মদ এক স্বর্ণাভ শিশির

মদ এক স্বর্ণাভ শিশির | ইশরাত তানিয়া

ইশরাত তানিয়া 

 

সীমান্ত চেকপোস্টে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আমি। তুমি হয়তো ভাবছ, নিঃসঙ্গ যে মানুষটি আনমনে ডান হাত দিয়ে গালের বাঁদিকটা চুলকাল, সে কে হতে পারে? এই এক অভেদ্য সমস্যা মুক্তবাজার অর্থনীতির। ব্যবসা, উৎপাদন, শিল্পকারখানা সবই চলবে সর্বোচ্চ লাভের ভিত্তিতে। কোন লাভের আশায় এক মুঠো মাটি পকেটে পুরলাম তা নিজেও জানি না। যেমন তুমি ঠিক জানো না, কেন পড়ছ যা আমি লিখছি। পড়ছ, মানে একেকটি শব্দে আমাকে আশ্রয় দিচ্ছ। কালো কালো অক্ষর মিলে নির্মিত হয়ে উঠছি আমি। এই যেমন— দুদিন ধরে শেভ করছি না। একটি দৃশ্য জাগছে। তুমি দেখছ, দুদিনের না কামানো ইতস্তত দাড়ি, আড়াল করতে পারেনি গালের মসৃণতা। পূর্বকল্পিত কিছু যদি থেকে থাকে তার সঙ্গে অক্ষর, অক্ষরের সঙ্গে শব্দ, শব্দের সঙ্গে শব্দের প্রয়োগকর্তা ঢুকে যাচ্ছে তোমার ভেতর। তুমি ধারণ করছ। স্পেস দিচ্ছ, সময়ও।

চোখের নিচে এক আকাশ আঁধার অথচ অদ্ভুত দ্যুতিময় চোখে চিন্তাশীল ভেতরটার ছায়া খেলে। সে আলোছায়ায় পুঁজিবাদের সারি সারি কত মডেল। প্রতিযোগিতার মাত্রা, নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ, হস্তক্ষেপ কিংবা ব্যক্তিমালিকানার সুযোগ— সব মিলেমিশে আমি ঠিক কে, কোন পর্যায়ে আছি? আমার সঙ্গে ভাবছ তুমিও। ক্রমশ অনিয়মিত আমাকে বুঝতে তোমার ঢুকে যেতে হবে শব্দের গহীনে। তুমি তৈরি?

হতে পারে, এই ‘আমি’ একজন দস্তয়েভস্কি। সাইবেরিয়ার কারাগার থেকে বেরিয়ে ভাবছি, দ্য ইনসাল্টেড অ্যান্ড দ্য ইনজ্যুরড-এর কথা, ভাবছি লম্বা পথ পাড়ি শেষে সামনেই বাড়ি। একটু এগোলেই স্বাগত জানাবে শিউলিতলার সাদা ফুলগুলো। তাদের জাফরানি বৃন্তের আভায় নরম কমলারঙা চারদিক। আর কিছু পরেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মা চোখ মুছবে। বাবা একটু মিষ্টির খোঁজে ডাকবে কাউকে। পায়ে পায়ে ঘুরবে মিনি। ঈষৎ চঞ্চল হবে কারও কাজল চাহনি। গাছকোমর করে বাঁধা সে আঁচল খুলে দিলে চেনা ঠোঁটে পায়েশগন্ধী হাওয়া। বন্ধ দরজার ওপাশে ঝুমঝুম ঘরে কত বুনোফুলই ফুটতে পারে! অথচ এক স্তূপ বাসন নিয়ে কলপাড় অভাবিত ঘুমিয়ে আছে। কলের মুখে নেই জলের আনাগোনা। থালা-বাটিতে ঠোকাঠুকি নাকি লেগেই থাকে। এখন কি চুপচাপ! কেউ নেই কোথাও। পায়ের কাছে ছেড়ে রাখা জামা ফেলে কেউ চলে গেছে। যাওয়ার আগে হয়তো জুতো মুছে গেছে পরিত্যক্ত জামায়। আমি আর কেউ নই ওদের। কিংবা আমি পৌঁছনোর আগেই বিবর্ণতায় ধুয়ে গেছে শব্দ-গন্ধ। কী করে আশা করতে পারি পরিবর্তনগুলো আসবে না? ঘরে না ঢুকে থমকে দাঁড়াবে বাড়ির চৌহদ্দিতে। এমন যদি ভাবি— কেউ তো আছে, যাকে সত্য বলে জেনেছি, সে হবে আমার অনেকগুলো ভুল ধারণার একটি। ভুল ধারণাগুলো আবার দীর্ঘমেয়াদি। কেউ যে নেই— এ নিতান্ত জুবুথুবু সত্যটুকু মেনে নেওয়ার অপারগতায় বা অনিচ্ছায় সৃষ্টি করেছি কত বায়বীয় অবয়ব। বিভ্রান্তির প্রবণতায় সমস্তই কুহক। তাই থাকে না কেউই। কান পাতলে বাতাসে কিছু ফিসফিস।

আজকাল টবেই মেহগনি-সেগুন এতটা বিশাল বনজ হয়ে উঠছে, লতাগুল্ম হয়ে বৃক্ষযাপন উৎসব করি। রিভিউ লিখি ভাল মদের আশায়। বই, সিনেমার। লেখা কবিতা, গল্প আর গদ্য কে ছাপে! রাজ্যের আস্তাকুঁড়ের লেখা পড়ি। ভাল মদের অনেক দাম। লিখেই জোগাড় করি। শুঁড়িখানার মালিক হব এমন উচ্চাশা নেই। এত কই পাব? ঘুগনি বেচি। তা দিয়ে রাজার ছেলের বিলাসিতা হয় না। শুধু যেদিন তুমি কথা বলো না, যেদিন তোমার ব্যস্ততা দূর থেকে আরও দূরে নিয়ে যায়। কী করে পাই তখন? সেদিন পান করি। জ্বর গায়ে। তুমি আসো না। তাই জ্বরও সারে না। অথবা আমিই বদলে গেছি। আমার অনিত্য, ক্রমাগত বদলে যাওয়া অনুভূতি উড়ে এসে মুহূর্তগুলোকে অন্যরকম করে দিয়ে গেছে। মারাত্মক ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের চক্করে এখনও যে দাঁড়িয়ে আছি, সে-ই তো এক ভেলকি! মাথা গেছে কবেই। সে কি আজকালের কথা? তেমন কিছু লিখে ফেলি ঘোরে। হয়তো লিখছি এ যুগের রাস্কোলনিকভের কথা। পুঁজিবাদী সমাজের সম্ভাবনাহীন চরিত্রগুলোকে শাস্তি দিয়ে সে সমাজ পরিবর্তন করতে চায়। ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টের কেন্দ্রে তাকিয়ে, অন্তর্দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন মেধাবী রাস্কোলনিকভের চোখ লিখি আমি। অগাধ প্রত্যয়, শীতল গভীর, নাগালের বাইরে আদৌ অভিব্যক্তিহীন।

তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঘুরে এলাম কত সময় আর জনপদ। একটি সাম্যবাদী মানবিক পৃথিবীর আশায়। মস্কোর মেরিনস্কি থেকে দক্ষিণের সেইন্ট মার্টিনস্‌ দ্বীপ। তখন হয়তো তুমি ছাদে দাঁড়িয়ে। তুমি তো মায়া। কত দূরের। সেখানে চাইলেই যাওয়া যায় না। পেছনে কাপড় মেলে দেওয়ার একলা দড়ি। ছবি পাঠালে নদীর আর আমি একের পর এক লিখে যাই দশক, শতকের গল্প। এমনি লেখা যায় নাকি? এত শীত! সোয়েটার পাই না। পা দুটো ঠান্ডা হয়ে আসে। সামান্য যা কিছু উষ্ণতা, আছে ওই সিগারেটের ধুঁকে ধুঁকে জ্বলা আগুনটুকুতে। কম্বল দিয়ে দিয়েছি লালুভুলুর বাচ্চাদের। সদ্য জন্মেছে। শীতের বৃষ্টি বড় খারাপ। কাঁপছে ওরা। পুকুরের ঘাটলা থেকে হিম উড়ে আসছে। কী ঠান্ডা! কিচ্ছু খুঁজে পাই না। না ছাতা, না পাজামা। না উলের মোজা। রোজ রোজ একলা রান্না খাওয়া আর কত ভাল লাগে? এক-আধদিন ভাত আর আলুসেদ্ধ হলেই চলে যায়। সেদিন কী বৃষ্টি! চাল, নুন, রুটি, দেশলাই ফুরিয়েছে। অগত্যা গলির মোড় ছাড়িয়ে বহুদূর হাঁটলাম। তুমি দাওনি যে ছাতা, ভিজতে হল একচোট।

পাশের বাড়ির রিনি-ঝিনি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছিল। তাদের মা চড়া গলায় বারণ করে তেলে বেগুন ছাড়ল। এমন হঠাৎ ঝিরঝির বৃষ্টির দিনে ওরা গরম গরম বেগুনি পেঁয়াজু খায়। মুড়িতে সর্ষের তেল মাখিয়ে। এ পাড়ার বাড়িগুলো খুব গা-ঘেঁষা। ভেতরটা দেখতে না পেলেও সমস্তই শোনা যায়। হয়তো মনোযোগ দিলে শীৎকারও শোনা যাবে। বিকট শব্দে হাঁচি, নাকঝাড়ার ফোঁতফোঁত। নুলো ভিখিরির দল থালা ঠেলে ঠেলে গড়িয়ে যায় বিচিত্র সুরে— আমার আল্লাহ নবীজীর নাম, একটা টাকা দিয়া যান… আর ক্যাপিটালিস্টের অট্টহাসি বাজারে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বিন্দুতে দাম নির্ধারণ করে। অর্থনীতি বিষয়টা তেমন ভাল বোঝে না রিনি। মন উড়ু উড়ু। প্রথম শাড়ি পরেছে সে। বিনুনি দুলিয়ে মহিলাদের মতো হাবভাব করার চেষ্টারত। ঝিনি বয়সে সামান্য ছোট। দু বোন সারাক্ষণ এক সঙ্গে। হয় লড়ছে নয়তো হাসছে। কারণে অকারণে ওরা খুব হাসতে পারে। জানলার ফাঁক গলে আমার স্যাঁতস্যাঁতে পর্দা উড়িয়ে দেয় সে হাসি।

পাঁচ বছরের মিলু, রিনি-ঝিনির ভাই রানার ছেলে, এসে দাঁড়ায় দরজায়। হাতে মুড়ি-পেঁয়াজুর বাটি। ওর চোখ কাঁচের গোল অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছে। মিলুর জন্য সাপলুডো কিনেছি। জানি না, কাঙ্ক্ষিত মইয়ের কেন এত অবহেলা। জীবনভর সাপের মুখে পড়ে মানুষ লেজের প্রান্তে নেমে যায়। তাই হয়তো ‘মইলুডো’ আর হয়ে ওঠে না।

তোমার লনে ফোটে বসরাই গোলাপ। মখমল পাপড়িতে অনন্ত জমাট শিশিরের নামে বলছি, আমি এক মর্মর ভাস্কর্য। নগ্ন দাঁড়িয়ে দেখেছি টি-কোজি খুলে কী করে চা পড়ছে পোর্সেলিনের কাপে। হাওয়ায় মিশে যাওয়া বাষ্প তোমার চিবুক ছুঁয়ে আরও উষ্ণ। আশ্চর্য সংযত কাপে ঠোঁট ছোঁয়ালে প্রার্থনা করি— নিশ্চল ডানাভাঙা পিঠে, পাখা দুটো জুড়ে এবার ঈশ্বর প্রাণ সঞ্চার করুক। পরে বুঝেছি সে ছিল বাগানঘেরা কৃষ্ণচূড়ার ওই লালের প্রাবল্য। লাল যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, এক্ষুনি তোমাকে চাই, এক্ষুনি। নইলে একটা খুনোখুনি হয়ে যাবে মুহূর্তেই। তোমার চোখের জলে তখন আস্ত নদী বয়ে যাচ্ছে আর অন্ধকারে আধিভৌতিক সেতুর ওপর আমি লিখি— অপেক্ষা।

অপেক্ষার মর্ম কী, বোঝো? কোনও দিন তোমায় অবহেলা করেছি বলো? হাত ধরে টেনেছি? অশ্লীল বাক্য বলেছি? রূপের প্রশংসা করে কিছু বলিনি। বাড়তি একটি শব্দ উচ্চারণ করিনি। শুধু তোমায় নিয়ে ঘুরেছি দশক, শতক। পাখি খুঁজতে বেরিয়ে, পৌঁছে গেছি দুজন পলাশীর প্রান্ত থেকে উত্তাল রেসকোর্স মাঠে। ডাকসু ভবনের গেটে ইশতেহার বিলি করেছি ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য। বিন্দু থেকে ব্রহ্মাণ্ড, স্বাধিকার থেকে গন্তব্য ঘুরে যায় স্বাধীনতায়। সেই ১৭৫৭ থেকে আজ অব্দি আমাদের বাবুইজীবন আর হয়ে ওঠে না। তুমি একই কথা বলেই যাচ্ছ— ‘সরে গেছি। চলে গেছি। ভুলে যাও।’ ভাবছি কেন বলো এতবার? একই কথা? এতে কি কথার মানে পাল্টে যাবে? নাকি ভাবছ আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না? আসলে হয়েছে কি শোনো, তুমি যা বলছ, সেটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছ না। বারবার বলে নিজেকে বিশ্বাস করাতে চাইছ। আমি এখানে নিমিত্ত মাত্র। তুমি নিজেকেই নিজে বলছ আর শুনছ। আর জানো, তোমার এসব আমার ভালই লাগে।

আমার ঈশ্বর ভাল। মৃত্যুর পর নরকের ভয় দেখায় না। নিয়ত সুর-অসুরের লড়াই আসলে হয় মনোভূমিতে। জেনে গেছি কত আগেই। তাই হয়তো প্রথাসিদ্ধ পথে একটি ব্যক্তিগত ঈশ্বর পেলাম না। সেভাবে তো তোমাকেও পাইনি। কুয়াশা সরিয়ে ঠান্ডা কফিনে রোদ্দুর ঢেলে বলেছিলে ফিসফিস— যাকে তুমি ভালবাসো সে ঈশ্বরনির্ণীত। আমার ভাঙা ডেরায় তাই আগলে রাখি তোমার মুখ। নরম চাঁদের সবটুকু গলে গলে পড়ে ঘুমন্ত মুখে। জলের সুতোয় বোনা ফিনফিনে কাশফুলের রাতপোশাক। ভ্যালিতে কান পাতলেই ঝিরঝির। চোখ মেলেছ কি জীবন্ত জল গড়িয়ে লবণনীল আশ্রয় পেল ফরাসি রুমালে। এমব্রয়ডারির সুতোয় যে দাগটুকু রইল সেটা বৃষ্টির নাকি কান্নার? জেগে ওঠার লাবণ্য যদি হয় বহমানতা, ছুঁয়ে দিলেই তর্জনী আর বুড়ো আঙুলের মাঝে একটি ঋজু কলম। কলমে লেখা হল স্ববিরোধ। যেখানে ব্যক্তিসত্তা আর শিল্পসত্তার দুটি ভিন্ন প্রবাহ সমান্তরাল বইছে। সে ধারায় একটি, দুটি, তিনটি… অসংখ্য কলমের মৃত জলাশয়ে এক এক করে জাগছে ঝিকমিক নতুন গল্প গদ্য কবিতা। ক্রমশ পুরুষ হয়ে উঠি বহু বছর পর। মেঠো-বুনো হয়ে ঢুকে পড়ি তোমার চা-পাতা আর গোলাপগন্ধ ঠেলে।

তরল নামছে গলা জ্বালিয়ে আর আমি লিখছি। লিখছি রান্নাঘর থেকে শোওয়ার ঘরের দূরত্ব এক উঠোন, যুদ্ধ শুরু হয়েছে ভীষণ। শত্রুবাহিনি ঝাঁপিয়ে পড়ছে মিত্রপক্ষের ওপর। সেনাঘাঁটি থেকে গ্রেনেড চার্জ করে কেউ। বিস্ফোরণের ধুলোধোঁয়ায় চোখ জ্বলে। অস্পষ্ট দেখি কাঁদছে রিনি-ঝিনির মা। প্রেমে প্রতারিত হলেই কেন দড়িতে টান পড়ে, জানি না। রানা এলে ঝুলন্ত রিনি মাটিতে শোবে। তার আগে নয়। ঝিনির পরনে রিনির শাড়ি। অসময়ে বৃষ্টি এলে সাময়িক যুদ্ধবিরতি। বাবা মা-র চোখ এড়িয়ে মিলু ঠিক হাজির। দেশ-বিদেশের রূপকথা শোনাই। কাগজে মুড়ে রাখি দুটো সন্দেশ, সিন্দবাদ আর পান্তাবুড়ির গল্প। বাঙ্কার থেকে বেরিয়েছি তো ভিড়ভাট্টা, ডামাডোল। তবু একলা লাগে। নিস্তব্ধতায় অন্তর্মুখী হওয়া ছাড়া আর কী করার থাকে? খোলসের ভেতর মাথাটা লুকোই।

আমি লিখছি যা এখন, সাধারণ মস্তিষ্কে লেখা হয় না। এই দাহকাল নাকি দাহপরবর্তী ভস্মকালে দ্য ইডিয়ট হয়তো আমিই, যে লুকোয়নি তার আকণ্ঠ মদ্যপান। তোমাকে ভালবাসা। চুম্বনতেষ্টা। রমণাকাঙ্ক্ষা। কিছু টুকে নেওয়া ভুলভাল প্রেম, পাগলামো। এটাই সত্য, তবে শেষ সত্য কিনা জানি না। মৃতের পথে তাকিয়ে জীবন দেখি। কোনও প্রত্যাশা নেই। দিয়ে যাই যতটুকু পারি। গ্লানি নয় সুখ দেওয়ার জন্যই জন্মেছি। ঝিঁঝির হাসি। জোনাকির কান্না। তোমার অস্পষ্টতা আর অনিশ্চিতি কিছুটা কি পেল আমাকে? এই তো আমি। বহুরৈখিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে কিছু লড়াই মিলেছে বিষাদে, বিষাদ আনন্দে, আনন্দ নাকি অন্যায়ে, ঠিক জানা নেই। বাকিটা অসঙ্গতির রেখাপাত। খেয়ে নিও। ইদানীং মুখে কিছুই রোচে না। আমি খাই না। অসংলগ্নতায় সোনালী চিনা মাছ ঘুরপাক খায় অ্যাকুয়ারিয়ামে। নিচু ভলিউমে কিছু বলছে রেডিও। মদ্যপ গোল্ডফিশ শোনে মার্কিন আকাশে রুশ বোমারু বিমানের অনুপ্রবেশ।

তখন কোনও এক নভেম্বরের সকাল। দস্তয়েভস্কির ইচ্ছে আর দ্বন্দ্বগুলো স্যানাটোরিয়াম ছেড়ে যাচ্ছে সেইন্ট পিটসবার্গ থেকে ঢাকায়। শব্দের পর শব্দ বাড়ছে। দিন গড়িয়ে রাতও বাড়ে। নিঃশব্দে কোথাও ভেঙে পড়ে আয়না।

আর আমি? ধুলো মুছে মুছে কাচ যখন প্রায় স্বচ্ছ করে তুলেছি, রাত-ভোরের মিথস্ক্রিয়ায় জন্মায় মাহেন্দ্রক্ষণ, তুমি জানলে না, পাশ ফিরে শুলে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. বাহ! অত্যন্ত চমৎকার একটি লেখা। অনবদ্য গদ্য নির্মাণশৈলী

    হীরক সেনগুপ্ত

Leave a Reply to Hirak Sengupta Cancel reply