ব্যবহারযোগ্য জলের সংকট— এক নীরব বিপর্যয়

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

 


জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ের নীতিতে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়— কম খরচে জমি, জল ব্যবহারের অনুমতি, এমনকি জল সরবরাহ ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ। এই প্রক্রিয়ায় সরকার নিজেই কর্পোরেট স্বার্থকে জনস্বার্থের চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষ করে কিছু রাজ্যে বোতলজাত জলের কারখানাগুলিকে “পরিষেবা” হিসেবে ঘোষণা করে, তাদের জন্য জলের মূল্য অনেক কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সাধারণ জনগণকে সেই একই জল কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। ভারতের জলসম্পদ এখন কর্পোরেট দখলের মুখে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল শুধু সংকট নয়, এক ভয়াবহ সামাজিক দ্বন্দ্ব ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠবে

 

এই তো সবে পেরিয়ে এলাম ২২ মার্চ। বিশ্ব জলদিবস। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলে রিও-ডি-জেনিরো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বসুন্ধরা সম্মেলনে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দিনটি পালন করা হয়। পরবর্তীতে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদেও এই দিনটি স্বীকৃতি পায়। ১৯৯৩ সাল থেকে সারা পৃথিবীজুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালিত হচ্ছে। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হল, সারা পৃথিবীর মানুষকে জলসম্পদের সংকট ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, এবং পৃথিবীজুড়ে জল সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে সচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট থিমে দিবসটি পালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে এর থিম ছিল “গ্রাউন্ড ওয়াটার: মেকিং দ্য ইনভিজিবল ভিজিবল”। ২০২৩ সালে ছিল “অ্যাক্সিলারেটিং চেঞ্জ” (পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা)। ২০২৪ সালে ছিল “ওয়াটার ফর পিস” (শান্তির জন্য জল)। ২০২৫ সালে বিশ্ব জলদিবসের থিম হল “হিমবাহ সংরক্ষণ”।

বর্তমানে, পৃথিবীতে মোট জলজ সম্পদের মধ্যে মাত্র ২.৫ শতাংশ জল পানীয় উপযোগী। এর মধ্যে ৬৮.৭ শতাংশ জমা রয়েছে বরফ বা হিমবাহে, ৩০.৯ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জল হিসেবে এবং ০.৪০ শতাংশ ভূপৃষ্ঠে নদী, হ্রদ, পুকুর, খাল, বিল এবং নালায় সঞ্চিত রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমবাহের গলনের মাত্রা সংকটসীমা অতিক্রম করেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে হিমালয়, আন্দিজ, আল্পস, এবং আর্কটিক অঞ্চলের হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা পৃথিবীর অস্তিত্বের সংকট তৈরি করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ৬ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীর সব মানুষের জন্য পানীয় জল এবং স্যানিটেশন পরিষেবার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে, যদিও এর জন্য যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

এছাড়া, পৃথিবীজুড়ে এখনও ৮০ শতাংশ জল দূষণমুক্ত না করেই নদী ও সমুদ্রে ফেলা হয় প্রতিদিন। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি শিশু পানীয় জল, ব্যবহারযোগ্য জল বা স্যানিটেশনের অভাবে প্রাণ হারায়। পৃথিবীর প্রতি চারজনের একজন স্বাস্থ্যের কারণে প্রয়োজনীয় জল ব্যবহারের সুযোগ পায় না। প্রতি দশজনে অন্ততপক্ষে তিনজনের পানযোগ্য জলের জোগান নেই। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও ৮৯২ মিলিয়ন মানুষ মুক্ত অঞ্চলে মলত্যাগ করে বা করতে বাধ্য হয়। প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষ এখনও স্যানিটেশন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এই পরিসংখ্যানগুলির মাধ্যমে জলসংকট এবং স্যানিটেশন সমস্যার গভীরতা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এবারের বিশ্ব জল দিবস পালিত হচ্ছে।

পৃথিবীতে জীবের বেঁচে থাকার জন্য আদিম ও অকৃত্রিম সম্পদ হল জল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পানীয় জল, রান্না, স্নান ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রত্যেকের দৈনিক ১০ লিটার জলের প্রয়োজন। পরিবারের লোকসংখ্যা ৫ জন হলে, এক বছরে ১৮,২৫০ লিটার জলের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, ২০,০০০ লিটারের একটি জলাধার নির্মাণ করলে সংকটের সমাধান সম্ভব হতে পারে। শুধু মানুষের জীবনের অস্তিত্ব নয়, তার সভ্যতার বিকাশও এই জলসম্পদের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এই পৃথিবীতে তিন ভাগ জল থাকলেও, মানুষ আজ সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি— এই জলসংকটের কারণে। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নে সারা দুনিয়া চিন্তিত। লবণজলে পৃথিবী ঘেরা থাকলেও, মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তা আদৌ কতটা কার্যকরী এবং সর্বোপরি গ্রহণযোগ্য কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা সমুদ্রের জলকে রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা এতটা ব্যয়বহুল যে, যে-কোনও দেশেই জনসংখ্যার নিরিখে রাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক চাপ পড়তে বাধ্য।

জল-সংকট বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি? আর সারা বিশ্বই বা কী ভাবছে? সর্বোপরি, মানুষ কী ভাবছে? এটাই মূলত এই সময়ের আলোচ্য বিষয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, পৃথিবীর প্রায় ১২০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পায় না। ফলস্বরূপ, প্রতি বছর ৫০ লাখ মানুষ মৃত্যুর কবলে পড়ে। হয়তো এমন দিন আসতে পারে যখন মাটি খুঁড়লেও এক আঁজলা জল পাওয়া যাবে না। এখনও যদি জলের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা না আসে, অদূর ভবিষ্যতে তাবৎ দুনিয়া বিপন্ন হয়ে যাবে। আসলে, আমাদের ব্যবহারিক জীবনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে পরিশুদ্ধ জলের উৎসের ঘাটতি মূলত জলসংকটের কারণ। সাধারণত দুই ধরনের জলসংকটে জীবন বিপন্ন হয়:

১. ভৌত জলসংকট, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী জলের জোগান যথেষ্ট নয়, অথচ পরিবেশতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যবহারযোগ্য জলের জোগান ভীষণ জরুরি।

২. অর্থনৈতিক জলসংকট, যেখানে জলের জোগানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তির অভাবের ফলে নদী, জলাশয় কিংবা অন্যান্য জলের উৎস থেকে জলের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না।

মূলত মিষ্টি জলের চাহিদা এবং প্রাপ্যতার বৈপরীত্যের ফলে এক ভৌগোলিক এবং সামাজিক সংকট তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বে।

ভূগর্ভস্থ জলসংকটের মূল কারণ হল অদক্ষ চাষাবাদের পদ্ধতি। দীর্ঘকাল ধরে গভীর কূপ থেকে জল তুলে জমিতে সেচ করা কিংবা বহু জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলকে পাম্প করে ড্রিলিং পদ্ধতিতে গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তুলে গ্রাম ও নগরজীবনের চাহিদা মেটানো চলছে। শহরাঞ্চলে যেখানে প্রতি ব্যক্তির ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ দৈনিক ১০ লিটার, পরিবার প্রতি ৫০ লিটার, সেখানে জলের ভৌত চাপ কমতে বাধ্য। ফলস্বরূপ, ভূগর্ভে জলের স্তর নেমে যায়, এমনকি বৃষ্টির জলও সেই ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হয় না। কেননা বহু জায়গায় শক্ত পাথরের স্তর ভেদ করে জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে অ্যাকুইফার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, এর ফলে মাটির নীচের জলভাণ্ডার ক্রমশ শূন্য হয়ে পড়ছে। জলের চাপ এবং পরিবেশগত সাম্যাবস্থা নষ্ট হচ্ছে।

প্রাপ্ত জলের উৎস নির্দিষ্ট গভীরতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তর থেকে আসা নোনাজলের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক র‍্যাডিক্যাল যেমন আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড, নাইট্রেট যুক্ত হওয়ার ফলে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসছে। প্রাত্যহিক জীবনে তীব্র জলসংকট দেখা দিচ্ছে।

জলসংকটের আরেকটি কারণ হল জলদূষণ। দুষিত জল ব্যবহারযোগ্য নয়। ভারতের ৭০ শতাংশ জল দূষিত। শহরে শিল্প ও গার্হস্থ্য বর্জ্য, পয়োনিষ্কাশন জলাশয়, নদী, হ্রদ এবং মোহনাগুলি এই দেশে একটি উদ্বেগজনক হারে মিষ্টি জলের উৎসগুলিকে দূষিত করছে। ভূপৃষ্ঠের জল এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ইউট্রোফিকাশন বাড়লে সোডিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের ডিপোজিশন বেড়ে যায়, জল অতিরিক্ত ফারটাইল হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, জলসংকটের মারাত্মক প্রভাব পড়ে।

জলসংকটের আরও একটি অন্যতম কারণ হল জলের অপচয়। রাস্তার কল থেকে অবিরাম জল পড়ে যাওয়া, রান্নাঘরে, স্নানঘরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খরচ করা, বিশেষত শহরাঞ্চলে বাড়ির ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে জল পড়ে যাওয়ার মতো প্রাত্যহিক ঘটনা থেকে বোঝা যায় নাগরিক সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ভারতে ১৭ শতাংশ ব্লকের ভূগর্ভস্থ জল অতি উত্তোলনের ফলে সংকটাপন্ন, ৫ শতাংশ ব্লকের ভূগর্ভস্থ জল অতি সংকটাপন্ন, অর্থাৎ যা আর পুনর্গঠনযোগ্য নয়। জলের সদ্ব্যবহারে মানুষের এই চূড়ান্ত ব্যর্থতা বা উন্নাসিকতা থেকে মুক্তি না পেলে অনতিবিলম্বে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই-সহ আরও ১৭টি শহরে ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের জন্যে, এমনকি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছেই জলসংকট এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

 

উন্নততর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নীতিগত ও আইনি কাঠামোর আনুপস্থিতি: বিশ্বজুড়ে জলসংকটের নতুন প্রবণতা

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি মানবজীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে। তবে, সম্ভবত সতর্ক হওয়ার মতো বিষয় হল পৃথিবীর জলসম্পদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ। বিশেষ করে, সুপার-এআই বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে জলসম্পদের সংকট এক নতুন রূপ নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির মডেল, বা বৃহৎ ডেটা বিশ্লেষণ প্রযুক্তির প্রয়োগ চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কয়লা, গ্যাস বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য বিশাল পরিমাণ জল ব্যবহৃত হয়। জলপ্রবাহের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয় এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি কোটি কোটি লিটার জল ব্যবহার করে। গবেষণা বলছে, একটি বড় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল প্রশিক্ষণের সময় গড়ে প্রায় কয়েক মিলিয়ন লিটার জল ব্যবহার হয়ে যায়— শুধু সার্ভার কুলিং-এর জন্য। যেখানে এই ডেটা সেন্টারগুলো গড়ে উঠেছে, সেখানে স্থানীয় জলস্তর নেমে যায়, কৃষিকাজ ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় জলের জোগান বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমনকি অনেক অঞ্চলে স্থানীয় জনগণ নিরাপদ জলের জন্য সংকটে পড়ে যাচ্ছে। উন্নততর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের দৌড়ে সামনের সারিতে থাকলেও, এর প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলসম্পদের উপর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে কোনও সুস্পষ্ট নীতি ও আইন না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এই সমস্যা নিয়ে শুধু বিজ্ঞানীদেরই নয়, সমগ্র মানবসমাজকেই ভাবতে হবে।

 

জলসম্পদের সংকট: গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথের নীতিগত সংঘাত

বিশ্বজুড়ে জলসংকট দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় গ্লোবাল নর্থের উন্নত দেশগুলো এবং গ্লোবাল সাউথের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে যে নীতিগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্য বিদ্যমান, তা জলসংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। গ্লোবাল নর্থ এবং গ্লোবাল সাউথ, এই দুই ভাগ বিশ্বের মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় নীতি ও বাস্তবতা ভিন্ন রূপে বিকশিত হয়েছে, এবং তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী নানাভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

১. জলের জোগান ও ব্যবহার: বৈষম্যমূলক বাস্তবতা

গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো— যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো— জলের সহজলভ্যতা, আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর কারণে জল ব্যবহারে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থাপনায় উন্নত পরিকাঠামো ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে তারা একটি নিরাপদ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা বজায় রাখতে সক্ষম।

অন্যদিকে, গ্লোবাল সাউথের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ— যেমন ভারত, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া কিংবা ইথিওপিয়ার মতো দেশে— জলের সহজলভ্যতা অসম এবং ব্যবস্থাপনা দুর্বল। এই অঞ্চলের জনগণের একটি বড় অংশ আজও বিশুদ্ধ জলের অভাবে ভুগছে। পরিকাঠামোর অভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পুনঃপুনঃ আঘাত এখানে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে ক্রমশ বিপন্ন করে তুলেছে।

২. নীতিগত মনোভাব: দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান

গ্লোবাল নর্থের দেশগুলোতে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হয়। জল অপচয় রোধ, জলাধার পুনর্জীবন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার মতো বিষয়গুলো এই অঞ্চলের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়।

অন্যদিকে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিতে নীতির প্রয়োগ অনেক সময়ই তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জন কিংবা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপের কারণে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, কৃষিকাজে জলের অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক ব্যবহার, শিল্পাঞ্চলে অপরিশোধিত বর্জ্য নির্গমন, এবং ভূগর্ভস্থ জল অতিরিক্ত উত্তোলনের মতো প্রবণতা এই অঞ্চলে নীতির দুর্বলতা ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ঘাটতি প্রকাশ করে।

৩. প্রযুক্তিগত ব্যবধান ও তথ্যের অপ্রতুলতা

উন্নত দেশগুলোতে জলসম্পদের মান ও পরিমাণ নিরূপণে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার— যেমন: সেন্সর, ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিশ্লেষণ ইত্যাদি— ব্যাপক হারে প্রচলিত। ফলে তারা জল ব্যবস্থাপনাকে যথাযথভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি তাদের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে।

অন্যদিকে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো প্রযুক্তির দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। বহু ক্ষেত্রেই তারা জলের পরিমাণ ও গুণগত মান সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে সংকটের পূর্বাভাস দেওয়া কিংবা সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপট ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা

জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথের মধ্যে শক্তি ও সম্পদের দিক থেকে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। উন্নত দেশগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জলসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী মঞ্চে প্রভাব বিস্তার করে। তারা অর্থায়ন, প্রযুক্তি সরবরাহ ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনায় নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো অনেক সময়েই এই প্রক্রিয়ায় কেবল ‘অনুদানের গ্রহীতা’ হিসেবে থেকে যায়। তাদের স্থানীয় বাস্তবতা এবং প্রচলিত দেশীয় প্রাচীন জলব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জ্ঞান আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পায় না। অনেক উন্নয়ন প্রকল্পই এই দেশগুলোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে তৈরি হয়। ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়, এবং এই কারণেই বহু প্রকল্প শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে পড়ে।

৫. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত দ্বৈত মানদণ্ড

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এই পরিবর্তনের জন্য মূলত দায়ী গ্লোবাল নর্থ-এর উন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন। গ্লোবাল নর্থ যেখানে উন্নয়নের নামে বিপুল জল ব্যবহার করছে— বিশাল শিল্প, কৃষি ও প্রযুক্তি খাতে— সেখানে গ্লোবাল সাউথ-এর মানুষ ন্যূনতম পানীয় জল ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতি এক ধরনের পরিবেশগত দ্বৈত মানদণ্ড’ সৃষ্টি করছে, যা একটি স্থায়ী বৈষম্যমূলক বৈশ্বিক কাঠামো গড়ে তুলছে। উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের দায় এড়াতে নানা কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে, অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়।

গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথ-এর মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতি, সক্ষমতা ও বাস্তবতার ফারাক শুধু একটি অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা নয়; এটি বৈশ্বিক সুস্থিত উন্নয়নের পথেও একটি মৌলিক প্রতিবন্ধকতা। এই বৈষম্য দূর করতে হলে প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈজ্ঞানিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি— যেখানে গ্লোবাল সাউথ-এর অভিজ্ঞতা, স্থানীয় জ্ঞান এবং বাস্তব প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে নীতিনির্ধারণ করা হবে।

বিশ্বব্যাপী জলের ন্যায্য বণ্টন, স্বচ্ছ সহযোগিতা এবং টেকসই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি সমতা-ভিত্তিক জলনীতি গড়ে তোলাই একমাত্র পথ। অন্যথায়, জলসম্পদের সংকট শুধু পরিবেশগত নয়— ভবিষ্যতে এটি এক ভয়াবহ রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটেও রূপ নিতে পারে।

 

জলসম্পদের সংকট ও নগরের প্রান্তিক মানুষের জীবনগাথা

নগরের দরিদ্র বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলতে বোঝায় সেইসব মানুষদের, যারা শহরের বস্তি, ফুটপাত, রেললাইনের ধারে কিংবা অস্থায়ী ঘরবাড়িতে বসবাস করেন। তাঁরা সাধারণত অস্থায়ী শ্রমিক, সাফাইকর্মী, দিনমজুর, রিকশাচালক ইত্যাদি পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর বাইরে অবস্থান করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি পরিষেবাগুলোর নাগালের বাইরে থেকে যায়।

বিশেষত এশিয়ার বিভিন্ন নগরে, এবং ভারতীয় প্রেক্ষাপটে, শহরের প্রান্তিক মানুষ জলের মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। ভারতের মতো দেশে, যেখানে দ্রুতগতিতে নগরায়ন বিস্তার লাভ করছে, সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ ও পর্যাপ্ত জলজোগান হয়ে উঠেছে একটি ক্রমবর্ধমান সংকট। অর্থনৈতিক বৈষম্য, অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের অভাব মিলে এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ভারতের প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই আজ বস্তির সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু কিংবা চেন্নাই— সবখানেই লক্ষ লক্ষ মানুষ বস্তিতে বাস করছেন। এই বস্তিগুলোর অনেকটিতেই মানুষের কাছে পানযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য জল পৌঁছনোর উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই; নেই স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা— যার ফলে জলের উৎসগুলি পুনরায় দূষিত হয়ে পড়ে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে প্রতি ১৫০ জন বাসিন্দার জন্য মাত্র একটি জলের ট্যাপ রয়েছে, যা দিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকে। এর ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জল সংগ্রহ করতে হয়, তাও তা প্রায়শই অপর্যাপ্ত। প্রশাসনিকভাবে অধিকাংশ বস্তিকে ‘অবৈধ বসতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যার ফলে এসব এলাকায় জল সরবরাহের স্থায়ী ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত।

এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে দরিদ্র মানুষ বাধ্য হন বেসরকারি উৎস থেকে অতিরিক্ত দামে জল কিনতে। বস্তুত, শহরের প্রান্তিক মানুষের জলসংকট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নারীদের ও শিশুদের উপর। পরিবারের জল সংগ্রহের প্রধান দায়িত্ব সাধারণত নারীদের উপর বর্তায়। প্রতিদিন তাঁদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে জল আনতে হয়, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর। পাশাপাশি, দীর্ঘ সময় বাইরে অবস্থান করার ফলে তাঁদের নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয় এবং শিশুদের শিক্ষাও ব্যাহত হয়। অনেক সময় শিশুদেরকেও এই শ্রমসাধ্য কাজে যুক্ত হতে হয়।

পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ জলের অভাব মানেই স্বাস্থ্যঝুঁকির বাড়তি চাপ। শহরের প্রান্তিক মানুষের মধ্যে জলবাহিত রোগ— যেমন: ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। করোনা মহামারির সময় দেখা গেছে, যেখানে হাত ধোয়ার মতো মৌলিক সুবিধা নেই, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এই জনগোষ্ঠী মহামারির সময়ে সবচেয়ে বেশি বিপন্নতার মুখোমুখি হয়।

 

জলসংকট ও উপকূলীয় প্রান্তিক মানুষের জীবনের বারোমাস্যা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই অনুভূত হচ্ছে, তবে সবচেয়ে তীব্রভাবে এটি দেখা যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে— যেখানে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং স্বাদু জলের ঘাটতি মানুষের জীবনযাপনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চল, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, সেখানে লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ বাস করেন। এই জনপদ আজ ভয়াবহ জলসংকটে ভুগছে। এই সংকট কেবল পানীয় জলের অভাবে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি গৃহস্থালির দৈনন্দিন চাহিদা ও কৃষিজ উৎপাদনের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

 

ভৌগোলিক বাস্তবতা ও সংকটের প্রকৃতি

সুন্দরবন অঞ্চল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার ১৯টি ব্লক এবং বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৯টি ব্লক, ৬টি বনাঞ্চল ও ৫৫টি অংশ নিয়ে বিস্তৃত। এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ নদী, খাল ও উপকূলীয় জলপথে পরিপূর্ণ হলেও এখানকার মানুষ বিশুদ্ধ জলের অভাবে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। কারণ, এই অঞ্চলের অধিকাংশ জলের উৎসই লবণাক্ত। বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এখন লবণাক্ততা পৌঁছে গিয়েছে ভূপৃষ্ঠের জলের উৎস এবং ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারেও।

সুন্দরবনের মানুষের প্রধান জলের উৎস পুকুর ও নলকূপ। কিন্তু এখন অধিকাংশ পুকুরে লবণাক্ত জল, যা পানযোগ্য নয়। নলকূপ থেকেও যে জল ওঠে, তাও লবণাক্ত বা আর্সেনিক-দূষিত। ফলে প্রান্তিক মানুষকে অনেক দূর হেঁটে বিশেষ ট্যাঙ্ক বা গভীর নলকূপ থেকে জল সংগ্রহ করতে হয়, অথচ সে জলের জোগানও নিশ্চিত নয়।

বর্ষাকালে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সমষ্টিগত উদ্যোগে জলাধার তৈরি করা হলেও, তা বেশিরভাগ সময়েই অপর্যাপ্ত এবং সংরক্ষণের অভাবে দূষিত হয়ে পড়ে। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়ে। পানীয় জলের এই সংকট থেকে শিশুদের অপুষ্টি, গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং জলবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

 

গৃহস্থালির চাহিদা: প্রতিদিনের যুদ্ধ

খাবার রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন-সহ দৈনন্দিন জীবনযাপনের নানা কাজে ব্যবহৃত জল আজ একপ্রকার বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য হিসেব করে জল ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় একই জল পরিশোধন ছাড়াই পুনর্ব্যবহার করতে বাধ্য হন তাঁরা।

মেয়েরাই সাধারণত বাড়ির জলের জোগান ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে। ফলে তাদের শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ব্যাহত হয়। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য সরকারের কিছু নীতি— যেমন বনাঞ্চলে কূপ খনন বা জল উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা— মানবিক দিক থেকে প্রয়োজনীয় হলেও, অনেক সময় তা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে। এই নীতিগুলির ফলে জলের উৎস সীমিত হয়ে পড়ে এবং বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সংকট আরও গভীর হয়ে উঠছে।

 

কৃষিজমিতে লবণাক্ততার প্রভাব: জীবিকার সংকট

সুন্দরবনের মানুষ প্রধানত কৃষি ও মাছচাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু লবণাক্ত জলের আগ্রাসনে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধান, ডাল, সবজি— প্রায় সব ফসলই লবণাক্ততার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং উৎপাদন ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষকের আয় হ্রাস পাচ্ছে, খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে, এবং প্রান্তিক কৃষকেরা বাধ্য হচ্ছেন পেশা পরিবর্তন করতে।

পশ্চিমবঙ্গে আইলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক আম্ফান ও দানা— প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেই কৃষিজমিতে বারবার লবণাক্ত জলের প্রবেশ ঘটেছে, যার ফলে বহু জমি এখন পতিত হয়ে পড়েছে। অনেকে জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়ে শহর বা অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। এর ফলে এই অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিক ও পরিবেশ-শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, যা একপ্রকার সামাজিক সংকটেরও জন্ম দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের দুর্যোগগুলির ফলে সুন্দরবনের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে, মিষ্টি জলের উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির নিচে লবণ ঢুকে পড়ায় গভীর নলকূপও অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই ধরনের দুর্যোগ শুধু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে না, দীর্ঘমেয়াদে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনাকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে— এই ধারা অব্যাহত থাকলে, সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের জন্য পানীয় জল ও কৃষির ভবিষ্যৎ যে আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে, তা এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় এমন শস্যের, যেমন— ডাল, বাজরা ও তৈলবীজ— উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে জল ব্যবহারের পরিমাণ কম হয়। বর্তমান সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে শিল্পখাতে জলের ব্যবহার হ্রাসের চেষ্টা করতে হবে।

ধানচাষের ক্ষেত্রে সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার না করে বরং পার্শ্ববর্তী মজে যাওয়া খাল, বিল ও পুকুর সংস্কার করে, অথবা নতুন পুকুর খনন করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা ধানজমিতে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের উপর চাপ কমবে, এবং ভৌমজলের সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে ভূগর্ভের জলস্তর স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।

খরা-প্রবণ এলাকায় যতটুকু বৃষ্টি হয়, তা যদি সচেতনভাবে সংগ্রহ করা যায়, তবে গৃহস্থালির নানা কাজেও সেই জল ব্যবহার করা সম্ভব।

 

প্রশাসনিক উদ্যোগ ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় সরকারের পক্ষ থেকেই কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন— দীর্ঘস্থায়ী নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য ট্যাঙ্ক নির্মাণ, এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের উদ্যোগ। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পগুলির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম, এবং অনেক সময় যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় স্তরের কিছু উদ্যোগ বিভিন্ন জায়গায় আংশিকভাবে কার্যকর হলেও সমস্যার মূল সুরাহা হচ্ছে না, কারণ সংকটের গভীরতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চাহিদার তুলনায় এই ইতিবাচক পদক্ষেপগুলি খুবই সীমিত।

ভারতে ভৌমজল সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করে ‘আটল ভূজল যোজনা’, জল সংরক্ষণ ও বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের লক্ষ্যে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ‘জল শক্তি অভিযান’, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে ‘ন্যাশনাল ওয়াটার পলিসি’, এবং প্রত্যেকটি পরিবারে নিরাপদ জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘জল জীবন মিশন’ কর্মসূচি চালু হয়েছে।

সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষ আজ এক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের সম্মুখীন। তাঁরা নিছক ক্ষতিগ্রস্ত নন— তাঁরাই জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী এবং সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। তাঁদের জন্য নিরাপদ জলের ব্যবস্থা কেবল উন্নয়নের প্রশ্ন নয়, এটি নৈতিক ন্যায্যতা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন।

এই সংকটের সমাধান কিছু প্রকল্প গ্রহণে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় অংশগ্রহণ। সুন্দরবনের মানুষকে সক্রিয়ভাবে সঙ্গে নিয়েই জলবায়ু, আঞ্চলিক বাস্তুতন্ত্র এবং মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে— এবং তা অনতিবিলম্বে।

নচেৎ, ভবিষ্যতে সুন্দরবনের মানুষ হয়ে উঠবেন বিশ্বের জলবায়ু-প্রভাবিত উদ্বাস্তুর প্রতীক।

এই সংকট মোকাবেলায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে লবণাক্ত জলকে মিষ্টি জলে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে বৃহত্তর গ্রাম বা একাধিক গ্রামকে নিয়ে চক্র গঠন করে। প্রতিটি পরিবার ও বিদ্যালয়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। গবেষণার মাধ্যমে এমন ফসলের চাষ করা প্রয়োজন, যা লবণাক্ততা সহ্য করতে সক্ষম। জলপ্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে প্রকল্পগুলো টেকসই হয়। জাতীয় পর্যায়ে উপকূলীয় প্রান্তিক মানুষের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জলসম্পদ ব্যবহারের জন্য সুদূরপ্রসারী নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

 

ভারতের জলসম্পদে কর্পোরেট লুঠ: দুর্বল পরিবেশ আইনের সুযোগে জাতীয় এবং বহুজাতিক কোম্পানির শোষণ

জলের ব্যবহারের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার। একটি দেশের সুস্থিত উন্নয়নের জন্য এই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের মতো দেশে, যেখানে জলযোগান অঞ্চলভেদে অসম এবং জনগণের চাহিদা বিপুল, সেখানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো— বিশেষত বহুজাতিক ও বৃহৎ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো— এই মূল্যবান সম্পদকে তাদের মুনাফার জন্য বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। দুর্বল এবং অস্পষ্ট পরিবেশ সংক্রান্ত আইন, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগে তারা জলসম্পদের উপর একচেটিয়া শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী জলসংকট যখন দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে, তখন ভারতে বহু জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি— বিশেষ করে বোতলজাত পানীয় জল, সফট ড্রিংক ও খনিজ জল উৎপাদক সংস্থাগুলো— গ্রামাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জল তুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কোম্পানিগুলো একদিকে হাজার হাজার লিটার বিশুদ্ধ জল তুলে নিচ্ছে, আর অন্যদিকে স্থানীয় মূলনিবাসী মানুষজন জলের জন্য হাহাকার করছেন। কোকা-কোলা, পেপসি, নেসলে এবং কিছু ভারতীয় মদ ও পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলনের জন্য। কেরলের প্লাচিমাড, উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি, রাজস্থানের আলওয়ার, তামিলনাড়ুর সিদ্দাপুর— এমন বহু জায়গায় মানুষ এই শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন কর্পোরেট স্বার্থরক্ষায় নীরব থেকেছে। এই কর্পোরেট শোষণের সরাসরি শিকার হচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষজন। জলের স্তর ক্রমাগত নীচে নেমে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা সেচের জল পাচ্ছেন না, ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য গভীর নলকূপ খুঁড়েও জল মিলছে না। এর ফলে কৃষি উৎপাদন কমছে, খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এবং জীবিকার পথ আরও সংকুচিত হচ্ছে।

 

জলের পণ্যায়ন ও বেসরকারিকরণ: একটি অদৃশ্য চক্রান্ত

জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ের নীতিতে অনেক সময় কর্পোরেট সংস্থাগুলোর জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়— কম খরচে জমি প্রদান, জল ব্যবহারের অনুমতি, এমনকি জল সরবরাহ ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ। এই প্রক্রিয়ায় সরকার নিজেই কর্পোরেট স্বার্থকে জনস্বার্থের চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষ করে কিছু রাজ্যে বোতলজাত জলের কারখানাগুলিকে “পরিষেবা” হিসেবে ঘোষণা করে, তাদের জন্য জলের মূল্য অনেক কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সাধারণ জনগণকে সেই একই জল কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। ভারতের জলসম্পদ এখন কর্পোরেট দখলের মুখে।

এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল শুধু সংকট নয়, এক ভয়াবহ সামাজিক দ্বন্দ্ব ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠবে। ভূগর্ভস্থ জলের অধিকার এখনও মূলত জমির মালিকদের হাতে। ফলে কোম্পানিগুলো জমি লিজ নিয়ে বা কিনে আইনগতভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলার অধিকার অর্জন করছে।

ভূগর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনা আইন এখনও প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে তা এখনও প্রণীত হয়নি। সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অনুপস্থিত। পরিবেশ প্রভাব মূল্যায়নের (Environmental Impact Assessment) নিয়ম বহু ক্ষেত্রে দুর্বল, অথবা কোম্পানির সুবিধামতো তৈরি হয়, আবার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও থাকে অনীহা। অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই, জন-অংশগ্রহণের সুযোগও সীমিত। এমনকি পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের রায় অনেক সময় মানা হয় না, অথবা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়।

এখনই প্রয়োজন— জনস্বার্থে আইন সংস্কার, কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ এবং জলের ব্যবস্থাপনায় সাংবিধানিক অধিকার ও সাম্যের প্রতিষ্ঠা। জলসম্পদ বাণিজ্যের বস্তু নয়, এটি মানুষের জীবন, অধিকার এবং দায়িত্ব— এই চেতনা হওয়া উচিত পরিবেশ আন্দোলনের নীতি ও মূলমন্ত্র।

ভারতে জলসম্পদ-সংক্রান্ত আইন থাকলেও তা স্পষ্ট নয় এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বহু সময় দুর্বলতা দেখা যায়। শহর ও নগর পরিকল্পনায় প্রান্তিক মানুষের অবস্থান মূল কেন্দ্রবিন্দুতে নয়, বরং প্রায়শই উপেক্ষিত। এশিয়ার শহরগুলিতে— বিশেষত ভারতের মতো দেশে— নগরের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জলসংকট শুধু পরিকাঠামোগত সমস্যা নয়, এটি একান্তভাবে সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রশ্ন।

এই সংকটের সমাধানে প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সমতা-ভিত্তিক উন্নয়ন চিন্তা।

এই ধরনের পরিস্থিতি ও সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র আইনি নয়, এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক সচেতনতার বিষয়। যেখানে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী জাতীয় জলনীতি প্রণয়ন ও তার কার্যকর প্রয়োগ জরুরি।

স্থানীয় জনগণ যাতে নিজেদের অধিকার ও সম্পদ রক্ষা করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজন জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা। সুস্থায়ী জলব্যবস্থাপনা কৌশল, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলের অপচয় রোধ করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

শুধু প্রাসঙ্গিক আইন থাকলেই হবে না, সেই আইনের কার্যকর প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি, যাতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করা যায়।

বিশ্বব্যাপী “ক্লাইমেট জাস্টিস”-এর ধারণার প্রেক্ষাপটে এই ধরনের কর্পোরেট শোষণকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে জবাবদিহির দাবি তোলা প্রয়োজন। আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এক শক্তিশালী জন-পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তুলতেই হবে।

আমরা যদি ব্যর্থ হই, ভাবিকাল আমাদের ক্ষমা করবে না। হয়তো আগামী বিশ্বযুদ্ধ হবে জলের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আমাদের তো হার মানার উপায় নেই। ভবিষ্যতের শিশুকে জায়গা করে দিতে হবে এই ধরায়। চেতনায় আঘাত হানার দিনে আমরা এসে পৌঁছেছি দ্বারপ্রান্তে।

এখন আর শুধু কথার সময় নয়… এখন সময় সচেতন মানুষের পরিবেশ রক্ষার দায় পালন করার।

আমাদের পারতেই হবে।

পৃথিবীর মাটি, পৃথিবীর জল— পুণ্য হোক।
পুণ্য হোক…।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5044 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...