রচুর টাকা পয়সা গেছে আমার, হয়ত একটা রেস জিতেও জেতে পারতাম কিন্তু ওখানে অনুভূতিটা ছিল অসহ্য। কিছুই নাড়া দিচ্ছিল না। যেন আমি জেলে বন্দি, আমার বেশি সময় নেই আর। সেই একই মুখ, সেই একই ১৮% ফেরত পাওয়া। মাঝে মাঝে মনে হয় একটা ফিল্মে আমরা সবাই আঁটকে গেছি। আমরা আমাদের লাইনগুলো জানি, কোথায় হাঁটতে হবে, কীভাবে অভিনয় করতে হবে, শুধু কোনও ক্যামেরা নেই। তবু এই ফিল্ম ছেড়ে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না। আর এটা খুব খারাপ একটা ফিল্ম। আমি চিনি ওই প্রত্যেকটা ক্লার্ককে। খুব ভালো করে চিনি। মাঝে মাঝে অল্প কথা বলি ওদের সাথে বাজি ধরার সময়। আমার ইচ্ছে করে একজন এমন ক্লার্ক পেতে যে নিজের মত প্রকাশ করে না, যে স্রেফ আমার টিকিটগুলো পাঞ্চ করে দেবে আর বকবক করবে না। কিন্তু ওরা সবাই সামাজিক হয়ে ওঠে, শেষ অবধি। ওরা বিরক্ত হয়ে আছে। আর পাহারাও দিচ্ছে, অনেক খেলুড়েই আছে যাদের মাথার গণ্ডগোল। অনেক সময়ই এই ক্লার্কগুলোর সাথে ঝামেলা লেগে যায়, জোরে বেল বেজে ওঠে আর দৌড়ে আসে সিকিউরিটির লোকজন। আমাদের সাথে কথা বলে ওরা টের পায় বোঝে আমাদের। ওভাবে ওরা নিজেদের নিরাপদ ভাবে। ওরা একজন বন্ধুতুল্য জুয়াড়িকে বেশি পছন্দ করে।
আমার কাছে অবশ্য ঘোড়ার উপর বাজি ধরা এইসব জুয়াড়িরা ঝামেলাহীন। রোজ যারা আসে তারা জানে আমি একটি মাল আর তাই আমার সাথে কথা বলতে চায় না। আমি সব সময় ব্যস্ত একটা নতুন পদ্ধতি নিয়ে, মাঝপথেই অনেক সময় আমি পালটাই এই পদ্ধতি। আমি সব সময় চেষ্টা করি সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংখ্যা জুড়তে, পাগলামিকে রীতিভুক্ত করে একটা বা অনেকগুলো সাধারণ সংখ্যায় নামিয়ে আনতে। আমি জীবনটা বুঝতে চাই, জীবনের ঘটনাগুলোকে বুঝতে চাই। আমি একটা লেখা পড়েছিলাম যেখানে লেখা ছিল দাবা খেলায় বহুদিন ধরেই এটা মনে করা হয় যে একটা রাজা, একটা গজ আরেকটা নৌকো হলো একটা রাজা আর দুটো ঘোড়ার সমান। লস অ্যালামসের একটা মেশিন ৬৫,৫৩৬ প্রসেসরকে কাজে লাগানো হয় এই প্রোগ্রামে। কম্পিউটারটা এই ধাঁধাঁর সমাধান করে ফেলে ৫ ঘণ্টায় একশো লক্ষ কোটি চাল পরীক্ষা করার পর, জেতার অবস্থা থেকে পেছনের দিকে এগিয়ে। এটা পাওয়া যায় যে একটা রাজা, নৌকো আর গজ হারিয়ে দিতে পারে একটা রাজা আর দুটো ঘোড়াকে ২২৩ চালে। এটা আমার অসাধারণ ব্যাপার মনে হয়েছিল। এটা স্রেফ হারিয়ে দেবে ওই সব মোটা দাগের চোখ পিটপিট করা মাতালগুলোর ঘোড়ার উপর বাজি ধরার কায়দাবাজিকে।
আমি বিশ্বাস করি বড় বেশি দিন আমি সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। আমি ওভাবে কাজ করে গেছি ৫০ বছর বয়স অবধি। ওই বাঞ্চোতগুলো আমাকে অভ্যস্ত করেছে কোথাও একটা যেতে প্রতিদিন আর কোথাও একটা থাকতে অনেকগুলো ঘণ্টা আর তারপর ফিরে আসতে। নিজেকে অপরাধী মনে হয় এভাবে বকরবকর করতে। তো এখন ঘোড়দৌড়ের মাঠে নিজেকে শুধু ক্লান্তই লাগছে না একই সময় মনে হচ্ছে আমি পাগলে যাচ্ছি। রাতগুলো আমি বাঁচিয়ে রাখি কম্পিউটারের জন্য বা মদ খাওয়ার জন্য বা দুটোর জন্যই। আমার কিছু পাঠক ভাবেন আমি ঘোড়া ভালোবাসি, মাঠের ওই অ্যাকশন আমাকে উদ্দীপ্ত করে, আমি একজন পাক্কা জুয়াড়ি, মাচো, হিরো টাইপ। ডাকে ঘোড়া আর ঘোড়দৌড়ের উপর বই-পত্র পাই আমি, ঘোড়দৌড়ের মাঠের গল্প আর ইত্যাদি। ওইসব আমি বাল দিয়েও পুঁছি না। আমি ঘোড়দৌড়ের মাঠে যাই একান্ত অনিচ্ছায়। অন্য কোথাও যে যাব সে কথা আমার বোকা মাথা থেকে বেরোয় না। কোথায়, কোথায়, দিনদুপুরে কোথায়? হ্যাঙ্গিং গার্ডেনে? সিনেমায়? হে প্রভু আমায় সাহায্য করো, আমি ওই ভদ্রমহিলাদের সাথে বসতে পারি না বা আমার বয়সী ওই লোকগুলোর সাথে। ওরা তো মৃত, আর যদি না মরে গিয়ে থাকে তাহলে ওদের মরে যাওয়া উচিত কারণ দেখে তো তাই মনে হয়।
আমি চেষ্টা করেছি ঘোড়দৌড়ের মাঠ থেকে দূরে থাকার কিন্তু তখন আমার খুব নার্ভাস লাগে আর বিষণ্ণ হয়ে পড়ি আর সে রাতে কম্পিউটারকে দেওয়ার মতো কোনও রসকষ থাকে না আমার। এখান থেকে গাঁড় সরিয়ে নিতে গেলে হেমিংওয়ের কথা মনে পড়ে আর যখন হেমিংওয়ের কথা মনে পড়বে তখন আপনাকে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে। সবটাই অসম্ভব, একটানা চলা একটা হরার শো। হ্যাঁ, আমি ওখানে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, ভয় পাই সন্ত্রাসিত হই কিন্তু আমি এখন অবধি একজন ছাত্রও। নরকের ছাত্র।
কে জানে হয়ত কোনওদিন আমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ব। আমি শুয়ে শুয়ে দেওয়ালে লাগানো টুকরো কাগজে পেন্ট করব। আমি পেন্ট করব একটা লম্বা ব্রাশ দিয়ে আর হয়ত ওটা ভালোও লাগবে আমার।
কিন্তু এই মুহূর্তে, ঘোড়ার জুয়াড়িদের মুখগুলো, পিচবোর্ডের মুখগুলো, ভয়ঙ্কর, বদ, ফাঁকা, লোভী, মরে যাচ্ছে এমন মুখগুলো, দিনের পর দিন। ছিঁড়ে ফেলছে নিজেদের টিকিটগুলো, পড়ছে নিজেদের নানান কাগজ, দেখছে টোট বোর্ডের পরিবর্তনগুলো আর ক্রমাগত আরও ছোট আর নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। আর আমি ওদের সাথে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমি ওদেরই একজন। আমরা সবাই অসুস্থ, আশার ছলনায় ডুবে আছি। আমাদের সস্তা জামাকাপড়, আমাদের পুরনো সমস্ত গাড়ি। আমরা এগিয়ে চলেছি মরীচিকার দিকে, আমাদের পুরোটা জীবন নষ্ট হয়ে গেল অন্য সবার মতোই।
১১/৩/৯১
দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিট
আজ বাড়িতেই আছি, ঘোড়দৌড়ের মাঠে আর যাইনি, গলায় খুব ব্যথা আর একটা যন্ত্রণা মাথায় ব্রহ্মতালু বরাবর, একটু ডান দিক ঘেঁষে। যখন আপনার ৭১ বছর হবে তখন আপনি কখনও বলতে পারবেন না কখন আপনার মাথাটা খোলা ফেটে বেরিয়ে আসবে। এখনও মাঝে মাঝে প্রচুর মাল টানি আর অতিরিক্ত সিগারেট ফুঁকি। এসব করার জন্য শরীরটা আমার উপর ক্ষেপে যায়, কিন্তু মাথাটাকেও তো কিছু দিতে হবে। আর মেজাজটাকে। মদ আমার মাথা আর মেজাজটাকে খাদ্য যোগায়। যাইহোক আজ বাড়িতেই আছি ঘোড়দৌড়ের মাঠে না গিয়ে, ঘুমিয়েছি রাত ১২টা ২০ অবধি।
একটা ল্যাদামোর দিন। স্পাতে গিয়ে শরীর ডোবালাম বীরের মতো। সূর্য উঠে গেছে, জল বুদ্বুদ কাটছে আর পাক খাচ্ছে, বেশ গরম। অস্থিরতাটা কেটে গেল আমার। কেন কাটবে না? একটা সীমানা চিহ্নিত করুন। ভালো থাকবার চেষ্টা করুন। পুরো পৃথিবীটাই তো এক বস্তা গু যা বস্তা ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আমিও বাঁচাতে পারব না। কিন্তু আমি অনেক মানুষের থেকে চিঠি পেয়েছি যারা দাবি করেছে আমার লেখালিখি তাদের গাঁড় বাঁচিয়েছে। কিন্তু আমি সে কারণে লিখিনি, আমি লিখেছি আমার নিজের গাঁড় বাঁচাতে। আমি চিরকালই বহিরাগত, কখনওই মানানসই উপযুক্ত হতে পারিনি। আমি তা টের পেয়েছিলাম স্কুল চত্বরেই। আরেকটা জিনিস বুঝেছিলাম আমি শিখি খুব ধীরে ধীরে। অন্যান্যরা জানত সব কিছু আর আমি বাঁড়া কিছুই জানতাম না। সবকিছুই সাদা আর চোখ ধাঁধাঁনো আলোয় চোবানো। আমি বোকা ছিলাম। আর তবু আমি যখন বোকা ছিলাম আমি এটা জানতাম যে আমি পুরোটা বোকা নই। আমার একটা ক্ষুদ্র অংশ আমি বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, সেখানে ছিল কিছু একটা। যাই হোক না কেন। এই যে আমি স্পাতে শরীর ডুবিয়ে বসে আছি আর আমার জীবন ক্রমে শেষ হয়ে আসছে। এতে আমার মন খারাপ হয় না, জীবনের সার্কাস আমি দেখিয়াছি। তবু অনেক কিছু লেখার বাকি থেকে যায় সব সময়, যতক্ষণ না ওরা আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় অন্ধকারে বা অন্য কিছু একটাতে। শব্দের এই একটা ভালো দিক, কদম কদম বাড়ায়ে যা করে চলেছে, খুঁজে চলেছে আরও অন্য কিছু, বাক্য গঠন করে চলেছে, হেভি মস্তিতে আছে। শব্দে আমার ভেতরটা ভর্তি ছিল আর এখনও ওরা বেরিয়ে আসে ভালোভাবেই। আমি ভাগ্যবান ছিলাম। এখন শরীর ডুবিয়ে আছি স্পাতে। গলায় কষ্ট মাথায় যন্ত্রণা, আমার ভাগ্য সহায় ছিল। বুড়ো লেখক এখন স্পাতে, আবেশে আনমনা। ভালো, ভালো। কিন্তু নরক সব সময় তৈরি হয়ে আছে, অপেক্ষা করছে নিজেকে মেলে ধরার জন্য।
আমার বুড়ো হলুদ বেড়ালটা আমার দিকে এল দেখল আমাকে জলের ভেতর নিজের শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতে। আমরা তাকালাম একে অপরের দিকে। আমরা দুজনেই সমস্ত কিছু জানি আবার কিছুই জানি না। তারপর সে হেঁটে চলে গেল।
তারপর, দিনটা এগিয়ে চলল। লিন্ডা আর আমি কোথাও একটা লাঞ্চ খেলাম, মনে নেই কোথায়। খাবার খু্ব একটা ভালো ছিল না, শনিবারের ভিড়। তারা বেঁচে আছে কিন্তু তারা আসলে বেঁচে নেই। টেবিলে টেবিলে বসে আছে আর ঢাকা খোপগুলোতে, খাচ্ছে আর কথা বলছে। দাঁড়ান, হে ভগবান মনে পড়েছে, এইতো সেদিন রেসের মাঠে যাওয়ার আগে লাঞ্চ সারছিলাম। ওই কোণাটায় বসে ছিলাম, পুরো খালি ছিল, অর্ডার দেওয়া খাবার পেয়ে খাচ্ছিলাম। একটা লোক এসে ঠিক আমার পাশের চেয়ারটাতে বসল। ২০, ২৫টা চেয়ার খালি ছিল। ও আমার পাশের চেয়ারটাকেই বাছল। আমার অত লোকজন ভালোলাগে না। চেষ্টা করি যাতে তাদের থেকে দূরে থাকতে পারি। ও অর্ডার দিয়ে কথা বলতে শুরু করল ওয়েট্রেসের সাথে। প্রফেশনাল ফুটবল নিয়ে। আমিও দেখি মাঝে মাঝে কিন্তু কাফেতে তা নিয়ে বকবক করা? ওরা বকেই চলল এটা ওটা সেটা নিয়ে। চলতেই থাকল। প্রিয় খেলোয়াড়। কে জিতবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর আরেকজন যোগ দিল দূরের খোপে বসে। আমি হয়ত কিছুই মনে করতাম না যদি না ওই শুয়োরের নাতি আমার ঘাড়ের কাছে এসে বসে থাকত। ভালোই লোকটা ঠিকই, ফুটবল ভালোবাসে। নিরাপদ। অ্যামেরিকান। ঠিক আমার পাশটাতে বসে আছে। বাদ দিন।
তা হ্যাঁ, আমরা লাঞ্চ করলাম, লিন্ডা আর আমি, ফিরে এলাম তারপর ল্যাদামোটা রাতের দিকে গড়িয়ে চলল, তখন ঠিক অন্ধকার হওয়ার পর লিন্ডা লক্ষ করল কিছু একটা। এ সব ব্যাপারে ও খুব চৌকশ। আমি দেখলাম ও উঠোন পেরিয়ে আসছে আর ও বলল, ‘বুড়ো চার্লি পড়ে গেছে, ফায়ার ডিপার্টমেন্টের লোকজন এসেছে।’
বুড়ো চার্লি হল ৯৬ বছরের এক বৃদ্ধ যে আমাদের পাশে তার বিশাল বাড়িতে থাকে। গত সপ্তাহে তাঁর স্ত্রী মারা গেছে। তাদের বিবাহিত জীবনের মেয়াদ ছিল ৪৭ বছর।
আমি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখলাম দমকলের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। দেখলাম একজন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। ‘আমি চার্লির পড়শি, উনি কি বেঁচে আছেন?’
‘হ্যাঁ’, সে বলল।
এটা বোঝা যাচ্ছিল যে ওরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছে।
দমকলের গাড়িটা এসেছে প্রথমে। লিন্ডা আর আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। তারপর অ্যাম্বুলেন্সটা এল। ব্যাপারটা অদ্ভুত। দুটো বেঁটে লোক গাড়ি থেকে নামল, তাদের খুবই ছোটখাট লাগছিল। তারা দাঁড়িয়েছিল পাশাপাশি। দমকলের গাড়ির তিনজন লোক তাদের ঘিরে ছিল। একজন কথা বলতে শুরু করল ওই বেঁটে লোকগুলোর সাথে। তারা ওখানে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়তে লাগল। তারপর ব্যাপারটা শেষ হল। ওরা ঘুরে গিয়ে স্ট্রেচারটা নিয়ে এল। ওরা ওটা বয়ে নিয়ে গেল লম্বা সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির ভেতরে।
ওরা বাড়ির ভেতরে ছিল অনেকক্ষণ। তারপর ওরা বেরিয়ে এল। বুড়ো চার্লি স্ট্রেচারের সাথে বেল্ট দিয়ে বাঁধা। ওরা যখন ওকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার জন্য তৈরি হচ্ছে আমরা এগিয়ে গেলাম। ‘মনে জোর আনুন চার্লি,’ আমি বললাম, ‘আমরা আপনার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকব,’ লিন্ডা বলল।
‘তোমরা কারা?’ চার্লি জিজ্ঞাসা করল।
‘আমরা আপনার পড়শি,’ লিন্ডা উত্তর দিল।
তারপর ওকে গাড়িতে ভরে নিয়ে ওরা চলে গেল। একটা লাল গাড়ি পিছন পিছন গেল, ভেতরে ২জন আত্মীয়।
একজন পড়শি রাস্তার ওপার থেকে এলেন। আমরা হাত মেলালাম। কয়েকবার মাল টেনেছি একসাথে। ওনাকে বললাম চার্লির ব্যাপারটা। আমরা সবাই এটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলাম যে আত্মীয়রা কেন ওনাকে এত একা একা ছেড়ে রেখেছিলেন। আর আমরা এছাড়া আর কীইবা করতাম।
‘আমার ঝর্ণাটা আপনার দেখা উচিত,’ আমার পড়শি বললেন।
‘বেশ,’ আমি বললাম, ‘দেখা যাক ওটা।’
আমরা ওখানে গেলাম, ওর বউকে পেরিয়ে, বাচ্চাদের পেরিয়ে, খিড়কির দরজা দিয়ে ওর পেছনের উঠোনে, ওর সুইমিং পুল ছাড়িয়ে একদম পিছনে সত্যি সত্যি একটা বিশাল ঝর্ণা। বিরাট ব্যাপার। ওটা তৈরি বড় বড় নানান রঙিন পাথর দিয়ে। আলোয় ভেসে যাওয়া জল নেমে আসছে গর্জন করে। বিশ্বাস করা যায় না এমন। একজন শ্রমিক তখনও কাজ করছে সেখানে। আরও কিছু কাজ বাকি আছে ঝর্ণাটায়।
আমি হাত মেলালাম শ্রমিকটির সাথে।
‘ও আপনার সমস্ত বই পড়েছে,’ আমার পড়শি বললেন।
‘মাইরি, মাইরি,’ আমি বললাম।
শ্রমিকটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
তারপর আমরা সবাই ফিরে এলাম বাড়ির ভেতর। আমার পড়শি আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এক পাত্তর ওয়াইন হবে নাকি?’
আমি বললাম, ‘না ধন্যবাদ।’ তারপর ব্যাখ্যা করে বললাম গলার ব্যথার কথা আর মাথার যন্ত্রণার কথা।
লিন্ডা আর আমি রাস্তা পেরিয়ে ফিরে এলাম আমাদের বাড়িতে।
আর এটাই মোদ্দা ঘটনা দিন আর রাতের।
(আবার আগামী সংখ্যায়)