
আশিস গুপ্ত
ভারতের জনস্বাস্থ্য কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে অপ্রতুল অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত তহবিল এবং দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে। জলবায়ু-উদ্বাস্তু সংকট এই দুর্বল ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। বাস্তুচ্যুতির পর উদ্বাস্তুরা সাধারণত অপরিকল্পিত ও ঘনবসতিপূর্ণ অস্থায়ী শিবির, বস্তি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসব স্থানে প্রায়শই স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির অভাব থাকে, ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে
ভারতের জলবায়ু-উদ্বাস্তু সঙ্কট একটি জটিল এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যা, যা দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে আরও গভীর হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই সঙ্কটকে ক্রমশ তীব্র করে তুলছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত জলবায়ু দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়), অতিরিক্ত গরম এবং বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা ও বাসস্থান হারাচ্ছে। জলবায়ু-উদ্বাস্তু বলতে এমন মানুষদের বোঝায় যারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য পরিবেশগত সঙ্কটের কারণে তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়।
ভারতের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বিশেষভাবে গুরুতর, কারণ দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কৃষি ও উপকূলীয় জীবিকার ওপর নির্ভরশীল, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ গলছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর প্রভাবে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল— যেমন সুন্দরবন, মুম্বই, চেন্নাই এবং গুজরাতের কিছু অংশ— সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ ০.৫ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যার ফলে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে।[1] সুন্দরবনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে ১০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি জমি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে গেছে এবং প্রায় ১০,০০০ মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।[2]
এই সঙ্কট শুধু পরিবেশগত নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও গভীর প্রভাব ফেলছে, যা ভারতীয় সমাজজীবনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তীব্র বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং খরার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা ভারতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে শত শত গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া ২০২১ সালে, ‘তাউক্তে’ নামক একটি অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় আরব সাগরে সৃষ্টি হয়ে গুজরাতে আঘাত হানে, যা ১৯৯৮ সালের পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়গুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। এই ঝড় ১৭ মে গুজরাতের পোরবন্দর ও মহুয়ার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করে, যার বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। ফলস্বরূপ, গুজরাতে ২,০০,০০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়।
একইভাবে, কেরল, কর্নাটক, গোয়া এবং মহারাষ্ট্রে ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ তাঁদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ‘তাউক্তে’ এবং ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ের সম্মিলিত প্রভাবে ২০২১ সালে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হন, যা জলবায়ু-উদ্বাস্তু সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।[3]
সুন্দরবন, যা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে হাজার হাজার পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবনের লোহাচড়ার মতো কিছু দ্বীপ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণরূপে জলের নিচে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলীয় গ্রামগুলো প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের (যেমন ‘আমফান’, ২০২০) কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষ বারবার বাসস্থান হারিয়ে শহরাঞ্চলের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন, যা জলবায়ু-উদ্বাস্তু সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।
বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন কমছে, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরে বাধ্য করছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর)-এর মতে, গত ২০ বছরে ভারতের গম ও ধানের উৎপাদনশীলতা ১০–১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।[4] ২০২২ সালে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় গমের উৎপাদন ৫–৭ শতাংশ কমে যায়।[5] ‘তাউক্তে’ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং গোয়ায় কৃষিজমি বন্যায় তলিয়ে যায়, যার ফলে ধান, তুলো ও আমের মতো ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি কৃষকদের জীবিকার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, ফলে অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন।
উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নৌকা ও জাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রাও আরও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মহারাষ্ট্র, কর্নাটক এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি খরা কৃষকদের জীবিকা বিপর্যস্ত করছে। বিশেষ করে বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়ার মতো অঞ্চলে জলের অভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা গ্রাম ত্যাগ করে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন।
এই অভিবাসন প্রায়ই অস্থায়ী হলেও, পরিবারগুলো শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে দারিদ্র্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রা হ্রাস এবং নদী শুকিয়ে যাওয়া জনজীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে। নীতি আয়োগের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ৬০০ মিলিয়ন মানুষ জলসংকটের সম্মুখীন, এবং ২১টি বড় শহরে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জল সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।[6] ‘তাউক্তে’ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে গুজরাতের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ বেড়ে যায়, যা ভূগর্ভস্থ জলের গুণমান নষ্ট করেছে এবং পানীয় জলের সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
হিমালয় অঞ্চলে গ্লেসিয়ার গলন এবং অতিবৃষ্টির ফলে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে ২০১৩ সালের কেদারনাথ বন্যা এবং ২০২১ সালের ধৌলিগঙ্গা বন্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই দুর্যোগগুলোর ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই অঞ্চলের গ্রামবাসীরা প্রায়ই পশুপালন ও কৃষির মতো জীবিকা হারিয়ে পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসতে বাধ্য হন, ফলে স্থানীয় সম্পদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি)-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হয়েছেন।[7] ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বন্যার কারণে ১,৫০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়ার মতো অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি খরা ফসল ধ্বংস করছে। ২০১৯ সালে এই অঞ্চলে খরার কারণে প্রায় ১২ লক্ষ কৃষক গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যান। ২০২২ সালে মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে তীব্র খরার ফলে প্রায় ২০ লক্ষ কৃষক তাঁদের জীবিকা হারিয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা প্রতি বছর আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
পরিবেশবিদ সুনীতা নারায়ণ বলেছেন, “খরা এখন শুধু পানির সংকট নয়, এটি জীবিকার সংকটে রূপ নিয়েছে।” জলবায়ু-উদ্বাস্তুরা প্রায়ই শহরাঞ্চলের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বাই, দিল্লি এবং কলকাতার বস্তিগুলোতে জলবায়ু-উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতের গড় তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এটি আরও ২-৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ‘তাউক্তে’ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এবং গুজরাতের ১০০টিরও বেশি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, যেখানে ৫০,০০০ হেক্টরের বেশি কৃষিজমি বিনষ্ট হয়েছে।
জলবায়ু উদ্বাস্তুরা যখন তাঁদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন, তখন তাঁরা প্রায়শই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে শুরু করেন এবং অপুষ্টির শিকার হন। এই দুটি প্রধান কারণ সম্মিলিতভাবে তাদের মধ্যে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।
ভারতের জনস্বাস্থ্য কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে অপ্রতুল অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত তহবিল এবং দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে। জলবায়ু-উদ্বাস্তু সংকট এই দুর্বল ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। বাস্তুচ্যুতির পর উদ্বাস্তুরা সাধারণত অপরিকল্পিত ও ঘনবসতিপূর্ণ অস্থায়ী শিবির, বস্তি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসব স্থানে প্রায়শই স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির অভাব থাকে, ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে মুম্বাইয়ের বস্তিতে বর্ষার পরে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়, যেখানে জলবায়ু-উদ্বাস্তুদের আগমন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগ, যেমন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু, নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। হিমালয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে এমন এলাকায়, যেখানে আগে কখনও এই রোগ দেখা যায়নি।
উদ্বাস্তুদের ঘনবসতি এলাকায় রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বেশি, এবং সরকারি হাসপাতালগুলো এই অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ভারতের গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায়ই পর্যাপ্ত চিকিৎসক কিংবা ওষুধ থাকে না। শহরাঞ্চলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় এত বেশি যে, উদ্বাস্তুরা প্রায়ই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স-এ প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসেন, যাদের অনেকেই জলবায়ু-উদ্বাস্তু।
খরা ও বন্যা কৃষি উৎপাদন হ্রাস করছে, যার ফলে উদ্বাস্তুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বন্যায় ফসল নষ্ট হলে গ্রামবাসীরা শহরে এসে অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতার শিকার হন, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ (২০১৯–২১) অনুযায়ী, ভারতের পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ৩৫.৫ শতাংশ খর্বকায়, ১৯.৩ শতাংশ কৃশ এবং ৩২.১ শতাংশ কম ওজনের। ১৫–৪৯ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে ১৮.৭ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছেন। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৩ অনুসারে, ভারতের স্কোর ২৮.৭, যা “গুরুতর” ক্ষুধার স্তর নির্দেশ করে। এই সূচকে ভারতের শিশুদের কৃশতার হার ১৯.৩ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
তীব্র তাপপ্রবাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালে ভারতে তাপপ্রবাহে প্রায় ২,৫০০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী। এছাড়া জীবিকা ও সামাজিক পরিচয় হারানোর কারণে উদ্বাস্তুদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা বাড়ছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। সুন্দরবনের উদ্বাস্তুদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানসিক চাপে ভুগছেন, অথচ ভারতে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ০.৩ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ডঃ অঞ্জলি প্রকাশ বলেন, “তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উদ্বাস্তু সংকট আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আরও প্রকট করে তুলছে। এটি এখন একটি মানবিক বিপর্যয়।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে প্রতি বছর অতিরিক্ত ২,৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় জলবায়ু অভিযোজন, স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, এই সংকট ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতের জিডিপি ২.৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে, যা প্রায় ৬০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতি হারানো মানুষগুলো নতুন স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে দেশে জলবায়ু-উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
[1] James, Suja Mary. India among nations facing highest threat from sea-level rise: WMO. CFC India. Feb 23, 2023.
[2] Ghosh, Sahana. Why scientists are planting steel rods in India’s mangroves. Nature India. Apr 8, 2024.
[3] Sethi, Vaamanaa. Three devastating cyclones — Yaas, Tauktae, and Gulab — displaced 2.5 million Indians in 2021. Economic Times. May 20, 2022.
[4] Kajal, Kapil. Heatwave takes a toll on north India’s wheat yield. Mongabay. Jun 8, 2022.
[5] March-April 2022 heat wave caused wheat yield loss up to 25% in Punjab. Farming Cosmos.
[6] Composite Water Management Index. NITI Aayog. Aug, 2019.
[7] Natural disasters caused 2.5 million internal displacements in India in 2022, report says. Economic Times. May 18, 2023.