![ishani](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2020/10/ishani.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
ঈশানী বসাক
আমেরিকান কবি ইমিলি ডিকিনসন একজন অন্য মাত্রার কবি যিনি কবিতাকে বিভিন্ন ছাঁচে ফেলে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। ১০ ডিসেম্বর, ১৮৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই কবিনী। ডিকিনসনের কবিতা আমাদের পালাতে দেয় না, আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় সামাজিক সীমাবদ্ধ কুয়োর ব্যাংকে। কনকর্ড ট্রান্সেন্ডেন্টালিস্টদের মতো তিনিও কবিতাকে দুমুখো তরোয়াল ভাবতেন। হয়তো একজনকে তা মুক্তি দিতে পারে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের তলার মাটিও ছিনিয়ে নিতে পারে। আমহার্স্টে জন্মাগ্রহণ করা এই বিদুষী নারীর কবিতা যেন খাপ খোলা তীর যার সামনে দাঁড়াতে পারেনি সমাজ। তাঁর “পলায়ন একটি ধন্যবাদ যোগ্য শব্দ” (Escape is a thankful word) তেমনি এক অসামান্য লেখা। ইমিলি নিজেকে কোথাও বদ্ধ রাখতে পারতেন না। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা যেমন, “কেউ এই ছোট্ট গোলাপটিকে চেনে না” (No body knows this little rose), “আমি এক এমন মদের স্বাদ পেয়েছি যা তৈরি হয়নি” (I taste a liquor never brewed), “ফুল… ভালো… যদি কেউ হয়” (Flower-Well-if anybody) ইত্যাদি এক অন্যরকম ভাসিয়ে দেওয়া লেখনী। সাধারণ এক অর্থ থেকে তিনি পরিশুদ্ধ করে বানিয়ে ফেলতেন মধু।
ব্রাইটস ডিজিজ বলে এক অসুখে ইমিলি চলে যান মাত্র ৫৫ বছর বয়সে। তবে মনে বহু যন্ত্রণা নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। পাঠক না থাকলে, লেখার গুরুত্ব হারানোর ভয়, কাছের মানুষ চলে যাবার হতাশা। ইমিলির নির্দেশে বহু কবিতাই তাঁর বোন ল্যাভিনিয়া তাঁর মৃত্যুর পর পুড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি যখন বুঝতে পারেন লেখার মূল্য তখন বাকি সমস্ত লেখা প্রকাশের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর কবিতায় যেমন ঈশ্বর আছেন, তেমন ছিল মৃত্যুর ইচ্ছা, নিজের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো।
***
আমি একটা মাছির ভনভন শুনতে পাচ্ছি
আমি একটা মাছির ভনভন আওয়াজ পেয়েছিলাম আমার মৃত্যুর সময়। ঘরের নিস্তব্ধতার মধ্যে সেটা আরও প্রকট। মনে হচ্ছিল ঝড়ের পূর্বে বাতাসের তীব্র গাম্ভীর্য যেন।
চারিদিকের চোখগুলো যেন শুকিয়ে গেছে। নিশ্বাস ধীরে ধীরে শক্ত করে হাত ধরছে। সেই মুহূর্তের জন্য সবাই বসে যখন রাজাকে সাক্ষী হিসেবে ঘরে ডেকে আনা হবে।
আমি আমার সমস্ত স্মৃতি উইল করে দিয়েছি। যা কিছু আমার অংশের তা দিয়ে দেওয়ার পর মাঝখানে এই মাছির নড়াচড়া।
একটা নীল রঙের নড়াচড়া, ভনভন চলে আমার আর আলোর মধ্যে। তারপর জানালাগুলো ব্যর্থ হল। আমি আর দেখার জন্য দেখতে পাচ্ছিলাম না।
সকালের ভিতর থেকে…
আর কি সত্যিই কখনও সকাল হবে?
দিনের আলো বলে কি সত্যিই কিছু হয়?
আমি কি সেই দিনের বেলাকে দেখতে পাব পাহাড়ের চূড়া থেকে? যদি আমি কখনও পাহাড়ের মতো দীর্ঘ হই?
লিলি ফুলের মতো পা আছে এই দিনের বেলার?
পাখির মতো পালক আছে?
একে কি বিখ্যাত দেশগুলোতে যাদের নাম কখনও শুনিনি সেখানে কিনতে পাওয়া যায়?
ওহ কেউ স্কলার, কেউ নাবিক
কেউ বা আকাশ থেকে আসা জ্ঞানী ব্যক্তি
একজন ছোট্ট তীর্থযাত্রীকে কেউ একটু পথ দেখাবেন?
বলতে পারবেন সকালবেলা কোথায় পাওয়া যায়?
ইহলোক
আমি সুন্দরের জন্য মরে গেছিলাম
কিন্তু সমাধিতে আমার জন্য স্থান কুলোয়নি
কেউ একজন সত্যের জন্য দেহত্যাগ করেছিলেন।
তাঁকে পাশের ঘরে জায়গা দিয়েছিল।
সে জিজ্ঞেস করেছিল আমাকে,
তুমি পারলে না কেন?
আমি সত্য আর তুমি সুন্দরের নিমিত্ত
আমরা তো ভাই, আমরা তো একই।
তাই রাত হলেই আমরা একঘর থেকে আরেক ঘরে কথা বলতাম। ততদিন কথা বলেছি যতদিন না শ্যাওলা আর ঝোপঝাড় আমাদের নাম মুছে দেয়নি।
কেন না মৃত্যুর জন্য আমি অপেক্ষা করতে পারিনি
মৃত্যুর জন্য আমি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না তাই সেই আমার জন্য অনুগ্রহ করে দাঁড়াল। সেই গাড়িতে কেউ ছিল না। শুধু আমরা আর অমরতা ছিল।
আমরা ধীরগতিতে এগোচ্ছিলাম কারণ তার কোনও তাড়া ছিল না। আমার পরিশ্রম আর অবসর, দুইই তার প্রতি ভদ্রতা বজায় রেখে সঁপে দিয়েছিলাম।
আমরা সেইসব স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যেখানে টিফিনটাইমে বাচ্চারা ছোটাছুটি করে। আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকা সোনালি ধানের জমি, লাল অস্ত রাঙা সূর্য ফেলে আমরা চলে যাচ্ছিলাম।
হতে পারে আমরা নই, ওরাই চলে যাচ্ছিল। শিশিরের এক আলাদা কাঁপনধরা শীত আছে।
যেন পাতলা সিল্কের গাউন, একটি মেয়ের মুখ ঢাকা পাতলা সুতির আবরণ কিংবা স্কার্ফ।
আমরা একটা বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে যেন মাটি ফুলে উঠেছিল, তার চালা আর দেখাই যাচ্ছিল না প্রায়। সিলিংয়ের অলঙ্করণ মাটিতে ছত্রখান…
সেই তখন থেকে কত যুগ পেরোল
তাও মনে একটা দিনের থেকে যেন ছোট
আমার সেসব দেখে মনে হয়েছিল যেন কতগুলো ঘোড়ার মাথা অমরত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে।